নিজস্ব প্রতিবেদক : নতুন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সদস্যদের সব সময় একটি পদত্যাগপত্র পকেটে রাখার অনুরোধ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেছেন, ‘আগে সরকার যাবে, তারপর এই নির্বাচন কমিশনকে বিদায় নিতে হবে। নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য সেই সরকার আসবে-যেটা জনগণ চায়। তারপর নির্বাচন কমিশন হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন- তারা যদি সৎ ও সম্মানিত লোক হন, প্রস্তুত থাকতে বলব, একটা পদত্যাগপত্র লিখে পকেটে রাখবেন, যথা সময়ে বঙ্গভবনে পৌঁছে দিবেন।’
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বরিশালে ‘তেল, গ্যাস, পানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে মহানগর বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে গয়েশ্বর এসব কথা বলেন। এই সমাবেশে মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড থানা থেকে ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে সকাল থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী সমাবেশে যোগ দেন।
গয়েশ্বর বলেন, সাংবাদিক ভাইয়েরা নির্বাচন কমিশন নিয়ে জানতে চেয়েছেন। আমাদের ইস্যু হলো- গণতন্ত্র, ভোটের অধিকার, জিনিসপত্রের দাম কমানোর। আমাদের ইস্যু হলো নিরাপত্তা। নির্বাচন কমিশন নিয়ে কিসের কথা। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করবে-এই কথা যে বিশ্বাস করে তাকে পাগলা গারদে চিকিৎসা করা দরকার। বিএনপির এই নেতা বলেন, শেখ হাসিনার মতো সরকার ক্ষমতায় থাকলে পাঁচটা ফেরেস্তা নির্বাচন কমিশনার হয়েও কোনো লাভ নেই। আমাকেও যদি প্রধান নির্বাচন কমিশনার বানায়, আমার ভোট আমি দিতে পারব না। সুতরাং নির্বাচন নিয়ে এখন কোনো কথা নেই। আগে সরকার যাবে, তারপর এই নির্বাচন কমিশনকে বিদায় নিতে হবে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রতি ইঙ্গিত করে গয়েশ্বর বলেন, কেউ কেউ নতুন নির্বাচন কমিশনকে সার্টিফিকেট দিতে পারেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ভালো-এই সার্টিফিকেট যিনি দিলেন তিনি তো নির্বাচনও করেন না, কোনো নির্বাচনে দাঁড়ানও না। অতীতেও দাঁড়াননি। সেই নির্বাচন কমিশন ভালো-মন্দে উনার কী যায় আসে? সুতরাং উনি যদি এই কথা বলে থাকেন, এই নির্বাচন কমিশনকে বিশ্বাস করেন, আমি বলব তারও মনে হয় চিকিৎসার দরকার আছে। কাঁঠাল দিয়ে কখনো আমসত্ত্ব হয় না।
সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, আমার মনে হয় নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বন্ধ করা দরকার। সকল শক্তিকে একসঙ্গে করে জনগনের পক্ষে দাঁড়ান। জনগণের বিপক্ষে যারা আছে তাদের নামাতে হবে। তারপর জনগন সিদ্ধান্ত নিবে কাকে ভোট দিবে, কাকে ভোট দিবে না।
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে গয়েশ্বর বলেন, দলের নেতাকর্মী আপনাদের সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে। সরকার যখন বিপদে পড়ে তখন বড় বড় লোভ দেখায়; আবার কাউকে কাউকে ভয় দেখায়। আমরা যেন লোভেও না পড়ি, ভয়েও মাথা নত না করি। জনগনের দল বিএনপি, জনগনের পাশে বিএনপি থাকবে। স্বাধীনতার যুদ্ধে জনগনের পাশে থেকে যুদ্ধ করেছেন জিয়াউর রহমান।
সরকারের পালাবার জায়গা নেই এমন দাবি করে গয়েশ্বর বলেন, সরকারকে বলব আপনাদের পালাবার জায়গা নেই, কোনো দেশ আপনাদের গ্রহণ করবে না। দেশেই যেহেতু থাকতে হবে, তাহলে চুরির মাল ফেরত দেন। যেসব টাকা বিদেশে আছে, তা আনার ব্যবস্থা করেন। আমেরিকার সরকার যদি সাড়ে ছয় লক্ষ কোটি টাকা বাতিল করে, তাহলে কার টাকা বাতিল করবে? বাংলাদেশের টাকা। তাতে শেখ হাসিনার আসে যায় কী। কিন্তু আমাদের তো আসে যায়।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে তিনি বলেন, এই সরকার লুটপাটের ঊর্ধ্বগতি, দুর্নীতি, ভোটচুরি, মিথ্যা কথায় ঊর্ধ্বগতি। দামের দিক দিয়ে নি¤œগতি আছে, মানুষের জীবন, মা বোনের ইজ্জত। এদের জন্য কান্নার লোক থাকে না। এভাবে দেশ চলতে পারে না।
গয়েশ্বর বলেন, জিনিসপত্রের দাম কমানোর দাবি কার কাছে করব? যিনি বাড়ায় তার কাছে? তিনিই তো সরকারের লোকজনদের মাধ্যমে সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ায়, মুদ্রাপাচার করে। খোঁজ নিয়ে দেখবেন, যেসব ব্যবসায়ীদের পুঁজি ও আয় কম তাদের ওপর এনবিআরের চাপ কত। বিক্রি করেন বা না করেন টাকা আমার চাই।
প্রশাসনের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আজকে আমাদের বিরুদ্ধে যাদের কাজে লাগাচ্ছে ডিসি, এসপি, পুলিশ র্যাব তাদের জিজ্ঞাস করব, বাজারে গেলে আপনাদের কাছ থেকে দাম কম নেয়? কম রাখে না।
বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুকের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব মীর জাহিদুল ইসলাম জাহিদের পরিচালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা বিলকিস জাহান শিরীন, আকন কুদ্দুসুর রহমান, মাহবুবুল হক নান্নু, মেজবাদ উদ্দিন ফরহাদ, এবাদুল হক চাঁন, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহানসহ স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।
পদত্যাগপত্র সব সময় পকেটে রাখবেন, নতুন ইসিকে গয়েশ্বর
ট্যাগস :
পদত্যাগপত্র সব সময় পকেটে রাখবেন
জনপ্রিয় সংবাদ