ঢাকা ১১:৪৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫

পথ সচল রাখতে পথেই ইফতার করেন তারা

  • আপডেট সময় : ০৯:৩১:১৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ এপ্রিল ২০২৩
  • ১০১ বার পড়া হয়েছে

মাসব্যাপী রমজানে এমন দৃশ্য যাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার প্রতিটি মোড়ে মোড়ে। গত শনিবার (১ এপ্রিল) ইফতারের কয়েক মিনিট আগে বাংলামোটর ট্রাফিক সিগন্যালে দেখা যায় ৭ জনের একটি টিম। সড়ক নিয়ন্ত্রণ রাখতে কাজ করছেন নিরলসভাবে। কাজের ফাঁকেই তাদের মধ্যে কয়েকজন ইফতার প্রস্তুত করছেন। এরমধ্যেই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ডাক। বেরিয়েই ছুটলেন সিগন্যাল সামলাতে।
এসব মোড়ে দেখা গেছে ডিউটিতে থাকা ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের ইফতারের জন্য আলাদা বরাদ্দ রয়েছে। ছোলা, মুড়ি, খেজুর, একটি কলা ও পানির বোতলসহ আরও কয়েকটি আইটেম। ইফতারের একঘণ্টা আগে এসব ইফতার আইটেম ট্রাফিক বক্সে পৌঁছে দেন সংশ্লিষ্টরা। বরাদ্দ পাওয়া ইফতারের সঙ্গে নিজেদের অর্থায়নে পছন্দের কিছু আইটেমও যোগ করেন তারা। শত ব্যস্ততার মাঝেও মুখে হাসি ট্রাফিক পুলিশ সদস্য আনোয়ার হোসেনের। প্রতিদিন যানজট নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর ওই ট্রাফিক সিগন্যালে কাজ করছেন তিনি। বলেন, ‘রমজান মাস এলে ইফতারের আগ মুহূর্তে গাড়ির চাপ বেশি থাকে। তখন গাড়ি শৃঙ্খলায় নিয়ে আসতে আমাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হয়। ডিউটি শেষ হওয়া পর্যন্ত বাসায় ফেরার কোনও সুযোগ নেই। রমজানে আরও বেশি কাজ করতে হয়। ইফতারের সময় যেদিন যানজট একটু কম থাকে সেদিন ট্রাফিক বক্সে আমরা একসঙ্গে বসে ইফতারি করি। সেটাও মাত্র কয়েক মিনিটি। এছাড়া অন্যান্য দিন দেখা যায়, আমি এক কোনায়, আরেকজন রাস্তার পাশে, এভাবে যে যেখানে দাঁড়ানো সেখানেই কোনোরকমে ইফতার করে নেয়।’
রোজা রেখে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আবার অনেক ট্রাফিক সদস্য রাস্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। এমন একজন পঞ্চাশোর্ধ্ব কনস্টেবল তোয়াব খান। বেলা ২টা থেকে মাংলামোটর ট্রাফিক সিগন্যালে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। বয়স হয়ে যাওয়ায় দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না তিনি। এরই মধ্যে একাধিকবার চিকিৎসকের শরণাপন্নও হয়েছেন। হাত-পায়ে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিয়েছে তার। তারপরও দাঁড়িয়ে প্রতিদিন টানা ৮ ঘণ্টারও বেশি কাজ করেন।
তোয়াব খান বলেন, ‘পাঁচ বছর ধরে টানা এখানে কাজ করছি। আশপাশে সবার সঙ্গে পরিচয় হয়ে গেছে। খারাপ লাগাটা আর নিজেকে বুঝতে দেই না। যখন বয়স কম ছিল যা ইচ্ছে খেতে পেরেছি। এখন চাইলে খেতে পারি না। এর মধ্যে শরীরের অবস্থা ভালো না। একটানা দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না। সারা দিন রোজা রেখে ইফতারের সময় একটু ভালোমন্দ খেতে মন চায়। তবে সে সুযোগটা নেই। এখানে ইফতারের যা ব্যবস্থা হয় সেটাই খাই। বাসায় থাকলে হয়তো নিজের মতো করে খেতে পারতাম।’
রমনা জোনের ট্রাফিক মোটরযান পরিদর্শক (টিআই) নিউটন চৌধুরী বলেন, ‘আজকে সকাল থেকে সড়কে যানজট। সকাল ৯টা থেকে দাঁড়ানো। একটা মানুষ কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। ইফতার শেষ হওয়ার ১৫ মিনিট পরও এ যানজট থাকে। তখন যে ট্রাফিক সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন তাদের ইফতার করার সুযোগ কোথায়। যে যেভাবে পারে দাঁড়িয়ে পানি, মুড়ি খেয়ে নেয়।’
ডিএমপির তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের ডিসি মো. সাহেদ আল মাসুদ বলেন, ‘যানবাহন নিয়ন্ত্রণে প্রতিদিনই আমরা কাজে ব্যস্ত থাকি। রমজানে এই কাজের চাপ আরও বেড়ে যায়। তখন আমাদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আরেকটু বেশি সতর্ক থাকতে হয়। ইফতারের আগে যেকোনও দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এ সময় সবার মাথা গরম থাকে। আমাদের ফোর্সকে সেভাবে নির্দেশনা দেওয়া আছে, যেন মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করে। রমজানের শুরু থেকে বিকাল বেলায় রাস্তায় অতিরিক্ত যানবাহন ও যাত্রীদের চাপ থাকে। তবু ঘরমুখো মানুষ যেন ইফতারের আগে বাসায় ফিরতে পারে সে প্রচেষ্টা আমাদের অব্যাহত রয়েছে।’ সাধারণ মানুষ অনেকটাই স্বাভাবিক, নির্বিঘœ ও নিরাপদে বাসায় ফিরতে পারছে বলেও জানিয়েছেন ডিসি সাহেদ আল মাসুদ। রোদ-বৃষ্টি-ঝড়, ধুলো-ধোঁয়া ও শব্দ মাথায় নিয়েই রাস্তায় প্রতিনিয়ত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। রমজান মাসেও এর ব্যতিক্রম হয় না। রোজা রেখে প্রচ- খরতাপ ও বৃষ্টি মাথায় নিয়ে রাজধানীর প্রতিটি রাস্তার মোড়ে এভাবেই দায়িত্ব পালন করছেন তারা। পরিবার ছাড়া ইফতার করে নিচ্ছেন পথে পথে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

পথ সচল রাখতে পথেই ইফতার করেন তারা

আপডেট সময় : ০৯:৩১:১৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ এপ্রিল ২০২৩

মাসব্যাপী রমজানে এমন দৃশ্য যাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার প্রতিটি মোড়ে মোড়ে। গত শনিবার (১ এপ্রিল) ইফতারের কয়েক মিনিট আগে বাংলামোটর ট্রাফিক সিগন্যালে দেখা যায় ৭ জনের একটি টিম। সড়ক নিয়ন্ত্রণ রাখতে কাজ করছেন নিরলসভাবে। কাজের ফাঁকেই তাদের মধ্যে কয়েকজন ইফতার প্রস্তুত করছেন। এরমধ্যেই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ডাক। বেরিয়েই ছুটলেন সিগন্যাল সামলাতে।
এসব মোড়ে দেখা গেছে ডিউটিতে থাকা ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের ইফতারের জন্য আলাদা বরাদ্দ রয়েছে। ছোলা, মুড়ি, খেজুর, একটি কলা ও পানির বোতলসহ আরও কয়েকটি আইটেম। ইফতারের একঘণ্টা আগে এসব ইফতার আইটেম ট্রাফিক বক্সে পৌঁছে দেন সংশ্লিষ্টরা। বরাদ্দ পাওয়া ইফতারের সঙ্গে নিজেদের অর্থায়নে পছন্দের কিছু আইটেমও যোগ করেন তারা। শত ব্যস্ততার মাঝেও মুখে হাসি ট্রাফিক পুলিশ সদস্য আনোয়ার হোসেনের। প্রতিদিন যানজট নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর ওই ট্রাফিক সিগন্যালে কাজ করছেন তিনি। বলেন, ‘রমজান মাস এলে ইফতারের আগ মুহূর্তে গাড়ির চাপ বেশি থাকে। তখন গাড়ি শৃঙ্খলায় নিয়ে আসতে আমাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হয়। ডিউটি শেষ হওয়া পর্যন্ত বাসায় ফেরার কোনও সুযোগ নেই। রমজানে আরও বেশি কাজ করতে হয়। ইফতারের সময় যেদিন যানজট একটু কম থাকে সেদিন ট্রাফিক বক্সে আমরা একসঙ্গে বসে ইফতারি করি। সেটাও মাত্র কয়েক মিনিটি। এছাড়া অন্যান্য দিন দেখা যায়, আমি এক কোনায়, আরেকজন রাস্তার পাশে, এভাবে যে যেখানে দাঁড়ানো সেখানেই কোনোরকমে ইফতার করে নেয়।’
রোজা রেখে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আবার অনেক ট্রাফিক সদস্য রাস্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। এমন একজন পঞ্চাশোর্ধ্ব কনস্টেবল তোয়াব খান। বেলা ২টা থেকে মাংলামোটর ট্রাফিক সিগন্যালে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। বয়স হয়ে যাওয়ায় দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না তিনি। এরই মধ্যে একাধিকবার চিকিৎসকের শরণাপন্নও হয়েছেন। হাত-পায়ে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিয়েছে তার। তারপরও দাঁড়িয়ে প্রতিদিন টানা ৮ ঘণ্টারও বেশি কাজ করেন।
তোয়াব খান বলেন, ‘পাঁচ বছর ধরে টানা এখানে কাজ করছি। আশপাশে সবার সঙ্গে পরিচয় হয়ে গেছে। খারাপ লাগাটা আর নিজেকে বুঝতে দেই না। যখন বয়স কম ছিল যা ইচ্ছে খেতে পেরেছি। এখন চাইলে খেতে পারি না। এর মধ্যে শরীরের অবস্থা ভালো না। একটানা দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না। সারা দিন রোজা রেখে ইফতারের সময় একটু ভালোমন্দ খেতে মন চায়। তবে সে সুযোগটা নেই। এখানে ইফতারের যা ব্যবস্থা হয় সেটাই খাই। বাসায় থাকলে হয়তো নিজের মতো করে খেতে পারতাম।’
রমনা জোনের ট্রাফিক মোটরযান পরিদর্শক (টিআই) নিউটন চৌধুরী বলেন, ‘আজকে সকাল থেকে সড়কে যানজট। সকাল ৯টা থেকে দাঁড়ানো। একটা মানুষ কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। ইফতার শেষ হওয়ার ১৫ মিনিট পরও এ যানজট থাকে। তখন যে ট্রাফিক সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন তাদের ইফতার করার সুযোগ কোথায়। যে যেভাবে পারে দাঁড়িয়ে পানি, মুড়ি খেয়ে নেয়।’
ডিএমপির তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের ডিসি মো. সাহেদ আল মাসুদ বলেন, ‘যানবাহন নিয়ন্ত্রণে প্রতিদিনই আমরা কাজে ব্যস্ত থাকি। রমজানে এই কাজের চাপ আরও বেড়ে যায়। তখন আমাদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আরেকটু বেশি সতর্ক থাকতে হয়। ইফতারের আগে যেকোনও দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এ সময় সবার মাথা গরম থাকে। আমাদের ফোর্সকে সেভাবে নির্দেশনা দেওয়া আছে, যেন মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করে। রমজানের শুরু থেকে বিকাল বেলায় রাস্তায় অতিরিক্ত যানবাহন ও যাত্রীদের চাপ থাকে। তবু ঘরমুখো মানুষ যেন ইফতারের আগে বাসায় ফিরতে পারে সে প্রচেষ্টা আমাদের অব্যাহত রয়েছে।’ সাধারণ মানুষ অনেকটাই স্বাভাবিক, নির্বিঘœ ও নিরাপদে বাসায় ফিরতে পারছে বলেও জানিয়েছেন ডিসি সাহেদ আল মাসুদ। রোদ-বৃষ্টি-ঝড়, ধুলো-ধোঁয়া ও শব্দ মাথায় নিয়েই রাস্তায় প্রতিনিয়ত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। রমজান মাসেও এর ব্যতিক্রম হয় না। রোজা রেখে প্রচ- খরতাপ ও বৃষ্টি মাথায় নিয়ে রাজধানীর প্রতিটি রাস্তার মোড়ে এভাবেই দায়িত্ব পালন করছেন তারা। পরিবার ছাড়া ইফতার করে নিচ্ছেন পথে পথে।