ঢাকা ০৪:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫

পতিত জমিতে মধু উৎপাদন ও তিল চাষে সফল কৃষক

  • আপডেট সময় : ০৭:৪৩:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫
  • ৪৫ বার পড়া হয়েছে

কৃষি ও কৃষক ডেস্ক: পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলায় প্রথমবারের মতো ১০০ বিঘা জমিতে তিল চাষ ও মধু উৎপাদন করে সফলতার মুখ দেখেছেন কৃষক। এরই মধ্যে মধু উৎপাদন করে দেড় লাখ টাকা লাভ হয়েছে তাদের। উপজেলার ৫০-৬০ কৃষক জড়িত হয়েছেন এ কাজে। ফলন দেখে অধিকাংশ কৃষক আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তিল চাষে। উপজেলা কৃষি বিভাগও সহযোগিতা করছে।

সরেজমিন জানা গেছে, ভান্ডারিয়া উপজেলার গৌরীপুর ইউনিয়নে তিল খেতের পাশেই সারি সারি সাজানো আছে ১৩০টি মৌবক্স। ওই বক্সের হাজার হাজার মৌমাছি প্রতিযোগিতা করে ফুল থেকে সংগ্রহ করছে মধু। ফুলের সৌন্দর্যে মাঠজুড়ে এক উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

তিল ও মধু চাষের এ উদ্যোগ স্থানীয়ভাবে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় প্রায় ৫০-৬০ জন কৃষক বারি-৪ জাতের তিল চাষ করেছেন। প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে আনুমানিক ৫-৬ হাজার টাকা। সঠিকভাবে ফলন ঘরে তুলতে পারলে প্রতি বিঘায় ২৫-৩০ হাজার টাকা লাভের সম্ভাবনা আছে।

বরগুনা থেকে মৌচাষি দলের পাঁচ সদস্যকে এনে ভাণ্ডারিয়ায় ১৩০টি মৌচাক স্থাপন করা হয়। যা আরিফুল ইসলামের বাড়ির পাশে একটি বাগানে বসানো হয়েছে। সেখানে একবারে ৮ মণ মধু সংগ্রহ করে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা বিক্রি করা হয়েছে। যেখানে খরচের পরে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে বলে জানান মৌচাষি।

গৌরীপুর ইউনিয়নের কৃষক বাবুল হাওলাদার বলেন, ‘এসব মাঠ ফাঁকা থাকতো। গত বছর আমি কিছু জমিতে তিল চাষ করে লাভবান হয়েছি। ৫-৬ হাজার টাকা খরচ হয় প্রতি বিঘায়। বিক্রির সময় প্রতি একর জমির ফসল ২৫-৩০ হাজার টাকা বিক্রি করা যায়। এই লাভ দেখে এ বছর অনেক চাষি মিলে কৃষি অফিসারের সাথে আলাপ করলে তারা অনেক পরামর্শ দেন। এ বছর কয়েকজন চাষি মিলে প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে তিল চাষ করেছি। তিল চাষের পাশাপাশি মধু উৎপাদন হচ্ছে বাড়তি আয়।’

তিলচাষি মো. শাজাহান বলেন, ‘আমরা প্রথম ১ বিঘা জমিতে প্রদর্শনীর মাধ্যমে ফসল উৎপাদন শুরু করি। সেখানে লাভ হওয়ার কারণে এ বছর প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে তিল চাষ করেছি। বিঘায় ৫ হাজার টাকা খরচ হলেও প্রতি এক বিঘার উৎপাদিত ফসল ২৫-৩০ হাজার টাকা করে বিক্রি করতে পারবো। তিল চাষের সঙ্গে মধু উৎপাদন হচ্ছে, এ দুটি মিলে আমরা খুব লাভবান।’

মৌচাষি শহিদুল ইসলাম রানা বলেন, ‘এখানে ১০০ বিঘা জায়গায় তিল চাষ হয়েছে। আমি এ বছর ১৩০টি মৌমাছির বক্স এনেছি। ১৩০টি বক্সে আমি ৮ মণ মধু উৎপাদন করেছি। যার বাজারমূল্য ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ টাকা। ৮ মণ মধু উৎপাদন করতে মাত্র ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। দেড় লাখ টাকার মতো আমার লাভ হয়েছে।’

ভান্ডারিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এই মাঠে ১০০ বিঘা জমিতে তিল এবং মধু চাষ হয়েছে। তিল চাষের মাধ্যমে কৃষকেরা এ বছর ৪০ লাখ টাকার মতো মুনাফা করতে পারবে শুধু তিল বিক্রি করে। পাশাপাশি ১৩০টি মৌচাক স্থাপন করা হয়েছে। এ মৌচাকের মধু বিক্রির মাধ্যমে ১ থেকে দেড় লাখ টাকার মতো লাভ করা যাবে সব খরচ বাদ দিয়ে। আগামী বছর তিল চাষ সব উপজেলায় ছড়িয়ে পড়বে। কৃষি বিভাগ সব সময় কৃষকের পাশে থাকবে।’

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পতিত জমিতে মধু উৎপাদন ও তিল চাষে সফল কৃষক

আপডেট সময় : ০৭:৪৩:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫

কৃষি ও কৃষক ডেস্ক: পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলায় প্রথমবারের মতো ১০০ বিঘা জমিতে তিল চাষ ও মধু উৎপাদন করে সফলতার মুখ দেখেছেন কৃষক। এরই মধ্যে মধু উৎপাদন করে দেড় লাখ টাকা লাভ হয়েছে তাদের। উপজেলার ৫০-৬০ কৃষক জড়িত হয়েছেন এ কাজে। ফলন দেখে অধিকাংশ কৃষক আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তিল চাষে। উপজেলা কৃষি বিভাগও সহযোগিতা করছে।

সরেজমিন জানা গেছে, ভান্ডারিয়া উপজেলার গৌরীপুর ইউনিয়নে তিল খেতের পাশেই সারি সারি সাজানো আছে ১৩০টি মৌবক্স। ওই বক্সের হাজার হাজার মৌমাছি প্রতিযোগিতা করে ফুল থেকে সংগ্রহ করছে মধু। ফুলের সৌন্দর্যে মাঠজুড়ে এক উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

তিল ও মধু চাষের এ উদ্যোগ স্থানীয়ভাবে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় প্রায় ৫০-৬০ জন কৃষক বারি-৪ জাতের তিল চাষ করেছেন। প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে আনুমানিক ৫-৬ হাজার টাকা। সঠিকভাবে ফলন ঘরে তুলতে পারলে প্রতি বিঘায় ২৫-৩০ হাজার টাকা লাভের সম্ভাবনা আছে।

বরগুনা থেকে মৌচাষি দলের পাঁচ সদস্যকে এনে ভাণ্ডারিয়ায় ১৩০টি মৌচাক স্থাপন করা হয়। যা আরিফুল ইসলামের বাড়ির পাশে একটি বাগানে বসানো হয়েছে। সেখানে একবারে ৮ মণ মধু সংগ্রহ করে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা বিক্রি করা হয়েছে। যেখানে খরচের পরে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে বলে জানান মৌচাষি।

গৌরীপুর ইউনিয়নের কৃষক বাবুল হাওলাদার বলেন, ‘এসব মাঠ ফাঁকা থাকতো। গত বছর আমি কিছু জমিতে তিল চাষ করে লাভবান হয়েছি। ৫-৬ হাজার টাকা খরচ হয় প্রতি বিঘায়। বিক্রির সময় প্রতি একর জমির ফসল ২৫-৩০ হাজার টাকা বিক্রি করা যায়। এই লাভ দেখে এ বছর অনেক চাষি মিলে কৃষি অফিসারের সাথে আলাপ করলে তারা অনেক পরামর্শ দেন। এ বছর কয়েকজন চাষি মিলে প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে তিল চাষ করেছি। তিল চাষের পাশাপাশি মধু উৎপাদন হচ্ছে বাড়তি আয়।’

তিলচাষি মো. শাজাহান বলেন, ‘আমরা প্রথম ১ বিঘা জমিতে প্রদর্শনীর মাধ্যমে ফসল উৎপাদন শুরু করি। সেখানে লাভ হওয়ার কারণে এ বছর প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে তিল চাষ করেছি। বিঘায় ৫ হাজার টাকা খরচ হলেও প্রতি এক বিঘার উৎপাদিত ফসল ২৫-৩০ হাজার টাকা করে বিক্রি করতে পারবো। তিল চাষের সঙ্গে মধু উৎপাদন হচ্ছে, এ দুটি মিলে আমরা খুব লাভবান।’

মৌচাষি শহিদুল ইসলাম রানা বলেন, ‘এখানে ১০০ বিঘা জায়গায় তিল চাষ হয়েছে। আমি এ বছর ১৩০টি মৌমাছির বক্স এনেছি। ১৩০টি বক্সে আমি ৮ মণ মধু উৎপাদন করেছি। যার বাজারমূল্য ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ টাকা। ৮ মণ মধু উৎপাদন করতে মাত্র ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। দেড় লাখ টাকার মতো আমার লাভ হয়েছে।’

ভান্ডারিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এই মাঠে ১০০ বিঘা জমিতে তিল এবং মধু চাষ হয়েছে। তিল চাষের মাধ্যমে কৃষকেরা এ বছর ৪০ লাখ টাকার মতো মুনাফা করতে পারবে শুধু তিল বিক্রি করে। পাশাপাশি ১৩০টি মৌচাক স্থাপন করা হয়েছে। এ মৌচাকের মধু বিক্রির মাধ্যমে ১ থেকে দেড় লাখ টাকার মতো লাভ করা যাবে সব খরচ বাদ দিয়ে। আগামী বছর তিল চাষ সব উপজেলায় ছড়িয়ে পড়বে। কৃষি বিভাগ সব সময় কৃষকের পাশে থাকবে।’

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ