ঢাকা ১১:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

পতিত জমিতে পেয়ারা চাষে অপার সম্ভাবনা

  • আপডেট সময় : ০১:১৪:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ৪ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

ফেনী সংবাদদাতা: ফেনীর বিভিন্ন স্থানে পতিত ও অনাবাদি জমিতে পেয়ারা চাষে অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা সফল হয়েছেন। তাদের দেখাদেখি অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। ফেনীতে উৎপাদিত বারোমাসি এ ফলের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ ভালো থাকায় বাগান সৃষ্টি করতে কৃষি বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। চলতি মৌসুমে ১৮০ হেক্টর জমিতে পেয়ারা চাষ হয়েছে। যা থেকে অন্তত ২ হাজার মেট্রিক টন ফল পাওয়া যাবে। যার বাজারমূল্য অন্তত ৮ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

জানা যায়, একসময় ফেনীতে শখ করেই পেয়ারা আবাদ করা হতো। আঙিনা ও আশপাশের খালি জায়গায় শোভা পেতো পেয়ারা গাছ। সেই পেয়ারাই এখন হয়ে উঠেছে ফেনীর উদ্যোক্তাদের জন্য আশির্বাদ। এখন শুধু বাড়ির আঙিনা নয়; বিভিন্ন স্থানে পতিত জমিতে বাণিজ্যিকভাবে লাগানো হয়েছে পেয়ারা গাছ। সেই গাছের পেয়ারাগুলো উদ্যোক্তাদের স্বপ্ন হয়ে বাতাসের সঙ্গে দোলা খাচ্ছে। এসব পেয়ারা হাত বদল হয়ে জেলার চাহিদা পূরণ করে চলে যাচ্ছে আশপাশের জেলায়।

কৃষি বিভাগ জানায়, ২০১৫ সালের দিকে ফেনীতে কয়েকজন উদ্যোক্তা স্বল্প পরিসরে পেয়ারা আবাদ শুরু করেন। এতে ভালো ফলন পাওয়ায় বাণিজ্যিক আকারে আবাদ বাড়তে থাকে। ২০২০ সালে জেলায় ১১৭ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়। সেখানে ফলন হয় ১ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন। পেয়ারার পুষ্টিগুণ, স্বাদ ও ফলন ভালো হওয়ায় চলতি মৌসুমে পেয়ারা আবাদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৮০ হেক্টরে। যা থেকে অন্তত ২ হাজার মেট্রিক টন পেয়ারা পাওয়া যাবে।

সদর উপজেলার কালিদহ ইউনিয়নের কে পাহালিয়া এগ্রো পেয়ারা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ৭ একর জায়গাজুড়ে পেয়ারা বাগান তৈরি করা হয়েছে। এখানকার ৩ হাজার ২০০ গাছে থোকায় থোকায় পেয়ারা শোভা পাচ্ছে। মালিক-কর্মচারীরা গাছের পরিচর্যা ও ফল তোলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।

বাগানের পরিচালক ফরিদ উদ্দিন মাসুদ বলেন, ‌‘কয়েক বছর আগে কালিদাস পাহালিয়া নদীর তীরে পতিত জায়গায় আমরা ৮ জন সমন্বিত বাগান গড়ে তুলি। বাগানে ৩ হাজারের বেশি পেয়ারা গাছ আছে। ২০২১ সালের দিকে কৃষি বিভাগের পরামর্শে পেয়ারা গাছ লাগিয়ে ভালো ফলন পাই। বাগানে বারি-৩, বাউ-৩ ও ৫ এবং থাই জাতের পেয়ারার সবচেয়ে ভালো ফলন পাওয়া গেছে। এসব গাছে বারোমাস ফলন পাওয়া যায়। প্রতিটি গাছে বছরে ৬০-৬৫ কেজি পর্যন্ত পেয়ারা হচ্ছে। বছরে প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে ২ থেকে আড়াই হাজার টাকার পেয়ারা পাওয়া যায়।’

তিনি জানান, বাগানে পেয়ারার দাম ওঠানামা করে। সময় ও মৌসুম অনুযায়ী ৩০ টাকা থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত বাগানের পেয়ারা বিক্রি হয়। অনেকে সরাসরি বাগানে এসেও পেয়ারা সংগ্রহ করেন। এবার এ বাগানে অন্তত ১৯২.৫ মেট্রিক টন পেয়ারা উৎপাদন হতে পারে।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু তৈয়ব বলেন, ‘কে পাহালিয়া এগ্রোতে উৎপাদিত পেয়ারার দাম ৪০ টাকা দরে হিসেব করলেও চলতি বছরে অন্তত ৭৭ লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি হবে। বাগানের খরচ বাদ দিলেও বছরে এ বাগান থেকে অন্তত ৩০ লাখ টাকা লাভ পাবেন মালিকরা।’

এ ছাড়া ফেনী সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নে ৩ যুবক পরিত্যক্ত জমিতে গড়ে তুলেছেন জান্নাত এগ্রো নামের একটি বাগান। সেখানে ৩ একর জায়গায় ১,২০০ পেয়ারা গাছে দোলা দিচ্ছে লাখ লাখ টাকার পেয়ারা। প্রতিদিনই আশপাশের এলাকা থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করতে আসেন ক্রেতারা।

বাগানের পরিচালক তোফায়েল আহাম্মদ রনি বলেন, ‘আমাদের বাগানে গোল্ডেন-৮ (থাই), মাধবী ও তাইওয়ান পিংক জাতের ১,২০০টি পেয়ারা গাছ লাগানো হয়েছে। ৩ বছর আগের লাগানো প্রতিটি গাছে চলতি বছর আমরা ৪০-৫০ কেজি করে পেয়ারা পাওয়ার প্রত্যাশা করছি। প্রতি কেজি পেয়ারা ৩০-৪০ টাকায় পাইকারি বিক্রি করা হয়। আমাদের দেখে আশপাশের অনেকেই এখন পেয়ারা বাগান করা শুরু করেছেন।’

ফেনী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মহি উদ্দিন বলেন, ‘পেয়ারা গাছ লাগানোর জন্য বেলে ও দোআঁশ মাটি সবচেয়ে বেশি উপযোগী। ফেনীর বিভিন্ন পতিত স্থানে এ মাটি থাকায় স্থানীয়রা বাণিজ্যিকভাবে বারোমাসি পেয়ারা গাছ লাগিয়ে ভালো ফলন পেয়েছেন। আমরা কৃষি বিভাগ থেকে উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে আসছি।’

ফেনী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ বলেন, ‘লাভজনক হওয়ায় ফেনীতে পেয়ারা বাগান বেড়েছে। জেলায় বর্তমানে ১৮০ হেক্টর জমিতে পেয়ারা বাগান আছে। এসব বাগান থেকে উৎপাদিত পেয়ারা ফেনী জেলার চাহিদা মিটিয়ে আশাপাশের জেলায়ও বাণিজ্যিকভাবে পাঠানো হচ্ছে।’

এসি/আপ্র/২৬/০৯/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

পতিত জমিতে পেয়ারা চাষে অপার সম্ভাবনা

আপডেট সময় : ০১:১৪:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ফেনী সংবাদদাতা: ফেনীর বিভিন্ন স্থানে পতিত ও অনাবাদি জমিতে পেয়ারা চাষে অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা সফল হয়েছেন। তাদের দেখাদেখি অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। ফেনীতে উৎপাদিত বারোমাসি এ ফলের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ ভালো থাকায় বাগান সৃষ্টি করতে কৃষি বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। চলতি মৌসুমে ১৮০ হেক্টর জমিতে পেয়ারা চাষ হয়েছে। যা থেকে অন্তত ২ হাজার মেট্রিক টন ফল পাওয়া যাবে। যার বাজারমূল্য অন্তত ৮ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

জানা যায়, একসময় ফেনীতে শখ করেই পেয়ারা আবাদ করা হতো। আঙিনা ও আশপাশের খালি জায়গায় শোভা পেতো পেয়ারা গাছ। সেই পেয়ারাই এখন হয়ে উঠেছে ফেনীর উদ্যোক্তাদের জন্য আশির্বাদ। এখন শুধু বাড়ির আঙিনা নয়; বিভিন্ন স্থানে পতিত জমিতে বাণিজ্যিকভাবে লাগানো হয়েছে পেয়ারা গাছ। সেই গাছের পেয়ারাগুলো উদ্যোক্তাদের স্বপ্ন হয়ে বাতাসের সঙ্গে দোলা খাচ্ছে। এসব পেয়ারা হাত বদল হয়ে জেলার চাহিদা পূরণ করে চলে যাচ্ছে আশপাশের জেলায়।

কৃষি বিভাগ জানায়, ২০১৫ সালের দিকে ফেনীতে কয়েকজন উদ্যোক্তা স্বল্প পরিসরে পেয়ারা আবাদ শুরু করেন। এতে ভালো ফলন পাওয়ায় বাণিজ্যিক আকারে আবাদ বাড়তে থাকে। ২০২০ সালে জেলায় ১১৭ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়। সেখানে ফলন হয় ১ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন। পেয়ারার পুষ্টিগুণ, স্বাদ ও ফলন ভালো হওয়ায় চলতি মৌসুমে পেয়ারা আবাদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৮০ হেক্টরে। যা থেকে অন্তত ২ হাজার মেট্রিক টন পেয়ারা পাওয়া যাবে।

সদর উপজেলার কালিদহ ইউনিয়নের কে পাহালিয়া এগ্রো পেয়ারা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ৭ একর জায়গাজুড়ে পেয়ারা বাগান তৈরি করা হয়েছে। এখানকার ৩ হাজার ২০০ গাছে থোকায় থোকায় পেয়ারা শোভা পাচ্ছে। মালিক-কর্মচারীরা গাছের পরিচর্যা ও ফল তোলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।

বাগানের পরিচালক ফরিদ উদ্দিন মাসুদ বলেন, ‌‘কয়েক বছর আগে কালিদাস পাহালিয়া নদীর তীরে পতিত জায়গায় আমরা ৮ জন সমন্বিত বাগান গড়ে তুলি। বাগানে ৩ হাজারের বেশি পেয়ারা গাছ আছে। ২০২১ সালের দিকে কৃষি বিভাগের পরামর্শে পেয়ারা গাছ লাগিয়ে ভালো ফলন পাই। বাগানে বারি-৩, বাউ-৩ ও ৫ এবং থাই জাতের পেয়ারার সবচেয়ে ভালো ফলন পাওয়া গেছে। এসব গাছে বারোমাস ফলন পাওয়া যায়। প্রতিটি গাছে বছরে ৬০-৬৫ কেজি পর্যন্ত পেয়ারা হচ্ছে। বছরে প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে ২ থেকে আড়াই হাজার টাকার পেয়ারা পাওয়া যায়।’

তিনি জানান, বাগানে পেয়ারার দাম ওঠানামা করে। সময় ও মৌসুম অনুযায়ী ৩০ টাকা থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত বাগানের পেয়ারা বিক্রি হয়। অনেকে সরাসরি বাগানে এসেও পেয়ারা সংগ্রহ করেন। এবার এ বাগানে অন্তত ১৯২.৫ মেট্রিক টন পেয়ারা উৎপাদন হতে পারে।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু তৈয়ব বলেন, ‘কে পাহালিয়া এগ্রোতে উৎপাদিত পেয়ারার দাম ৪০ টাকা দরে হিসেব করলেও চলতি বছরে অন্তত ৭৭ লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি হবে। বাগানের খরচ বাদ দিলেও বছরে এ বাগান থেকে অন্তত ৩০ লাখ টাকা লাভ পাবেন মালিকরা।’

এ ছাড়া ফেনী সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নে ৩ যুবক পরিত্যক্ত জমিতে গড়ে তুলেছেন জান্নাত এগ্রো নামের একটি বাগান। সেখানে ৩ একর জায়গায় ১,২০০ পেয়ারা গাছে দোলা দিচ্ছে লাখ লাখ টাকার পেয়ারা। প্রতিদিনই আশপাশের এলাকা থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করতে আসেন ক্রেতারা।

বাগানের পরিচালক তোফায়েল আহাম্মদ রনি বলেন, ‘আমাদের বাগানে গোল্ডেন-৮ (থাই), মাধবী ও তাইওয়ান পিংক জাতের ১,২০০টি পেয়ারা গাছ লাগানো হয়েছে। ৩ বছর আগের লাগানো প্রতিটি গাছে চলতি বছর আমরা ৪০-৫০ কেজি করে পেয়ারা পাওয়ার প্রত্যাশা করছি। প্রতি কেজি পেয়ারা ৩০-৪০ টাকায় পাইকারি বিক্রি করা হয়। আমাদের দেখে আশপাশের অনেকেই এখন পেয়ারা বাগান করা শুরু করেছেন।’

ফেনী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মহি উদ্দিন বলেন, ‘পেয়ারা গাছ লাগানোর জন্য বেলে ও দোআঁশ মাটি সবচেয়ে বেশি উপযোগী। ফেনীর বিভিন্ন পতিত স্থানে এ মাটি থাকায় স্থানীয়রা বাণিজ্যিকভাবে বারোমাসি পেয়ারা গাছ লাগিয়ে ভালো ফলন পেয়েছেন। আমরা কৃষি বিভাগ থেকে উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে আসছি।’

ফেনী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ বলেন, ‘লাভজনক হওয়ায় ফেনীতে পেয়ারা বাগান বেড়েছে। জেলায় বর্তমানে ১৮০ হেক্টর জমিতে পেয়ারা বাগান আছে। এসব বাগান থেকে উৎপাদিত পেয়ারা ফেনী জেলার চাহিদা মিটিয়ে আশাপাশের জেলায়ও বাণিজ্যিকভাবে পাঠানো হচ্ছে।’

এসি/আপ্র/২৬/০৯/২০২৫