নিজস্ব প্রতিবেদক : আড়াই সপ্তাহ আগে নয়টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এখন সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
মন্ত্রী বলছেন, তারা ভোজ্যতেল ও চিনির দাম বেঁধে দিতে পারেন। এটা তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কিন্তু বাকি সাতটি পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার দায়িত্ব কৃষি মন্ত্রণালয়ের। দাম বেঁধে দেওয়ার ঘোষণা আসতে হবে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে। গতকাল শনিবার রাজধানীর প্রেসক্লাবে ওভারসিজ করেসপনডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (ওকাব) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
গত ৩০ আগস্ট বাণিজ্যমন্ত্রী চাল, গম, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, চিনি, মসুর ডাল, রড ও সিমেন্টের দাম বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন। ১৫ দিনের মধ্যে তা কার্যকরের কথাও বলেন তিনি। সে হিসেবে গতকাল সে সময় পেরিয়ে যায়। বাণিজ্যমন্ত্রী আরও সাত দিন সময় চেয়েছিলেন। আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে গিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী আজ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এ সংক্রান্ত একটি চিঠি কৃষি মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হবে।গত ৩০ আগস্ট বাণিজ্যমন্ত্রীর ওই ঘোষণার পর কৃষিমন্ত্রী এর বিরোধিতা করেছিলেন।
ডলারের বিকল্প হিসেবে অন্য কোনো মুদ্রার ব্যবহার নিয়ে সরকার কী ভাবছে এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, ডলারের পাশাপাশি ইউয়ান ব্যবহার নিয়ে আলোচনা চলছে। আমাদের ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো দরকার। অর্থ মন্ত্রণালয় বিকল্প মুদ্রার ব্যবহার নিয়ে কাজ করছে বলেন মন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে অ্যান্টি ডাম্পিং ট্যারিফ নিয়ে আলোচনার বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দুই দেশের সরকার প্রধানের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী ভারত অ্যন্টি ডাম্পিং ট্যারিফ বসাতে পারে না। আন্তর্জাতিক আদালতে না গিয়ে আমরা চাই আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহা করার। ভারতের প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেন বিষয়টি সমাধানের। মিট দ্য টকে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের আহ্বায়ক কাদির কল্লোল, সদস্যসচিব নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
‘যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির কারণে চীন থেকে কিছুটা সরে আসছি’ : বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির কারণে আমরা চীন থেকে কিছুটা সরে আসছি। তারপরও আমাদের আমদানিতে চীন-ভারতের ওপর নির্ভরতা আছে। মূলত আমাদের ইন্ডাস্ট্রি তৈরি না হওয়া পর্যন্ত এই নির্ভরশীলতা থাকবে। বৈশ্বিক চাওয়া ম্যান মেইড ফাইবার আমাদের নেই। তাই বিদেশ থেকে আনতে হচ্ছে। সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।
ডিম নিয়ে মন্ত্রী বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় পজিটিভ হলে ডিম আমদানি করা হবে। দাম নির্ধারণ হবে আলোচনার মাধ্যমে। ভারত থেকে ডিম আমদানি করে কম মূল্যে ভোক্তাদের দেওয়ার পক্ষে আমি। আজই কৃষি মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন পণ্যের দাম নির্ধারণ বিষয়ে কাগজ পাঠাবো। তবে কৃষকদের স্বার্থের বিষয়টিও দেখতে হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর অত্যন্ত সফল হয়েছে। অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিষয়ে কতগুলো আশাব্যঞ্জক আলোচনা হয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা যে যাবে না, তা এখন বোঝা যাচ্ছে। যদিও প্রথমে তাদের মানবিক কারণে জায়গা দেওয়া হয়েছিল। রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার মাধ্যমেই মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে। মিয়ানমারে কিছু গার্মেন্টস বন্ধ হওয়ায় আমাদের রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সেপা চুক্তি নিয়ে তিনি বলেন, ডিসেম্বর নাগাদ দুই পক্ষ বসে ভারতের সঙ্গে সেপা চুক্তির বিষয়ে সমাধান করা হবে। ইন্দোনেশিয়াসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে পিটিএ-এফটিএ চুক্তি করার চেষ্টা চলছে। মানবাধিকার নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ থাকলেও তা আমাদের বাণিজ্যে প্রভাব ফেলবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, গতবারের তুলনায় এবার ২০ শতাংশ বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ওকাবের আহ্বায়ক কাদির কল্লোলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ওকাবের সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম মিঠুসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত কৃষি মন্ত্রণালয়ের ওপর চাপালেন বাণিজ্যমন্ত্রী
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ




















