ঢাকা ০৬:২৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫

পড়ে আছে শিশুদের ব্যাগ-বই-খাতা, বাতাসে পোড়া গন্ধ

  • আপডেট সময় : ০৮:১৭:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫
  • ৭ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এখন যেন নিঃশব্দ এক মৃত্যুপুরি। প্রতিদিন এই সময়ে শিশুদের কোলাহল আর পড়ার শব্দে মুখর থাকত ক্লাসরুমগুলো। এখন সেগুলো খালি-সুনশান। ভবনের করিডোরে নেই কোলাহল-শিক্ষার্থীদের ছোটাছুটি। বাতাসে ভাসছে পোড়া গন্ধ; এখানে যে পুড়েছে কারও শরীর, কারও স্বপ্ন!

স্কুল ভবনের সামনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে শিশুদের বই, খাতা, ব্যাগ, জুতা, পানির বোতল। পড়ে আছে কয়েকজনের আঁকা ছবিও। এই ব্যাগ-বই-খাতায় যাদের কোমল হাত পড়ত তারা অনেকে হয়তো এখন না ফেরার দেশে, কিংবা হাসপাতালের বেড়ে পোড়া শরীর নিয়ে কাতরাচ্ছে।

সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে সংঘটিত ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার পর এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জুড়ে নেমে এসেছে গভীর শোক আর নীরবতা। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকালে মাইলস্টোন কলেজ ক্যাম্পাসের প্রাইমারি শাখার সামনে গিয়ে দেখা যায়, এখনো এখানে সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে গতকালের বিভীষিকাময় ঘটনার চিহ্ন। তৃতীয় শ্রেণির ‘প্রাথমিক বিজ্ঞান’, ‘বাংলা ব্যাকরণ’সহ একাধিক বই অর্ধেক পুড়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে আছে। খাতার পাতাগুলো আগুনের আঁচে বিবর্ণ হয়ে গেছে। কারো কারো নাম লেখা মলাট এখনো দৃশ্যমান। চারপাশে পোড়া কাগজের গন্ধ। সিঁড়ির পাশে পড়ে আছে ছোটদের ব্যাগ। উপস্থিত উৎসুক জনতা ও অভিভাবকরা দেখছেন পুড়ে যাওয়া শিশুদের এসব চিহ্ন। তাদের চোখে-মুখে উদ্বেগ, ক্ষোভ আর বেদনার ছাপ। নাজনীন সুলতানা নামে এক অভিভাবক বললেন, এগুলো আমাদের সন্তানদের বই। গতকাল পর্যন্ত তারা এখানে পড়ালেখা করছিল। এখন শুধু ছাই আর ধোঁয়া। স্কুল মানেই তো নিরাপদ আশ্রয় হওয়ার কথা। আজ তা মৃত্যুফাঁদ হয়ে উঠল কেন?
রফিকুল ইসলাম নামে একজন স্থানীয় বাসিন্দা, যিনি নিজেও উদ্ধার কাজে এগিয়ে এসেছিলেন, তিনি বলেন, আমি ছোটদের আর্তনাদ শুনে দৌড়ে এসেছিলাম। ধোঁয়ার ভেতর কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। যারা বাঁচতে পেরেছে, তারা বলছে-ভেতরে বের হওয়ার পথ খুঁজে পায়নি।

গত সোমবার (২১ জুলাই) দুপুর ১টার পর রাজধানীর উত্তরায় দুর্ঘটনায় পড়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধ বিমান। বিমানটি উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে গিয়ে পড়ে এবং বিধ্বস্ত হয়। সঙ্গে সঙ্গে বিমান ও স্কুল ভবনটিতে আগুন ধরে যায়। যে ভবনে এটি বিধ্বস্ত হয় সেখানে বহু স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থী ছিল। যাদের বেশিরভাগই হতাহত হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ২৭, যেখানে ২৫ জনই শিশু। আহত ও দগ্ধ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছে ৭৮ জন। সেখানেও শিশুদের সংখ্যা বেশি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনবহুল এলাকায় যুদ্ধবিমানের প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন

পড়ে আছে শিশুদের ব্যাগ-বই-খাতা, বাতাসে পোড়া গন্ধ

আপডেট সময় : ০৮:১৭:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এখন যেন নিঃশব্দ এক মৃত্যুপুরি। প্রতিদিন এই সময়ে শিশুদের কোলাহল আর পড়ার শব্দে মুখর থাকত ক্লাসরুমগুলো। এখন সেগুলো খালি-সুনশান। ভবনের করিডোরে নেই কোলাহল-শিক্ষার্থীদের ছোটাছুটি। বাতাসে ভাসছে পোড়া গন্ধ; এখানে যে পুড়েছে কারও শরীর, কারও স্বপ্ন!

স্কুল ভবনের সামনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে শিশুদের বই, খাতা, ব্যাগ, জুতা, পানির বোতল। পড়ে আছে কয়েকজনের আঁকা ছবিও। এই ব্যাগ-বই-খাতায় যাদের কোমল হাত পড়ত তারা অনেকে হয়তো এখন না ফেরার দেশে, কিংবা হাসপাতালের বেড়ে পোড়া শরীর নিয়ে কাতরাচ্ছে।

সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে সংঘটিত ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার পর এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জুড়ে নেমে এসেছে গভীর শোক আর নীরবতা। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকালে মাইলস্টোন কলেজ ক্যাম্পাসের প্রাইমারি শাখার সামনে গিয়ে দেখা যায়, এখনো এখানে সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে গতকালের বিভীষিকাময় ঘটনার চিহ্ন। তৃতীয় শ্রেণির ‘প্রাথমিক বিজ্ঞান’, ‘বাংলা ব্যাকরণ’সহ একাধিক বই অর্ধেক পুড়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে আছে। খাতার পাতাগুলো আগুনের আঁচে বিবর্ণ হয়ে গেছে। কারো কারো নাম লেখা মলাট এখনো দৃশ্যমান। চারপাশে পোড়া কাগজের গন্ধ। সিঁড়ির পাশে পড়ে আছে ছোটদের ব্যাগ। উপস্থিত উৎসুক জনতা ও অভিভাবকরা দেখছেন পুড়ে যাওয়া শিশুদের এসব চিহ্ন। তাদের চোখে-মুখে উদ্বেগ, ক্ষোভ আর বেদনার ছাপ। নাজনীন সুলতানা নামে এক অভিভাবক বললেন, এগুলো আমাদের সন্তানদের বই। গতকাল পর্যন্ত তারা এখানে পড়ালেখা করছিল। এখন শুধু ছাই আর ধোঁয়া। স্কুল মানেই তো নিরাপদ আশ্রয় হওয়ার কথা। আজ তা মৃত্যুফাঁদ হয়ে উঠল কেন?
রফিকুল ইসলাম নামে একজন স্থানীয় বাসিন্দা, যিনি নিজেও উদ্ধার কাজে এগিয়ে এসেছিলেন, তিনি বলেন, আমি ছোটদের আর্তনাদ শুনে দৌড়ে এসেছিলাম। ধোঁয়ার ভেতর কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। যারা বাঁচতে পেরেছে, তারা বলছে-ভেতরে বের হওয়ার পথ খুঁজে পায়নি।

গত সোমবার (২১ জুলাই) দুপুর ১টার পর রাজধানীর উত্তরায় দুর্ঘটনায় পড়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধ বিমান। বিমানটি উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে গিয়ে পড়ে এবং বিধ্বস্ত হয়। সঙ্গে সঙ্গে বিমান ও স্কুল ভবনটিতে আগুন ধরে যায়। যে ভবনে এটি বিধ্বস্ত হয় সেখানে বহু স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থী ছিল। যাদের বেশিরভাগই হতাহত হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ২৭, যেখানে ২৫ জনই শিশু। আহত ও দগ্ধ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছে ৭৮ জন। সেখানেও শিশুদের সংখ্যা বেশি।