প্রত্যাশা ডেস্ক : আমদানি বা রফতানীকৃত পণ্য সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুমতি নিয়ে খালাস করতে হয়। তাতে ব্যবসায়ীদের অনেক সময়ক্ষেপণ হয়। অনেক ক্ষেত্রে অনুমতির পরও নানা জটিলতার কারণে পচনশীল পণ্য দিনের পর দিন বন্দরে জমে থাকে। ফলে একদিনে যেমন আমদানি-রফতানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমনি রাজস্ব বঞ্চিত হয় সরকার। এমন অবস্থা কাটিয়ে উঠতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ‘পচনশীল পণ্য দ্রুত খালাস ও নিষ্পত্তীকরণ বিধিমালা-২০২১’ নামে খসড়া বিধিমালা চূড়ান্ত করে অতিসম্প্রতি অংশীজনদের কাছে মতামত চেয়েছে। আগামী ২০ মে পর্যন্ত ওই খসড়ার ওপর মতামত দেয়া যাবে। নতুন বিধিমালা অনুয়ায়ী, পচনশীল পণ্যচালান খালাসের জন্য বিল অব এন্ট্রি দাখিলে সর্বোচ্চ ৪৮ ঘণ্টা বা ৩ দিনের মধ্যে পরীক্ষণ, শুল্কায়ন ও খালাস সম্পন্ন করতে হবে। এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পচনশীর পণ্য খালাসের নতুন বিধিমালার আওতায় ফুল, ফল, ওষুধ থেকে শুরু করে পান, কাঁচা চামড়াসহ ৬৪ ধরনের পণ্যের তালিকা করা হয়েছে। বিধিমালায় বলা হয়, পচনশীল পণ্যের কোনো ক্ষতি বা গুণগত বা পরিমাণগত মান যাতে নষ্ট না হয় তা বিবেচনায় রেখে পণ্য খালাসে প্রযোজ্য আইন, বিধি ও আমদানি-রফতানি সংশ্লিষ্ট প্রযোজ্য শর্তাবলি পরিপালন সাপেক্ষে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ অতি দ্রুত পণ্য চালান ছাড়করণ নিশ্চিত করবে। সেক্ষেত্রে কাস্টম হাউজ বা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট বা কাস্টমস স্টেশনে কাস্টমস কর্মকর্তার দায়িত্বের বিষয়ে বলা হয়, পচনশীল পণ্যচালানের খালাস ব্যবস্থাপনা দ্রুত করতে প্রতিটি কাস্টম হাউজ বা কাস্টমস স্টেশনে পচনশীল পণ্যের পরীক্ষণ, শুল্কায়ন ও খালাসের জন্য সুনির্দিষ্ট শাখা বা গ্রুপ নির্ধারিত রাখতে হবে। এর মাধ্যমে পচনশীল পণ্যচালান খালাসের জন্য বিল অব এন্ট্রি দাখিলে সর্বোচ্চ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পরীক্ষণ, শুল্কায়ন ও খালাস সম্পন্ন করতে হবে। তবে কমিশনারের ভিন্ন কোনো নির্দেশনা বা অন্য কোনো সংস্থার বিশেষ কোনো আদেশ বা বিদ্যমান অন্য কোনো আইন বা বিধি বা আমদানি-রফতানি নীতি আদেশের শর্তপূরণ করতে না পারলে বা এ-সংক্রান্ত সার্টিফিকেট বা প্রত্যয়ন দাখিল করতে না পারলে খালাস সম্পন্ন হবে না। একই সঙ্গে কাস্টমস কর্তৃপক্ষসহ অন্য কোনো সরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কাছে কোনো দায়দেনা বা অপরিশোধিত চার্জ বা অন্য কোনো পাওনা থাকলে কিংবা শুল্কায়িত চালানের পরিশোধযোগ্য করাদি যথাসময়ে পরিশোধ না করলে এ সময়সীমা প্রযোজ্য হবে না।
সূত্র জানায়, নতুন বিধিমালা অনুসারে পচনশীল পণ্য চালান খালাসের বিষয়ে আমদানি-রফতানিকারক অথবা তার অনুকূলে সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি দিন-রাত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যে কোনো সময়ে সিস্টেমে বিল অব এন্ট্রি বা বিল অব এক্সপোর্ট দাখিল করতে পারবে। পাশাপাশি নির্ধারিত দাপ্তরিক সময়সূচির বাইরেও সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি কর্তৃক অবহিতকরণের পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ কর্মকর্তা ওই পচনশীল পণ্যচালানের পরীক্ষণ, শুল্কায়ন, খালাস সব কার্যক্রম সম্পন্ন করবে। বিধিমালায় বলা হয়, পচনশীল যেসব পণ্যচালান আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে বিশেষায়িত সার্টিফিকেট বা প্রত্যয়নপত্র, যেমন বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই), বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন বা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, উদ্ভিদ সঙ্গরিরোধ দপ্তর, প্রাণী সঙ্গনিরোধ দপ্তর, মৎস্য সঙ্গনিরোধ দপ্তরের প্রত্যয়নপত্র পণ্য চালান আসা বা যাওয়ার আগেই সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক বা রফতানিকারক অথবা এজেন্ট কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে জমা দেবে। প্রযোজ্য সনদ বা অনাপত্তি পাওয়া সাপেক্ষে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ পণ্য খালাসের অনুমতি দেবে। আর শুল্ক-কর, ফি চার্জ ইত্যাদি পরিশোধের ক্ষেত্রে বিধিমালায় বলা হয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে নির্ধারিত ইলেকট্রনিক পেমেন্ট পদ্ধতিতে পরিশোধ করা হবে। তবে ইলেকট্রনিক পেমেন্ট ব্যবস্থা পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত প্রযোজ্য শুল্ক-কর বা চার্জ স্বাভাবিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিশোধ করা যাবে।
সূত্র আরো জানায়, নতুন তৈরি করা বিধিমালায় আরো বলা হয়, আগে এ-সংক্রান্ত যতো আইন রয়েছে, এ বিধিমালা কার্যকর হওয়ার পর তা রহিত হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে এ বিধিমালার আলোকে পচনশীল পণ্য আমদানি-রফতানির প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। কোনো আমদানিকারক যদি নির্ধারিত সময় পণ্য খালাস না করে সেক্ষেত্রে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিশনার নিলামসহ পচনশীল পণ্য ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করবে। ওই কমিটি নিলাম বা ধ্বংস করার বিষয়টি নিষ্পত্তি করবে। তাছাড়া বিধিমালায় আরো বলা হয়, কায়িক পরীক্ষা বা নন ইন্ট্রুসিভ ইন্সপেকশনের জন্য নির্বাচিত পণ্য চালানগুলোর ক্ষেত্রে মান, পরিমাণ বা অন্যান্য জিজ্ঞাসা থাকলে ইন্সপেকশন অ্যাক্ট নামক অংশে লিপিবদ্ধ করে সংশ্লিষ্ট শাখায় প্রেরণ করবে। আর পরিবীক্ষণের ১২ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঠাতে হবে। তবে সংশ্লিষ্ট কমিশনারের অনুমতি সাপেক্ষে এ সময় বাড়ানো যেতে পারে বলেও খসড়ার বিধিমালায় বলা হয়েছে। পাশাপাশি জব্দকৃত পণ্য বা আটককৃত, যেমন চিনি, লবণ ইত্যাদির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অথরিটি ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) সঙ্গে সমন্বয় করে মূল্য নির্ধারণপূর্বক বিক্রয় বা হস্তান্তর করা যাবে। আর সংশ্লিষ্ট কাস্টম হাউজের কমিশনার বিষয়টি সমন্বয় করবেন বলেও বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে এনবিআরের সদস্য (কাস্টমস নিরীক্ষা, আধুনিকায়ন ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য) জানান, বিধিমালাটা চূড়ান্ত করার জন্য ইতিমধ্যে এনবিআর বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনসহ অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। এরপর অর্থমন্ত্রীর কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু অর্থমন্ত্রী আবারো ব্যবসায়ীদের মতামত নিতে বলেছেন। ওই পরিপ্রেক্ষিতে চূড়ান্ত করা বিধিমালার ওপর আবারো অংশীজনদের কাছে মতামত চাওয়া হয়েছে। আশা করা যায়, শিগগিরই বিধিমালা চূড়ান্ত আকারে প্রজ্ঞাপন জারি করা যাবে।
পচনশীল পণ্য চালান ৩ দিনে খালাসে হচ্ছে নতুন বিধিমালা
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ