ঢাকা ০৫:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫

ন্যূনতম ১৫% করপোরেট করের ঐতিহাসিক চুক্তিতে সায় বিশ্ব নেতাদের

  • আপডেট সময় : ১২:০৪:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২১
  • ৬৮ বার পড়া হয়েছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কর ফাঁকি দিতে করস্বর্গে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ব্যবসা নিবন্ধনের পথ বন্ধ করতে ন্যূনতম ১৫ শতাংশ বৈশ্বিক করপোরেট করের ঐতিহাসিক চুক্তি অনুমোদন করেছেন বিশ্ব নেতারা।
গত শনিবার রোমে বিশ্বের শীর্ষ ২০ অর্থনীতির দেশের নেতারা এ চুক্তিতে সম্মতি দেন। পাশাপাশি তারা গরীব দেশগুলোর জন্য করোনাভাইরাসের আরও টিকার ব্যবস্থা করতে রাজি হয়েছেন বলে রয়টার্স জানিয়েছে। ২০২২ সালের মধ্যেই বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশকের টিকার আওতায় আনার বিষয়ে তারা প্রতিশ্রুতি দেন।
গত শনিবার বিশ্বের ২০টি বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের প্রধানদের দুই দিনব্যাপী সম্মেলন ইতালির রাজধানী রোমে শুরু হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারীতে ভাটার টান শুরু হওয়ায় দুই বছরের মধ্যে এই প্রথম এসব দেশের নেতারা পরস্পরের মুখোমুখি হয়ে কথা বলছেন। ইতালির প্রেসিডেন্ট মারিও দ্রাগি এসব দেশের নেতাদের স্বাগত জানিয়েছেন। তবে কোভিড-১৯ নিয়ে ধারাবাহিক উদ্বেগের কারণে চীন ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্টরা সম্মেলনে আসেননি। তারা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এতে অংশ নেন বলে বিবিসি জানায়।
করপোরেট কর ছাড়াও দুই দিন পর গ্লাসগোতে শুরু হতে যাওয়া কপ২৬ এর প্রেক্ষাপটে এবারের সম্মেলনে জলবায়ু, কোভিড-১৯ মহামারী ও এর কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষতি পুনরুদ্ধার নিয়ে আলোচনা প্রাধান্য পাবে- এমনটিই ধারণা করা হচ্ছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রয়টার্স।
করপোরেট করের বিষয়টি ছাড়াও রোমের এ সম্মেলনে প্রথম দিনের অধিকাংশ সময়জুড়ে থাকে কোভিড-১৯ স্বাস্থ্য সংকট। অর্থনীতি পুনরুদ্ধার নিয়ে আলোচনাও গুরুত্ব পায়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়েও এদিন কথা হয়। তবে এ নিয়ে মূল আলোচনা ও বিতর্ক হয় গতকাল রোববার। বিবিসি জানায়, রোমে প্রথম দিনের বৈঠকেই করপোরেট কর নিয়ে চলে আসা দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বৈশ্বিক চুক্তিকে অনুমোদন দেন জি২০ দেশের নেতারা।
এতে করে বিশ্বের বৃহৎ কোম্পানিগুলোর কর এড়াতে অপেক্ষাকৃত স্বল্প করের দেশে যাওয়ার পথ বন্ধ হল। এর আগে গত ৮ অক্টোবর বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে একটি ন্যায্য করহারের আওতায় আনতে এবং তাদের কর ফাঁকির পথ বন্ধ করতে ঐতিহাসিক চুক্তিতে পৌঁছায় অধিকাংশ দেশ।
তখন চুক্তি করার মধ্য দিয়ে ১৩৬টি দেশ ঘোষণা দেয়, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে অন্তত ১৫ শতাংশ হারে করপোরেট কর আদায় করবে তারা। পাশাপাশি যে লাভ তারা করবে, সেটির একটি ন্যায্য অংশ যেন তারা কর হিসেবে দেয়, সেটাও নিশ্চিত করা হবে। এ চুক্তির ফলে গুগল, মাইক্রোসফট, ফেইসবুক, আমাজনসহ বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর করস্বর্গ হিসেবে পরিচিত নিচু হারের করের দেশগুলোতে ব্যবসা সরিয়ে নেওয়ার পথ আর থাকবে না।
রয়টার্স লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ বিষয়ে টুইটে বলেছেন- “এটি একটি কর চুক্তির চাইতেও বেশি কিছু। এটি বৈশ্বিক অর্থনীতিকে একটি আকার দেবে এবং মানুষের জন্য অবদান রাখবে।“
এ চুক্তির জন্য আলোচনা চলছিল অনেক দিন থেকেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সমর্থন আর কোভিড-১৯ মহামারীর অর্থনৈতিক অভিঘাত সেই আলোচনাকে আরও বেগবান করে। এ ধারাবাহিকতায় তা এবার জি২০ দেশের অনুমোদন পেল। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর আইন করার মাধ্যমে ২০২৩ সাল থেকে এ চুক্তি কার্যকর করার কথা এর আগে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল রয়টার্স। বৈশ্বিক কর আরোপের এ আলোচনার নেতৃত্বে থাকা প্যারিসভিত্তিক অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) বলছে, বিশ্ব অর্থনীতির ৯০ শতাংশ এই চুক্তির আওতায় আসবে। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি জায়ান্ট ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে আরও বেশি কর আদায়ের এই মাইলফলক চুক্তির বিষয়ে দীর্ঘদিনের ধারাবাহিক আলোচনার পর চলতি বছরের ৬ জুন সমঝোতায় পৌঁছায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ জি৭ জোটের দেশগুলো।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো তখন বৈশ্বিক করারোপের এ সমঝোতাকে ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছিল, ‘ট্যাক্স হেভেন’ হিসেবে পরিচিত নি¤œ করের দেশগুলোতে কোম্পানিগুলোর মুনাফা স্থানান্তরের বিষয়টিকে নিরুৎসাহিত করতেও জি৭ প্রণোদনা কমাবে। নিজ দেশের উচ্চ হারের কর এড়াতে প্রায় সব বড় কোম্পানির কম করহারের দেশগুলোতে ব্যবসা নিবন্ধনের যে প্রবণতা বছরের পর বছর ধরে চলছি, এবার তা কমার সুযোগ তৈরি হবে।
ওইসিডি জানিয়েছে, এ চুক্তির ফলে যদি নূন্যতম করও আরোপ করা হয়, তাহলে বছরে অন্তত ১৫০ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব বাড়বে। পাশাপাশি কোম্পানিগুলো যেসব দেশে ব্যবসা করে, সেসব দেশে ১২৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি মুনাফা স্থানান্তর হবে এবং সেই লাভের ওপর আরও কর আরোপের অধিকার তৈরি হবে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ন্যূনতম ১৫% করপোরেট করের ঐতিহাসিক চুক্তিতে সায় বিশ্ব নেতাদের

আপডেট সময় : ১২:০৪:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কর ফাঁকি দিতে করস্বর্গে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ব্যবসা নিবন্ধনের পথ বন্ধ করতে ন্যূনতম ১৫ শতাংশ বৈশ্বিক করপোরেট করের ঐতিহাসিক চুক্তি অনুমোদন করেছেন বিশ্ব নেতারা।
গত শনিবার রোমে বিশ্বের শীর্ষ ২০ অর্থনীতির দেশের নেতারা এ চুক্তিতে সম্মতি দেন। পাশাপাশি তারা গরীব দেশগুলোর জন্য করোনাভাইরাসের আরও টিকার ব্যবস্থা করতে রাজি হয়েছেন বলে রয়টার্স জানিয়েছে। ২০২২ সালের মধ্যেই বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশকের টিকার আওতায় আনার বিষয়ে তারা প্রতিশ্রুতি দেন।
গত শনিবার বিশ্বের ২০টি বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের প্রধানদের দুই দিনব্যাপী সম্মেলন ইতালির রাজধানী রোমে শুরু হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারীতে ভাটার টান শুরু হওয়ায় দুই বছরের মধ্যে এই প্রথম এসব দেশের নেতারা পরস্পরের মুখোমুখি হয়ে কথা বলছেন। ইতালির প্রেসিডেন্ট মারিও দ্রাগি এসব দেশের নেতাদের স্বাগত জানিয়েছেন। তবে কোভিড-১৯ নিয়ে ধারাবাহিক উদ্বেগের কারণে চীন ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্টরা সম্মেলনে আসেননি। তারা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এতে অংশ নেন বলে বিবিসি জানায়।
করপোরেট কর ছাড়াও দুই দিন পর গ্লাসগোতে শুরু হতে যাওয়া কপ২৬ এর প্রেক্ষাপটে এবারের সম্মেলনে জলবায়ু, কোভিড-১৯ মহামারী ও এর কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষতি পুনরুদ্ধার নিয়ে আলোচনা প্রাধান্য পাবে- এমনটিই ধারণা করা হচ্ছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রয়টার্স।
করপোরেট করের বিষয়টি ছাড়াও রোমের এ সম্মেলনে প্রথম দিনের অধিকাংশ সময়জুড়ে থাকে কোভিড-১৯ স্বাস্থ্য সংকট। অর্থনীতি পুনরুদ্ধার নিয়ে আলোচনাও গুরুত্ব পায়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়েও এদিন কথা হয়। তবে এ নিয়ে মূল আলোচনা ও বিতর্ক হয় গতকাল রোববার। বিবিসি জানায়, রোমে প্রথম দিনের বৈঠকেই করপোরেট কর নিয়ে চলে আসা দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বৈশ্বিক চুক্তিকে অনুমোদন দেন জি২০ দেশের নেতারা।
এতে করে বিশ্বের বৃহৎ কোম্পানিগুলোর কর এড়াতে অপেক্ষাকৃত স্বল্প করের দেশে যাওয়ার পথ বন্ধ হল। এর আগে গত ৮ অক্টোবর বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে একটি ন্যায্য করহারের আওতায় আনতে এবং তাদের কর ফাঁকির পথ বন্ধ করতে ঐতিহাসিক চুক্তিতে পৌঁছায় অধিকাংশ দেশ।
তখন চুক্তি করার মধ্য দিয়ে ১৩৬টি দেশ ঘোষণা দেয়, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে অন্তত ১৫ শতাংশ হারে করপোরেট কর আদায় করবে তারা। পাশাপাশি যে লাভ তারা করবে, সেটির একটি ন্যায্য অংশ যেন তারা কর হিসেবে দেয়, সেটাও নিশ্চিত করা হবে। এ চুক্তির ফলে গুগল, মাইক্রোসফট, ফেইসবুক, আমাজনসহ বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর করস্বর্গ হিসেবে পরিচিত নিচু হারের করের দেশগুলোতে ব্যবসা সরিয়ে নেওয়ার পথ আর থাকবে না।
রয়টার্স লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ বিষয়ে টুইটে বলেছেন- “এটি একটি কর চুক্তির চাইতেও বেশি কিছু। এটি বৈশ্বিক অর্থনীতিকে একটি আকার দেবে এবং মানুষের জন্য অবদান রাখবে।“
এ চুক্তির জন্য আলোচনা চলছিল অনেক দিন থেকেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সমর্থন আর কোভিড-১৯ মহামারীর অর্থনৈতিক অভিঘাত সেই আলোচনাকে আরও বেগবান করে। এ ধারাবাহিকতায় তা এবার জি২০ দেশের অনুমোদন পেল। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর আইন করার মাধ্যমে ২০২৩ সাল থেকে এ চুক্তি কার্যকর করার কথা এর আগে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল রয়টার্স। বৈশ্বিক কর আরোপের এ আলোচনার নেতৃত্বে থাকা প্যারিসভিত্তিক অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) বলছে, বিশ্ব অর্থনীতির ৯০ শতাংশ এই চুক্তির আওতায় আসবে। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি জায়ান্ট ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে আরও বেশি কর আদায়ের এই মাইলফলক চুক্তির বিষয়ে দীর্ঘদিনের ধারাবাহিক আলোচনার পর চলতি বছরের ৬ জুন সমঝোতায় পৌঁছায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ জি৭ জোটের দেশগুলো।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো তখন বৈশ্বিক করারোপের এ সমঝোতাকে ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছিল, ‘ট্যাক্স হেভেন’ হিসেবে পরিচিত নি¤œ করের দেশগুলোতে কোম্পানিগুলোর মুনাফা স্থানান্তরের বিষয়টিকে নিরুৎসাহিত করতেও জি৭ প্রণোদনা কমাবে। নিজ দেশের উচ্চ হারের কর এড়াতে প্রায় সব বড় কোম্পানির কম করহারের দেশগুলোতে ব্যবসা নিবন্ধনের যে প্রবণতা বছরের পর বছর ধরে চলছি, এবার তা কমার সুযোগ তৈরি হবে।
ওইসিডি জানিয়েছে, এ চুক্তির ফলে যদি নূন্যতম করও আরোপ করা হয়, তাহলে বছরে অন্তত ১৫০ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব বাড়বে। পাশাপাশি কোম্পানিগুলো যেসব দেশে ব্যবসা করে, সেসব দেশে ১২৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি মুনাফা স্থানান্তর হবে এবং সেই লাভের ওপর আরও কর আরোপের অধিকার তৈরি হবে।