ঢাকা ০৩:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ন্যাটোতে আর যোগ দিতে চায় না ইউক্রেন: জেলেনস্কি

  • আপডেট সময় : ০২:৪২:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ মার্চ ২০২২
  • ১০৭ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য পদ পাওয়ার বিষয়টিতে আর জোর দিচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
জেলেনস্কি একজন দোভাষীর মাধ্যমে এবিসি নিউজকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তাঁর সাক্ষাৎকারটি গত সোমবার রাতে প্রচার করা হয়। এই সাক্ষাৎকারে তিনি ন্যাটোর সদস্য পদ নিয়ে কথা বলেন।
ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্য পদ-সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে জেলেনস্কি বলেন, তিনি অনেক আগেই এ ব্যাপারে শান্ত হয়েছেন, যখন তাঁরা বুঝতে পেরেছেন যে ইউক্রেনকে গ্রহণ করতে ন্যাটো প্রস্তুত নয়। তাই তিনি এখন আর ন্যাটোর সদস্য পদ পাওয়ার বিষয়টিতে জোর দিচ্ছেন না। ন্যাটো বিতর্কিত বিষয়গুলোকে ভয় পায় বলে মন্তব্য করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। তিনি আরও বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতের ব্যাপারেও ন্যাটো শঙ্কিত।
ইউক্রেন বলছে, রুশ হামলা অব্যাহত থাকায় তারা দেশটির অবরুদ্ধ শহরগুলো থেকে বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে পারছে না। ন্যাটোর সদস্য পদ পাওয়া না পাওয়া সম্পর্কে জেলেনস্কি বলেন, তিনি এমন একটি দেশের প্রেসিডেন্ট হতে চান না, যে দেশটি হাঁটু গেড়ে কিছু ভিক্ষা করে। ন্যাটোর সদস্য পদ বিষয়ে জেলেনস্কির এই অবস্থান মস্কোকে আপাতত শান্ত করার একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। রাশিয়া বলে আসছে, তারা কোনোভাবেই চায় না যে প্রতিবেশী ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দিক। পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর সম্প্রসারণকে একটি হুমকি হিসেবে দেখে থাকে রাশিয়া। প্রতিবেশী ইউক্রেনে হামলার অজুহাত হিসেবে যেসব কারণের কথা রাশিয়া বলছে, তার মধ্যে অন্যতম কিয়েভের ন্যাটোর সদস্য পদ পাওয়ার চেষ্টা।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। এই হামলার তিন দিন আগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পূর্ব ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলের রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী নিয়ন্ত্রিত দুটি এলাকাকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেন। এলাকা দুটি হলো দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক।
যুদ্ধ বন্ধের জন্য ইউক্রেনকে রাশিয়া যেসব শর্ত দিয়েছে, তার মধ্যে দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির বিষয়টি রয়েছে। পুতিন চান, এই দুটি এলাকাকে ইউক্রেন স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিক। রাশিয়ার এই দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে জেলেনস্কি বলেন, দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের বিষয়ে একটা ‘আপস’ করার জন্য তিনি খোলামনে আছেন। এ নিয়ে সংলাপের জন্য তিনি খোলামনে রয়েছেন। এ প্রসঙ্গে জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘আমি নিরাপত্তা গ্যারান্টির কথা বলছি।’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, এই দুটি অঞ্চলকে রাশিয়া ছাড়া আর কেউ স্বীকৃতি দেয়নি। তবে তাঁরা এ বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন। এই অঞ্চল দুটি কীভাবে থাকবে, সে বিষয়ে সমঝোতার উপায় খুঁজতে পারেন।
সর্বত্র রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রত্যয় জেলেনস্কির : ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্সে ব্রিটিশ এমপিদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন। গত মঙ্গলবারের এ ভাষণে তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের কথা পুনরাবৃত্ত করে ‘বনে, মাঠে, উপকূলে, রাস্তায়’ শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রাশিয়াকে ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ অভিহিত করে তাদের সঙ্গে লড়াইয়ে ইউক্রেনকে আরও সাহায্য করার জন্য ব্রিটেনের প্রতি আবেদন জানান তিনি। যতই ক্ষয়ক্ষতি হোক, ইউক্রেন রাশিয়ার সঙ্গে লড়াই করে যাবে বলে দৃঢ় কণ্ঠে জানান তিনি। হাউস অব কমন্সের ভরা চেম্বারের সামনে জেলেনস্কি রাশিয়ার আগ্রাসনের দৈনিক চিত্র, ব্যবহৃত অস্ত্র, বেসামরিক হতাহতের এবং খাদ্য ও পানির সংকটের কথা তুলে ধরেন। জলপাই সবুজ টিশার্ট পরা জেলেনস্কি রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেইনকে সমর্থন দিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে চাওয়ায় এবং ইতোমধ্যে দেওয়া সহায়তার জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরসি জনসনকে ধন্যবাদ জানান। তবে ব্রিটেন ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশকে আরও অনেক কিছু করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। রাশিয়াকে শাস্তি দিতে এরইমধ্যে মস্কোর বিরুদ্ধে জারি করা নিষেধাজ্ঞার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার, ইউক্রেইনে ‘নো-ফ্লাই জোন’ ঘোষণা ও রাশিয়াকে ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ বলে ঘোষণার জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের বিখ্যাত নাটক হ্যামলেট থেকে উদ্ধৃত করে বলেন, “এখন আমাদের জন্য প্রশ্ন হচ্ছে, হবে কি হবে না; আমি এর নিশ্চিত উত্তর দিতে পারি, তা হল, অবশ্যই হবে। “আমরা হাল ছাড়ব না আর পরাজিতও হবো না। আমরা সাগরে, আকাশে শেষ পর্যন্ত লড়াই করব, যত মূল্যই দিতে হোক আমরা আমাদের ভূমির জন্য লড়াই চালিয়ে যাব। আমরা বনে, মাঠে, উপকূলে, রাস্তায় লড়াই চালিয়ে যাব।” তিনি বলেন, “এই লড়াই আমরা শুরু করিনি আর করতেও চাইনি, কিন্তু এখন আমাদের এটি চালিয়ে যেতে হবে। যা কিছু আমাদের, আমাদের দেশ ইউক্রেনকে আমরা হারাতে চাই না।” ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জনসন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ব্রিটেন ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করে ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করার মাধ্যমে ‘চাপ অব্যাহত রাখবে’ আর চলতি বছরের শেষ নাগাদ রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করে দেবে।
সুমাইয়ে রুশ বিমান হামলায় ৩ শিশুসহ নিহত ২২ : ইউক্রেনের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় শহর সুমাইয়ে রাশিয়ার চালানো বিমান হামলায় তিন শিশুসহ মোট ২২ জন নিহত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে কর্তৃপক্ষ।
রাশিয়া সোমবার রাতে শহরের উত্তরপূর্ব অংশের আবাসিক এলাকায় বোমা ফেলেছে জানিয়ে সুমাইয়ের আঞ্চলিক গভর্নর দিমিত্র ঝিবিৎস্কিয়ি এ ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ অভিহিত করেছেন। “এক সন্ধ্যাতেই তিন বোমা। মর্মান্তিক এক রাত ছিল,” টেলিগ্রামে তিনি এমনটাই লিখেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। রুশ হামলায় একটি বাড়িরই ৯ জন নিহত হয়েছে; ৬টি বাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে, ২০টির মতো বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, জানিয়েছে ইউক্রেইনের কর্তৃপক্ষ। সুমাইয়ে টানা কয়েকদিন ধরে রুশ বাহিনীর গোলাবর্ষণের খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে এসেছে। মঙ্গলবার শহরটি থেকে ৫ হাজার বেসামরিক লোককে সরিয়েও নেওয়া হয়েছে। বেসামরিক লোকদের সরিয়ে নিতে বুধবারও শহরটিতে ‘মানবিক করিডোর’ খোলা থাকবে বলে রাশিয়া ও ইউক্রেইন উভয় কর্তৃপক্ষের দিক থেকেই আশ্বাস মিলেছে। সোমবার রাতে ওই বোমা হামলার ঘটনা ঘটলেও ছবিসহ এর বিস্তারিত গতকাল বুধবার প্রকাশিত হয়েছে।
৫ শহরে আরেক দফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা রাশিয়ার : রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনের আরও চারটি শহরের বেসামরিক নাগরিকদের সরে যেতে দিতে আরেক দফা যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। মস্কো জানিয়েছে স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার সকাল দশটা থেকে কিয়েভ, চেরনিহিভ, সামি, খারকিভ এবং মারিয়োপোল শহরে মানবিক করিডর দেওয়া হবে। রাশিয়ার ন্যাশনাল ডিফেন্স কন্ট্রোল সেন্টারের প্রধান মিখাইল মিজিনেস্তভকে উদ্ধৃত করে রুশ বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদে সরে যাওয়া নিশ্চিত করতে মানবিক করিডর দেওয়া হবে। তবে মানবিক করিডরের আওতায় থাকা শহরগুলোর বাসিন্দাদের রাশিয়া কিংবা বেলারুশের মধ্য দিয়ে যেতে হবে কিনা তা স্পষ্ট নয়। তবে আগে এই ধরনের শর্ত প্রত্যাখ্যান করে ইউক্রেনের সরকার। রুশ আগ্রাসন শুরুর পর মানবিক করিডর চালুর পর মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো সামি শহর থেকে বেসামরিকদের সফলভাবে সরিয়ে নেওয়ার কথা জানায় ইউক্রেন। তবে মারিয়োপোল শহরের মানবিক করিডরে রুশ বাহিনী হামলা করেছে বলে অভিযোগ তুলেছে ইউক্রেন। সূত্র: রয়টার্স

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ন্যাটোতে আর যোগ দিতে চায় না ইউক্রেন: জেলেনস্কি

আপডেট সময় : ০২:৪২:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ মার্চ ২০২২

প্রত্যাশা ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য পদ পাওয়ার বিষয়টিতে আর জোর দিচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
জেলেনস্কি একজন দোভাষীর মাধ্যমে এবিসি নিউজকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তাঁর সাক্ষাৎকারটি গত সোমবার রাতে প্রচার করা হয়। এই সাক্ষাৎকারে তিনি ন্যাটোর সদস্য পদ নিয়ে কথা বলেন।
ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্য পদ-সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে জেলেনস্কি বলেন, তিনি অনেক আগেই এ ব্যাপারে শান্ত হয়েছেন, যখন তাঁরা বুঝতে পেরেছেন যে ইউক্রেনকে গ্রহণ করতে ন্যাটো প্রস্তুত নয়। তাই তিনি এখন আর ন্যাটোর সদস্য পদ পাওয়ার বিষয়টিতে জোর দিচ্ছেন না। ন্যাটো বিতর্কিত বিষয়গুলোকে ভয় পায় বলে মন্তব্য করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। তিনি আরও বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতের ব্যাপারেও ন্যাটো শঙ্কিত।
ইউক্রেন বলছে, রুশ হামলা অব্যাহত থাকায় তারা দেশটির অবরুদ্ধ শহরগুলো থেকে বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে পারছে না। ন্যাটোর সদস্য পদ পাওয়া না পাওয়া সম্পর্কে জেলেনস্কি বলেন, তিনি এমন একটি দেশের প্রেসিডেন্ট হতে চান না, যে দেশটি হাঁটু গেড়ে কিছু ভিক্ষা করে। ন্যাটোর সদস্য পদ বিষয়ে জেলেনস্কির এই অবস্থান মস্কোকে আপাতত শান্ত করার একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। রাশিয়া বলে আসছে, তারা কোনোভাবেই চায় না যে প্রতিবেশী ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দিক। পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর সম্প্রসারণকে একটি হুমকি হিসেবে দেখে থাকে রাশিয়া। প্রতিবেশী ইউক্রেনে হামলার অজুহাত হিসেবে যেসব কারণের কথা রাশিয়া বলছে, তার মধ্যে অন্যতম কিয়েভের ন্যাটোর সদস্য পদ পাওয়ার চেষ্টা।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। এই হামলার তিন দিন আগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পূর্ব ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলের রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী নিয়ন্ত্রিত দুটি এলাকাকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেন। এলাকা দুটি হলো দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক।
যুদ্ধ বন্ধের জন্য ইউক্রেনকে রাশিয়া যেসব শর্ত দিয়েছে, তার মধ্যে দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির বিষয়টি রয়েছে। পুতিন চান, এই দুটি এলাকাকে ইউক্রেন স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিক। রাশিয়ার এই দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে জেলেনস্কি বলেন, দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের বিষয়ে একটা ‘আপস’ করার জন্য তিনি খোলামনে আছেন। এ নিয়ে সংলাপের জন্য তিনি খোলামনে রয়েছেন। এ প্রসঙ্গে জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘আমি নিরাপত্তা গ্যারান্টির কথা বলছি।’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, এই দুটি অঞ্চলকে রাশিয়া ছাড়া আর কেউ স্বীকৃতি দেয়নি। তবে তাঁরা এ বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন। এই অঞ্চল দুটি কীভাবে থাকবে, সে বিষয়ে সমঝোতার উপায় খুঁজতে পারেন।
সর্বত্র রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রত্যয় জেলেনস্কির : ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্সে ব্রিটিশ এমপিদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন। গত মঙ্গলবারের এ ভাষণে তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের কথা পুনরাবৃত্ত করে ‘বনে, মাঠে, উপকূলে, রাস্তায়’ শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রাশিয়াকে ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ অভিহিত করে তাদের সঙ্গে লড়াইয়ে ইউক্রেনকে আরও সাহায্য করার জন্য ব্রিটেনের প্রতি আবেদন জানান তিনি। যতই ক্ষয়ক্ষতি হোক, ইউক্রেন রাশিয়ার সঙ্গে লড়াই করে যাবে বলে দৃঢ় কণ্ঠে জানান তিনি। হাউস অব কমন্সের ভরা চেম্বারের সামনে জেলেনস্কি রাশিয়ার আগ্রাসনের দৈনিক চিত্র, ব্যবহৃত অস্ত্র, বেসামরিক হতাহতের এবং খাদ্য ও পানির সংকটের কথা তুলে ধরেন। জলপাই সবুজ টিশার্ট পরা জেলেনস্কি রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেইনকে সমর্থন দিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে চাওয়ায় এবং ইতোমধ্যে দেওয়া সহায়তার জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরসি জনসনকে ধন্যবাদ জানান। তবে ব্রিটেন ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশকে আরও অনেক কিছু করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। রাশিয়াকে শাস্তি দিতে এরইমধ্যে মস্কোর বিরুদ্ধে জারি করা নিষেধাজ্ঞার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার, ইউক্রেইনে ‘নো-ফ্লাই জোন’ ঘোষণা ও রাশিয়াকে ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ বলে ঘোষণার জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের বিখ্যাত নাটক হ্যামলেট থেকে উদ্ধৃত করে বলেন, “এখন আমাদের জন্য প্রশ্ন হচ্ছে, হবে কি হবে না; আমি এর নিশ্চিত উত্তর দিতে পারি, তা হল, অবশ্যই হবে। “আমরা হাল ছাড়ব না আর পরাজিতও হবো না। আমরা সাগরে, আকাশে শেষ পর্যন্ত লড়াই করব, যত মূল্যই দিতে হোক আমরা আমাদের ভূমির জন্য লড়াই চালিয়ে যাব। আমরা বনে, মাঠে, উপকূলে, রাস্তায় লড়াই চালিয়ে যাব।” তিনি বলেন, “এই লড়াই আমরা শুরু করিনি আর করতেও চাইনি, কিন্তু এখন আমাদের এটি চালিয়ে যেতে হবে। যা কিছু আমাদের, আমাদের দেশ ইউক্রেনকে আমরা হারাতে চাই না।” ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জনসন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ব্রিটেন ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করে ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করার মাধ্যমে ‘চাপ অব্যাহত রাখবে’ আর চলতি বছরের শেষ নাগাদ রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করে দেবে।
সুমাইয়ে রুশ বিমান হামলায় ৩ শিশুসহ নিহত ২২ : ইউক্রেনের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় শহর সুমাইয়ে রাশিয়ার চালানো বিমান হামলায় তিন শিশুসহ মোট ২২ জন নিহত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে কর্তৃপক্ষ।
রাশিয়া সোমবার রাতে শহরের উত্তরপূর্ব অংশের আবাসিক এলাকায় বোমা ফেলেছে জানিয়ে সুমাইয়ের আঞ্চলিক গভর্নর দিমিত্র ঝিবিৎস্কিয়ি এ ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ অভিহিত করেছেন। “এক সন্ধ্যাতেই তিন বোমা। মর্মান্তিক এক রাত ছিল,” টেলিগ্রামে তিনি এমনটাই লিখেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। রুশ হামলায় একটি বাড়িরই ৯ জন নিহত হয়েছে; ৬টি বাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে, ২০টির মতো বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, জানিয়েছে ইউক্রেইনের কর্তৃপক্ষ। সুমাইয়ে টানা কয়েকদিন ধরে রুশ বাহিনীর গোলাবর্ষণের খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে এসেছে। মঙ্গলবার শহরটি থেকে ৫ হাজার বেসামরিক লোককে সরিয়েও নেওয়া হয়েছে। বেসামরিক লোকদের সরিয়ে নিতে বুধবারও শহরটিতে ‘মানবিক করিডোর’ খোলা থাকবে বলে রাশিয়া ও ইউক্রেইন উভয় কর্তৃপক্ষের দিক থেকেই আশ্বাস মিলেছে। সোমবার রাতে ওই বোমা হামলার ঘটনা ঘটলেও ছবিসহ এর বিস্তারিত গতকাল বুধবার প্রকাশিত হয়েছে।
৫ শহরে আরেক দফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা রাশিয়ার : রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনের আরও চারটি শহরের বেসামরিক নাগরিকদের সরে যেতে দিতে আরেক দফা যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। মস্কো জানিয়েছে স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার সকাল দশটা থেকে কিয়েভ, চেরনিহিভ, সামি, খারকিভ এবং মারিয়োপোল শহরে মানবিক করিডর দেওয়া হবে। রাশিয়ার ন্যাশনাল ডিফেন্স কন্ট্রোল সেন্টারের প্রধান মিখাইল মিজিনেস্তভকে উদ্ধৃত করে রুশ বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদে সরে যাওয়া নিশ্চিত করতে মানবিক করিডর দেওয়া হবে। তবে মানবিক করিডরের আওতায় থাকা শহরগুলোর বাসিন্দাদের রাশিয়া কিংবা বেলারুশের মধ্য দিয়ে যেতে হবে কিনা তা স্পষ্ট নয়। তবে আগে এই ধরনের শর্ত প্রত্যাখ্যান করে ইউক্রেনের সরকার। রুশ আগ্রাসন শুরুর পর মানবিক করিডর চালুর পর মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো সামি শহর থেকে বেসামরিকদের সফলভাবে সরিয়ে নেওয়ার কথা জানায় ইউক্রেন। তবে মারিয়োপোল শহরের মানবিক করিডরে রুশ বাহিনী হামলা করেছে বলে অভিযোগ তুলেছে ইউক্রেন। সূত্র: রয়টার্স