ঢাকা ০৮:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫

নৌযাত্রা হোক নিরাপদ ও আনন্দময়

  • আপডেট সময় : ০৯:৪০:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২২
  • ৮৩ বার পড়া হয়েছে

মাহমুদ আহমদ : স্মরণকালের ভয়াবহ লঞ্চে অগ্নিকা-ের ঘটনায় বরগুনাসহ পুরো দেশবাসী কেঁদেছে। কতই না হৃদয়বিদারক ঘটনা যে, সন্তান তার মায়ের বুকে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ঘুমিয়ে ছিল কিন্তু রক্ষা পেলে না। মা ও মেয়ের লাশ জড়ানো অবস্থায় পাওয়া যায় এবং একই কবরে দাফনও করা হয় তাদের। হায়! কত চেষ্টাই না করেছিলেন মা তার আদরের সন্তানকে বাঁচানোর।
অন্যান্য দুর্ঘটনার পাশাপাশি বেড়েছে লঞ্চ দুর্ঘটনা।একটি দুর্ঘটনা একটি পরিবারের সব আশাভরসা এক পলকে শেষ হয়ে যায়। শেষ হয়ে যায় পরিবারের ভবিষ্যৎ। গত ২৩ ডিসেম্বর রাত ৩টার দিকে ঢাকা থেকে বরগুনার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকা- ঘটে। এ ঘটনায় ৪৭ জনের মৃত্যু হয় বলে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার খবর থেকে জানা যায়। এছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে এবং আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ।
আমরা চাই এসব মর্মান্তিক ঘটনার পেছনে জড়িতদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় এনে কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা। এছাড়া ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা এড়াতে নৌযান আইন যথাযথভাবে বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তৎপরতা জরুরি। আমাদের প্রত্যাশা, নদীমাতৃক আমাদের এ প্রিয় দেশে নৌপথে সবার যাত্রা হোক নিরাপদ ও আনন্দময়।
ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলা ও মালিকপক্ষের অধিক মুনফার লোভ দায়ী। এছাড়া মানুষকে রক্ষার জন্য কর্তৃপক্ষের যে বিষয়গুলো থাকার কথা সেখানে পুরোপুরি অনিয়ম ছিল। ১২ জানুয়ারি ঝালকাঠি প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে নদীর নিরাপত্তার সামাজিক সংগঠন নোঙর বাংলাদেশ প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
আমাদের জীবন যেন আজ কিছুতেই নিরাপদ নয়। একের পর এক বিপদাপদ ধেয়ে আসছে। একদিকে বিশ্বময় মহামারি করোনা সবার জীবনকে ওলট-পালট করে দিয়েছে অন্যদিকে বিভিন্ন দুর্ঘটনা যেন পিছু ছাড়ছে না। জলে-স্থলে সব জায়গায় মৃত্যুর ভয়ালথাবা বিস্তার করে আছে। আজ স্বাভাবিক মৃত্যু যেন অস্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। মানুষের জীবনের আজ কোনো মূল্য নেই। জীবন যেন অতি তুচ্ছ।
বেশ কয়েক বছর ধরে বাসে উঠতে ভয় পাই। রাস্তায় এক বাস অন্য বাসের সাথে যেভাবে প্রতিযোগিতা করে তা দেখে বাসে চড়তে অনেক ভয় লাগে। এছাড়া বাসে উঠলে এ ভয় সবসময় হৃদয়ে বিরাজ করে যে কখন জানি বাসটি উল্টে যায় বা আরেক বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ বাধে। তাই চেষ্টা করি রেলে যাতায়াত করার কিন্তু রেলেও দুর্ঘটনা থেকে মুক্ত নয় আর লঞ্চে তো ভয়ে উঠিই না এই ভেবে যে কখন মাঝনদীতে ডুবে মরব।
আগে জানতাম প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে লঞ্চ দুর্ঘটনায় পড়েছে। কিন্তু সম্প্রতি কয়েকটি লঞ্চ দুর্ঘটনা তো কোনো প্রতিকূল আবহাওয়া বা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ঘটেনি। এসব ঘটেছে দায়িত্ব অবহেলা এবং এক লঞ্চ অন্য লঞ্চের সাথে সংঘর্ষের কারণে। এ ধরনের দুর্ঘটনা তথা দৈব-দুর্বিপাক বলার কোনো সুযোগ আছে বলে আমার মনে হয় না।
২০২০ সালের ২৯ জুন সকাল ৯টার দিকে মুন্সিগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা দোতলা মর্নিং বার্ড লঞ্চটি সদরঘাট কাঠপট্টি ঘাটে ভেড়ানোর আগ মুহূর্তে চাঁদপুরগামী ময়ূর-২ লঞ্চটি ধাক্কা দেয়। সঙ্গে সঙ্গে মর্নিং বার্ড লঞ্চটি ডুবে যায়। এ লঞ্চডুবির ঘটনায় ৩৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। দিনে-দুপুরে একটি লঞ্চ পেছন থেকে এসে মেরে দিয়ে এতগুলো প্রাণ কেড়ে নিল, এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ ছাড়া দিনের বেলায় যদি এমন ভয়াবহ ঘটনা ঘটে তাহলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? কোনো বাহনই তো দেখছি আমাদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না। প্রতিনিয়ত আমাদের শুধু দেখতে হচ্ছে স্বজনদের আহাজারি। বাস, ট্রেন, লঞ্চ দুর্ঘটনায় মৃত্যু যেন আমাদের পিছু ছাড়ছে না। কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না এসব দুর্ঘটনা। সরকারি হিসাবেই বাংলাদেশের মানুষের ৩৫ ভাগ যাতায়াতই সম্পন্ন হয় নৌপথে। আর এই নৌপথেই লঞ্চ দুর্ঘটনায় প্রতি বছর মারা যায় শত শত মানুষ।
২০২১ সালের এপ্রিলে বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিউটের প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যমতে, গত ১৫ বছরে দেশের নৌপথগুলোয় ৫৭৬টি দুর্ঘটনা ঘটে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজার ৮২২ জন। আহত ৪১৯ এবং আজও সন্ধান মেলেনি ৮৬৪ জনের। অন্যদিকে, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘সেভ দ্য রোড’ ২৪ ডিসেম্বর জানিয়েছে, কেবল ২০২১ সালেই নৌপথে দুর্ঘটনায় ১৮৮ জনের মৃত্যু ঘটেছে। এই তথ্য গত ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অদক্ষ কর্মী এবং ফিটনেসহীন অবস্থার কারণেই নৌযান ডুবে যায়।
যাতায়াতে সবচেয়ে আরামদায়ক ও নিরাপদ মনে করা হয় নৌপথকে। তবে মাঝে মাঝে এ পথেও দুর্ঘটনা ঘটে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যান্ত্রিক ত্রুটি, মুখোমুখি সংঘর্ষ ও চালকের অসাবধানতাসহ বিভিন্ন কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটে কিন্তু ২০২০ সালের ২৯ জুন বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবির ঘটনার প্রেক্ষাপট ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।
একটি লঞ্চ ধাক্কা দিয়ে আরেকটি লঞ্চকে ডুবিয়ে দেয়। কে মরলো আর কে বাঁচলে তা যেন এদের কাছে কিছুই না। দেখা যায় প্রতিটি দুর্ঘটনার পেছনে অসতর্কতার অনেক কারণ পাওয়া যায় আর অসতর্কতার ফলেই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে থাকে। প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে আর কত মানুষের প্রাণ যাবে? ভবিষ্যতে দুর্ঘটনায় আর যেন কোনো প্রাণহানি না ঘটে সে লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও সচেতন হতে হবে।
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে লঞ্চে এই মর্মান্তিক অগ্নিকা-ের ঘটনায় নৌ আদালতে করা মামলায় লঞ্চের চার মালিকসহ আটজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ভয়াবহ অগ্নিকা-ের শিকার অভিযান-১০ লঞ্চের মালিকদের একজন হামজালাল শেখকে ইতোমধ্যে রাজধানীর কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেফতারও করেছে র‌্যাব।
আমরা চাই এসব মর্মান্তিক ঘটনার পেছনে জড়িতদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় এনে কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা। এছাড়া ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা এড়াতে নৌযান আইন যথাযথভাবে বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তৎপরতা জরুরি। আমাদের প্রত্যাশা, নদীমাতৃক আমাদের এই প্রিয় দেশে নৌপথে সবার যাত্রা হোক নিরাপদ ও আনন্দময়।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নৌযাত্রা হোক নিরাপদ ও আনন্দময়

আপডেট সময় : ০৯:৪০:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২২

মাহমুদ আহমদ : স্মরণকালের ভয়াবহ লঞ্চে অগ্নিকা-ের ঘটনায় বরগুনাসহ পুরো দেশবাসী কেঁদেছে। কতই না হৃদয়বিদারক ঘটনা যে, সন্তান তার মায়ের বুকে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ঘুমিয়ে ছিল কিন্তু রক্ষা পেলে না। মা ও মেয়ের লাশ জড়ানো অবস্থায় পাওয়া যায় এবং একই কবরে দাফনও করা হয় তাদের। হায়! কত চেষ্টাই না করেছিলেন মা তার আদরের সন্তানকে বাঁচানোর।
অন্যান্য দুর্ঘটনার পাশাপাশি বেড়েছে লঞ্চ দুর্ঘটনা।একটি দুর্ঘটনা একটি পরিবারের সব আশাভরসা এক পলকে শেষ হয়ে যায়। শেষ হয়ে যায় পরিবারের ভবিষ্যৎ। গত ২৩ ডিসেম্বর রাত ৩টার দিকে ঢাকা থেকে বরগুনার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকা- ঘটে। এ ঘটনায় ৪৭ জনের মৃত্যু হয় বলে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার খবর থেকে জানা যায়। এছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে এবং আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ।
আমরা চাই এসব মর্মান্তিক ঘটনার পেছনে জড়িতদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় এনে কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা। এছাড়া ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা এড়াতে নৌযান আইন যথাযথভাবে বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তৎপরতা জরুরি। আমাদের প্রত্যাশা, নদীমাতৃক আমাদের এ প্রিয় দেশে নৌপথে সবার যাত্রা হোক নিরাপদ ও আনন্দময়।
ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলা ও মালিকপক্ষের অধিক মুনফার লোভ দায়ী। এছাড়া মানুষকে রক্ষার জন্য কর্তৃপক্ষের যে বিষয়গুলো থাকার কথা সেখানে পুরোপুরি অনিয়ম ছিল। ১২ জানুয়ারি ঝালকাঠি প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে নদীর নিরাপত্তার সামাজিক সংগঠন নোঙর বাংলাদেশ প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
আমাদের জীবন যেন আজ কিছুতেই নিরাপদ নয়। একের পর এক বিপদাপদ ধেয়ে আসছে। একদিকে বিশ্বময় মহামারি করোনা সবার জীবনকে ওলট-পালট করে দিয়েছে অন্যদিকে বিভিন্ন দুর্ঘটনা যেন পিছু ছাড়ছে না। জলে-স্থলে সব জায়গায় মৃত্যুর ভয়ালথাবা বিস্তার করে আছে। আজ স্বাভাবিক মৃত্যু যেন অস্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। মানুষের জীবনের আজ কোনো মূল্য নেই। জীবন যেন অতি তুচ্ছ।
বেশ কয়েক বছর ধরে বাসে উঠতে ভয় পাই। রাস্তায় এক বাস অন্য বাসের সাথে যেভাবে প্রতিযোগিতা করে তা দেখে বাসে চড়তে অনেক ভয় লাগে। এছাড়া বাসে উঠলে এ ভয় সবসময় হৃদয়ে বিরাজ করে যে কখন জানি বাসটি উল্টে যায় বা আরেক বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ বাধে। তাই চেষ্টা করি রেলে যাতায়াত করার কিন্তু রেলেও দুর্ঘটনা থেকে মুক্ত নয় আর লঞ্চে তো ভয়ে উঠিই না এই ভেবে যে কখন মাঝনদীতে ডুবে মরব।
আগে জানতাম প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে লঞ্চ দুর্ঘটনায় পড়েছে। কিন্তু সম্প্রতি কয়েকটি লঞ্চ দুর্ঘটনা তো কোনো প্রতিকূল আবহাওয়া বা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ঘটেনি। এসব ঘটেছে দায়িত্ব অবহেলা এবং এক লঞ্চ অন্য লঞ্চের সাথে সংঘর্ষের কারণে। এ ধরনের দুর্ঘটনা তথা দৈব-দুর্বিপাক বলার কোনো সুযোগ আছে বলে আমার মনে হয় না।
২০২০ সালের ২৯ জুন সকাল ৯টার দিকে মুন্সিগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা দোতলা মর্নিং বার্ড লঞ্চটি সদরঘাট কাঠপট্টি ঘাটে ভেড়ানোর আগ মুহূর্তে চাঁদপুরগামী ময়ূর-২ লঞ্চটি ধাক্কা দেয়। সঙ্গে সঙ্গে মর্নিং বার্ড লঞ্চটি ডুবে যায়। এ লঞ্চডুবির ঘটনায় ৩৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। দিনে-দুপুরে একটি লঞ্চ পেছন থেকে এসে মেরে দিয়ে এতগুলো প্রাণ কেড়ে নিল, এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ ছাড়া দিনের বেলায় যদি এমন ভয়াবহ ঘটনা ঘটে তাহলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? কোনো বাহনই তো দেখছি আমাদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না। প্রতিনিয়ত আমাদের শুধু দেখতে হচ্ছে স্বজনদের আহাজারি। বাস, ট্রেন, লঞ্চ দুর্ঘটনায় মৃত্যু যেন আমাদের পিছু ছাড়ছে না। কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না এসব দুর্ঘটনা। সরকারি হিসাবেই বাংলাদেশের মানুষের ৩৫ ভাগ যাতায়াতই সম্পন্ন হয় নৌপথে। আর এই নৌপথেই লঞ্চ দুর্ঘটনায় প্রতি বছর মারা যায় শত শত মানুষ।
২০২১ সালের এপ্রিলে বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিউটের প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যমতে, গত ১৫ বছরে দেশের নৌপথগুলোয় ৫৭৬টি দুর্ঘটনা ঘটে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজার ৮২২ জন। আহত ৪১৯ এবং আজও সন্ধান মেলেনি ৮৬৪ জনের। অন্যদিকে, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘সেভ দ্য রোড’ ২৪ ডিসেম্বর জানিয়েছে, কেবল ২০২১ সালেই নৌপথে দুর্ঘটনায় ১৮৮ জনের মৃত্যু ঘটেছে। এই তথ্য গত ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অদক্ষ কর্মী এবং ফিটনেসহীন অবস্থার কারণেই নৌযান ডুবে যায়।
যাতায়াতে সবচেয়ে আরামদায়ক ও নিরাপদ মনে করা হয় নৌপথকে। তবে মাঝে মাঝে এ পথেও দুর্ঘটনা ঘটে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যান্ত্রিক ত্রুটি, মুখোমুখি সংঘর্ষ ও চালকের অসাবধানতাসহ বিভিন্ন কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটে কিন্তু ২০২০ সালের ২৯ জুন বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবির ঘটনার প্রেক্ষাপট ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।
একটি লঞ্চ ধাক্কা দিয়ে আরেকটি লঞ্চকে ডুবিয়ে দেয়। কে মরলো আর কে বাঁচলে তা যেন এদের কাছে কিছুই না। দেখা যায় প্রতিটি দুর্ঘটনার পেছনে অসতর্কতার অনেক কারণ পাওয়া যায় আর অসতর্কতার ফলেই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে থাকে। প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে আর কত মানুষের প্রাণ যাবে? ভবিষ্যতে দুর্ঘটনায় আর যেন কোনো প্রাণহানি না ঘটে সে লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও সচেতন হতে হবে।
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে লঞ্চে এই মর্মান্তিক অগ্নিকা-ের ঘটনায় নৌ আদালতে করা মামলায় লঞ্চের চার মালিকসহ আটজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ভয়াবহ অগ্নিকা-ের শিকার অভিযান-১০ লঞ্চের মালিকদের একজন হামজালাল শেখকে ইতোমধ্যে রাজধানীর কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেফতারও করেছে র‌্যাব।
আমরা চাই এসব মর্মান্তিক ঘটনার পেছনে জড়িতদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় এনে কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা। এছাড়া ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা এড়াতে নৌযান আইন যথাযথভাবে বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তৎপরতা জরুরি। আমাদের প্রত্যাশা, নদীমাতৃক আমাদের এই প্রিয় দেশে নৌপথে সবার যাত্রা হোক নিরাপদ ও আনন্দময়।