ঢাকা ১২:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫

নৌকা ভ্রমণে মাঝিদের কর্মসংস্থান

  • আপডেট সময় : ০২:০০:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ অগাস্ট ২০২১
  • ১০৭ বার পড়া হয়েছে

গাজীপুর প্রতিনিধি : প্রকৃতিতে শরতের আগমন হলেও এখনো বর্ষার রেশ কাটেনি। ফসলি জমি, খাল, বিল, ডোবা, জলাধারগুলো পানিতে পরিপূর্ণ। এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে গ্রামাঞ্চলের মানুষের পেশারও বদল হয়েছে। গাজীপুরের কালীগঞ্জে বেশ কিছু অঞ্চল বর্ষার পানিতে প্লাবিত হয়। এতে এ অঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষ মাছ ধরা অথবা নৌকা ভাড়া দিয়ে সংসার চালানোর উপায় খুঁজে পেয়েছেন। প্রায় প্রতিদিন ভ্রমণ পিপাসুরা উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের উলুখোলা বাজার খেয়া ঘাটে এসে নৌকা ভাড়া করেন। তাদের পছন্দের তালিকায় থাকে জলাধারের বাহারি সাজে সজ্জিত নৌকা। সাজানো এসব নৌকা ভ্রমণের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়। যেহেতু এখন চাহিদা বেশি, তাই ভাড়ার পরিমাণও একটু বেশি। ছইয়ের উপরে সামিয়ানা দিয়ে সাজানো নৌকার ভাড়া দিনে ১৪-১৬ হাজার টাকা। গ্রাহকরা দরদাম করে নিলে ১২-১৩ হাজার টাকার মধ্যেও নিতে পারেন। নৌকা ভাড়া করতে আসা মো. নাজমুল ইসলাম (৪০) নামের এক যুবক জানান, তারা প্রতিবছর ভ্রমণের জন্য নৌকা ভাড়া নেন। অন্য বছরগুলোতে ভাড়া স্বাভাবিক থাকলেও এ বছর নেওয়া হচ্ছে বেশি। উপজেলার জাঙ্গালীয়া ইউনিয়নের কুলথুন গ্রামের বাসিন্দা মো. শিহাব (৩৩) জানান, প্রতিবছরের বর্ষা মৌসুমে নৌকা দিয়ে ভ্রমণ করেন। গত বছর লকডাউন থাকায় ঘুরতে যেতে পারেননি। তবে এ বছর কিছুটা শিথিল থাকায় কলেজের বন্ধুরা মিলে বিল বেলাইয়ের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরবেন। যেহেতু উলুখোলার এই ঘাটে নৌকা পাওয়া যায়, তাই এখান থেকেই নৌকা ভাড়া করে নেন। একই কথা বলেন উপজেলার বক্তারপুর গ্রামের মো. আশিক মিয়া (৩০)। উলুখোলা খেয়া ঘাটের নৌকা মালিক মো. জাকির মোল্লা (৪৫) বলেন, বর্ষার পানি আসার আগে আমি ব্যাটারি চালিত রিকশা চালাতাম। সারা দিনে ৫০০ টাকার মতো আয় করতাম। গত বছর আমার পৈতৃক সম্পত্তি থেকে ২ কাঠা জমি বিক্রি করে একটি নৌকা কিনেছিলাম। চাহিদা বেশি থাকায় এ বছর আরও একটি নৌকা বানাচ্ছি। এখন আগের থেকে বেশ ভালোই আয় করছি। উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের বড়কাউ গ্রামের আরেক নৌকার মালিক মো. আল-আমিন (৩৮) বলেন, শুকনো মৌসুমে আমি কৃষি কাজ করি। এতে সংসার ঠিকমতো চালাতে পারি না। তাই গত বছর শুরুর দিকে স্থানীয় একটি এনজিও থেকে বেশ কিছু টাকা ঋণ নেওয়ার পাশাপাশি নিজের জমি বিক্রি করে একটি ভ্রমণ নৌকা বানাই। গত বছর লকডাউনে সবকিছু বন্ধ থাকায় প্রচুর আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ি। তবে এ বছর বেশকিছু টাকা আয় করতে পেরেছি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আশা করছি এ বছর কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে পারবো। আল-আমিনের মতো একই কথা বলেন উপজেলার নাগরী গ্রামের মো. সিরাজ মুন্সি (৪৫) ও বির্তুল গ্রামের মো. ছাত্তার মিয়া (৪৮)। নাগরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অলিউল ইসলাম অলি বলেন, এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ আগে কৃষিজীবী ছিল। পূর্বাচল উপ-শহরের খুব কাছে হওয়ায় খুব দ্রুত উন্নয়নের ছোঁয়া লাগছে এলাকাজুড়ে। স্থানীয়দের পেশাও বদল হচ্ছে। বালু নদীর উপর উলুখোলা বাজার ঘাট হওয়ায় আশেপাশের এলাকার মানুষের ভিড় জমে এখানে। মানুষের সুবিধার কথা চিন্তা করে এখানে একটি স্থায়ী ঘাট নির্মাণ করে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে বলেও জানান ইউপি চেয়ারম্যান।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নৌকা ভ্রমণে মাঝিদের কর্মসংস্থান

আপডেট সময় : ০২:০০:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ অগাস্ট ২০২১

গাজীপুর প্রতিনিধি : প্রকৃতিতে শরতের আগমন হলেও এখনো বর্ষার রেশ কাটেনি। ফসলি জমি, খাল, বিল, ডোবা, জলাধারগুলো পানিতে পরিপূর্ণ। এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে গ্রামাঞ্চলের মানুষের পেশারও বদল হয়েছে। গাজীপুরের কালীগঞ্জে বেশ কিছু অঞ্চল বর্ষার পানিতে প্লাবিত হয়। এতে এ অঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষ মাছ ধরা অথবা নৌকা ভাড়া দিয়ে সংসার চালানোর উপায় খুঁজে পেয়েছেন। প্রায় প্রতিদিন ভ্রমণ পিপাসুরা উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের উলুখোলা বাজার খেয়া ঘাটে এসে নৌকা ভাড়া করেন। তাদের পছন্দের তালিকায় থাকে জলাধারের বাহারি সাজে সজ্জিত নৌকা। সাজানো এসব নৌকা ভ্রমণের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়। যেহেতু এখন চাহিদা বেশি, তাই ভাড়ার পরিমাণও একটু বেশি। ছইয়ের উপরে সামিয়ানা দিয়ে সাজানো নৌকার ভাড়া দিনে ১৪-১৬ হাজার টাকা। গ্রাহকরা দরদাম করে নিলে ১২-১৩ হাজার টাকার মধ্যেও নিতে পারেন। নৌকা ভাড়া করতে আসা মো. নাজমুল ইসলাম (৪০) নামের এক যুবক জানান, তারা প্রতিবছর ভ্রমণের জন্য নৌকা ভাড়া নেন। অন্য বছরগুলোতে ভাড়া স্বাভাবিক থাকলেও এ বছর নেওয়া হচ্ছে বেশি। উপজেলার জাঙ্গালীয়া ইউনিয়নের কুলথুন গ্রামের বাসিন্দা মো. শিহাব (৩৩) জানান, প্রতিবছরের বর্ষা মৌসুমে নৌকা দিয়ে ভ্রমণ করেন। গত বছর লকডাউন থাকায় ঘুরতে যেতে পারেননি। তবে এ বছর কিছুটা শিথিল থাকায় কলেজের বন্ধুরা মিলে বিল বেলাইয়ের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরবেন। যেহেতু উলুখোলার এই ঘাটে নৌকা পাওয়া যায়, তাই এখান থেকেই নৌকা ভাড়া করে নেন। একই কথা বলেন উপজেলার বক্তারপুর গ্রামের মো. আশিক মিয়া (৩০)। উলুখোলা খেয়া ঘাটের নৌকা মালিক মো. জাকির মোল্লা (৪৫) বলেন, বর্ষার পানি আসার আগে আমি ব্যাটারি চালিত রিকশা চালাতাম। সারা দিনে ৫০০ টাকার মতো আয় করতাম। গত বছর আমার পৈতৃক সম্পত্তি থেকে ২ কাঠা জমি বিক্রি করে একটি নৌকা কিনেছিলাম। চাহিদা বেশি থাকায় এ বছর আরও একটি নৌকা বানাচ্ছি। এখন আগের থেকে বেশ ভালোই আয় করছি। উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের বড়কাউ গ্রামের আরেক নৌকার মালিক মো. আল-আমিন (৩৮) বলেন, শুকনো মৌসুমে আমি কৃষি কাজ করি। এতে সংসার ঠিকমতো চালাতে পারি না। তাই গত বছর শুরুর দিকে স্থানীয় একটি এনজিও থেকে বেশ কিছু টাকা ঋণ নেওয়ার পাশাপাশি নিজের জমি বিক্রি করে একটি ভ্রমণ নৌকা বানাই। গত বছর লকডাউনে সবকিছু বন্ধ থাকায় প্রচুর আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ি। তবে এ বছর বেশকিছু টাকা আয় করতে পেরেছি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আশা করছি এ বছর কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে পারবো। আল-আমিনের মতো একই কথা বলেন উপজেলার নাগরী গ্রামের মো. সিরাজ মুন্সি (৪৫) ও বির্তুল গ্রামের মো. ছাত্তার মিয়া (৪৮)। নাগরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অলিউল ইসলাম অলি বলেন, এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ আগে কৃষিজীবী ছিল। পূর্বাচল উপ-শহরের খুব কাছে হওয়ায় খুব দ্রুত উন্নয়নের ছোঁয়া লাগছে এলাকাজুড়ে। স্থানীয়দের পেশাও বদল হচ্ছে। বালু নদীর উপর উলুখোলা বাজার ঘাট হওয়ায় আশেপাশের এলাকার মানুষের ভিড় জমে এখানে। মানুষের সুবিধার কথা চিন্তা করে এখানে একটি স্থায়ী ঘাট নির্মাণ করে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে বলেও জানান ইউপি চেয়ারম্যান।