নিজস্ব প্রতিবেদক : একটি প্রচলিত গল্প আছে- জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ঠেকাতে ‘ছোট পরিবার সুখী পরিবার’ স্লোগানের ক্যাম্পেইন করা হয়েছিল। ক্যাম্পেইন পরবর্তী পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বাংলাদেশের কিছু কিছু এলাকায় বাল্যবিবাহ বেড়ে গেছে। সেটি ঘটেছে কেবল সেইসব অঞ্চলে যেখানে কথ্যভাষায় স্ত্রীকে ‘পরিবার’ ডাকা হয়।
কঠোর লকডাউন তুলে দেওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ ক্যাম্পেইন চালু হলো। প্রতিটি শপিং মল, দোকান, ব্যাংক ও অফিসে এই কথা লেখা থাকতে হবে এবং সেটি পালন করতে হবে। কেউ মাস্ক না পরে আসলে তাকে কোনও সেবা দেওয়া হবে না।
গত শনিবার সরেজমিনে বেশ কিছু মার্কেটে গিয়ে ‘ছোট পরিবার সুখী পরিবার’-এর মতোই নো মাস্ক নো সার্ভিস নিয়ে অদ্ভুব সব তথ্য আর ব্যাখ্যা মেলে। অনেকে জানেনই না যে এটা কেন লেখা হয়েছে। কেউ আবার তাচ্ছিল্য করে এটাও বললেন, ‘নো মাস্ক’ মানে শপিং মলে ঢুকতে মাস্ক পরতে হবে না। তা হলে নো সার্ভিস লিখলো কেন? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি ফের তাচ্ছিল্য করে বলেন, ‘বাকিটা ইতিহাস’।
সোবহানবাগের মেট্রো শপিং মলের বাইরে বড় করে লেখা ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’। কিন্তু গেটে মাস্ক না পরে ঢোকার সময় কাউকে বাধা দিতে দেখা গেলো না। বেলা ২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে দেখা গেলো অধিকাংশ লোক মাস্ক পরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে সেটা আবার খুলে পকেটে ঢুকিয়ে ঘুরছেন দোকান থেকে দোকানে।
বেশকিছু দোকানের কর্মীদের মাস্কহীন অবস্থায় দেখা গেলো। পাঞ্জাবি দেখছিলেন এক দম্পতি। পুরুষটির থুতনিতে ঝোলানো মাস্ক দেখিয়ে সঠিকভাবে কেন পরেননি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এতোক্ষণ পরেছিলাম। তখন তো আপনি দেখেননি।’ তৃতীয় তলার এক দোকানকর্মীকে মলের বাইরে নিয়ে ব্যানার দেখিয়ে জানতে চাওয়া হয় ব্যানারে কী লেখা। তিনি বলেন ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’। তবে ভেতরে মাস্ক ছাড়া সার্ভিস দিচ্ছেন কেন? তিনি অবাক হয়ে পাল্টা প্রশ্ন করেন, কেউ কিনতে আসলে বেচবো না? এটাতো লেখা নেই।
মেট্রো থেকে একটু এগিয়ে বেশ কিছু বুটিকের দোকান। সেখানকার সবচেয়ে বড় দোকানটিতে এধরনের কোনও সতর্কবার্তাই লেখা নেই। বাইরে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে গেলে ভেতর থেকে দ্বাররক্ষক বেরিয়ে এসে বাধা দেন এ প্রতিবেদককে।
‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ লেখা নেই কেন জানতে চাইলে তিনি প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বলেন দোকানের ছবি তোলা যাবে না। কেন ব্যানার নেই প্রশ্নে তিনি উল্টো জানতে চান জিনিসটি কী? তবে দোকানের ব্যবস্থাপক কাউকে পাওয়া না যাওয়ায় কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন মনে করেন, নো মাস্ক নো সার্ভিস ক্যাম্পেইন কাজ করছে না। তিনি বলেন, ‘শতভাগ ডাবল মাস্ক নিশ্চিত করলে নিজেকে নিরাপদ রাখা যাবে। কে শোনে কার কথা! যে পরিমাণ ক্রেতা আর মার্কেটে যে ভিড়, কীভাবে মনিটর করা সম্ভব? হকারদের কাছ থেকে জিনিস কিনে বাসায় ফিরছে। স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। বেশ কয়েকটি মার্কেটে অভিযান চালানো হয়েছে। তারা আমাদের সামনে দেখায় সব মানছে। পরে আর তাগিদ দেখায় না।’
‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ নিয়ে তামাশা
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ