ঢাকা ০২:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

নোয়াখালীর হত্যা মামলায় ফাঁসির ১২ আসামির ৮ জনই হাই কোর্টে খালাস

  • আপডেট সময় : ০১:৪৬:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ জানুয়ারী ২০২২
  • ৭৫ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : নোয়াখালীতে এক মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী ও তার কর্মচারীকে হত্যার দায়ে বিচারিক আদালতে ফাঁসির দ-প্রাপ্ত ১২ আসামির ৮ জনকে খালাস দিয়েছে হাই কোর্ট।
সাক্ষ্যপ্রমাণের যথাযথ বিচার-বিশ্লেষণ না করে ‘খেয়ালের বশে’ গণহারে ফাঁসির রায় দেওয়ায় উচ্চ আদালত উষ্মাও প্রকাশ করেছেন বলে আইনজীবীরা জানান। ১৪ বছর আগের ওই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির পর সোমবার বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ও বিচারপতি জাহিদ সারওয়ারের বেঞ্চ এ রায় দেয়। ফাঁসির দ- থেকে খালাস পেয়েছেন মোফাজ্জল হোসেন জাবেদ, জাফর হোসেন মনু, আলি আকবর সুজন, শামছুদ্দিন ভুট্টু, সাহাব উদ্দিন, নাছির উদ্দিন মঞ্জু, আবু ইউসুফ সুমন ও তোফাজ্জল হোসেন জুয়েল। বাকি চার আসামির মধ্যে আবদুস সবুরের ফাঁসির দ- পাল্টে ১০ বছরের সশ্রম কারাদ- দেওয়া হয়েছে। আর কামরুল হাসান সোহাগ, রাশেদ ড্রাইভার ও কামাল হোসেন ওরফে এলজি কামালের ফাঁসির দ- বহাল রেখেছে আদালত। এরা সবাই পলাতক। তবে রাষ্ট্রপক্ষ হাই কোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে বলে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন আহমেদ খান। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “বিচারিক আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হওয়ায় তাদের মৃত্যুদ- দেওয়া হয়েছিল।
“কিন্তু জোরালো সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকা সত্বেও সেগুলো আমলে না নিয়ে হাই কোর্ট ৮ আসামিকে খালাস দিয়েছেন। এ রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সংক্ষুব্ধ, আমরা আপিল করব।”
২০০৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাতে শহরের ‘মোবাইল ফেয়ারের’ মালিক ফিরোজ কবির মিরণ ও তার দোকানের কর্মচারী সুমন পাল নগদ ১৩ লাখ টাকা ও কিছু মোবাইল ফোন সেট নিয়ে রিকশায় বাড়ি ফিরছিলেন। পথে নাপিতের পুল এলাকায় সন্ত্রাসীরা তাদের দুজকে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। পরে টাকা ও মালামাল ছিনিয়ে নিয়ে তাদেরকে কুপিয়ে খুন করে মরদেহ সড়কের পাশে ফেলে যায়।
এই ঘটনার পরদিন নিহত মিরনের বাবা এবি সিদ্দিক বাবুল মিয়া বাদী হয়ে ২৩ জনকে আসামি করে সুধারাম মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। ১০ জনকে খালাস দিয়ে ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ এ এন এম মোরশেদ খান ১২ জনের ফাঁসির রায় দেন। সোলাইমান জিসান নামে এক আসামি আগেই র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছিলেন। রায় ঘোষণার পর আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন মোল্লা বলেন, ডেথ রেফারেন্স, আপিল ও জেল আপিল বিবেচনায় নিয়ে আদালত ৮ জনকে ফাঁসির দ-াদেশ থেকে মুক্তি দান করেন এবং অনতিবিলম্বে তাদেরকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। “অন্য তিনজন আসামির ঘটনার সাথে সরাসরি যুক্ত থাকার বিষয়ে তাদের স্বীকারোক্তি বিবেচনায় নিয়ে তাদের ফাঁসির দ-াদেশ হাই কোর্ট বিভাগ বহাল রেখেছেন।”
আব্দুস সবুরের সাজা কমানোর বিষয়ে এই আইনজীবী বলেন, “তার বিরুদ্ধে মামলা প্রমাণিত হয়েছে মর্মে বিজ্ঞ আদালত সাব্যস্ত করে তাকে ফাঁসির দ-াদেশ কমিউট করে ১০ বছরের সশ্রম কারাদ- প্রদান করেছেন।”
’খেয়ালি’ রায়ে আদালতের উষ্মা : সাক্ষ্যপ্রমাণ যথাযথ বিচার বিশ্লেষণ না করে ‘খেয়ালের বশে’ বিচারিক আদালতে অধিক সংখ্যায় ফাঁসির রায় ঘোষণার বিষয়ে উচ্চ আদালত উষ্মা প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
এ বিষয়ে আসামিপক্ষের আরেক আইনজীবী অ্যাডভোকেট আজহার উল্লাহ ভুঁইয়া বলেন, “এ বিষয়ে হাই কোর্ট রায় ঘোষণার সময় উষ্মা প্রকাশ করেছেন যে, আইন এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ যথাযথ বিবেচনায় না নিয়ে ‘হুইমের’ উপর ভিত্তি করে এই রায় প্রদান করা হয়েছে, যেটা উচিত নয়। ”আরও সতর্কভাবে সাক্ষ্যপ্রমাণ পরীক্ষা করা এবং আইনকে যথাযথভাবে বিবেচনায় রেখে এই ধরনের মামলাগুলি নিষ্পত্তি করার জন্য উচ্চ আদালত তাগিদ দিয়েছেন।”
আইনজীবী হেলাল উদ্দিন মোল্লা বলেন, “ট্রায়াল কোর্ট ফাঁসির দ- দিতে বেশি ভালোবাসেন। পুংখানুপুংখভাবে বিচারবিশ্লেষণ না করে এই যে গণহারে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হচ্ছে, হাই কোর্টের অদ্যকার রায়ের মাধ্যমে এটাই প্রতিফলিত হয়েছে, ফাঁসি দিলে এই ফাঁসি হাই কোর্ট ডিভিশন ও আপিল বিভাগে টিকবে না।
”এজন্য সময় এসেছে বিচারালয়ে যারা আছেন, বিচার কাজের সাথে সম্পৃক্ত এখন দেখেশুনে, সাক্ষ্যপ্রমাণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সাক্ষীসাবুদ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রায় প্রদানের সময় এসেছে বলে আমি মনে করি।” আপিলে এসে বেশি সংখ্যায় খালাস হয়ে গেলে প্রকৃত অপরাধীদেরও ছাড়া পাওয়ার সুযোগ থেকে যাচ্ছে কি-না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমি যতগুলো মামলা করেছি, সেই নিরিখে আমি আপনাদেরকে বলতে চাই, আমরাতো মামলার যে সাক্ষ্যপ্রমাণ সেগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করি, মহামান্য আদালতের নিকট পেশ করি, এতে করে আমার মনে হয় না কোনো অপরাধী ছাড়া পায়। ”কোনো অপরাধী ছাড়া পায় না, বরং নিরপরাধ যাদেরকে আসলে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোনো না কোনোভাবে টেনে আনা হয়েছে এখানে মামলায়, সে সমস্ত আসামীরাই খালাস পেয়ে যায়। খালাস পাওয়া তাদের অধিকার, এ কারণে তারা খালাস পায়।”

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নোয়াখালীর হত্যা মামলায় ফাঁসির ১২ আসামির ৮ জনই হাই কোর্টে খালাস

আপডেট সময় : ০১:৪৬:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ জানুয়ারী ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : নোয়াখালীতে এক মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী ও তার কর্মচারীকে হত্যার দায়ে বিচারিক আদালতে ফাঁসির দ-প্রাপ্ত ১২ আসামির ৮ জনকে খালাস দিয়েছে হাই কোর্ট।
সাক্ষ্যপ্রমাণের যথাযথ বিচার-বিশ্লেষণ না করে ‘খেয়ালের বশে’ গণহারে ফাঁসির রায় দেওয়ায় উচ্চ আদালত উষ্মাও প্রকাশ করেছেন বলে আইনজীবীরা জানান। ১৪ বছর আগের ওই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির পর সোমবার বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ও বিচারপতি জাহিদ সারওয়ারের বেঞ্চ এ রায় দেয়। ফাঁসির দ- থেকে খালাস পেয়েছেন মোফাজ্জল হোসেন জাবেদ, জাফর হোসেন মনু, আলি আকবর সুজন, শামছুদ্দিন ভুট্টু, সাহাব উদ্দিন, নাছির উদ্দিন মঞ্জু, আবু ইউসুফ সুমন ও তোফাজ্জল হোসেন জুয়েল। বাকি চার আসামির মধ্যে আবদুস সবুরের ফাঁসির দ- পাল্টে ১০ বছরের সশ্রম কারাদ- দেওয়া হয়েছে। আর কামরুল হাসান সোহাগ, রাশেদ ড্রাইভার ও কামাল হোসেন ওরফে এলজি কামালের ফাঁসির দ- বহাল রেখেছে আদালত। এরা সবাই পলাতক। তবে রাষ্ট্রপক্ষ হাই কোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে বলে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন আহমেদ খান। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “বিচারিক আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হওয়ায় তাদের মৃত্যুদ- দেওয়া হয়েছিল।
“কিন্তু জোরালো সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকা সত্বেও সেগুলো আমলে না নিয়ে হাই কোর্ট ৮ আসামিকে খালাস দিয়েছেন। এ রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সংক্ষুব্ধ, আমরা আপিল করব।”
২০০৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাতে শহরের ‘মোবাইল ফেয়ারের’ মালিক ফিরোজ কবির মিরণ ও তার দোকানের কর্মচারী সুমন পাল নগদ ১৩ লাখ টাকা ও কিছু মোবাইল ফোন সেট নিয়ে রিকশায় বাড়ি ফিরছিলেন। পথে নাপিতের পুল এলাকায় সন্ত্রাসীরা তাদের দুজকে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। পরে টাকা ও মালামাল ছিনিয়ে নিয়ে তাদেরকে কুপিয়ে খুন করে মরদেহ সড়কের পাশে ফেলে যায়।
এই ঘটনার পরদিন নিহত মিরনের বাবা এবি সিদ্দিক বাবুল মিয়া বাদী হয়ে ২৩ জনকে আসামি করে সুধারাম মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। ১০ জনকে খালাস দিয়ে ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ এ এন এম মোরশেদ খান ১২ জনের ফাঁসির রায় দেন। সোলাইমান জিসান নামে এক আসামি আগেই র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছিলেন। রায় ঘোষণার পর আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন মোল্লা বলেন, ডেথ রেফারেন্স, আপিল ও জেল আপিল বিবেচনায় নিয়ে আদালত ৮ জনকে ফাঁসির দ-াদেশ থেকে মুক্তি দান করেন এবং অনতিবিলম্বে তাদেরকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। “অন্য তিনজন আসামির ঘটনার সাথে সরাসরি যুক্ত থাকার বিষয়ে তাদের স্বীকারোক্তি বিবেচনায় নিয়ে তাদের ফাঁসির দ-াদেশ হাই কোর্ট বিভাগ বহাল রেখেছেন।”
আব্দুস সবুরের সাজা কমানোর বিষয়ে এই আইনজীবী বলেন, “তার বিরুদ্ধে মামলা প্রমাণিত হয়েছে মর্মে বিজ্ঞ আদালত সাব্যস্ত করে তাকে ফাঁসির দ-াদেশ কমিউট করে ১০ বছরের সশ্রম কারাদ- প্রদান করেছেন।”
’খেয়ালি’ রায়ে আদালতের উষ্মা : সাক্ষ্যপ্রমাণ যথাযথ বিচার বিশ্লেষণ না করে ‘খেয়ালের বশে’ বিচারিক আদালতে অধিক সংখ্যায় ফাঁসির রায় ঘোষণার বিষয়ে উচ্চ আদালত উষ্মা প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
এ বিষয়ে আসামিপক্ষের আরেক আইনজীবী অ্যাডভোকেট আজহার উল্লাহ ভুঁইয়া বলেন, “এ বিষয়ে হাই কোর্ট রায় ঘোষণার সময় উষ্মা প্রকাশ করেছেন যে, আইন এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ যথাযথ বিবেচনায় না নিয়ে ‘হুইমের’ উপর ভিত্তি করে এই রায় প্রদান করা হয়েছে, যেটা উচিত নয়। ”আরও সতর্কভাবে সাক্ষ্যপ্রমাণ পরীক্ষা করা এবং আইনকে যথাযথভাবে বিবেচনায় রেখে এই ধরনের মামলাগুলি নিষ্পত্তি করার জন্য উচ্চ আদালত তাগিদ দিয়েছেন।”
আইনজীবী হেলাল উদ্দিন মোল্লা বলেন, “ট্রায়াল কোর্ট ফাঁসির দ- দিতে বেশি ভালোবাসেন। পুংখানুপুংখভাবে বিচারবিশ্লেষণ না করে এই যে গণহারে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হচ্ছে, হাই কোর্টের অদ্যকার রায়ের মাধ্যমে এটাই প্রতিফলিত হয়েছে, ফাঁসি দিলে এই ফাঁসি হাই কোর্ট ডিভিশন ও আপিল বিভাগে টিকবে না।
”এজন্য সময় এসেছে বিচারালয়ে যারা আছেন, বিচার কাজের সাথে সম্পৃক্ত এখন দেখেশুনে, সাক্ষ্যপ্রমাণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সাক্ষীসাবুদ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রায় প্রদানের সময় এসেছে বলে আমি মনে করি।” আপিলে এসে বেশি সংখ্যায় খালাস হয়ে গেলে প্রকৃত অপরাধীদেরও ছাড়া পাওয়ার সুযোগ থেকে যাচ্ছে কি-না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমি যতগুলো মামলা করেছি, সেই নিরিখে আমি আপনাদেরকে বলতে চাই, আমরাতো মামলার যে সাক্ষ্যপ্রমাণ সেগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করি, মহামান্য আদালতের নিকট পেশ করি, এতে করে আমার মনে হয় না কোনো অপরাধী ছাড়া পায়। ”কোনো অপরাধী ছাড়া পায় না, বরং নিরপরাধ যাদেরকে আসলে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোনো না কোনোভাবে টেনে আনা হয়েছে এখানে মামলায়, সে সমস্ত আসামীরাই খালাস পেয়ে যায়। খালাস পাওয়া তাদের অধিকার, এ কারণে তারা খালাস পায়।”