ঢাকা ১২:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৪ অগাস্ট ২০২৫

নেপালে রাজতন্ত্রপন্থি আন্দোলনে সহিংসতার তদন্ত করছে সরকার

  • আপডেট সময় : ০৮:২২:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ মার্চ ২০২৫
  • ৭২ বার পড়া হয়েছে

বিদেশের খবর ডেস্ক : নেপালের সাংবিধানিক রাজতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠার দাবিতে চলা আন্দোলনে সহিংসতার তদন্ত শুরু করেছে দেশটির সরকার। গতকাল শনিবার (২৯ মার্চ) এ তথ্য দিয়েছেন দেশটির যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী পৃথ্বী সুবা গুরুং। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলেছে, শুক্রবার রাজধানী শহর কাঠমান্ডুতে অবস্থিত পার্লামেন্ট ভবনের সামনে মিছিল নিয়ে পৌঁছায় আন্দোলনকারীরা। তারা ইট-পাটকেল ছুঁড়তে ছুঁড়তে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে বাঁধা দিতে বল প্রয়োগ করে পুলিশ। রাজতন্ত্রপন্থিদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে দুজন নিহত এবং অন্তত ১১২ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আহতদের মধ্যে ৭৭ জন নিরাপত্তা কর্মকর্তাও আছেন। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ঘরবাড়ি, অফিস, হাসপাতাল, যানবাহনে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ এনেছে কর্তৃপক্ষ।
কাঠমান্ডুর প্রধান জেলা কর্মকর্তা রিশিরাম তিওয়ারি বলেছেন, রাজতন্ত্রপন্থি আন্দোলনের কয়েকজন নেতাসহ ১০৫ জন বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে। হিমালয়ের এই দেশে ২৩৯ বছরে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করা হয় ২০০৮ সালে। সাবেক মাওবাদী বিদ্রোহীদের সঙ্গে চুক্তির অংশ হিসেবে বিশেষ নির্বাচিত পরিষদ ক্ষমতা গ্রহণ করে। দেশটির সর্বশেষ রাজা জ্ঞানেন্দ্র এখন ৭৭ বছর বয়সী একজন প্রৌঢ়। কাঠমান্ডুর একটি বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে সাধারণ নাগরিকের মতো বাস করেন তিনি। উল্লেখ্য, ১৯৯৬ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এক দশকে মাওবাদী বিদ্রোহের কারণে ১৭ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। নেপালে রাজতন্ত্র বিলোপের পর থেকে মাত্র ১৬ বছরেই ১৪ বার সরকার পরিবর্তন হয়েছে। ফলে বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিদেশি বিনিয়োগ হ্রাস পাচ্ছে। ফলে হ্রাস পাচ্ছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। অবস্থানগত কারণে এশিয়ার দুই বৃহৎশক্তি ভারত ও চীনের মধ্যে বাফার স্টেট হিসেবে কাজ করে নেপাল। তবে একেক সময় সরকারের ভারত বা চীনপন্থি নীতির কারণে দেশের অর্থনীতির গতি বৃদ্ধি পাচ্ছে না। ফলে জীবনমানের উন্নতি করতে একের পর এক সরকার ব্যর্থ হওয়ার ত্যক্ত বিরক্ত সাধারণ মানুষ এখন রাজতন্ত্রের পুনর্বহাল চাইছেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে, শুক্রবার (২৮ মার্চ) সকালে সাবেক রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহের হাজার হাজার সমর্থক কাঠমান্ডুর পূর্ব প্রান্তে জড়ো হয়েছিল। একসময় কিছু বিক্ষোভকারী নিষিদ্ধ এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল ছুড়ে এবং জনতাকে জলকামান ছিটিয়ে পিছে হটানোর চেষ্টা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাতে কারফিউ জারি করা হয় বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এদিকে, এদিন রাজধানীর অপর প্রান্তে, বর্তমান প্রজাতন্ত্রী সরকার ব্যবস্থার সমর্থক হাজার হাজার মানুষ একটি পাল্টা সমাবেশে জড়ো হয়েছিল, তবে তা শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে নেপালের রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহ ব্যাপক রাজপথ বিক্ষোভের মুখে তার কর্তৃত্ববাদী শাসন ত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং দুই বছর পর ২০০৮ সালে সংসদ রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করার পক্ষে ভোট দেয়। নির্বাচনের মাধ্যমে ২৩৯ বছরের রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করে নেপাল হিন্দু রাজ্য থেকে ধর্মনিরপেক্ষ ফেডারেল প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হয়। তখন থেকে নেপালের শেষ রাজা ৭৭ বছর বয়সী জ্ঞানেন্দ্র কাঠমান্ডুর বাড়িতে সাধারণ নাগরিক হিসেবে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করছেন। রাজতন্ত্র বিলুপ্তির পর থেকে গত ১৬ বছরে নেপালে ১৪টি সরকার গঠন হয়েছে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

নেপালে রাজতন্ত্রপন্থি আন্দোলনে সহিংসতার তদন্ত করছে সরকার

আপডেট সময় : ০৮:২২:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ মার্চ ২০২৫

বিদেশের খবর ডেস্ক : নেপালের সাংবিধানিক রাজতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠার দাবিতে চলা আন্দোলনে সহিংসতার তদন্ত শুরু করেছে দেশটির সরকার। গতকাল শনিবার (২৯ মার্চ) এ তথ্য দিয়েছেন দেশটির যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী পৃথ্বী সুবা গুরুং। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলেছে, শুক্রবার রাজধানী শহর কাঠমান্ডুতে অবস্থিত পার্লামেন্ট ভবনের সামনে মিছিল নিয়ে পৌঁছায় আন্দোলনকারীরা। তারা ইট-পাটকেল ছুঁড়তে ছুঁড়তে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে বাঁধা দিতে বল প্রয়োগ করে পুলিশ। রাজতন্ত্রপন্থিদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে দুজন নিহত এবং অন্তত ১১২ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আহতদের মধ্যে ৭৭ জন নিরাপত্তা কর্মকর্তাও আছেন। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ঘরবাড়ি, অফিস, হাসপাতাল, যানবাহনে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ এনেছে কর্তৃপক্ষ।
কাঠমান্ডুর প্রধান জেলা কর্মকর্তা রিশিরাম তিওয়ারি বলেছেন, রাজতন্ত্রপন্থি আন্দোলনের কয়েকজন নেতাসহ ১০৫ জন বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে। হিমালয়ের এই দেশে ২৩৯ বছরে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করা হয় ২০০৮ সালে। সাবেক মাওবাদী বিদ্রোহীদের সঙ্গে চুক্তির অংশ হিসেবে বিশেষ নির্বাচিত পরিষদ ক্ষমতা গ্রহণ করে। দেশটির সর্বশেষ রাজা জ্ঞানেন্দ্র এখন ৭৭ বছর বয়সী একজন প্রৌঢ়। কাঠমান্ডুর একটি বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে সাধারণ নাগরিকের মতো বাস করেন তিনি। উল্লেখ্য, ১৯৯৬ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এক দশকে মাওবাদী বিদ্রোহের কারণে ১৭ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। নেপালে রাজতন্ত্র বিলোপের পর থেকে মাত্র ১৬ বছরেই ১৪ বার সরকার পরিবর্তন হয়েছে। ফলে বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিদেশি বিনিয়োগ হ্রাস পাচ্ছে। ফলে হ্রাস পাচ্ছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। অবস্থানগত কারণে এশিয়ার দুই বৃহৎশক্তি ভারত ও চীনের মধ্যে বাফার স্টেট হিসেবে কাজ করে নেপাল। তবে একেক সময় সরকারের ভারত বা চীনপন্থি নীতির কারণে দেশের অর্থনীতির গতি বৃদ্ধি পাচ্ছে না। ফলে জীবনমানের উন্নতি করতে একের পর এক সরকার ব্যর্থ হওয়ার ত্যক্ত বিরক্ত সাধারণ মানুষ এখন রাজতন্ত্রের পুনর্বহাল চাইছেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে, শুক্রবার (২৮ মার্চ) সকালে সাবেক রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহের হাজার হাজার সমর্থক কাঠমান্ডুর পূর্ব প্রান্তে জড়ো হয়েছিল। একসময় কিছু বিক্ষোভকারী নিষিদ্ধ এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল ছুড়ে এবং জনতাকে জলকামান ছিটিয়ে পিছে হটানোর চেষ্টা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাতে কারফিউ জারি করা হয় বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এদিকে, এদিন রাজধানীর অপর প্রান্তে, বর্তমান প্রজাতন্ত্রী সরকার ব্যবস্থার সমর্থক হাজার হাজার মানুষ একটি পাল্টা সমাবেশে জড়ো হয়েছিল, তবে তা শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে নেপালের রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহ ব্যাপক রাজপথ বিক্ষোভের মুখে তার কর্তৃত্ববাদী শাসন ত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং দুই বছর পর ২০০৮ সালে সংসদ রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করার পক্ষে ভোট দেয়। নির্বাচনের মাধ্যমে ২৩৯ বছরের রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করে নেপাল হিন্দু রাজ্য থেকে ধর্মনিরপেক্ষ ফেডারেল প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হয়। তখন থেকে নেপালের শেষ রাজা ৭৭ বছর বয়সী জ্ঞানেন্দ্র কাঠমান্ডুর বাড়িতে সাধারণ নাগরিক হিসেবে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করছেন। রাজতন্ত্র বিলুপ্তির পর থেকে গত ১৬ বছরে নেপালে ১৪টি সরকার গঠন হয়েছে।