ঢাকা ০৯:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

নেত্রকোনার রিপোর্টে টিউমার, ময়মনসিংহে নেই

  • আপডেট সময় : ০৭:১১:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ৪ বার পড়া হয়েছে

নেত্রকোনা সংবাদদাতা: তল পেটে ব্যথা অনুভব করায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন নেত্রকোনার দুর্গাপুরের মোছা. ফাতেমা খাতুন (৫০)। চিকিৎসকের পরামর্শে স্থানীয় ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করিয়ে জানতে পারেন তার জরায়ুতে টিউমার হয়েছে; যা দ্রুত অপারেশন করতে হবে। এমন রিপোর্ট পেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন ফাতেমা ও তার পরিবার।

পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ গিয়ে একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন ফাতেমা। সেখানে পুনরায় আলট্রাসনোগ্রাম করালে স্বাভাবিক ফলাফল আসে। এতে চিন্তামুক্ত হলেও স্থানীয় চিকিৎসক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন ফাতেমা এবং তার পরিবারের সদস্যরা।
ফাতেমা খাতুন দুর্গাপুর উপজেলার চন্ডিগড় ইউনিয়নের মউ গগ্রামের সাইদুর রহমানের স্ত্রী।

ভুক্তভোগী রোগী ও তার পরিবারের সদস্যরা জানান, ২৪ জানুয়ারি তল পেটে ব্যথা নিয়ে দুর্গাপুর শহরের ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গায়নী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. জয়ন্তী রানী ধরের কাছে যান ফাতেমা খাতুন। চিকিৎসক তাকে আলট্রাসনোগ্রাম, রক্ত ও প্রসাব পরীক্ষা করাতে বলেন ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। সেখানে ফাতেমার আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট প্রস্তুত করেন দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. রকিবুল হাসান।

তার দেওয়া রিপোর্টে ফাতেমার জরায়ুর মসৃণ পেশীর টিউমার শনাক্ত হয়। সেই রিপোর্ট নিয়ে পুনরায় চিকিৎসক জয়ন্তী রানী ধরের কাছে গেলে তিনি অপারেশনের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের কথা বলেন এবং কিছু ওষুধ সেবনের জন্য ব্যবস্থাপত্র দেন। কিন্তু ফাতেমা ওষুধ না খেয়ে তিন দিন পর ময়মনসিংহ গিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য। সেখানকার চিকিৎসক পুনরায় আলট্রাসনোগ্রাম করানোর পর রিপোর্টে কোনো টিউমারের অস্তিত্ব মেলেনি। রিপোর্টে সবকিছু স্বাভাবিক বলে জানা যায়। পরে যথাযথ চিকিৎসা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা মুক্ত হয়ে তিনি বাড়ি ফেরেন। বিষয়টি জানার পর ফাতেমা ও তার পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় চিকিৎসক ও ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

ফাতেমা খাতুন বলেন, পরীক্ষার পর জরায়ুতে টিউমার হয়েছে শুনে আমি অনেক চিন্তিত ছিলাম। অপারেশন করতে অনেক টাকা লাগত। বাড়ি ফিরে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে, আমার টিউমার হয়েছে। তাই ওই ওষুধ খাইনি। জমি বন্ধক দিয়ে টাকা সংগ্রহ করে ময়মনসিংহ গিয়ে আবার ডাক্তার দেখাই। সেখানে আলট্রাসনোগ্রাম করিয়ে নিশ্চিত হই টিউমার কিছুই হয়নি, শুধু প্রসাবে ইনফেকশন হয়েছিল। তারা কি ডাক্তার, না কসাই?

ভুল রিপোর্টের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. রকিবুল হাসান বলেন, ‘রিপোর্টগুলো আমার দেখে নিতে হবে, তা না হলে কিছু বলা সম্ভব নয়। ময়মনসিংহে আমাদের চেয়ে দামি ও উন্নত মানের মেশিনে আলট্রা হয়। আমাদের রিপোর্টে প্রায়ই এমন কনফিউশন হয়ে থাকে। তাই আমরা রোগীদেরকে উন্নতমানের মেশিনে আলট্রাসনোগ্রাম করানোর পরামর্শ দিয়ে থাকি। বিষয়টি আনকমন নয়, এটা স্বাভাবিক ঘটনা বলেই জানান তিনি।’

ভুক্তভোগী নারীর ব্যবস্থাপত্র দেওয়া চিকিৎসক জয়ন্তী রানী ধর বলেন, ‘ডা. রকিবুলের রিপোর্টে টিউমার ধরা পড়লেও যে অ্যান্টিবায়োটিক ডোজ দিয়েছি, তাতে টিউমার ভ্যানিশ হয়ে গেছে অর্থাৎ সেটি মিশে গেছে হয়তো।’
এ বিষয়ে জানতে ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকপক্ষের কেউ ফোন রিসিভ করেননি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. তানরুল ইসলাম রায়হান বলেন, ‘ঘটনাটি সত্যি হলে এটা খুবই দুঃখজনক। বিষয়টি আমাদের হাসপাতালের নয়। তাই এর দায় ওই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেই নিতে হবে।’

নেত্রকোনা জেলা সিভিল সার্জন ডা. অনুপম ভট্টাচার্য বলেন, ‘ওই রোগী অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিছুদিনের মধ্যেই উপজেলার সবগুলো ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিদর্শন করা হবে।’
উল্লেখ্য, এর আগে ডা. জয়ন্তী রানী ধর ও ডা. রকিবুল হাসানের বিরুদ্ধে দুর্গাপুরে বহু অপচিকিৎসার অভিযোগ উঠেছিল। এমনকি রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। অন্যদিকে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষার মান ভালো না থাকায় বিপদে পড়তে হয় রোগীদের।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নেত্রকোনার রিপোর্টে টিউমার, ময়মনসিংহে নেই

আপডেট সময় : ০৭:১১:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

নেত্রকোনা সংবাদদাতা: তল পেটে ব্যথা অনুভব করায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন নেত্রকোনার দুর্গাপুরের মোছা. ফাতেমা খাতুন (৫০)। চিকিৎসকের পরামর্শে স্থানীয় ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করিয়ে জানতে পারেন তার জরায়ুতে টিউমার হয়েছে; যা দ্রুত অপারেশন করতে হবে। এমন রিপোর্ট পেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন ফাতেমা ও তার পরিবার।

পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ গিয়ে একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন ফাতেমা। সেখানে পুনরায় আলট্রাসনোগ্রাম করালে স্বাভাবিক ফলাফল আসে। এতে চিন্তামুক্ত হলেও স্থানীয় চিকিৎসক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন ফাতেমা এবং তার পরিবারের সদস্যরা।
ফাতেমা খাতুন দুর্গাপুর উপজেলার চন্ডিগড় ইউনিয়নের মউ গগ্রামের সাইদুর রহমানের স্ত্রী।

ভুক্তভোগী রোগী ও তার পরিবারের সদস্যরা জানান, ২৪ জানুয়ারি তল পেটে ব্যথা নিয়ে দুর্গাপুর শহরের ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গায়নী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. জয়ন্তী রানী ধরের কাছে যান ফাতেমা খাতুন। চিকিৎসক তাকে আলট্রাসনোগ্রাম, রক্ত ও প্রসাব পরীক্ষা করাতে বলেন ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। সেখানে ফাতেমার আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট প্রস্তুত করেন দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. রকিবুল হাসান।

তার দেওয়া রিপোর্টে ফাতেমার জরায়ুর মসৃণ পেশীর টিউমার শনাক্ত হয়। সেই রিপোর্ট নিয়ে পুনরায় চিকিৎসক জয়ন্তী রানী ধরের কাছে গেলে তিনি অপারেশনের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের কথা বলেন এবং কিছু ওষুধ সেবনের জন্য ব্যবস্থাপত্র দেন। কিন্তু ফাতেমা ওষুধ না খেয়ে তিন দিন পর ময়মনসিংহ গিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য। সেখানকার চিকিৎসক পুনরায় আলট্রাসনোগ্রাম করানোর পর রিপোর্টে কোনো টিউমারের অস্তিত্ব মেলেনি। রিপোর্টে সবকিছু স্বাভাবিক বলে জানা যায়। পরে যথাযথ চিকিৎসা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা মুক্ত হয়ে তিনি বাড়ি ফেরেন। বিষয়টি জানার পর ফাতেমা ও তার পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় চিকিৎসক ও ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

ফাতেমা খাতুন বলেন, পরীক্ষার পর জরায়ুতে টিউমার হয়েছে শুনে আমি অনেক চিন্তিত ছিলাম। অপারেশন করতে অনেক টাকা লাগত। বাড়ি ফিরে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে, আমার টিউমার হয়েছে। তাই ওই ওষুধ খাইনি। জমি বন্ধক দিয়ে টাকা সংগ্রহ করে ময়মনসিংহ গিয়ে আবার ডাক্তার দেখাই। সেখানে আলট্রাসনোগ্রাম করিয়ে নিশ্চিত হই টিউমার কিছুই হয়নি, শুধু প্রসাবে ইনফেকশন হয়েছিল। তারা কি ডাক্তার, না কসাই?

ভুল রিপোর্টের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. রকিবুল হাসান বলেন, ‘রিপোর্টগুলো আমার দেখে নিতে হবে, তা না হলে কিছু বলা সম্ভব নয়। ময়মনসিংহে আমাদের চেয়ে দামি ও উন্নত মানের মেশিনে আলট্রা হয়। আমাদের রিপোর্টে প্রায়ই এমন কনফিউশন হয়ে থাকে। তাই আমরা রোগীদেরকে উন্নতমানের মেশিনে আলট্রাসনোগ্রাম করানোর পরামর্শ দিয়ে থাকি। বিষয়টি আনকমন নয়, এটা স্বাভাবিক ঘটনা বলেই জানান তিনি।’

ভুক্তভোগী নারীর ব্যবস্থাপত্র দেওয়া চিকিৎসক জয়ন্তী রানী ধর বলেন, ‘ডা. রকিবুলের রিপোর্টে টিউমার ধরা পড়লেও যে অ্যান্টিবায়োটিক ডোজ দিয়েছি, তাতে টিউমার ভ্যানিশ হয়ে গেছে অর্থাৎ সেটি মিশে গেছে হয়তো।’
এ বিষয়ে জানতে ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকপক্ষের কেউ ফোন রিসিভ করেননি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. তানরুল ইসলাম রায়হান বলেন, ‘ঘটনাটি সত্যি হলে এটা খুবই দুঃখজনক। বিষয়টি আমাদের হাসপাতালের নয়। তাই এর দায় ওই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেই নিতে হবে।’

নেত্রকোনা জেলা সিভিল সার্জন ডা. অনুপম ভট্টাচার্য বলেন, ‘ওই রোগী অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিছুদিনের মধ্যেই উপজেলার সবগুলো ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিদর্শন করা হবে।’
উল্লেখ্য, এর আগে ডা. জয়ন্তী রানী ধর ও ডা. রকিবুল হাসানের বিরুদ্ধে দুর্গাপুরে বহু অপচিকিৎসার অভিযোগ উঠেছিল। এমনকি রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। অন্যদিকে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষার মান ভালো না থাকায় বিপদে পড়তে হয় রোগীদের।