ঢাকা ১২:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে থাকার উপায়

  • আপডেট সময় : ১১:১১:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অক্টোবর ২০২১
  • ১৪০ বার পড়া হয়েছে

গোলাম সামদানি ডন : জীবনের সব চিন্তা-দুশ্চিন্তা মানুষ নিজে নিজে সামলাতে পারে না বলেই হয়তো ‘বন্ধু’ বা ‘পরিবার’ ইত্যাদির দ্বারস্থ হয়। আমাদের চারপাশে নেতিবাচক বিষয়গুলোই প্রকট। প্রতিটি স্তরে আমরা এসব নেতিবাচক বিষয় দ্বারা প্রভাবিত হই। এটি আমাদের ইতিবাচক জীবন থেকে দূরে ঠেলে দেয়। তাই নেতিবাচক চিন্তা, মানুষ ও ঘটনা থেকে আমাদের দূরে থাকা উচিত। কয়েকটি উপায়ে এসব থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতে পারেন।
নেতিবাচক আলোচনা থেকে দূরে থাকুন : নেতিবাচক মানুষের কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিন সামান্য একটু কৌশলে। একজন নেতিবাচক মানুষ, যে কিনা সারাক্ষণ অভিযোগ করে, সমালোচনা করে, সবকিছুতে সমস্যা খুঁজে বের করে—আলাপচারিতার মাঝখানে তাকে জিজ্ঞেস করুন সে ‘কীভাবে তার সমস্যাটি সমাধান করবে বা কী করে এই অবস্থা থেকে উন্নতি করা যায়’। এই প্রশ্ন আপনাকে সাহায্য করবে কথার মোড় ঘুরিয়ে ফেলতে! কেননা, সমাধানের কথা জিজ্ঞেস করতেই মানুষটি হয় চুপ হয়ে চিন্তা করবে, না হয় আলোচনার বিষয়টি অন্যদিকে নিয়ে যাবে। ঠিক এভাবেই প্রশ্ন করে ব্যাপারটি থামানো বা সমাধানের ব্যবস্থা করুন। অর্থাৎ ওই পরিস্থিতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়াই হবে আপনার করণীয়।
অসংলগ্ন আলোচনায় অংশগ্রহণ না করা : খেয়াল করে দেখবেন, নেতিবাচক মানুষের আলোচনার বিষয় সব সময়ই কেমন যেন অসংলগ্ন। অন্যদের পক্ষ থেকে মন্তব্য ও সমর্থন নিয়ে, তারা যেন নিজেদের নেতিবাচক চিন্তাভাবনা ও আলোচনায় অন্যদেরও জড়িয়ে নিতে চায়। এমন সব আলোচনায় অংশগ্রহণ না করাই বুদ্ধিমানের কাজ। ধরুন, এমন কেউ আপনার অফিসের কোনো একটা নিয়ম নিয়ে খুব বাড়াবাড়ি রকমের সমালোচনা করছে। অথচ বাকিরা সেই নিয়মের সঙ্গে খাপ খাইয়ে ভালোই দিনাতিপাত করছে।
এই নেতিবাচক বিষয় থেকে দূরে থাকতে একজন বিবেকবান মানুষ হিসেবে আপনার কর্তব্য হবে, সেই আলোচনায় একেবারেই কোনো মন্তব্য না করে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকা।
সুখ আপনার নিজের হাতে : সফল মানুষের মনোভাব অনেকটা এরূপ: নিজেদের কোনো কাজ নিয়ে যদি তারা খুব সন্তুষ্ট ও সুখী থাকে, অন্য কারোর মন্তব্য তখন তারা একদম পরোয়া করে না! একটু ভাবুন তো? আপনি কি কখনো পারবেন নেতিবাচক কোনো মানুষের মানসিকতায় সম্পূর্ণ পরিবর্তন আনতে? যদি উত্তর ‘না’ হয়, তাহলে জেনে রাখুন, তাদের এরূপ মানসিকতার জন্যই কিন্তু তাদের মন্তব্যগুলোও হয় অপ্রীতিকর, মাঝে মাঝে বিরক্তিকরও!
যেহেতু অন্যদের পরিবর্তনের ক্ষমতা আপনার নেই, তাই তাদের মাপকাঠিতে নিজেকে তুলনা করে হতাশাগ্রস্ত হওয়া বোকার কাজ!
যেদিন থেকে আপনি অন্য মানুষের মন্তব্য থেকে নিজেকে যাচাই করা শুরু করবেন, ঠিক সেদিন থেকে আপনি নিজের সুখের চাবি অন্যদের হাতে সঁপে দেবেন। কিন্তু এমনটা যেন না হয়, তাই নিজেকে নেতিবাচক বিষয় থেকে দূরে রাখুন। নিজের সুখের মানদ- নিজের মতো করে গড়ে তুলুন।
সমস্যা নয়, সমাধানে মনোযোগী হওয়া : নেতিবাচক কোনো মানুষের সঙ্গে কথোপকথনে লিপ্ত হলে, “উফ! উনি এমন কেন? কখন থামবে! দূর কী বিরক্তিকর!” ইত্যাদি চিন্তা মাথায় না এনে; বরং চিন্তা করুন, কীভাবে ওই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসবেন। অর্থাৎ সমস্যা চিন্তা না করে সমাধান চিন্তা করুন। আপনি এ রকম পরিস্থিতিতে বিরক্তিবোধ করবেন, নাকি মাথা ঠান্ডা করে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকবেন, তা কিন্তু একান্তই আপনার ওপর নির্ভর করে! যদি বিরক্তিতে পর্যবসিত হতে না চান, সমাধানের প্রতি মনোযোগী হোন।
পূর্ব-অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিন : ভবিষ্যৎ কোনো ভোগান্তি বা ভুল থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পূর্বের অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ব্যর্থতা সাফল্যের চাবিকাঠি নয়, ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে কাজে লাগানোই সাফল্যের চাবিকাঠি।
আপনার চিন্তাই আপনার বাস্তবতাকে গড়ে তোলে : অন্যদের মন্তব্য হয়তো অনেককে কিছুটা হলেও ভাবায়। কেউ আমাদের নিয়ে নেতিবাচক কথা বললে দিনরাত আমরা হয়তো তা নিয়ে ভাবতে থাকি। এটি তখনই প্রকট আকার ধারণ করে যখন আমরা নিজেকে তাই ভাবতে শুরু করি এবং হীনমন্যতায় ভুগি।
আপনার কাজ হচ্ছে যাচাই করা, আসলেই আপনার নিজেকে নিয়ে অমন উপলব্ধি কখনো হয়েছে কি না। যদি না হয়, তাহলে তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিন। কিন্তু “আমি মনে হয় আসলেই এ রকম!” চিন্তা থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। নাহলে তা আপনার মনে দীর্ঘস্থায়ী একটি খারাপ প্রভাব ফেলবে।
চিন্তাগুলো শেয়ার করুন : জীবনের সব চিন্তা-দুশ্চিন্তা মানুষ নিজে নিজে সামলাতে পারে না বলেই হয়তো ‘বন্ধু’ বা ‘পরিবার’ ইত্যাদির দ্বারস্থ হয়। অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার জন্য তৎক্ষণাৎ কী করা উচিত বা গতানুগতিক চিন্তা থেকে ব্যতিক্রমী দৃষ্টিভঙ্গি দিতে পারবে সেই পরিস্থিতির বাইরে থাকা কোনো মানুষ। কেননা, আপনার মস্তিষ্ক ইতিমধ্যে ঘোর চিন্তায় মগ্ন। সমাধানের জন্য আলাদা করে চিন্তা করার কাজটি তখন আপনার মস্তিষ্ক কার্যকরভাবে করতে পারে না। তাই নির্ভরযোগ্য কোনো বন্ধু, সহকর্মী কিংবা খুব কাছের মানুষের সঙ্গে আপনার সমস্যাটি শেয়ার করুন এবং সাহায্য নিন। সমাধান চিন্তা করার ধারাবাহিকতা বদলাতে এটা খুব জরুরি ও কার্যকর একটি উপায়।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে থাকার উপায়

আপডেট সময় : ১১:১১:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অক্টোবর ২০২১

গোলাম সামদানি ডন : জীবনের সব চিন্তা-দুশ্চিন্তা মানুষ নিজে নিজে সামলাতে পারে না বলেই হয়তো ‘বন্ধু’ বা ‘পরিবার’ ইত্যাদির দ্বারস্থ হয়। আমাদের চারপাশে নেতিবাচক বিষয়গুলোই প্রকট। প্রতিটি স্তরে আমরা এসব নেতিবাচক বিষয় দ্বারা প্রভাবিত হই। এটি আমাদের ইতিবাচক জীবন থেকে দূরে ঠেলে দেয়। তাই নেতিবাচক চিন্তা, মানুষ ও ঘটনা থেকে আমাদের দূরে থাকা উচিত। কয়েকটি উপায়ে এসব থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতে পারেন।
নেতিবাচক আলোচনা থেকে দূরে থাকুন : নেতিবাচক মানুষের কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিন সামান্য একটু কৌশলে। একজন নেতিবাচক মানুষ, যে কিনা সারাক্ষণ অভিযোগ করে, সমালোচনা করে, সবকিছুতে সমস্যা খুঁজে বের করে—আলাপচারিতার মাঝখানে তাকে জিজ্ঞেস করুন সে ‘কীভাবে তার সমস্যাটি সমাধান করবে বা কী করে এই অবস্থা থেকে উন্নতি করা যায়’। এই প্রশ্ন আপনাকে সাহায্য করবে কথার মোড় ঘুরিয়ে ফেলতে! কেননা, সমাধানের কথা জিজ্ঞেস করতেই মানুষটি হয় চুপ হয়ে চিন্তা করবে, না হয় আলোচনার বিষয়টি অন্যদিকে নিয়ে যাবে। ঠিক এভাবেই প্রশ্ন করে ব্যাপারটি থামানো বা সমাধানের ব্যবস্থা করুন। অর্থাৎ ওই পরিস্থিতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়াই হবে আপনার করণীয়।
অসংলগ্ন আলোচনায় অংশগ্রহণ না করা : খেয়াল করে দেখবেন, নেতিবাচক মানুষের আলোচনার বিষয় সব সময়ই কেমন যেন অসংলগ্ন। অন্যদের পক্ষ থেকে মন্তব্য ও সমর্থন নিয়ে, তারা যেন নিজেদের নেতিবাচক চিন্তাভাবনা ও আলোচনায় অন্যদেরও জড়িয়ে নিতে চায়। এমন সব আলোচনায় অংশগ্রহণ না করাই বুদ্ধিমানের কাজ। ধরুন, এমন কেউ আপনার অফিসের কোনো একটা নিয়ম নিয়ে খুব বাড়াবাড়ি রকমের সমালোচনা করছে। অথচ বাকিরা সেই নিয়মের সঙ্গে খাপ খাইয়ে ভালোই দিনাতিপাত করছে।
এই নেতিবাচক বিষয় থেকে দূরে থাকতে একজন বিবেকবান মানুষ হিসেবে আপনার কর্তব্য হবে, সেই আলোচনায় একেবারেই কোনো মন্তব্য না করে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকা।
সুখ আপনার নিজের হাতে : সফল মানুষের মনোভাব অনেকটা এরূপ: নিজেদের কোনো কাজ নিয়ে যদি তারা খুব সন্তুষ্ট ও সুখী থাকে, অন্য কারোর মন্তব্য তখন তারা একদম পরোয়া করে না! একটু ভাবুন তো? আপনি কি কখনো পারবেন নেতিবাচক কোনো মানুষের মানসিকতায় সম্পূর্ণ পরিবর্তন আনতে? যদি উত্তর ‘না’ হয়, তাহলে জেনে রাখুন, তাদের এরূপ মানসিকতার জন্যই কিন্তু তাদের মন্তব্যগুলোও হয় অপ্রীতিকর, মাঝে মাঝে বিরক্তিকরও!
যেহেতু অন্যদের পরিবর্তনের ক্ষমতা আপনার নেই, তাই তাদের মাপকাঠিতে নিজেকে তুলনা করে হতাশাগ্রস্ত হওয়া বোকার কাজ!
যেদিন থেকে আপনি অন্য মানুষের মন্তব্য থেকে নিজেকে যাচাই করা শুরু করবেন, ঠিক সেদিন থেকে আপনি নিজের সুখের চাবি অন্যদের হাতে সঁপে দেবেন। কিন্তু এমনটা যেন না হয়, তাই নিজেকে নেতিবাচক বিষয় থেকে দূরে রাখুন। নিজের সুখের মানদ- নিজের মতো করে গড়ে তুলুন।
সমস্যা নয়, সমাধানে মনোযোগী হওয়া : নেতিবাচক কোনো মানুষের সঙ্গে কথোপকথনে লিপ্ত হলে, “উফ! উনি এমন কেন? কখন থামবে! দূর কী বিরক্তিকর!” ইত্যাদি চিন্তা মাথায় না এনে; বরং চিন্তা করুন, কীভাবে ওই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসবেন। অর্থাৎ সমস্যা চিন্তা না করে সমাধান চিন্তা করুন। আপনি এ রকম পরিস্থিতিতে বিরক্তিবোধ করবেন, নাকি মাথা ঠান্ডা করে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকবেন, তা কিন্তু একান্তই আপনার ওপর নির্ভর করে! যদি বিরক্তিতে পর্যবসিত হতে না চান, সমাধানের প্রতি মনোযোগী হোন।
পূর্ব-অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিন : ভবিষ্যৎ কোনো ভোগান্তি বা ভুল থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পূর্বের অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ব্যর্থতা সাফল্যের চাবিকাঠি নয়, ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে কাজে লাগানোই সাফল্যের চাবিকাঠি।
আপনার চিন্তাই আপনার বাস্তবতাকে গড়ে তোলে : অন্যদের মন্তব্য হয়তো অনেককে কিছুটা হলেও ভাবায়। কেউ আমাদের নিয়ে নেতিবাচক কথা বললে দিনরাত আমরা হয়তো তা নিয়ে ভাবতে থাকি। এটি তখনই প্রকট আকার ধারণ করে যখন আমরা নিজেকে তাই ভাবতে শুরু করি এবং হীনমন্যতায় ভুগি।
আপনার কাজ হচ্ছে যাচাই করা, আসলেই আপনার নিজেকে নিয়ে অমন উপলব্ধি কখনো হয়েছে কি না। যদি না হয়, তাহলে তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিন। কিন্তু “আমি মনে হয় আসলেই এ রকম!” চিন্তা থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। নাহলে তা আপনার মনে দীর্ঘস্থায়ী একটি খারাপ প্রভাব ফেলবে।
চিন্তাগুলো শেয়ার করুন : জীবনের সব চিন্তা-দুশ্চিন্তা মানুষ নিজে নিজে সামলাতে পারে না বলেই হয়তো ‘বন্ধু’ বা ‘পরিবার’ ইত্যাদির দ্বারস্থ হয়। অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার জন্য তৎক্ষণাৎ কী করা উচিত বা গতানুগতিক চিন্তা থেকে ব্যতিক্রমী দৃষ্টিভঙ্গি দিতে পারবে সেই পরিস্থিতির বাইরে থাকা কোনো মানুষ। কেননা, আপনার মস্তিষ্ক ইতিমধ্যে ঘোর চিন্তায় মগ্ন। সমাধানের জন্য আলাদা করে চিন্তা করার কাজটি তখন আপনার মস্তিষ্ক কার্যকরভাবে করতে পারে না। তাই নির্ভরযোগ্য কোনো বন্ধু, সহকর্মী কিংবা খুব কাছের মানুষের সঙ্গে আপনার সমস্যাটি শেয়ার করুন এবং সাহায্য নিন। সমাধান চিন্তা করার ধারাবাহিকতা বদলাতে এটা খুব জরুরি ও কার্যকর একটি উপায়।