আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রাশিয়ার সঙ্গে কোনও আপোস করার সম্ভাবনা নাকচ করে ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, নেটো জোটই তার দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
রাশিয়ার হুমকির কারণে নেটোতে যোগ দেওয়া ‘সহজ হবে না’ বলে জেলেনস্কি স্বীকার করে নিলেও এ ছাড়া ইউক্রেইনের সামনে অন্য কোনও পথ নেই বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
কিয়েভে বিবিসি’র এক সাংবাদিককে একথা বলেন জেলেনস্কি। বিবিসি’র বিদেশি সংবাদদাতা সারাহ রেইনসফোর্ড জানতে চেয়েছিলেন, জেলেনস্কি পশ্চিমা সামরিক জোট নেটোতে যোগ দেওয়ার উচ্চাকাঙ্খা বাদ দিতে প্রস্তুত কিনা।
জবাবে জেলেনস্কি বলেন, “এটি ইউক্রেইনের ‘উচ্চাকাঙ্খা’ নয়। আমরা ১৫,০০০ মানুষকে হারিয়েছি। এটি (নেটোতে যোগদান) উচ্চাকাঙ্খা নয়, আমাদের জীবনের ব্যাপার।”
তিনি আরও বলেন, “বিষয়টি কেবল নেটো সম্পর্কিত নয়; এটি জনগণের ভবিষ্যতের ব্যাপার। নেটোতে যোগ দেওয়ার বিষয়টি কেবল এর সদস্যপদ পাওয়া নয়। আমরা যদি নেটো, ইইউ, আপাত অধিকৃত অঞ্চল নিয়ে কথা বলি- তাহলে আমরা আমাদের স্বাধীনতার বিষয়েই কথা বলছি।”
“বিষয়টা এটাই। যার মানে হচ্ছে, আমরা কী চাই এবং ভবিষ্যতে কী করব সেটা আমরাই নির্ধারণ করেছি।” ইউক্রেইন নেটো জোটের সদস্যদেশ নয়। তবে ২০০৮ সালে দেশটিকে নেটোতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।
সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ইউক্রেইন নেটো সদস্য হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন এই জোটের পরিসর বিস্তৃত হয়ে যাবে রাশিয়ার সীমান্ত পর্যন্ত। এতে হুমকিতে পড়বে মস্কোর নিরাপত্তা।
সেকারণে নেটোতে ইউক্রেইনের যোগদানের ঘোর বিরোধিতা করছে রাশিয়া। পশ্চিমা দেশগুলো যাতে ইউক্রেইনকে নেটোতে না নেয় সেই নিশ্চয়তাও পশ্চিমা দেশগুলোর কাছ থেকে চেয়েছে রাশিয়া।
নেটোতে ইউক্রেইনের অন্তর্ভুক্তিকে ‘না’ বলার জন্য রাশিয়া নানা রকম হুমকি-ধামকি নিয়ে নেটো জোট এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে। তাছাড়া, নেটোতে যোগ দিলে ইউক্রেইনে হামলা চালানোর হুমকি রাশিয়া দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো সতর্ক করে দিয়ে বলছে, রাশিয়ার বাহিনী যে কোনও দিন ইউক্রেইনে সামরিক হামলা শুরু করতে পারে। তবে মস্কো বরাবরই এমন কোনও পরিকল্পনা থাকার কথা অস্বীকার করে আসছে এবং সম্প্রতি কয়েকদিনে তারা ইউক্রেইন সীমান্ত থেকে কিছু সেনা সরিয়ে নেওয়ার দাবিও করেছে।
বিশ্বের দেশগুলো রাশিয়ার এই দাবিকে সন্দেহের চোখে দেখছে এবং ইউক্রেইন সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমনের প্রমাণ চাইছে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, মাঠ পর্যায়ে পরিস্থিতি একেবারেই বিপরীত। রুশ সেনা সরার বদলে বাড়তি আরও ৭ হাজার সেনা ইউক্রেইন সীমান্তে মোতায়েন হয়েছে।
মাঠ পর্যায়ে মস্কোর সেনা সরানোর দাবির প্রতিফলন না ঘটা পর্যন্ত ইইউ সতর্ক দৃষ্টি রাখবে বলে জানিয়েছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিন।
ওদিকে, ইউক্রেইনে সফররত যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস বলেছেন, রাশিয়ার দাবিতে পশ্চিমা বিশ্বের বোকা বনে যাওয়া উচিত হবে না।