প্রযুক্তি ডেস্ক: আজ সবাই স্যামসাংকে চেনে বিশ্বের অন্যতম স্মার্টফোন ও ইলেকট্রনিকস প্রস্তুতকারী কোম্পানি হিসেবে, কিন্তু অবাক করার মতো বিষয় হলো এই বহুজাতিক কোম্পানির শুরুটা হয়েছিল নুডলস বিক্রি দিয়ে।
১৯৩৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার ডেগু শহরে লি বিয়ং-চুল মাত্র ৩০ হাজার ওন বর্তমান হিসাব অনুযায়ী প্রায় ২৩ ডলার মূলধন নিয়ে ‘স্যামসাং’ নামের এক ছোট্ট ট্রেডিং কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন।
শুরুতে শুকনো মাছ, ফল, সবজি আর নিজেদের তৈরি নুডলস বিক্রি করত কোম্পানিটি। স্যামসাং নামটির মানে ‘উচ্চাভিলাষ’, তবে প্রথমবার রাজধানী সিউলে সম্প্রসারণের স্বপ্ন থেমে যায় ১৯৪৭ সালের কোরিয়ার যুদ্ধের কারণে।
যুদ্ধ শেষে স্যামসাং মনোযোগ দেয় শিল্পায়নে। তারা টেক্সটাইল ব্যবসায় প্রবেশ করে এবং তখনকার সময়ে কোরিয়ার সবচেয়ে বড় উল মিলে উৎপাদন শুরু করে। এর পাশাপাশি বুসানে গড়ে তোলে চিনি শোধনাগার, খুচরা বাজার, সিকিউরিটিজ ও বীমা খাতে বিনিয়োগ করে এবং দেশের পুনর্গঠনে শিল্প খাতকে এগিয়ে নেয়। তবে যে স্যামসাং আমরা আজ চিনি, সেই স্যামসাং ইলেকট্রনিকস জন্ম নেয় ১৯৬৯ সালে।
প্রযুক্তি সাইট অ্যান্ড্রয়েড অথরিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রথমদিকে স্যামসাংয়ের পণ্য ছিল সাদা-কালো টেলিভিশন। এরপর রঙিন টিভি, ক্যালকুলেটর, রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনারসহ নানা যন্ত্র তৈরি করতে থাকে। ১৯৮১ সাল নাগাদ তারা এক কোটি টেলিভিশন তৈরি করে যা মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণ হয়েছিল।
মোবাইল ফোনের জগতে তাদের প্রথম প্রবেশ ঘটে ১৯৮৮ সালে, তবে সেই ফোন বাজারে ব্যর্থ হয়। এরপরও তারা থেমে থাকেনি। ১৯৯৪ সালে বাজারে আসা এসএইচ-৭৭০ মডেল দিয়ে স্যামসাং প্রথম বড় সাফল্য পায়। মাত্র এক বছরের মধ্যেই কোরিয়ার অর্ধেক মোবাইল ফোন বাজার দখল করে নেয় কোম্পানিটি।
অ্যান্ড্রয়েড যুগে প্রবেশ করার পরও প্রথমে স্যামসাংয়ের ফোনগুলো ছিল সাধারণ মানের। তবে গ্যালাক্সি এস-থ্রি বাজারে আসার পর শুরু হয় স্যামসাংয়ের বৈশ্বিক দাপট। এরপর গ্যালাক্সি নোট দিয়ে ফ্যাবলেট যুগের সূচনা করে এবং বর্তমানে ফোল্ডএবল ফোনের বাজারে নেতৃত্ব দিচ্ছে টেক জায়ান্টটি। তবে শুধু স্মার্টফোন নয়, স্যামসাং আজ ল্যাপটপ, ক্রোমবুক, অডিও ডিভাইস, টেলিভিশন, হোম অ্যাপ্লায়েন্স এমনকি সেমিকন্ডাক্টর, প্রসেসর ও ডিসপ্লে প্রযুক্তিতেও শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে।
স্যামসাং আজ দক্ষিণ কোরিয়ার মোট দেশজ উৎপাদনের প্রায় পাঁচভাগের এক ভাগ জোগান দেয়। ইলেকট্রনিকসের বাইরেও তাদের রয়েছে বিশাল কার্যক্রম, স্যামসাং হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ বিশ্বের অন্যতম বড় জাহাজ নির্মাতা, স্যামসাং সি অ্যান্ড টি করপোরেশন বানিয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন বুর্জ খলিফা আবার স্যামসাং লাইফ ইন্স্যুরেন্স থেকে শুরু করে এভারল্যান্ড থিম পার্ক, চেইল বিজ্ঞাপন সবই তাদের অধীনে। আজ এই এক কোম্পানির ছায়াতলে রয়েছে জাহাজ, ভবন, বীমা, বিনোদন, ফ্যাশন, স্বাস্থ্যসেবা, এমনকি বিজ্ঞাপন জগতও।
সানা/কেএমএএ/আপ্র/২৯/০৯/২০২৫