নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপির সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে ডিউটিরত অবস্থায় পারভেজ (৩২) নামে এক কনস্টেবল পুলিশ নিহত হয়েছেন। এ ঘটনা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, নিহত পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করেছে এক ছাত্রদল নেতা। তার ফুটেজ আমাদের কাছে আছে।
গতকাল শনিবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) চিকিৎসাধীন পুলিশ সদস্যদের দেখতে গিয়ে এ কথা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপি আগে থেকেই ঘোষণা দিয়েছিল তারা ১০ লাখ লোক সমাবেশে আনবে। তারা (বিএনপি) প্রধান বিচারপতির বাসভবন পর্যন্ত সমাবেশ ছড়িয়ে গেছে। ঘটনার সূত্রপাত সেখানে আওয়ামী লীগের একটি মিছিল যাচ্ছিল সেই মিছিলে বিএনপি হামলা করে। শুধু হামলা করেই বিএনপি ক্ষান্ত হয়নি তারা দুটি পিকআপে আগুন দেয়। এরপর প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ঢুকে পড়ে। এসময় পুলিশ নিষ্ক্রিয় থাকতে পারে না? পুলিশ আইনানুযায়ী তার কাজ করেছে। তাদের সরিয়ে দিয়েছে। তিনি বলন, ক্ষণে ক্ষণে বিএনপি ঢিল মারছিল এবং আগুন ধরে দেয়। তারা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। সমাবেশে তারা লাঠি এনেছিল। ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমার তিনটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয় তারা। পুলিশ অনেক ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। একপর্যন্ত রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে আগুন লাগিয়ে দেয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। তারা অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশের ছোট বড় স্থাপনায় আগুন দেয়। এছাড়া কয়েকটি সরকারি স্থাপনায় আগুন দেওয়া হয়। জাজেজ কমপ্লেক্সও আগুন লাগিয়ে দেয় তারা। মন্ত্রী আরও বলেন, সবাই দেখেছেন- একজন পুলিশ সদস্যকে কীভাবে হত্যা করেছে। পুলিশ সদস্য পড়ে যাওয়ার পরেও একজন ছাত্রদল নেতা তাকে কুপিয়ে তার মাথা ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে। তার ফুটেজ আমাদের কাছে আছে। সেই পুলিশ সদস্য মারা গেছেন। এ দৃশ্য সবার হৃদয়ে দাগ কেটেছে। বিএনপি বৃষ্টির মতো ইট-পাটকেল ছুড়েছে। ২০১৪ সালে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি করেছিল সেই পরিস্থিতি আবারও করার পায়তারা করেছে বিএনপি। রোববার বিএনপি হরতাল ডেকেছে। তারা গাড়ি-বাস পুড়িয়েছে। যেই গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করবে গাড়ি ভাঙচুর করবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো আমরা।
ফুটেজ দেখছে র্যাব, চিহ্নিত করে ব্যবস্থা: রাজধানীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও সাধারণ মানুষের ওপর হামলাকারীদের শনাক্ত করতে কাজ করছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। ফুটেজ দেখে শনাক্ত হওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে র্যাব।
গতকাল শনিবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এক ভিডিও বার্তায় একথা বলেন। তিনি বলেন, ‘রাজধানীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে কতিপয় দুষ্কৃতিকারী ও স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক রাজধানীর কাকরাইল, নয়াপল্টন, মতিঝিল, ফকিরাপুলসহ বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষের ওপর সন্ত্রাসী হামলা ও আক্রমণ চালিয়েছে। দুষ্কৃতিকারী সন্ত্রাসীরা গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। তারা প্রধান বিচারপতির বাড়িতেও হামলা চালায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে।’
‘তাদের হামলায় আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য হতাহত হয়। সন্ত্রাসীরা রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে হামলা ও অ্যাম্বুলেন্সে অগ্নিসংযোগ করেছে। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বাড়িতেও হামলা করে। বিভিন্ন সমাবেশে দায়িত্ব পালনরত গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর তারা হামলা চালিয়েছে। এছাড়া তারা বিভিন্ন সড়কে স্থাপিত সিসিটিভিও ভাঙচুর করেছে।’ বার্তায় তিনি আরও বলেন, যেসব দুষ্কৃতিকারী ও সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যমকর্মীসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী হামলা ও আক্রমণ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি করে জনজীবন বিপর্যস্ত করার চক্রান্তে লিপ্ত ছিল তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ করছে র্যাব। র্যাব ফোর্সেসের গোয়েন্দারা গণমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত ফুটেজ, সিসিটিভি ফুটেজসহ সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি বিশ্লেষণপূর্বক জড়িত দুষ্কৃতিকারী ও সন্ত্রাসীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ করে যাচ্ছে।
সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা চালিয়েছে বিএনপি: ডিবি প্রধান: ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অনুমতি নিলেও প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা চালিয়েছে। পুলিশের সঙ্গে তারা সংঘর্ষে জড়িয়েছে। পাশাপাশি পুলিশ হাসপাতাল এবং রাষ্ট্রীয় অনেক ভবনে হামলা চালিয়েছে তারা। পুলিশ জনগণের জানমাল রক্ষা করার জন্য পাল্টা অ্যাকশনে গিয়েছে। গতকাল শনিবার (২৮ অক্টোবর) বিকেল ৩টার দিকে পল্টনের নাইটেঙ্গেল মোড় পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। ডিবি প্রধান বলেন, বিএনপি সন্ত্রাসী কায়দায় পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।