নিজস্ব প্রতিবেদক : ইউক্রেইনে আগ্রাসনের জবাবে রাশিয়াকে শায়েস্তা করতে গিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো পুরো বিশ্বের মানুষকে শাস্তির মুখে ফেলে দিয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার বিবেচনায় এটা ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল’। রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানুষকেও যে ভুগতে হচ্ছে, সে কথা তুলে ধরে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান বলেছেন, “স্যাংশন দিয়ে কখনো কোনো দেশ বা জাতিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, সেটা নিশ্চয় এখন দেখতে পাচ্ছেন। কাজেই এই স্যাংশন তুলে দেওয়া। “যুদ্ধ যারা করার, করতে থাকেন। কিন্তু পণ্য পরিবহন বা আমদানি রপ্তানিটা যাতে সহজভাবে হয়, আর সাধারণ মানুষ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।” গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নবনির্মিত আট তলা অফিস ভবন উদ্বোধন করছিলেন প্রধানমন্ত্রী। একই অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধু কূটনৈতিক উৎকর্ষ পদক’ বিতরণ করা হয়। শেখ হাসিনা বলেন, “আমার দেশে আমি সব সময় চেষ্টা করছি আমাদের যে মাটি, মানুষ আছে, আমরা উৎপাদন বাড়াব। আমাদের খাদ্যটা যেন আমরা নিজেরা উৎপাদন করে চলতে পারি, সেই ব্যবস্থাও করব। সাথে যদি আরো কাউকে সাহায্য করতে পারি, সেটাও করব। কিন্তু সেই উৎপাদন বাড়াতে গেলে আমাদের সার প্রয়োজন, আমাদের ডিজেল প্রয়োজন। আমাদের বিভিন্ন উপকরণ প্রয়োজন। সেটা আমরা পাচ্ছি না।” গত এক যুগে উন্নয়নের গতিতে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেওয়া বাংলাদেশকেও এখন অন্য অনেক দেশের মত মহামারীর ধাক্কা আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে ভুগতে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের ইউরোপীয় মিত্রদের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য ও লেনদেন একপ্রকার বন্ধ। খাদ্য ও জ্বালানির আন্তর্জাতিক বাজারে এর বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে, দেশে দেশে আতঙ্ক জাগাচ্ছে মূল্যস্ফীতি। খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়ছে। বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনও সঙ্কটে পড়েছে, ফলে সরকারকে এখন নিয়ম করে লোড শেডিং দিতে হচ্ছে। তাতে শঙ্কিত হয়ে উঠেছেন ব্যবসায়ীরা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এভাবে মানুষকে কষ্ট দেওয়ার কী অর্থ থাকতে পারে আমি ঠিক জানি না। এখানে তো আমি বলবৃ এক দিক থেকে বলতে গেলে এটাও তো মানবাধিকার লঙ্ঘন করার শামিল। মানুষের যে অধিকার আছে, সেই অধিকার থেকে মানুষকে বঞ্চিত করা ঠিক নয়।” পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা আশা করি, একটা দেশকে শাস্তি দিতে গিয়ে বিশ্বের মানুষকে শাস্তি দেওয়া থেকে সরে আসাটা বোধহয় বাঞ্ছনীয় এবং সকলে সেটাই চাইবে।” বাংলাদেশ যে সব সময় শান্তির পক্ষে, সেই পররাষ্ট্রনীতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজকে আমাদের দুর্ভাগ্য, যখন সারা বিশ্ব করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অর্থনৈতিকভাবে বিরাট ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে, ঠিক সেই সময় ইউক্রেইন ও রাশিয়ার যুদ্ধের ফলে সারা বিশ্বব্যাপী মানুষের অবস্থাটা আরো করুণ হয়ে যাচ্ছে, আরো মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। “তার উপর আমেরিকা যে স্যাংশান দিয়েছে, এই স্যাংশান দেওয়ার ফলে আমাদের পণ্যপ্রাপ্তিতে বা যেগুলো আমরা আমদানি করি, সেখানে বিরাট বাধা আসছে। শুধু তাই না, পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে এবং আমরা কোথায় আমাদের প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী পাব, সেই প্রাপ্তির ক্ষেত্রটাও সঙ্কুচিত হয়ে গেছে।” যুদ্ধের প্রভাবে শুধু বাংলাদেশ নয়, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সে কথাও শেখ হাসিনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “মানুষ কিন্তু কষ্ট ভোগ করছে। এটা আসলে উন্নত দেশগুলোর বিশেষভাবে বিবেচনা করা উচিত, আমেরিকার এটা বিবেচনা করা উচিত যে তারা যে স্যাংশন দিচ্ছেন, তাতে তাদের দেশের লোকও কষ্ট পাচ্ছে। সেদিকেও তাদের দৃষ্টি দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। “এই স্যাংশন যাদের বিরুদ্ধে দিচ্ছেন, তাদেরকে আপনারা ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাচ্ছেন। কিন্তু আসলে কতটুকু তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে? তার থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ, সব দেশে। সে উন্নত দেশ, উন্নয়নশীল দেশ বা সকল দেশের মানুষই কিন্তু কষ্ট পাচ্ছে।” অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ-জাপান দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি এবং ইউক্রেন সীমান্তে বাংলাদেশিদের জীবন রক্ষা ও সেবাদানে ভূমিকার জন্য পোল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা হোসেনকে এ অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধু কূটনৈতিক উৎকর্ষ পদক’ দেওয়া হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নবনির্মিত ভবনের হলরুমে এ অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বিশ্বকে শাস্তি, মানবাধিকার লঙ্ঘন: প্রধানমন্ত্রী
ট্যাগস :
নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বিশ্বকে শাস্তি
জনপ্রিয় সংবাদ