পটুয়াখালী সংবাদদাতা : সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সমুদ্রে চলছে জেলেদের মাছ শিকারের উৎসব। নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড, থানা পুলিশ ও মৎস্য কর্মকর্তাদের সামনেই মাছধরা, বিক্রি এবং বাজারজাত করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। জেলেদের আহরিত এসব মাছ পরিবহন ও খোলা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে প্রকাশ্যেই। সমুদ্রে জেলেদের অবাধ বিচরণ চললেও মৎস্য কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিরবতায় জনমনে নানাবিধ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। মৎস্য সম্পদ রক্ষায় সরকারের নির্দেশনাকে অমান্য করে জেলেদের মাছ শিকারে সহায়তা করার অভিযোগ উঠেছে খোদ মৎস্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ডের বিরুদ্ধেও রয়েছে অভিযোগ। মাঝে মধ্যে অভিযানের নামে নাটক চলছে বলে অভিযোগ উপকূলবাসীর। জেলার কুয়াকাটা, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র আলীপুর-মহিপুর, পাথরঘাটা, ফকিরহাট, আশাখালী, রাঙ্গাবালী, মৌডুবী, চর মোন্তাজ, ভোলার চর এলাকাসহ উপকূলীয় অঞ্চল ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে। নিষেধাজ্ঞা উপক্ষো করে সমুদ্রে মাছ শিকারের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রশাসন দুষছে মৎস্য কর্মকর্তাদের। অপরদিকে মৎস্য কর্মকর্তারা দুষছেন প্রশাসনকে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে আড়ৎঘাটে ইলিশ, তপসী, পোয়া, লইট্যা, ডাডিসহ সামুদ্রিক মাছের স্তুপ। আহরিত মাছের চলছে বাছাই প্রক্রিয়া। যথারীতি হাঁক ডাকে ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে মাছগুলো। অধিক দরদাতা চালানি কারবারীরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এসব মাছ পাঠাতে প্রক্রিয়াজাতকরণসহ পরিবহনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নিয়মমাফিক রাজস্ব আদায়ের কাজ করছেন আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র্রের আদায়কারী কর্মকর্তারা। দেশের সমুদ্র সীমানায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞাকালীন সময় সমুদ্রে মাছ শিকার, সংরক্ষণ ও বিপণন সব কিছুই চলছে প্রকাশ্যে দিবালোকে। একই অবস্থা সরকারি দুটি মৎস্য অবতরণকেন্দ্রসহ কুয়াকাটা পৌর মার্কেট, ধুলাসার, বাবলাতলা, বালিয়াতলী, চরচাপলী, আশাখালীও গঙ্গামতি এলাকার সামুদ্রিক মাছের আড়তঘাটে। নিষেধাজ্ঞা পালনকারী জেলেরা জানিয়েছেন, দেখভালের দায়িত্বে থাকা জেলা, উপজেলাসহ স্থানীয় প্রশাসনের গোপন সখ্যতায় এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। জেলে রুহুল মাঝি, ওয়াজেদ ঘরামী ও দেলোয়ার মোল্লা জানান, সমুদ্রে মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শুধু কাগজ-কলমে, বাস্তব চিত্র ভিন্ন। ৬৫ দিনের এ দীর্ঘ সময়ে সমুদ্রে মাছ শিকারে না যাবার জন্য জেলেরা সরকারি সহায়তার আওতায় রয়েছে। বাস্তবে কিছু প্রভাবশালী ফিশিং ট্রলার মালিকরা জেলেদের সমুদ্রে মাছ শিকারে যেতে বাধ্য করছেন। এর মধ্যে কুয়াকাটা নৌ-পুলিশ ও মহিপুর থানা পুলিশ কয়েকদফা রুটিন মাফিক লোক দেখানো অভিযান চালিয়ে জেলেদের আটকসহ আর্থিক জরিমানা করে ছেড়ে দেয়। জনবল ও নৌযানের স্বল্পতার অজুহাত ছাড়া কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা, নিজামপুর কোস্টগার্ড, কুয়াকাটা নৌ-পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা নেই। ফলে সরকারি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রসহ সামুদ্রিক মাছের আড়তঘাটে দেদারছে ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছের। অভিযোগ রয়েছে, কুয়াকাটা পৌরসভার মৎস্য আড়তদাররা নিষেধাজ্ঞাকালে অন্তত পাঁচ শতাধিক নৌকার দেড় হাজার জেলেকে সমুদ্রে মাছ ধরতে পাঠিয়েছে। এজন্য প্রতিটি নৌকাকে গুণতে হয়েছে ১০ হাজার টাকা। অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, মহিপুর-আলীপুর পেতাশ্রয় থেকে প্রায় দেড় শতাধিক ট্রলার গভীর সমুদ্রে ইলিশ শিকারে রয়েছে। এমনকি আহরিত মাছ সংরক্ষণ, মজুদ ও বাজারজাত করতে বরফ উৎপাদনের অনেক মিল সচল রাখা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, কুয়াকাটা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির সামনেই সমুদ্রে জেলেরা দেদারছে মাছ শিকার করছে। অভিযানের সময় কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে অভিযান না চালিয়ে, অভিযান চালানো হয় রাঙ্গাবালী উপকূলীয় সমুদ্রে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকে জানান, কুয়াকাটা ও আলীপুর-মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের মাছধরা ট্রলার মালিক এবং আড়তদারদের সঙ্গে সখ্যতা থাকায় এসব জেলেদের ধরছে না নৌ পুলিশ বা কোস্টগার্ড। কলাপাড়া উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞাকালে সমুদ্রে মাছ ধরায় পৃথক অভিযানে অসাধু জেলেদের কারাদ-সহ আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে। অভিযান চলমান রয়েছে এবং অব্যাহত থাকবে।’