নিজস্ব প্রতিবেদক: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে বলে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের জরুরি বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন। এছাড়া ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জুলাই সনদ সই হয়ে গেলেই শেষ হয়ে যাবে না। এটা মস্ত বড় একটা অধ্যায় শেষ হলো। কিন্তু আরো বহু অধ্যায়ের সূত্রপাত শুরু করবে। কাজেই সেভাবে আমরা এগোবো, যাতে এটা কোথাও হারিয়ে না যায়। পাঠ্যবইসহ নান জায়গায় এটাকে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করতে হবে।
গতকাল বুধবার (১৫ অক্টোবর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, যে দলিলগুলো আপনারা তৈরি করেছেন সেগুলো হারিয়ে যাবে না। আমি যতদিন পারি চেষ্টা করবো এগুলো যেন প্রত্যেকের কাছে যায়। যেন সবার মনের মধ্যে থাকতে পারে কেন আমরা একমত হতে পেরেছি। একমত হওয়া এক জিনিস, এটাকে সঞ্চারিত করা এক জিনিস। এই সঞ্চারণের দায়িত্ব আমাদের নিতে হবে সরকার হিসেবে, আমরা প্রক্রিয়া শুরু করবো। বিষয়গুলো জনগণের কাছে প্রচার করার মতো ভাষায় প্রচার করতে হবে। আমি বলে রেখেছি, আপনারা যে বিতর্কগুলো করেছেন এগুলো অমূল্য সম্পদ। এগুলোকে বিষয়ভিত্তিকভাবে ভিডিও করে, বই করে আমাদের কাছে থাকবে, যাতে হারিয়ে না যায়। সামাজিক মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রচার করলে সবার কাছে পরিষ্কার হবে। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যে অসম্ভবকে আপনারা সম্ভব করেছেন সেটা শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে না, পৃথিবীর রাজনৈতিক ব্যবস্থার ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য হয়ে থাকবে। আপনারা কঠিন কঠিন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং সমাধানে এসেছেন। নিজেরা সবাই আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছেন, একটা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পেরেছেন। এ জন্য আজকে জুলাই সনদ রচনা হয়েছে। সেজন্য আমি একা নই, জাতির সবাই অভিভূত হয়েছে। তিনি বলেন, আজকে যেই পয়েন্টে এসেছি, সেটা একটা অবিশ্বাস্য কাণ্ড।
মানুষ চিরদিন স্মরণ করবে, বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে গর্ববোধ করছে। আমি একজন ব্যক্তি হিসেবে গর্ববোধ করছি যে এই কাজের সঙ্গে আমি শরিক ছিলাম, অংশীদার ছিলাম। যে অসম্ভব কাজ আপনারা করলেন এটা যুগ যুগ ধরে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মতো একটা দিন।
প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, ছাত্র-জনতার যে অভ্যুত্থান তারপরে এটাই মনে হয় সঠিকভাবে রচিত হলো। কাজেই জুলাই সনদ সই অনুষ্ঠানে সারা জাতি শরিক হবে। যেই কলমে সই করা হবে সেগুলো জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে। যে যে কলম দিয়ে সই করবেন তার তার মুহূর্ত জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে। কারণ কেউ ভুলতে পারবে না আপনাদের। এটা এমন একটা ঘটনা, আমরা যেহেতু ঘটনার ভেতরে আছি বলে অনুভব করতে পারছি না। বাইরে গিয়ে যদি দাঁড়াতে পারতাম তাহলে মনে হতো বিশাল একটা কাজ। মাসের পর মাস বৈঠক করে হয়তো মনে করেছেন এটা অসমাপ্ত থেকে যাবে। এটা অসমাপ্ত থেকে যায় নাই।
সন্তোষজনকভাবে আপনারা সমাপ্তিতে এনেছেন। আপনারা ভেবেচিন্তে নিয়ম-কানুন বের করেছেন, যাতে সবাই সনদে সই করতে পারেন। এটা জাতির জন্য একটা মস্ত বড় সম্পদ রয়ে গেলো। এ জন্য আপনাদের সবাইকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আপনারা সবাই যে পরিশ্রম করেছেন তা জাতি হিসেবে সবাই শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে বলে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের জরুরি বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে। উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হবে। তার জন্য যা যা করতে হয়, সাধ্য অনুযায়ী আমরা সব কিছু করব। এর সঙ্গে কোনো কম্প্রোমাইজ করা হবে না।’
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা যেভাবে সবাই মিলে জাতীয় সনদ তৈরি করেছেন। সরকারের দায়িত্ব হলো উৎসবমুখর নির্বাচনটা করে দেওয়া। তাহলে আমাদের কাজ একটা পরিণতিতে এলো। আর তা না হলে আপনারা সুন্দর একটা সনদ করলেন, আর আমরা একটা ভণ্ডুল মার্কা নির্বাচন করলাম, এই নির্বাচনের তো কোনো দরকার নেই। কাজেই জুলাই সনদের ভিত্তিতেই যেন নির্বাচনটা হয়।’ জাতীয় নির্বাচন পেছানোর কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন করতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।
প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনার প্রতি আমাদের সমর্থন সীমাহীন নয়, এর সীমারেখা আছে। আপনার প্রতি আমাদের সমর্থন কন্ডিশনাল, আপনি এটা উপলব্ধি করুন।’
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা চাই, আপনার সঙ্গে প্রতিরক্ষার বাহিনীর সম্পর্কের অবনতি না হোক, রাষ্ট্রের ব্যালান্স রাখতে হবে। আমরা নির্বাচনকে সামনে রেখে কোনো ঝুঁকির মধ্যে পড়তে চাই না, আমরা এটা মোকাবেলা করতে পারব না।
ওআ/সানা/আপ্র/১৫/১০/২০২৫