ঢাকা ০১:১০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫

নির্বাচন: প্রস্তুতি সম্পন্নের নির্দেশ ও বাস্তবতা

  • আপডেট সময় : ০৬:২২:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫
  • ৪ বার পড়া হয়েছে

ড. সুলতান মাহমুদ রানা

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ডিসেম্বরের মধ্যেই আইন-শৃঙ্খলাসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশনা এসেছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে। যদিও নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ এখনো উল্লেখ করা হয়নি। পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচন ফেব্রুয়ারি কিংবা এপ্রিলে হতে পারে।

ডিসেম্বরে প্রস্তুতি শেষ করলে রমজান মাস শুরু হওয়ার আগে নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শেষ করা যাবে কি না সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ ডিসেম্বরের পরে রমজান মাস ৪৭ কিংবা ৪৮ দিন পরেই শুরু হবে। তার পরও ধরে নেওয়া যায় যে প্রস্তুতি গ্রহণের অর্থ হচ্ছে ইতিবাচকভাবে দেশের পরিস্থিতি নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকে এগিয়ে নেওয়া। এ কথা সত্য যে রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই। এ বিষয়ে বিভিন্ন মহলে ভিন্ন ভিন্ন মতামত রয়েছে।

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, যে কোনো নির্বাচনই রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি ভোটারদের জন্যও। গণতন্ত্রে সর্বজনীন ভোটাধিকার প্রয়োগ, রাজনৈতিক সংগঠন, সমাবেশ, প্রচারণা ইত্যাদি রাজনৈতিক অংশগ্রহণের প্রধান হাতিয়ার। নির্বাচন ব্যতিরেকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায় না। আর এ ক্ষেত্রে জাতীয় কিংবা স্থানীয় নির্বাচন- যাই হোক না কেন উভয় নির্বাচনেই নাগরিকদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ হয়ে থাকে।

নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতার পরিবর্তন হবে। সেই নির্বাচিত সরকারই একমাত্র দেশ চালানোর ক্ষমতা রাখবে এবং সমস্যাগুলোর সমাধান করবে। বিশেষ করে প্রার্থীরা যখন প্রতিশ্রুতির ঝুড়ি নিয়ে জনগণের কাছে হাজির হয়, জনগণ সব কিছু বুঝেশুনে ভোট কাকে দেবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আমাদের দেশে একটি সাংবিধানিক স্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি) রয়েছে। নির্বাচন কমিশন বেশ কিছু কার্যক্রম হাতে নিলেও এখন পর্যন্ত খুব বেশি অগ্রগতি দৃশ্যমান হয়নি।

প্রকৃতপক্ষে নির্বাচনের যাবতীয় আয়োজন প্রস্তুতি সব কিছুই ইসির হাতে। ইসিই ঠিক করবে যে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কিভাবে এবং কোন প্রয়োজনে সাজানো হবে। কাকে বদলি করা হবে, কাকে মোতায়েন করা হবে, কতজন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য লাগবে। কত দিনের জন্য লাগবে- সব কিছুই মূলত ইসি ঠিক করবে। গণমাধ্যম সূত্রে জানতে পারলাম যে বেশ কিছু নির্দেশনার বিষয় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে একটি বিষয় আমাদের কাছে কিছতা খটকা হিসেবে মনে হয়েছে। সেটি হলো, নির্বাচনের জন্য ১৮ থেকে ৩৩ বছরের ভোটারদের আলাদা তালিকা প্রস্তুত এবং আলাদা ভোটিং বুথের ব্যবস্থার প্রসঙ্গে কথা বলা হয়েছে। ভোটারদের ভেতর নবীন ও প্রবীণ আলাদা ক্যাটাগরি করার যৌক্তিকতা কী সেটি- এখনো আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়নি। দেশবাসী এ বিষয়ে কী ভাবছেন সেটি আমি জানি না।

সব রাজনৈতিক দল একমত না হলেও অনেক রাজনৈতিক দলই দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে রয়েছে। তবে জামায়াত এবং নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বিচার ও সংস্কার এবং জুলাই ঘোষণাপত্রের আনুষ্ঠানিকতার আগে কোনোভাবেই নির্বাচনে যেতে চাচ্ছে না; বিশেষ করে এনসিপি এ বিষয়ে স্পষ্ট উচ্চারণ করেছে। তবে বেশ কিছুদিন থেকে লক্ষ করা যাচ্ছে যে, দেশের গ্রামেগঞ্জে তথা তৃণমূল পর্যন্ত মানুষের চিন্তাভাবনা পুরোপুরি নির্বাচনী পরিবেশের দিকে এগিয়ে চলেছে। মাঠ পর্যায়ে প্রায় প্রতিটি অঞ্চলেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়েছে। আবার সরকারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের অনেকগুলো বৈঠক হয়েছে। ঐকমত্য কমিশনে নানা বিষয়ে বেশ কিছু মতৈক্য হয়েছে বা অগ্রগতি ঘটেছে। রাজনৈতিক দলগুলো সবকিছুতে পুরোপুরি একমত হতে না পারলেও মোটামুটি গুরুত্বপূর্ণ ও ন্যায্য বিষয়ে বেশির ভাগই একমত হয়েছে।

অবশ্য কতগুলো মৌলিক বিষয়ে বিএনপি একমত হতে পারেনি। ভবিষ্যতে সংসদে বিতর্কের মাধ্যমে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে বলে অনেকের পক্ষ থেকে প্রস্তাব এসেছে। নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে এরই মধ্যে বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা পোস্টার, ফেস্টুন, ব্যানার লাগানোসহ অন্যান্য জনসংযোগের কাজে মনোযাগী হয়েছে। এদিকে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনসংক্রান্ত বিধি-বিধান সংশোধন, নতুন দলের নিবন্ধন এবং সংসদীয় আসনগুলোর সীমানা পুনর্র্নিধারণের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে গণমাধ্যম থেকে জানতে পারলাম।

নির্বাচন নিয়ে ইসি এবং সরকারের সামনে এগিয়ে চলা বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের জন্য ইতিবাচক হলেও দেশের চলমান পরিস্থিতি এবং সংশ্লিষ্ট দলগুলোর কিছু কার্যক্রম কোনোভাবেই ভোটারদের আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে ইতিবাচক মনে হচ্ছে না। কিছু রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, চাঁদাবাজি এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে প্রায়ই অস্বাভাবিক করে তুলেছে। মনে রাখতে হবে, বর্তমানে দেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ না থাকায় অপেক্ষাকৃত বড় রাজনৈতিক দল কয়েকটির বেশি নেই। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে কিছতা সহনশীল হতে হবে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোকে। এখন তাদের নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করার সময়। রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে যদি জনগণ আশাবাদীই না হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে জনমত সংঘবদ্ধ হতেও বেশিদিন সময় লাগবে না।

জনগণের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে- এমন কোনো কাজ রাজনৈতিক দলগুলোর করা ঠিক হবে না। আর তা না হলে এক্ষেত্রে বিপরীত ফলাফল বয়ে আনবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই বলা যায়, নির্বাচনের প্রস্তুতি দেশের নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক ভূমিকায় রাখবে বলে আমি মনে করি। এ দেশের রাজনীতিকে সুষ্ঠু ও সুন্দর পথে পরিচালিত করতে সব পক্ষের দায়িত্বশীল ভূমিকা জনগণ প্রত্যাশা করে। আর এই ভূমিকা পালনে যে পক্ষ অধিক সফলতার পরিচয় আনবে আগামী দিনগুলো তাদের জন্যই পরিষ্কার হবে। এরই মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের ১১ মাস অতিবাহিত হয়ে বছর পূর্তি হতে চলেছে।

রাজনৈতিক দলগুলো তাদের জনকল্যাণমুখী রাজনৈতিক রোডম্যাপ যথাযথভাবে ঘোষণা করেনি। আবার ইসির প্রস্তুতি থাকলেও তারা সুনির্দিষ্টভাবে কোনো সিগন্যাল পায়নি বলে বিভিন্ন বক্তব্য থেকে আমরা জেনেছি; এমনকি রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করতে কিংবা নির্বাচনের লক্ষ্যে ভোটারদের নিজেদের পক্ষে টানতে কোনো ধরনের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। চোখে পড়ার মতো কোনো রাজনৈতিক মেনিফেস্টো, দিকনির্দেশনা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে জনগণ পাচ্ছে না। জনগণের কাছেও রাজনৈতিক দলগুলো তাদের বার্তা পৌঁছাতে পারছে না।

ভোটের রাজনীতিতে বিজয়ী হওয়ার একমাত্র হাতিয়ার হলো সাংগঠনিক ভিত্তি ও জনসমর্থন। দলের সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত না হলে এবং জনসমর্থন না থাকলে ওই দল নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে না। প্রসঙ্গত বলতে হয় যে, নতুন দলগুলোর উচিত সাধারণ মানুষের জন্য ব্যতিক্রমী চিন্তা বা জনমুখী কর্মসূচি নিয়ে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। বাস্তবতাবিবর্জিত রাজনৈতিক দর্শনের কারণেও অনেক দল মানুষের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে না। ফলে জনসমর্থনও বাড়ে না। এতে নির্বাচনের ফলাফলও নেতিবাচক হয়।

লেখক: অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
(মতামত লেখকের সম্পূর্ণ নিজস্ব)

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নির্বাচন: প্রস্তুতি সম্পন্নের নির্দেশ ও বাস্তবতা

আপডেট সময় : ০৬:২২:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫

ড. সুলতান মাহমুদ রানা

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ডিসেম্বরের মধ্যেই আইন-শৃঙ্খলাসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশনা এসেছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে। যদিও নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ এখনো উল্লেখ করা হয়নি। পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচন ফেব্রুয়ারি কিংবা এপ্রিলে হতে পারে।

ডিসেম্বরে প্রস্তুতি শেষ করলে রমজান মাস শুরু হওয়ার আগে নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শেষ করা যাবে কি না সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ ডিসেম্বরের পরে রমজান মাস ৪৭ কিংবা ৪৮ দিন পরেই শুরু হবে। তার পরও ধরে নেওয়া যায় যে প্রস্তুতি গ্রহণের অর্থ হচ্ছে ইতিবাচকভাবে দেশের পরিস্থিতি নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকে এগিয়ে নেওয়া। এ কথা সত্য যে রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই। এ বিষয়ে বিভিন্ন মহলে ভিন্ন ভিন্ন মতামত রয়েছে।

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, যে কোনো নির্বাচনই রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি ভোটারদের জন্যও। গণতন্ত্রে সর্বজনীন ভোটাধিকার প্রয়োগ, রাজনৈতিক সংগঠন, সমাবেশ, প্রচারণা ইত্যাদি রাজনৈতিক অংশগ্রহণের প্রধান হাতিয়ার। নির্বাচন ব্যতিরেকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায় না। আর এ ক্ষেত্রে জাতীয় কিংবা স্থানীয় নির্বাচন- যাই হোক না কেন উভয় নির্বাচনেই নাগরিকদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ হয়ে থাকে।

নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতার পরিবর্তন হবে। সেই নির্বাচিত সরকারই একমাত্র দেশ চালানোর ক্ষমতা রাখবে এবং সমস্যাগুলোর সমাধান করবে। বিশেষ করে প্রার্থীরা যখন প্রতিশ্রুতির ঝুড়ি নিয়ে জনগণের কাছে হাজির হয়, জনগণ সব কিছু বুঝেশুনে ভোট কাকে দেবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আমাদের দেশে একটি সাংবিধানিক স্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি) রয়েছে। নির্বাচন কমিশন বেশ কিছু কার্যক্রম হাতে নিলেও এখন পর্যন্ত খুব বেশি অগ্রগতি দৃশ্যমান হয়নি।

প্রকৃতপক্ষে নির্বাচনের যাবতীয় আয়োজন প্রস্তুতি সব কিছুই ইসির হাতে। ইসিই ঠিক করবে যে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কিভাবে এবং কোন প্রয়োজনে সাজানো হবে। কাকে বদলি করা হবে, কাকে মোতায়েন করা হবে, কতজন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য লাগবে। কত দিনের জন্য লাগবে- সব কিছুই মূলত ইসি ঠিক করবে। গণমাধ্যম সূত্রে জানতে পারলাম যে বেশ কিছু নির্দেশনার বিষয় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে একটি বিষয় আমাদের কাছে কিছতা খটকা হিসেবে মনে হয়েছে। সেটি হলো, নির্বাচনের জন্য ১৮ থেকে ৩৩ বছরের ভোটারদের আলাদা তালিকা প্রস্তুত এবং আলাদা ভোটিং বুথের ব্যবস্থার প্রসঙ্গে কথা বলা হয়েছে। ভোটারদের ভেতর নবীন ও প্রবীণ আলাদা ক্যাটাগরি করার যৌক্তিকতা কী সেটি- এখনো আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়নি। দেশবাসী এ বিষয়ে কী ভাবছেন সেটি আমি জানি না।

সব রাজনৈতিক দল একমত না হলেও অনেক রাজনৈতিক দলই দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে রয়েছে। তবে জামায়াত এবং নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বিচার ও সংস্কার এবং জুলাই ঘোষণাপত্রের আনুষ্ঠানিকতার আগে কোনোভাবেই নির্বাচনে যেতে চাচ্ছে না; বিশেষ করে এনসিপি এ বিষয়ে স্পষ্ট উচ্চারণ করেছে। তবে বেশ কিছুদিন থেকে লক্ষ করা যাচ্ছে যে, দেশের গ্রামেগঞ্জে তথা তৃণমূল পর্যন্ত মানুষের চিন্তাভাবনা পুরোপুরি নির্বাচনী পরিবেশের দিকে এগিয়ে চলেছে। মাঠ পর্যায়ে প্রায় প্রতিটি অঞ্চলেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়েছে। আবার সরকারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের অনেকগুলো বৈঠক হয়েছে। ঐকমত্য কমিশনে নানা বিষয়ে বেশ কিছু মতৈক্য হয়েছে বা অগ্রগতি ঘটেছে। রাজনৈতিক দলগুলো সবকিছুতে পুরোপুরি একমত হতে না পারলেও মোটামুটি গুরুত্বপূর্ণ ও ন্যায্য বিষয়ে বেশির ভাগই একমত হয়েছে।

অবশ্য কতগুলো মৌলিক বিষয়ে বিএনপি একমত হতে পারেনি। ভবিষ্যতে সংসদে বিতর্কের মাধ্যমে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে বলে অনেকের পক্ষ থেকে প্রস্তাব এসেছে। নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে এরই মধ্যে বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা পোস্টার, ফেস্টুন, ব্যানার লাগানোসহ অন্যান্য জনসংযোগের কাজে মনোযাগী হয়েছে। এদিকে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনসংক্রান্ত বিধি-বিধান সংশোধন, নতুন দলের নিবন্ধন এবং সংসদীয় আসনগুলোর সীমানা পুনর্র্নিধারণের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে গণমাধ্যম থেকে জানতে পারলাম।

নির্বাচন নিয়ে ইসি এবং সরকারের সামনে এগিয়ে চলা বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের জন্য ইতিবাচক হলেও দেশের চলমান পরিস্থিতি এবং সংশ্লিষ্ট দলগুলোর কিছু কার্যক্রম কোনোভাবেই ভোটারদের আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে ইতিবাচক মনে হচ্ছে না। কিছু রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, চাঁদাবাজি এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে প্রায়ই অস্বাভাবিক করে তুলেছে। মনে রাখতে হবে, বর্তমানে দেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ না থাকায় অপেক্ষাকৃত বড় রাজনৈতিক দল কয়েকটির বেশি নেই। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে কিছতা সহনশীল হতে হবে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোকে। এখন তাদের নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করার সময়। রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে যদি জনগণ আশাবাদীই না হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে জনমত সংঘবদ্ধ হতেও বেশিদিন সময় লাগবে না।

জনগণের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে- এমন কোনো কাজ রাজনৈতিক দলগুলোর করা ঠিক হবে না। আর তা না হলে এক্ষেত্রে বিপরীত ফলাফল বয়ে আনবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই বলা যায়, নির্বাচনের প্রস্তুতি দেশের নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক ভূমিকায় রাখবে বলে আমি মনে করি। এ দেশের রাজনীতিকে সুষ্ঠু ও সুন্দর পথে পরিচালিত করতে সব পক্ষের দায়িত্বশীল ভূমিকা জনগণ প্রত্যাশা করে। আর এই ভূমিকা পালনে যে পক্ষ অধিক সফলতার পরিচয় আনবে আগামী দিনগুলো তাদের জন্যই পরিষ্কার হবে। এরই মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের ১১ মাস অতিবাহিত হয়ে বছর পূর্তি হতে চলেছে।

রাজনৈতিক দলগুলো তাদের জনকল্যাণমুখী রাজনৈতিক রোডম্যাপ যথাযথভাবে ঘোষণা করেনি। আবার ইসির প্রস্তুতি থাকলেও তারা সুনির্দিষ্টভাবে কোনো সিগন্যাল পায়নি বলে বিভিন্ন বক্তব্য থেকে আমরা জেনেছি; এমনকি রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করতে কিংবা নির্বাচনের লক্ষ্যে ভোটারদের নিজেদের পক্ষে টানতে কোনো ধরনের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। চোখে পড়ার মতো কোনো রাজনৈতিক মেনিফেস্টো, দিকনির্দেশনা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে জনগণ পাচ্ছে না। জনগণের কাছেও রাজনৈতিক দলগুলো তাদের বার্তা পৌঁছাতে পারছে না।

ভোটের রাজনীতিতে বিজয়ী হওয়ার একমাত্র হাতিয়ার হলো সাংগঠনিক ভিত্তি ও জনসমর্থন। দলের সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত না হলে এবং জনসমর্থন না থাকলে ওই দল নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে না। প্রসঙ্গত বলতে হয় যে, নতুন দলগুলোর উচিত সাধারণ মানুষের জন্য ব্যতিক্রমী চিন্তা বা জনমুখী কর্মসূচি নিয়ে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। বাস্তবতাবিবর্জিত রাজনৈতিক দর্শনের কারণেও অনেক দল মানুষের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে না। ফলে জনসমর্থনও বাড়ে না। এতে নির্বাচনের ফলাফলও নেতিবাচক হয়।

লেখক: অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
(মতামত লেখকের সম্পূর্ণ নিজস্ব)

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ