নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে ‘প্রহসনের নির্বাচন’ বর্জন করায় জনগণকে অভিনন্দন জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। একইসঙ্গে ভোট বর্জনের গণরায় মেনে ডামি নির্বাচন বাতিল করে অবিলম্বে নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ার দাবিও জানিয়েছে জোটটি। প্রহসনের নির্বাচনেও নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলেও জানিয়েছে।
গতকাল সোমবার (৮ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে নেতারা এসব কথা বলেন। সরকারের দমন-পীড়ন, ভয়, প্রলোভন উপেক্ষা করে ৭ জানুয়ারির ‘একতরফা প্রহসনের’ নির্বাচন বর্জন করায় দেশবাসীকে অভিনন্দন ও এই নির্বাচন বাতিল করে অবিলম্বে পুনঃনির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বানের জন্য বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সভায় নেতারা বলেন, দেশের বেশিরভাগ কেন্দ্র ছিল ফাঁকা, কেন্দ্রের সামনে ও ভেতরে আওয়ামী লীগের কর্মীরা ছাড়া ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই নগণ্য। নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, দুপুর ১২টা ১০ মিনিট পর্যন্ত সারাদেশে ভোট পড়েছিল মাত্র সাড়ে ১৮ শতাংশ এবং বিকাল ৩টার সময় ছিল ২৬.৬৭ শতাংশ। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ। শিশুদের দিয়ে ভোট দেওয়ানো, পূর্বেই সিল দেওয়া ব্যালট দিয়ে বাক্স ভর্তি করা, সরকারের মন্ত্রীর প্রকাশ্যে ব্যালট পেপারে সিল মারা, জাল ভোট প্রদান, ‘ডামি বিরোধী’ প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট না থাকা, ভোট কেন্দ্র দখল-ভোটকেন্দ্র দখলে বিজিবি ও সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার, সরকারি দলকে ভোট না দিলে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতাভুক্ত ভাতা বন্ধের হুমকি, সন্ত্রাসীদের দিয়ে হুমকি-ধমকিসহ নির্বাচনে সরকারি দলের প্রার্থীদের জেতার জন্য যা-যা করার তার সবই করা হয়েছে এই নির্বাচনে। বাম জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদ (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের সদস্য জয়দ্বীপ ভট্টাচার্য, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী। সভা পরিচালনা করেন বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকম-লীর সদস্য শামীম ইমাম।
ভোট বর্জনে জনগণ জানিয়েছে আওয়ামী লীগকে তারা চায় না: এবি পার্টি: ৭ জানুয়ারির নির্বাচন নামক প্রহসনকে ‘গণতন্ত্র হত্যা’ হিসেবে অভিহিত করে প্রতিবাদে রাজধানীতে কালো পতাকা মিছিল করেছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। সোমবার (৮ জানুয়ারি) বিকেল ৩টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে কালো পতাকা মিছিলটি শুরু হয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এবি পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার বলেন, দেশের মানুষ এই ফ্যাসিবাদের ভয়ে আজ কোনো কথা বলতে সাহস পায় না। তারা চিন্তা করতেও ভয় পাচ্ছে, কখন সে নির্যাতনের শিকার হয়। এটাই ফ্যাসিবাদের বৈশিষ্ট্য। ভয় সৃষ্টির মাধ্যমেই ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদের মাথায় চেপে বসেছে। এই স্বৈরাচার হঠাতে সবাইকে কথা বলতে হবে, মাঠে আন্দোলনে ভূমিকা রাখতে হবে। অবৈধ এই সরকারের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত, জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই আন্দোলন চলবে।
নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে দুদিনের কর্মসূচি ঘোষণা জামায়াতের: রোববারের নির্বাচন প্রত্যাখান করে দুদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম আজ (সোমবার) এক বিবৃতিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এতে জানানো হয়েছে, প্রহসনের নির্বাচন বাতিল করে অবিলম্বে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবিতে ৯ জানুয়ারি মঙ্গলবার ও ১০ জানুয়ারি বুধবার দেশব্যাপী গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করবে জামায়াত।
‘এটি কোনো নির্বাচনই নয়’: এদিকে বিকেলে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে আজ জনগণের ন্যায্য ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই চলছে। গণতন্ত্র হত্যাকারী বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার গত ১৫ বছর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে আছে। তারা ক্ষমতা প্রলম্বিত করার লক্ষ্যে এবারও ৭ জানুয়ারি প্রহসনের নির্বাচনের আয়োজন করে। আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন দ্বারা একটি সাজানো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। জামায়াতে ইসলামীসহ প্রায় সকল বিরোধী রাজনৈতিক দল ঘোষিত তফসিল প্রত্যাখ্যান করে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানায় এবং নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করতে থাকে। এ নির্বাচনে জনগণের ৩ হাজার কোটি টাকা নষ্ট করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এই নির্বাচনে জনগণের কোনো কল্যাণ হয়নি। এটি কোনো নির্বাচনই নয়। যেহেতু জনগণ এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি, সুতরাং এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো নৈতিক অধিকার নেই। আমরা দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে প্রহসনের নির্বাচন বাতিল করে অবিলম্বে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আহ্বান জানাচ্ছি। দেশের জনগণ নির্বাচন বর্জন করে ও ভোটদান থেকে বিরত থেকে যে ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে সরকার জনগণের দাবি মেনে নিয়ে শুভ বুদ্ধির পরিচয় দেবেন বলে আমরা আশা করি।
ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ: ভোট বর্জন করে জনগণ আওয়ামী লীগকে সতর্ক সংকেত দিয়েছে। নতুন উদ্যমে অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন জোরদার করতে হবে বলে জানিয়েছে ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ। সোমবার (৮ জানুয়ারি) ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, সিনিয়র সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওয়াদুদ ও সেক্রেটারি জেনারেল বীর মুক্তিযোদ্ধা খালেকুজ্জামান এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন। তারা বলেন, ভোট বর্জন করে জনগণ আওয়ামী লীগকে সতর্ক সংকেত দিয়েছে। জনগণ এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে প্রমাণ করলো জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জনগণ আজ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা বলেন, সংসদ নির্বাচনের ফল বাড়িয়ে সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে, এই ফল দেশবাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। জনগণ এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। তাই এই নির্বাচনের ঘোষিত ফলাফলের ওপর নির্ভর করে সরকার গঠনের নৈতিক অধিকার কারও নেই। সরকারের জবরদস্তি, ভয়ভীতি ও লোভ-লালসা উপেক্ষা করে অধিকাংশ দেশবাসী ভোট বর্জন করায় তাদের অভিনন্দন। জনমত উপেক্ষা করে সরকার গঠিত হলে রাজনৈতিক সংকট তীব্র হবে।
নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ: বাম গণতান্ত্রিক জোট
নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ: বাম গণতান্ত্রিক জোট
জনপ্রিয় সংবাদ