মাগুরা প্রতিনিধি : শীতকালে খেজুর গাছ আর গ্রীষ্মকালে তালগাছ থেকে রস সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করেন আতিয়ার রহমান মিয়া। বসতবাড়ির ১০ শতাংশ জমিই সম্বল। দরিদ্র এই ব্যক্তির নির্বাচনে দাঁড়ানোই তাঁর নেশা। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন এলেই অংশ নেন তিনি। সবকিছু বিক্রি করে এবারো চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন তিনি। ৭০ বছর বয়সী আতিয়ার রহমানের বাড়ি মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা সদরের গোপালনগর গ্রামে।
তৃতীয় দফা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ৬ নম্বর মহম্মদপুর সদর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন আতিয়ার রহমান। তার নির্বাচনি প্রতীক মোটরসাইকেল। এই উপজেলার আটটি ইউনিয়নে আগামী ২৮ নভেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
আতিয়ার রহমান জানান, তাঁর টাকা-পয়সা নেই। ঘরে থাকা তিন মণ পাট ও পাটকাঠি বিক্রি করে জোগাড় করা করেছেন সাত হাজার টাকা। সেই টাকা দিয়েই মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। স্ত্রীর পোষা একটি ছাগল বিক্রি করে নির্বাচনি প্রচার চালাচ্ছেন। সেই টাকা দিয়ে ভোটারদের চা ও পান খাইয়ে আপ্যায়ন করছেন।
পোস্টার ছাপানো ও মাইকিং করারও টাকা নেই আতিয়ার রহমানের। এক ব্যক্তি কিছু পোস্টার ছাপিয়ে দিয়েছেন তাকে। প্রতিবেশি একজন সদস্য প্রার্থীর মাইক ধার নিয়ে চালাচ্ছেন নির্বাচনি প্রচারণা। মাইক নিয়ে ভ্যানে চড়ে আতিয়ার রহমান একাই তাঁর মোটরসাইকেল প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য প্রচার চালাচ্ছেন। এ নিয়ে এলাকার অনেকে হাসাহাসি করছেন। এতে আতিয়ার রহমানের তেমন মাথা ব্যাথা নেই। পায়ে হেটে রাত-দিন গ্রামে, হাট-বাজারে তিনি প্রচার চালাচ্ছেন।
আতিয়ার রহমান জানান, তিনি ১৯৬৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বঙ্গবন্ধু ও নৌকা প্রতীককে জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসেন। দলের সুদিন-দুর্দিনে সব কর্মসূচিতে অংশ নেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করলেও স্বীকৃতি পাননি বলে জানান তিনি।
আতিয়ার রহমানের ইচ্ছে জীবনে একবার হলেও চেয়ারম্যান হবেন তিনি। এবারের নির্বাচনে জয়লাভের বিষয়ে তিনি খুব আশাবাদী। তাঁর বিশ্বাস জনগণ তাকে বিপুল ভোটে জয়ী করবে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, গোপালনগর গ্রামে সরকারের দেওয়া দুইকক্ষের একটি ঘরে স্ত্রী হাজেরা বেগমকে নিয়ে বাস করেন আতিয়ার রহমান। দুই মেয়ে এক ছেলে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে সফর আলীর আলাদা সংসার। ভূমিহীন বর্গাচাষী আতিয়ার রহমানের নিজের কোন জমি নেই। খেজুর ও তাল গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন। সেই রস গিয়ে গুড়-পাটালি তৈরি এবং বর্গা জমি চাষ করে কোনো মতে জীবিকা নির্বাহ করে চলে তার সংসার।
স্ত্রী হাজেরা বেগম বলেন, তাঁর স্বামীর সারা জীবনের স্বপ্ন চেয়ারম্যান হওয়া। নির্বাচনে দাঁড়ানো তার নেশা। কয়েকবার প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেওে ভোট পাননি। আগে নিষেধ করতাম । এবার আর করিনি। হোক আর না হোক স্বামী যদি একটু শান্তি পায়। তাতেই আমি খুশি।
প্রতিবেশী মতিয়ার রহমান শরীফ বলেন, ‘আগে নির্বাচন করতে গিয়ে বাড়ির জমি পর্যন্ত বিক্রি করে দিয়েছেন আতিয়ার রহমান। তাঁর সারা জীবনের ইচ্ছা চেয়ারম্যান হওয়া। অধিকাংশ ইউপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছেন আতিয়ার রহমান।’
মহম্মদপুর উপজেলা সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. কোরবান আলী বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে আতিয়ার রহমানের মতো দরিদ্র ব্যক্তির ইউপি চেয়ারম্যান হওয়া সম্বভ নয়-এটাই বাস্তবতা। এছাড়া আমরা রাজনীতি করি-আমাদের পক্ষে দলীয় মনোনীত প্রার্থীর বাইরে কারো জন্য কাজ করা বা কোনো মন্তব্য কররা সম্ভব নয়।’
নির্বাচনে দাঁড়ানোই আতিয়ারের নেশা
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ