নিজস্ব প্রতিবেদক: ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরদারে সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনী এবং মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ‘সমন্বয় বাড়ানোর তাগিদ এসেছে’ প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক থেকে।
সোমবার (২৮ জুলাই) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যুমনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্বাচনি প্রস্তুতি সংক্রান্ত দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে এ কথা জানিয়েছেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বৈঠকে আলোচনার বিষয় তুলে ধরতে পর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এসে প্রেস ব্রিফিংয়ে শফিকুল আলম বলেন, সামনে ইলেকশন আসছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে আইন শৃঙ্খলাপরিস্থিতি রিভিউ হয়েছে এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি কী সে অনুযায়ী সেটার রিভিউ হয়েছে।
গেল ৯ জুলাইয়ের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের ধারাবাহিকতায় সোমবারের এ সভা হয় বলে জানিয়েছেন তিনি। সোমবার প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বরাষ্ট্র) খোদা বখস চৌধুরী, মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ, পুলিশের মহপরিদর্শক বাহারুল আলম, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের পিএসও লেফটেন্যান্ট জেনারেল কামরুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।
শফিকুল আলম বলেন, দুই ঘণ্টার ওই মিটিং অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অনেক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং সিদ্ধান্তও হয়েছে। যে নির্বাচন আসছে সেজন্য আরো কি কি করতে পারি সেটা কথা হয়েছে। আর্মি, পুলিশ, ও মাঠ পর্যায়ের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর কথা জোর দিয়ে বলা হয়েছে। জাতীয় ও স্থানীয় লেভেলে দ্রুততার সাথে কো-অর্ডিনেশন বাড়ানোর জন্য বলা হয়েছে।
নির্বাচনের আগে পুলিশের প্রস্তুতিও বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শফিকুল আলম। অপতথ্য রোধ নিয়ে আলোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, ন্যাশনাল ইনফরমেশন সেন্টারে অপতথ্য রোধের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। খুব দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আপডেট করার নির্দেশনা রয়েছে।
নির্বাচনে সেনাবাহিনীর ৬০ হাজার ট্রুপস থাকবে: নির্বাচনের সময় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ৬০ হাজার সেনা সদস্য নিয়োজিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
ব্রিফিংয়ে শফিকুল আলম বলেন, বৈঠকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে প্রায় ৬০ হাজারের মতো ট্রুপস নির্বাচনী ডিউটিতে থাকবেন। আপনারা জানেন, ৫ আগস্টের পর থেকে তারা মাঠে ডিউটিতে রয়েছেন। তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার আছে। আমরা আশা করছি নির্বাচনের সময় তাদের বলিষ্ঠ ভূমিকা থাকবে। তারা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের ইন্টেলিজেন্স এজেন্সিগুলো যেন কাজ জোরদারভাবে করতে পারে এবং নির্বাচনের সময় যেন আমাদের ইন্টেলিজেন্সের কোনো দুর্বলতা না থাকে সেজন্য বলা হয়েছে। এক্ষেত্রেও আমাদের কো-অর্ডিনেশন যেন ভালো হয়, সেটির কথাও বলা হয়েছে।
ইলেকশনের আগে পুলিশের প্রস্তুতির কথা বলা হয়েছে জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, পুলিশের আইজি মহোদয় বলেছেন, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে দেড় লাখ পুলিশের ট্রেনিং হবে নির্বাচন উপলক্ষ্যে। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচুর মিস ইনফরমেশন অলরেডি সার্কুলেট হয়েছে। সামনে এটা আরো বাড়তে পারে। এটাকে সামনে রেখে ন্যাশনাল ইনফরমেশন সেন্টার হবে যেখানে এই মিস-ইনফরমেশনগুলোকে আমরা ডিফাইন করতে পারব। সেটি ক্রিয়েট করার চিন্তাভাবনা করা হয়েছে। এটা নিয়ে অনেক বিশদ আলোচনা হয়েছে।
ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা নির্ণয় করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা: আসন্ন নির্বাচনে যেসব জায়গা ঝুঁকিপূর্ণ তা দ্রুত নির্ণয় করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সব বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
সোমবার (২৮ জুলাই) দুপুরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান তিনি। আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, নির্বাচনের সময়ে যেসব জায়গায় সমস্যা হতে পারে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মনে করে, সেসব জায়গা দ্রুত নির্ণয় করতে বলা হয়েছে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য বাড়তি কি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, সেসব বিষয় জানানোর জন্য তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন জেলা পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সিচুয়েশন রিপোর্ট যেন কেন্দ্রীয়ভাবে পাঠানো হয় এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীলরা যেন বুঝতে পারেন ডাউন লেভেলের সিচুয়েশনটা কি এবং সেই অনুযায়ী যেন পদক্ষেপ নিতে পারেন। সেজন্য সিচুয়েশন রিপোর্ট কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উপ-প্রেস সচিব বলেন, আজকের বৈঠকে প্রশাসনের রদবদল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আপনারা জানেন নির্বাচনের আগে প্রশাসনে একটা রদবদল হয়। সেই রদবদল কীভাবে হবে সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং সে বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে ৯ জুলাই একবার বৈঠক করেছিলেন প্রধান উপদেষ্টা। ওইদিন স্বরাষ্ট্র ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাসহ আইনশৃঙ্খলার রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানরা ছিলেন। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টা আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন বলে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফরের) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার এর মধ্যে জানিয়েছিলেন। গত শনিবার বিকালে যমুনায় ১৩টি দল এবং একটি জোটের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দেন তিনি। মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারসহ সব প্রস্তুতি শেষে আগামী রোজার আগে ফেব্রুয়ারির প্রথমভাগে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। তবে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এ সময়ের মধ্যে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা ও তফসিলের দাবি জানিয়ে আসছে।