নিজস্ব প্রতিবেদক : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আসর জমে গেছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘যারা মনে করেছিল কে আসে কে না আসে…ফুল কিন্তু ফুটতে শুরু করেছে। আরও অনেক ফুল ফুটবে। মনোনয়ন ফরম সরকারিভাবে নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দেওয়া পর্যন্ত শত ফুল ফুটবে। কাজেই এ নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। উই আর হ্যাপি।’
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের ঢাকা জেলা কার্যালয়ে গতকাল বুধবার বিকেলে এক সমন্বয় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি এবং সশ্লিষ্ট উপকমিটির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবদের নিয়ে এ সমন্বয় সভার আয়োজন করা হয়। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখের আগে অনেক দল ও ব্যক্তির নির্বাচনে অংশগ্রহণের ইঙ্গিত করে ১৬ নভেম্বর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘সামনের কয়েকটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ (ক্রুশিয়াল)। ৩০ নভেম্বর মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। এর মধ্যে কত ফুল ফুটবে। আর শীতকাল তো এসে গেছে, কিছু কিছু ফুল ফোটার সময়ও এসে গেছে। এখন কোন ফুল কোথায় ফুটছে…হঠাৎ জেগে উঠবে। অপেক্ষা করুন।’
ফুল ফুটতে শুরু করেছেÑওবায়দুল কাদেরের এমন মন্তব্যের আগে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় পার্টি। এর আগে বুধবার দুপুরে বিএনপির সঙ্গে সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমও নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এ জন্য তিনি যুক্তফ্রন্ট নামে নতুন একটি জোটেরও আত্মপ্রকাশ করেছেন। তেজগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের ঢাকা জেলা কার্যালয়ে আয়োজিত সমন্বয় সভায় ওবায়দুল কাদের দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, অপপ্রচার প্রতিহত করতে হবে এবং নাশকতা ঠেকাতে হবে। নির্বাচনকে তারা প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইবে। কিন্তু ভন্ডুল করা সম্ভব নয়। নির্বাচন এখন জনগণের সম্পদ। এই নির্বাচন প্রতিহত করা, প্রশ্নবিদ্ধ করার কোনো চেষ্টা সফল হবে না। আওয়ামী লীগের নির্বাচনের ইশতেহার চূড়ান্ত হয়ে গেছে। আগেই কাগজে-কলমে এ কাজ শেষ করেছেন বলেও জানান ওবায়দুল কাদের। দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘বিদেশ নিয়ে এখন অত মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই। যারা আমাদের ব্যাপারে মাথা ঘামাবে, তারা এখন মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে ব্যস্ত। তারা হামাস আর ইসরায়েল নিয়ে ব্যস্ত। তারা রাশিয়া-ইউক্রেন নিয়ে এখনো ব্যস্ত। এখন তাদের কাজ আরও বেড়ে গেছে।’
ওবায়দুল কাদেরের ভাষ্য, ‘আমাদের নিয়ে অত মাথা ঘামানোর সময় এবং সুযোগ শক্তিধরেরা খুব একটা পাবে বলে মনে হয় না। কারণ, তাদের মাথায় এখন মধ্যপ্রাচ্য। তাদের মাথায় ইউরোপ। তাদের মাথায় তেলের মূল্য আরও বৃদ্ধি হবে, সেই আশঙ্কা রয়ে গেছে। মধ্যপ্রাচ্যই সেই পথ খুলে দিয়েছে। কে নিষেধাজ্ঞা দিল, কে ভিসা নীতি দিলÑএসব নিয়ে আমরা মাথা ঘামাই না। আমরা আমাদের শক্তি নিয়ে চলি। আমাদের শক্তি আমাদের জনগণ।’
তফসিল পেছানো বা নির্বাচনের বিষয়টি কমিশনের সিদ্ধান্ত: তফসিল পেছানো বা নির্বাচনের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত। সময়সীমার মধ্যে তারা তাদের যেকোনো সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বুধবার দুপুরে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে কমনওয়েলথ প্রি-ইলেকশন অ্যাসেসমেন্ট মিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এমন মন্তব্য করেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, নির্বাচন কীভাবে করবে সেটি পুরোপুরি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ব্যাপার। নির্বাচন সম্পন্ন করার একটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে। এই সময়সীমার ভেতরে থেকে ভোট সম্পন্ন করতে হবে। এমতাবস্থায় নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে ভোট কিছুদিন পেছানো দরকার সেটি তারা করতে পারে। এখানে আওয়ামী লীগ বা সরকারের কিছু বলার নেই। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা এবং নির্বাচন কমিশনকে আইনগত কাঠামো দিয়ে যুক্ত করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। সংসদীয় আইনের মাধ্যমে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় আইনের সংস্কার করা হয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন তা প্রশংসনীয়। সেতুমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীতে গণতন্ত্রের দিক থেকে পারফেক্ট কোনো দেশ আছে কি না এমন প্রশ্ন করা হয়েছে কমনওয়েলথ প্রতিনিধিদের। এত অপপ্রচারের পরেও নির্বাচনের জন্য কমনওয়েলথ প্রতিনিধিরা আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, এটা একটি পজিটিভ বিষয়। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি আসবে না বলেই নির্বাচন একতরফা হবে এটা ঠিক নয়, অনেকেই নির্বাচনে অংশ নেবে। একটি দলকে ঘিরে নির্বাচনে সিদ্ধান্ত হতে পারে না।