ঢাকা ০৩:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫

নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারে জোর গণফোরামের

  • আপডেট সময় : ০৮:৫৯:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪
  • ৭৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরামের নেতারা শনিবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়েছেন। সংলাপ শেষে বেরিয়ে যমুনার সামনে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের কাছে গণফোরামের সমন্বয় কমিটির সদস্যসচিব মিজানুর রহমান বলেন, বৈঠকে তাঁরা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার, নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারসহ বেশ কিছু ব্যাপারে পরমার্শ দিয়েছেন। সরকার সেটা ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করেছে বলে জানান তিনি।
গণফোরামকে দিয়ে এ সংলাপ শুরু হয়েছে। শনিবার বেলা তিনটায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা একের পর এক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে সংলাপ করছেন। আজ গণফোরামের পর এলডিপির সঙ্গে সংলাপ হয়। এরপর জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দল, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, লেবার পার্টি ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) আলোচনায় অংশ নেবে। এর আগে গত ৫ অক্টোবর বিএনপিসহ পাঁচটি দল ও তিনটি জোটের সঙ্গে সংলাপ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে সংবিধান, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা নিয়ে গণফোরাম নেতা ড. কামাল হোসেন কথা বলেছেন বলে জানান দলটির সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান মোস্তফা মহসীন মন্টু। তিনি বলেন, সংলাপে বাজারে পরিস্থিতি নিয়ে জোর দিয়েছি। সিন্ডিকেটকে অবশ্যই ভাঙতে হবে। মোস্তফা মহসীন বলেন, ‘পতিত স্বৈরাচার ও তাদের বিদেশি এজেন্টরা বাংলাদেশটাকে ধ্বংস করার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে, তাদের থেকে উদ্ধারের জন্য আমাদের সবাইকে জাতীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’
গণফোরাম অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন চায় জানিয়ে মোস্তফা মহসীন বলেন, ‘সবাইকে একমত হয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। এ সরকার জনগণের সরকার। এ সরকারকে রক্ষার স্বার্থে; অর্থাৎ আমাদের নিজেদের রক্ষার স্বার্থে আগামী দিনে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে।’ গণফোরামের এই নেতা বলেন, ‘আমরা সরকারকে সার্বিক সহযোগিতা করব। তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) যেকোনো বিষয়ে আমাদের সহযোগিতা চাইবেন। আমরা যেটা উপলব্ধি করব, সেটাই পরামর্শ দেব। জনগণের জন্য দরজা খোলা আছে বলে প্রধান উপদেষ্টা আমাদের বলেছেন।’ নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে জানিয়ে মোস্তফা মহসীন বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন কমিশন করতে হবে। এটার জন্য সার্চ কমিটি বা কিছু করার প্রয়োজন আছে, ভালো লোক নিয়োগ দেওয়ার দরকার আছে। যাতে অতীতের মতো কোনো সমস্যা না হয়। রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে মোস্তফা মহসীন বলেন, ‘আমরা কোনো তারিখ উল্লেখ করিনি। বলেছি, সংস্কার শেষ দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার জন্য।’ সংবিধান সংশোধনের জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, দুই–এক দিনের মধ্যে আলোচনা করে লিখিত আকারে দেব। আটটি দিবস বাতিল করা হয়েছে, এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে মোস্তফা মহসীন বলেন, জাতীয় দিবস ছাড়া কোনো দিবসই রাখা উচিত নয়।
এই সংলাপে গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের প্রতিনিধিদলে ছিলেন গণফোরামের সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান মোস্তফা মহসীন মন্টু, কো-চেয়ারম্যান এস এম আলতাফ হোসেন, সুব্রত চৌধুরী, সদস্যসচিব মিজানুর রহমান, সদস্য এ কে এম জগলুল হায়দার আফ্রিক, মহিউদ্দিন আবদুল কাদের, মোশতাক আহমেদ ও সুরাইয়া বেগম।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধসহ ২৩ প্রস্তাব এলডিপির: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হত্যার জন্য আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করাসহ নতুন করে আরও ২৩ দফা প্রস্তাব দিয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। একইসঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের মতো আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচার করে ফাঁসি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন যমুনায় সংলাপ শেষে শনিবার (১৯ অক্টোবর) বিকাল সোয়া ৪টা সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। সংলাপে লিখিত ও মৌখিক প্রস্তাব তুলে ধরার কথা উল্লেখ করে অলি আহমদ বলেন, দুই দফা সংলাপের প্রথমবারে ১০৩ দফা প্রস্তাব দিয়েছিলাম। দ্বিতীয় দফায় এবার আরও ২৩টি প্রস্তাব দিয়েছি। এসব প্রস্তাব কাউকে সুবিধা দেওয়ার জন্য নয়, কাউকে জেল থেকে মুক্ত করার জন্য নয়, দেশের জনগণের জন্য দিয়েছি। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন এবং সুন্দর প্রশাসন চালানোর জন্য, ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার জন্য, নিত্যপণ্যের বাজার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনাসহ বিভিন্ন প্রস্তাব রয়েছে।
জুলাই-আগস্টে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ১৮ কোটি মানুষ যুদ্ধ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা পুলিশসহ প্রশাসনকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করেছে, জনগণের সঙ্গে মুখোমুখি করে দিয়েছে, দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে, দুর্নীতিগ্রস্ত হয়েছে, আমাদের হাজার হাজার ছেলে-মেয়েকে হতাহত করেছে। অলি আহমদ বলেন, আমরা মনে করি, একাত্তরে জামায়াতে ইসলামী মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, তখন আমরা তাদের নিষিদ্ধ করেছিলাম। তাহলে আজ কী কারণে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হবে না? আমরা আবার বলেছি, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। তারা ১৮ কোটি মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। তাদের রাজনীতি করার অধিকার নেই। ক্ষমতায় টিকে থাকতে তারা সব কিছু করেছে। শেষ পর্যন্ত জনতার চাপে টিকে থাকতে পারেনি, ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা পালিয়েছে, চোর কী করে ভালো থাকে। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে জামায়াত নেতাদের তো ফাঁসি হয়েছে। এখন ওদের (আওয়ামী লীগ নেতাদের) ফাঁসি দিতে হবে। জামায়াতকে তো ফাঁসি দিয়েছেন, এখন আওয়ামী লীগকে ফাঁসি দেন। এটা আপনাদের দায়িত্ব। এ ছাড়া দুর্নীতিবাজদের ধরা, জনগণের লুণ্ঠন করা টাকা ফেরত আনা, অভ্যুত্থানের সময় হত্যায় অংশ নেওয়াদের বিচারের আওতায় আনা এবং সংস্কার প্রক্রিয়া আরও দ্রুত করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন এলডিপি প্রধান অলি আহমদ।
সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানালেন ববি হাজ্জাজ: জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেছেন, সংস্কার এবং নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে আমরা বলেছি- আমরা বিশ্বাস করি, ২০২৫ সালের জুন বা জুনের পরেই নির্বাচন দেওয়া সম্ভব এবং ওনাদের চিন্তাভাবনা প্রয়োজন। ওনারা আশ্বাস দিয়েছেন-আমাদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখবেন এবং আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাবেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন যমুনায় সংলাপ শেষে শনিবার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। ববি হাজ্জাজ বলেন, নির্বাচন সম্বন্ধে আমাদের জানিয়েছেন ছয়টি কমিশনের রিপোর্ট আসার পর প্রধান উপদেষ্টা আমাদের সঙ্গে আরেকবার সংলাপে বসবেন। কমিশন যেসব সংস্কার প্রস্তাব করবে, সেগুলো এই সরকার করবে নাকি নির্বাচিত সরকার করবে, সে বিষয়ে আমাদের মতামত জানতে চাইবেন। আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেই ওনারা নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করবেন এবং তার আগেই নির্বাচনের রোডম্যাপ জানানোর চেষ্টা করবেন। তিনি বলেন, ‘আমি আস্থা রাখি আজকে প্রধান উপদেষ্টা যে কথাগুলো বলেছেন, সে মোতাবেক সামনে কাজগুলো হবে এবং সামনে সুন্দরভাবে একটি নির্বাচন আমরা দেখতে পাবো। গণঅভ্যুত্থানে আহত-নিহতদের প্রতি বিশেষ নজর রাখা, আওয়ামী লীগের দোসরদের সঠিক বিচারের আওতায় আনা, আওয়ামী লীগের আমলে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা প্রত্যাহার, উপদেষ্টা পরিষদের আকার বাড়িয়ে সেখানে ব্যবসায়ী, চিকিৎসক এবং পুলিশের অবসরপ্রাপ্তদের মধ্য থেকে উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ববি হাজ্জাজ।
এদিন ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে সংলাপে বসছেন। এ দফায় গণফোরাম, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, জাতীয় পার্টি-বিজেপি (পার্থ), ১২ দলীয় জোট, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, লেবার পার্টিসহ আরও কয়েকটি দলকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে। গত ৫ অক্টোবর বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, গণতন্ত্র মঞ্চ, হেফাজতে ইসলাম, বাম গণতান্ত্রিক জোট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে সংলাপ করেন প্রধান উপদেষ্টা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে গত ৫ আগস্ট। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার সরকার এরইমধ্যে তিন দফা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছে। তবে আগের তিন দফা এবং আগামীতেও ‘ফ্যাসিবাদী শাসন’ ও ‘গণহত্যায়’ অভিযুক্ত আওয়ামী লীগকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি এবং হবে না বলে আগেই জানিয়েছে সরকার। আর আওয়ামী লীগের সময়ের ‘গৃহপালিত’ বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে প্রথম দফায় সংলাপে ডাকা হলেও পরে বাদ দেওয়া হয়েছে।

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

কলিং ভিসায় কর্মী নিচ্ছে মালয়েশিয়া, আবেদন করা যাবে যেসব খাতে

নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারে জোর গণফোরামের

আপডেট সময় : ০৮:৫৯:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরামের নেতারা শনিবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়েছেন। সংলাপ শেষে বেরিয়ে যমুনার সামনে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের কাছে গণফোরামের সমন্বয় কমিটির সদস্যসচিব মিজানুর রহমান বলেন, বৈঠকে তাঁরা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার, নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারসহ বেশ কিছু ব্যাপারে পরমার্শ দিয়েছেন। সরকার সেটা ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করেছে বলে জানান তিনি।
গণফোরামকে দিয়ে এ সংলাপ শুরু হয়েছে। শনিবার বেলা তিনটায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা একের পর এক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে সংলাপ করছেন। আজ গণফোরামের পর এলডিপির সঙ্গে সংলাপ হয়। এরপর জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দল, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, লেবার পার্টি ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) আলোচনায় অংশ নেবে। এর আগে গত ৫ অক্টোবর বিএনপিসহ পাঁচটি দল ও তিনটি জোটের সঙ্গে সংলাপ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে সংবিধান, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা নিয়ে গণফোরাম নেতা ড. কামাল হোসেন কথা বলেছেন বলে জানান দলটির সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান মোস্তফা মহসীন মন্টু। তিনি বলেন, সংলাপে বাজারে পরিস্থিতি নিয়ে জোর দিয়েছি। সিন্ডিকেটকে অবশ্যই ভাঙতে হবে। মোস্তফা মহসীন বলেন, ‘পতিত স্বৈরাচার ও তাদের বিদেশি এজেন্টরা বাংলাদেশটাকে ধ্বংস করার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে, তাদের থেকে উদ্ধারের জন্য আমাদের সবাইকে জাতীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’
গণফোরাম অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন চায় জানিয়ে মোস্তফা মহসীন বলেন, ‘সবাইকে একমত হয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। এ সরকার জনগণের সরকার। এ সরকারকে রক্ষার স্বার্থে; অর্থাৎ আমাদের নিজেদের রক্ষার স্বার্থে আগামী দিনে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে।’ গণফোরামের এই নেতা বলেন, ‘আমরা সরকারকে সার্বিক সহযোগিতা করব। তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) যেকোনো বিষয়ে আমাদের সহযোগিতা চাইবেন। আমরা যেটা উপলব্ধি করব, সেটাই পরামর্শ দেব। জনগণের জন্য দরজা খোলা আছে বলে প্রধান উপদেষ্টা আমাদের বলেছেন।’ নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে জানিয়ে মোস্তফা মহসীন বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন কমিশন করতে হবে। এটার জন্য সার্চ কমিটি বা কিছু করার প্রয়োজন আছে, ভালো লোক নিয়োগ দেওয়ার দরকার আছে। যাতে অতীতের মতো কোনো সমস্যা না হয়। রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে মোস্তফা মহসীন বলেন, ‘আমরা কোনো তারিখ উল্লেখ করিনি। বলেছি, সংস্কার শেষ দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার জন্য।’ সংবিধান সংশোধনের জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, দুই–এক দিনের মধ্যে আলোচনা করে লিখিত আকারে দেব। আটটি দিবস বাতিল করা হয়েছে, এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে মোস্তফা মহসীন বলেন, জাতীয় দিবস ছাড়া কোনো দিবসই রাখা উচিত নয়।
এই সংলাপে গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের প্রতিনিধিদলে ছিলেন গণফোরামের সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান মোস্তফা মহসীন মন্টু, কো-চেয়ারম্যান এস এম আলতাফ হোসেন, সুব্রত চৌধুরী, সদস্যসচিব মিজানুর রহমান, সদস্য এ কে এম জগলুল হায়দার আফ্রিক, মহিউদ্দিন আবদুল কাদের, মোশতাক আহমেদ ও সুরাইয়া বেগম।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধসহ ২৩ প্রস্তাব এলডিপির: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হত্যার জন্য আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করাসহ নতুন করে আরও ২৩ দফা প্রস্তাব দিয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। একইসঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের মতো আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচার করে ফাঁসি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন যমুনায় সংলাপ শেষে শনিবার (১৯ অক্টোবর) বিকাল সোয়া ৪টা সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। সংলাপে লিখিত ও মৌখিক প্রস্তাব তুলে ধরার কথা উল্লেখ করে অলি আহমদ বলেন, দুই দফা সংলাপের প্রথমবারে ১০৩ দফা প্রস্তাব দিয়েছিলাম। দ্বিতীয় দফায় এবার আরও ২৩টি প্রস্তাব দিয়েছি। এসব প্রস্তাব কাউকে সুবিধা দেওয়ার জন্য নয়, কাউকে জেল থেকে মুক্ত করার জন্য নয়, দেশের জনগণের জন্য দিয়েছি। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন এবং সুন্দর প্রশাসন চালানোর জন্য, ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার জন্য, নিত্যপণ্যের বাজার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনাসহ বিভিন্ন প্রস্তাব রয়েছে।
জুলাই-আগস্টে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ১৮ কোটি মানুষ যুদ্ধ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা পুলিশসহ প্রশাসনকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করেছে, জনগণের সঙ্গে মুখোমুখি করে দিয়েছে, দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে, দুর্নীতিগ্রস্ত হয়েছে, আমাদের হাজার হাজার ছেলে-মেয়েকে হতাহত করেছে। অলি আহমদ বলেন, আমরা মনে করি, একাত্তরে জামায়াতে ইসলামী মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, তখন আমরা তাদের নিষিদ্ধ করেছিলাম। তাহলে আজ কী কারণে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হবে না? আমরা আবার বলেছি, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। তারা ১৮ কোটি মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। তাদের রাজনীতি করার অধিকার নেই। ক্ষমতায় টিকে থাকতে তারা সব কিছু করেছে। শেষ পর্যন্ত জনতার চাপে টিকে থাকতে পারেনি, ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা পালিয়েছে, চোর কী করে ভালো থাকে। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে জামায়াত নেতাদের তো ফাঁসি হয়েছে। এখন ওদের (আওয়ামী লীগ নেতাদের) ফাঁসি দিতে হবে। জামায়াতকে তো ফাঁসি দিয়েছেন, এখন আওয়ামী লীগকে ফাঁসি দেন। এটা আপনাদের দায়িত্ব। এ ছাড়া দুর্নীতিবাজদের ধরা, জনগণের লুণ্ঠন করা টাকা ফেরত আনা, অভ্যুত্থানের সময় হত্যায় অংশ নেওয়াদের বিচারের আওতায় আনা এবং সংস্কার প্রক্রিয়া আরও দ্রুত করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন এলডিপি প্রধান অলি আহমদ।
সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানালেন ববি হাজ্জাজ: জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেছেন, সংস্কার এবং নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে আমরা বলেছি- আমরা বিশ্বাস করি, ২০২৫ সালের জুন বা জুনের পরেই নির্বাচন দেওয়া সম্ভব এবং ওনাদের চিন্তাভাবনা প্রয়োজন। ওনারা আশ্বাস দিয়েছেন-আমাদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখবেন এবং আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাবেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন যমুনায় সংলাপ শেষে শনিবার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। ববি হাজ্জাজ বলেন, নির্বাচন সম্বন্ধে আমাদের জানিয়েছেন ছয়টি কমিশনের রিপোর্ট আসার পর প্রধান উপদেষ্টা আমাদের সঙ্গে আরেকবার সংলাপে বসবেন। কমিশন যেসব সংস্কার প্রস্তাব করবে, সেগুলো এই সরকার করবে নাকি নির্বাচিত সরকার করবে, সে বিষয়ে আমাদের মতামত জানতে চাইবেন। আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেই ওনারা নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করবেন এবং তার আগেই নির্বাচনের রোডম্যাপ জানানোর চেষ্টা করবেন। তিনি বলেন, ‘আমি আস্থা রাখি আজকে প্রধান উপদেষ্টা যে কথাগুলো বলেছেন, সে মোতাবেক সামনে কাজগুলো হবে এবং সামনে সুন্দরভাবে একটি নির্বাচন আমরা দেখতে পাবো। গণঅভ্যুত্থানে আহত-নিহতদের প্রতি বিশেষ নজর রাখা, আওয়ামী লীগের দোসরদের সঠিক বিচারের আওতায় আনা, আওয়ামী লীগের আমলে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা প্রত্যাহার, উপদেষ্টা পরিষদের আকার বাড়িয়ে সেখানে ব্যবসায়ী, চিকিৎসক এবং পুলিশের অবসরপ্রাপ্তদের মধ্য থেকে উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ববি হাজ্জাজ।
এদিন ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে সংলাপে বসছেন। এ দফায় গণফোরাম, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, জাতীয় পার্টি-বিজেপি (পার্থ), ১২ দলীয় জোট, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, লেবার পার্টিসহ আরও কয়েকটি দলকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে। গত ৫ অক্টোবর বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, গণতন্ত্র মঞ্চ, হেফাজতে ইসলাম, বাম গণতান্ত্রিক জোট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে সংলাপ করেন প্রধান উপদেষ্টা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে গত ৫ আগস্ট। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার সরকার এরইমধ্যে তিন দফা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছে। তবে আগের তিন দফা এবং আগামীতেও ‘ফ্যাসিবাদী শাসন’ ও ‘গণহত্যায়’ অভিযুক্ত আওয়ামী লীগকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি এবং হবে না বলে আগেই জানিয়েছে সরকার। আর আওয়ামী লীগের সময়ের ‘গৃহপালিত’ বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে প্রথম দফায় সংলাপে ডাকা হলেও পরে বাদ দেওয়া হয়েছে।