নিজস্ব প্রতিবেদক : আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল গুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে উপকূলীয় মানুষের উন্নয়নে উপকূলীয় উন্নয়ন বোর্ড গঠন করাসহ ৬ দফা দাবি জানিয়েছেন উপকূলের সাধারণ মানুষ ও সুশীল সমাজ।
গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে উপকূলীয় মানুষের উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার সংযুক্ত করার দাবিতে এ দাবিগুলো তুলে ধরে বেসরকারি সংস্থা লিডার্স এর নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মন্ডল। এসময় উপকূলীয় অঞ্চলের প্রতিনিধি এবং রাজনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন। দাবিগুলো হলো নিরাপদ পানীয় জলের স্থায়ী ব্যবস্থা, একটি বাড়ি একটি শেল্টার তৈরি প্রকল্প, দুর্যোগ প্রবণ এলাকা ঘোষণা করা, উপকূলের রক্ষাকবচ সুন্দরবন সুরক্ষা এবং স্থায়ী ও মজবুত বেড়িবাঁধ পুন:নির্মাণ ও ভঙ্গুর স্লুইচগেট মেরামত করা।
সংলাপে উপকূলীয় এলাকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন তুলে ধরে লিডার্স। এতে বলা হয়, উপকূলীয় অঞ্চলে ঘনঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে অবকাঠামোগত, শিক্ষা, চিকিৎসা, অর্থনৈতিক, সামাজিক, কৃষি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে উল্লেখ করে উপকূলীয় এলাকায় সামগ্রিক ও টেকসই উন্নয়ন এবং আন্তমন্ত্রণালয় সংযোগ স্থাপন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ প্রয়োজন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে, যার ফলে গর্ভবতীতের প্রি-একলেম্পশিয়া ও উচ্চরক্তচাপের হার বেড়েছে। ফলে নিরাপদ পানীয় জলের স্থায়ী ব্যবস্থা প্রয়োজন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দুর্যোগকালীন আশ্রয় গ্রহণের জন্য সরকার তিনটি বিভাগে ১৬টি দুর্যোগপ্রবণ জেলার ৮৬টি উপজেলায় মোট ২৪৮৭টি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। যার মোট ধারণক্ষমতা ১৯,৮৯,৬০০ জন যা উক্ত এলাকার মোট জনসংখ্যার মাত্র ৫.৬ শতাংশ মানুষকে আশ্রয় দিতে পারে। এছাড়া দুর্যোগকালীন সময়ে সাইক্লোন শেল্টারে যাওয়াও বেশ কষ্টকর। গত দুটি দুর্যোগে (আমফান ও ইয়াশ) ঝুঁকিগ্রস্তদের ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য পুলিশ মোতায়েন করতে হয়েছিল ২১,২২,২৩। ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে না যাওয়ার উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে স্থানের অভাব, নারীদের নিরাপত্তাহীনতা, বাড়িতে রেখে যাওয়া দলিলপত্র ও সম্পদের নিরাপত্তাহীনতা। এজন্য উপকূলীয় এলাকায় একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আদলে একটি বাড়ি একটি শেল্টার কার্যক্রম শুরু করতে হবে, যাতে করে উপকূলীয় এলাকার মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় তাদের নিজ নিজ বাড়িতে নিরাপদে অবস্থান করতে পারে। সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট জেলাকে জলবায়ু দুর্যোগ ঝুঁকিপ্রবণ এলাকা ঘোষণা করতে হবে। সুন্দরবনকে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের রক্ষা কবচ উল্লেখ করে বলা হয় বিভিন্ন কারণে সুন্দরবন হুমকির সম্মুখীন। উপকূলীয় অঞ্চলকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করার জন্য ব্যাপক হারে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ, নদীর চর বনায়নসহ সুন্দরবন সুরক্ষায় স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়।
বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, উপকূল আমাদের সম্পদ যা অনেক দেশেরই নেই। এ সম্পদ আমরা কীভাবে কাজে লাগাতে পারি সেটা ভেবে দেখতে হবে। উপকূলীয় এলাকাকে কাজে লাগিয়ে বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করা যেতে পারে। এসব নিয়ে সামগ্রিক একটা পরিকল্পনার অভাব রয়েছে।
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন উপ কমিটির সদস্য শেখর দত্ত বলেন, আওয়ামী লীগ জন মানুষের দল। নির্বাচনী ইশতেহারে আমরা জনমানুষের চাহিদা প্রাধান্য দিয়ে থাকি। আগামী নির্বাচনে উপকূলীয় মানুষের কল্যাণে যেসব বিষয় আনা দরকার আমি কমিটির সভায় সেগুলো উপস্থাপন করবো।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে বিশেষ করে সাতক্ষীরায় পানি সংকট তীব্র। এক কলসি পানি আনতে তিন থেকে চার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। এ সমস্যার সমাধান অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হওয়া উচিত। খাবার পানির এ সংকট দূর করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এর একটি টেকসই সমাধান জরুরি।
সংলাপে বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের(বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড.সুব্রত চৌধুরী, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্তসহ আরও অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। সংলাপটি আয়োজনে সহায়তা করে বেসরকারি সংস্থা লিডার্স এবং পার্টিসিপেটরি রিচার্স অ্যান্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক (প্রান)।