নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীতে হাটের ঝামেলা এড়াতে খামার থেকে পছন্দের গরু সংগ্রহের দিকে ঝুঁকছেন ক্রেতারা; ফলে জেলার বিভিন্ন খামারগুলোতে কোরবানির গরু কেনাবেচা জমে উঠেছে। জেলার বিভিন্ন খামার ঘুরে দেখা যায়, তিনটি বড় খামারে কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা প্রায় অর্ধেক গরু ইতোমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে।
খামার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খামারে গরু বেচাকেনায় দালাল বা মধ্যসত্বভোগী না থাকায় ক্রেতা বিক্রেতা কোন পক্ষকেই বাড়তি খরচ দিতে হচ্ছে না। এদিকে ঝামেলা ছাড়াই খামার থেকে পছন্দের গরু কিনতে পেরে খুশি ক্রেতারা। তারা বলছেন, অন্যান্য বারের অভিজ্ঞতা ভালো হওয়ায় এবারও খামারে আসছেন তারা। এখানে পছন্দসই গরু ঠিক করে বুকিং দিয়ে ঈদের আগ পর্যন্ত খামারেই রাখার সুবিধা পাচ্ছেন তারা। পাশাপাশি ঈদের দিন সকালেও বাড়িতে গরু পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। নোয়াখালী সদর উপজেলার পশ্চিম চর উড়িয়া গ্রামে ‘মানফাত মিট-ক্যাটেল অ্যান্ড ডেইরি ফার্মে’ প্রতিদিনই দূর দূরান্ত থেকে ক্রেতারা গরু কিনতে আসছেন বলে ফার্মের মালিক পেশায় অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহিন জানান। তিনি জানান, ২০১৮ সালে ৭ একর পতিত জমিতে ৮০টি গরু দিয়ে খামার শুরু করেন তিনি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। প্রতি বছর ঈদে ২০০ গরু বিক্রি হয় তার খামারে। ‘প্রাকৃতিক উপায়ে’ দেশি গরু মোটা তাজাকরণ ফার্মগুলোর মধ্যে বৃহত্তর নোয়াখালী ও বৃহত্তর কুমিল্লা অঞ্চলের সবচেয়ে বড় এ খামারে গত পাঁচ বছর থেকে ‘লাইভ ওয়েট স্কেলে’ মেপে গরু বিক্রি করা হয়। খামারটিতে এ বছর বিক্রির জন্য সর্বনি¤œ দুইশ কেজি থেকে সর্বোচ্চ সাতশ কেজি ওজনের দুইশ’টি গরু রয়েছে জানিয়ে শিহাব বলেন, “বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ৯৮টি গরু বিক্রির জন্য বুকিং হয়েছে। এখানে প্রতি কেজি ষাঁড়ের মূল্য ৪৫০ টাকা এবং প্রতি কেজি বলদের মূল্য ৪৮০ টাকা ধরা হয়েছে। এ হিসেবে এক লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা দামের গরু রয়েছে খামারটিতে।” মানফাত মিট-ক্যাটেলের শ্রমিক আবদুর রহিম বলেন, “ঈদের কয়েক মাস আগে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দেশি গরু সংগ্রহ করে এখানে আনা হয়। এরপর সরকারি পশু চিকিৎকদের তত্ত্বাবধানে দেশি খাবার ও রোগ বালাই প্রতিষেধক দিয়ে মোটাতাজা করে সেগুলো বিক্রি করা হয়।” এ খামারের সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ যেকারো পছন্দ হবে বলেও জানান তিনি। মানফাত মিট-ক্যাটেল খামারে কথা হয় সদর উপজেলার অশ্বদিয়া ইউনিয়ন থেকে গরু কিনতে আসা কামাল উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, “হাটে অনেক গরু থাকলেও দালালদের কারণে ভোগান্তি পোহাতে হয়। দেখা যায়, শেষ পর্যন্ত পছন্দের গরুই কেনা সম্ভব ওঠে না। তাই ঝামেলা এড়াতে এখানে আসলাম। নোয়াখালী জেলার আরও একটি বড় গরুর ফার্ম হচ্ছে বেগমগঞ্জ উপজেলার আলীপুরের নাওয়াফ এগ্রো ফার্ম। এর ব্যবস্থাপক মো. শাহাব উদ্দিন জানান, তার খামারে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে দেশীয় খাবার দিয়ে এবার তিনশ গরু কোরবানির জন্য উপযুক্ত করে তোলা হয়েছে; গরুগুলো বিক্রি হচ্ছে কেজি দরে। এ ফার্মে ৩’শ থেকে ১১’শ কেজি ওজনের গরু রয়েছে; দাম হাঁকা হচ্ছে এক লাখ থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত। বুধবার পর্যন্ত খামারের অর্ধেক গরু বিক্রি হয়ে গেছে বলে জানালেন তিনি। বিদেশী গরু না আসায় দেশী গরুর চাহিদা বেড়েছে জানিয়ে শাহাব বলেন, “চাহিদা অনুযায়ী এবার ফার্মে গরুর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। তবে শেষ মুহুর্তে যেন বিদেশি গরু আসতে না পারে সেদিকে সরকারের কঠোর নজরদারি দরকার। তা না হলে খামারিরা লোকসানের মুখে পড়ে হতাশ হবে।”
নির্ঝঞ্ঝাটে গরু কেনায় খামারে আগ্রহ
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ