বিদেশের খবর ডেস্ক ঃ তুরস্ক-সিরিয়ায় ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রাণহানির সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়েছে। ভূমিকম্পের পর প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে স্বাভাবিক উদ্ধার কার্যক্রম। কিন্তু প্রচেষ্টার কোনো কমতি নেই তুরস্ক সরকারের পক্ষ থেকে। ভূমিকম্পের শিকার তুরস্কের দশটি শহরে উদ্ধারকাজ চলছে পুরোদমে। তুর্কিশ এয়ারলাইন্স তাদের বিমানে করে যারা ওইসব এলাকা থেকে চলে আসতে চাচ্ছেন তাদেরকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৮৫১ টি অ্যাম্বুলেন্স ও ২৩২ টি বিশেষ সাস্থ্য টিম নিয়োজিত করেছে। প্রতি স্বাস্থ্য টিমে একজন বিশেষজ্ঞ ও পাঁচজন মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
তুরস্কের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা আফাদ বললে, মোট ২৫ হাজারের বেশি কর্মী উদ্ধারকাজে নিয়োজিত আছে। ইস্তান্বুল থেকেই শুধু ভলান্টিয়ার কর্মী নেওয়া হয়েছে সাড়ে ১২ হাজার। বলা হচ্ছে এই ভূমিকম্প সরাসরি ১ কোটি ৩০ লাখ ৫০ হাজার মানুষের জীবনে বিপর্যয় বয়ে এনেছে। ৫,৭৭৫ টি বহুতল ভবন ভেঙে পড়েছে। অপরদিকে নেতিবাচক ও উসকানিমূলক খবর প্রচারের কারণে ৯০টি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তুরস্কের যোগাযোগ মন্ত্রণালয় একটি বিশেষ অ্যাপ তৈরি করেছে। শুধু সরকারি মিডিয়া সেল এটা নিয়ন্ত্রণ করবে তা নয়। ব্যবহারকারীও এই বিশেষ অ্যাপের মাধ্যমে সরকারকে ফেক নিউজ বা কনটেন্টের বিষয়ে জানাতে পারবে। তুরস্কের যোগাযোগ মন্ত্রী ফাহরেদ্দিন আলতুন তার দেওয়া বিশেষ ঘোষণায় এমনটি বলেছেন। এধরণের স্বাস্থ্য বিপরযয়ের সময়ে যেন কেউ তার ফায়দা না নিতে পারে সেজন্য খুবই কম সময়ের মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে এই সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে।
বৃষ্টি ও তুষারপাতের সঙ্গে লড়াই করছে তুর্কি উদ্ধারকর্মীরা
এদিকে দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কে ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে উদ্ধারকারীরা ভারী বৃষ্টি ও তুষারপাতের সাথে লড়াই করছে। মঙ্গলবার বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে। সোমবার ভোরে ভূমিকম্পে তুরস্কে এবং সিরিয়ার সীমান্তে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং ১৫ হাজার আহত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা কয়েক গুণ বাড়তে পারে।
বিবিসি জানিয়েছে, সোমবার দিনের আলো ফুটতেই উদ্ধারকারীরা তাদের উদ্ধার তৎপরতা বাড়াতে শুরু করে। উদ্ধারকাজের জন্য রাতভর আদানা শহরে ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে। পুরো শহরটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। যখনই কাউকে জীবিত বা মৃত উদ্ধার করা হচ্ছিল উদ্ধারকারীরা ‘আল্লাহু আকবার’ তাকবির দিয়েছেন। আদানার বাসিন্দারা এই মুহূর্তে সম্পূর্ণ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। অনেকে খোলা আকাশের নিচে রাত্রিযাপন করেছেন। চলতি সপ্তাহের শুরুতে ওই অঞ্চলের তাপমাত্রা আরও কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছেই অবস্থিত ওসমানিয়া শহরে বৃষ্টির কারণে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে। পুরো শহরটিই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এরইমধ্যে শীত ও বৃষ্টির তীব্রতা বাড়ছে। তুরস্কের জাতীয় দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ধসে পড়া চার হাজার ৭০০ এর বেশি ভবন থেকে অন্তত আট হাজার মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে।
তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান জানিয়েছেন, ৪৫টি দেশ এরইমধ্যে বিভিন্নভাবে সহযোগিতার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে। এদিকে তুরস্কের সীমান্তবর্তী সিরিয়াতেও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সেখানে মৃতের সংখ্যা এক হাজার ৪০০ ছাড়িয়েছে।
ধ্বংসস্তূপের নিচে সন্তান জন্ম দিয়ে চলে গেলেন মা
স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পে আক্রান্ত সিরিয়ার আলেপ্পো শহরে একটি ধ্বংসস্তূপের নিচে শিশুর জন্ম হয়েছে। সে ভালো থাকলেও তার মা থাকতে পারেনি। তিনি মারা গেছেন। ফ্রি প্রেস জার্নাল এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। খবরে বলা হয়, সকালে স্থানীয়রা ধ্বংসস্তূপ ও এর আশপাশে নিখোঁজ বা আহতদের উদ্ধার কাজ করছিলেন। এ সময় এক নারীকে দেখতে পান তারা। তিনি সন্তান প্রসব করেছিলেন। এরপরই তার মৃত্যু হয়। কিন্তু শিশুটিকে জীবিত উদ্ধার করা গেছে। এ ঘটনার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। সেটিতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি সদ্যজাত শিশুটিকে নিয়ে দৌড়াচ্ছেন। এ সময় শিশুটির শরীরে কোনো কাপড় ছিল না। ভিডিওটি মাইক্রো ব্লগিং সাইট টুইটারে পোস্ট করেছেন সানি পাওয়ান নামে এক ব্যবহারকারী। ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন- সিরিয়ার আলেপ্পোয় এক শিশুর জন্মক্ষণ, তার মা ধ্বংসস্তূপের নিচে ছিল, সন্তান প্রসবের পরই তিনি মারা গেছেন। সিরিয়া ও তুরস্কের মানুষকে আল্লাহ ধৈর্য্য ধরার ক্ষমতা দেন ও ভূমিকম্পে হতাহতদের ওপর দয়া করুন। আফরিন শহরের ধ্বংসস্তূপ থেকেও এক শিশুকে জীবিত উদ্ধার করেছে সহায়তাকারীরা। কিন্তু তার বাবা-মা মারা গেছেন।
সাহায্যের জন্য ধ্বংসস্তুপ থেকে ভয়েস নোট পাঠাচ্ছে মানুষ
শতাব্দির দ্বিতীয় ভয়াবহ ভূমিকম্পের কবলে তুরস্ক-সিরিয়া। এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে ৫ হাজারের বেশি মানুষ। ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপে এখনো আটকা পড়ে আছে অনেকে। সাহায্যের জন্য আপ্রাণ আর্তনাদ করছে তারা। কাছে থাকা ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে নিজেদের অবস্থান উদ্ধারকারীদের নিকট পাঠানোর চেষ্টা করছে অনেকে।
ইস্তাম্বুলে অবস্থিত তুর্কি সাংবাদিক ইব্রাহিম হাসকোলোগ্লু বিবিসিকে বলেছেন, ‘লোকেরা এখনও ভবনের নিচে রয়েছে, তাদের সাহায্যের প্রয়োজন। ধ্বংসস্তূপের নীচে থেকে তারা আমাকে এবং অন্যান্য সাংবাদিকদের ভিডিও, ভয়েস নোট এবং তাদের লাইভ অবস্থান পাঠাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেছেন, যেখানে প্রয়োজন সেখানে সাহায্য করার জন্য তিনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন৷ তারা আমাদের কাছে লোকেশন পাঠাচ্ছে কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারছি না। তুরস্কের জন্য সমস্ত আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রয়োজন।
নিরলস উদ্ধার প্রচেষ্টা তুরস্কের, কঠোর সতর্কতা
ট্যাগস :
নিরলস উদ্ধার প্রচেষ্টা তুরস্কের
জনপ্রিয় সংবাদ