ঢাকা ০২:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০১ জুন ২০২৫

নিম্নচাপটি দুর্বল হলেও এখনো উত্তাল বঙ্গোপসাগর

  • আপডেট সময় : ০৭:৫২:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫
  • ২০ বার পড়া হয়েছে

উত্তাল সাগরের ছবিটি সংগৃহীত

প্রত্যাশা ডেস্ক: বঙ্গোপসাগরের গভীর নিম্নচাপটি সাগরদ্বীপ ও খেপুপাড়ার মধ্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করেছে। ধীরে ধীরে এটি দুর্বল হচ্ছে। তবে এর প্রভাবে বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাস বইছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শুক্রবারও (৩০ মে) ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

গভীর নিম্নচাপটি উপকূল অতিক্রম করলেও এখনো কাটেনি এর রেশ। জোয়ারের তাণ্ডবে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এলাকায় অধিকাংশ যায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। সতর্ক অবস্থানে স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো।

শুক্রবার (৩০ মে) সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া জোয়ারের তাণ্ডব চলে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। এ সময় সৈকতে অতি উৎসাহী কিছু পর্যটককে গোসলে মেতে থাকতে দেখা গেছে। সৈকতের আশপাশের মার্কেটগুলোর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক।

ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা প্রস্তুতকারী সংস্থার (সিপিপি) স্থানীয় টিম লিডার মো. সোলাইমান বিশ্বাস বলেন, আমাদের উপজেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলা হয়েছে। সেই মোতাবেক সবাই কাজ করছে। তবে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আমাদের সিপিপির সব সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছেন।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা মো. শিরু মোল্লা বলেন, বর্তমানে সমুদ্রের যে আগ্রাসী চেহারা এবং যে রকম বাতাস, তা বিগত দিনের দেখা ঘূর্ণিঝড়কেও হার মানায়। আজকে চার দিন ধরে লাগামহীন বৃষ্টি হচ্ছে, সঙ্গে প্রচণ্ড বাতাস এবং জোয়ারের পানি তো রয়েছেই। এই এলাকার অনেক যায়গায় ফসলের খেত, মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে উপকূলের মানুষ।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাগরদ্বীপ ও খেপুপাড়ার (পটুয়াখালীর কলাপাড়া) মধ্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রমরত গভীর নিম্নচাপটি আরো উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করেছে। এটি বর্তমানে সাতক্ষীরা ও আশপাশের এলাকায় স্থল গভীর নিম্নচাপ আকারে অবস্থান করছে। এটি আরো উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে পারে। এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা আবহাওয়া কর্মকর্তা মাহবুবা সুখী বলেন, বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করেছে। এটি বর্তমানে সাতক্ষীরা ও আশপাশের এলাকায় স্থল গভীর নিম্নচাপ আকারে অবস্থান করছে। এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্র বন্দরগুলোতে বৃষ্টি হতে পারে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে উপকূলে উঠে গেল চারটি জাহাজ: নিম্নচাপের প্রভাবে ঝোড়ো হাওয়া ও সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চারটি নৌযান তীরে উঠে গেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ও আনোয়ারা উপকূলে এসব নৌযান আটকে যায়। চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমার আওতাধীন আনোয়ারা উপকূলে দুটি নৌযান আটকা পড়েছে। নৌযান দুটি হলো- মারমেইড-৩ ও নাভিমার-৩। এর মধ্যে মারমেইড-৩ হলো বার্জ, নাভিমার-৩ টাগবোটের সাহায্যে এটি আনা-নেওয়া করা হয়। প্রায় দুই বছর আগে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টের নির্মাণকাজের জন্য এই বার্জে করে ভারত থেকে বড় পাথর নিয়ে আসা হয়েছিল। এ সময় নাভিমার-৩ টাগবোটে জ্বালানি সরবরাহ করলেও কোনো বিল দেয়নি টাগবোটটির মালিকপক্ষ। আবার নৌযান দুটির স্থানীয় প্রতিনিধি ভিশন শিপিং কোম্পানিও কোনো বিল পায়নি। এ নিয়ে অন্তত পাঁচটি মামলা হয়েছে। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় নৌযান দুটি চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমায় নোঙর করা অবস্থায় পড়ে ছিল। ভিশন শিপিং কোম্পানির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘জাহাজটির মালিকপক্ষ কোনো সাড়া দিচ্ছে না। কোনো বিল না পেলেও প্রতিনিয়ত নৌযান দুটিতে চারজন ওয়াচম্যান বা পাহারাদার সরবরাহ করে যাচ্ছি আমরা।’

জাহাজের এক পাহারাদার মিসকাতুর রহমান বলেন, ‘সাগরে প্রচণ্ড ঢেউয়ের মুখে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নৌযান দুটি উপকূলে আটকা পড়ে।’ এদিকে গত বৃহস্পতিবার রাতে একইভাবে ঝোড়ো হাওয়ার কবলে পড়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা উপকূলে দুটি জাহাজ আটকা পড়েছে। জাহাজ দুটি হলো- এমভি আল-হেরেম ও বিএলপিজি সুফিয়া।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

নিম্নচাপটি দুর্বল হলেও এখনো উত্তাল বঙ্গোপসাগর

আপডেট সময় : ০৭:৫২:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: বঙ্গোপসাগরের গভীর নিম্নচাপটি সাগরদ্বীপ ও খেপুপাড়ার মধ্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করেছে। ধীরে ধীরে এটি দুর্বল হচ্ছে। তবে এর প্রভাবে বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাস বইছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শুক্রবারও (৩০ মে) ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

গভীর নিম্নচাপটি উপকূল অতিক্রম করলেও এখনো কাটেনি এর রেশ। জোয়ারের তাণ্ডবে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এলাকায় অধিকাংশ যায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। সতর্ক অবস্থানে স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো।

শুক্রবার (৩০ মে) সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া জোয়ারের তাণ্ডব চলে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। এ সময় সৈকতে অতি উৎসাহী কিছু পর্যটককে গোসলে মেতে থাকতে দেখা গেছে। সৈকতের আশপাশের মার্কেটগুলোর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক।

ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা প্রস্তুতকারী সংস্থার (সিপিপি) স্থানীয় টিম লিডার মো. সোলাইমান বিশ্বাস বলেন, আমাদের উপজেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলা হয়েছে। সেই মোতাবেক সবাই কাজ করছে। তবে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আমাদের সিপিপির সব সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছেন।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা মো. শিরু মোল্লা বলেন, বর্তমানে সমুদ্রের যে আগ্রাসী চেহারা এবং যে রকম বাতাস, তা বিগত দিনের দেখা ঘূর্ণিঝড়কেও হার মানায়। আজকে চার দিন ধরে লাগামহীন বৃষ্টি হচ্ছে, সঙ্গে প্রচণ্ড বাতাস এবং জোয়ারের পানি তো রয়েছেই। এই এলাকার অনেক যায়গায় ফসলের খেত, মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে উপকূলের মানুষ।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাগরদ্বীপ ও খেপুপাড়ার (পটুয়াখালীর কলাপাড়া) মধ্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রমরত গভীর নিম্নচাপটি আরো উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করেছে। এটি বর্তমানে সাতক্ষীরা ও আশপাশের এলাকায় স্থল গভীর নিম্নচাপ আকারে অবস্থান করছে। এটি আরো উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে পারে। এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা আবহাওয়া কর্মকর্তা মাহবুবা সুখী বলেন, বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করেছে। এটি বর্তমানে সাতক্ষীরা ও আশপাশের এলাকায় স্থল গভীর নিম্নচাপ আকারে অবস্থান করছে। এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্র বন্দরগুলোতে বৃষ্টি হতে পারে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে উপকূলে উঠে গেল চারটি জাহাজ: নিম্নচাপের প্রভাবে ঝোড়ো হাওয়া ও সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চারটি নৌযান তীরে উঠে গেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ও আনোয়ারা উপকূলে এসব নৌযান আটকে যায়। চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমার আওতাধীন আনোয়ারা উপকূলে দুটি নৌযান আটকা পড়েছে। নৌযান দুটি হলো- মারমেইড-৩ ও নাভিমার-৩। এর মধ্যে মারমেইড-৩ হলো বার্জ, নাভিমার-৩ টাগবোটের সাহায্যে এটি আনা-নেওয়া করা হয়। প্রায় দুই বছর আগে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টের নির্মাণকাজের জন্য এই বার্জে করে ভারত থেকে বড় পাথর নিয়ে আসা হয়েছিল। এ সময় নাভিমার-৩ টাগবোটে জ্বালানি সরবরাহ করলেও কোনো বিল দেয়নি টাগবোটটির মালিকপক্ষ। আবার নৌযান দুটির স্থানীয় প্রতিনিধি ভিশন শিপিং কোম্পানিও কোনো বিল পায়নি। এ নিয়ে অন্তত পাঁচটি মামলা হয়েছে। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় নৌযান দুটি চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমায় নোঙর করা অবস্থায় পড়ে ছিল। ভিশন শিপিং কোম্পানির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘জাহাজটির মালিকপক্ষ কোনো সাড়া দিচ্ছে না। কোনো বিল না পেলেও প্রতিনিয়ত নৌযান দুটিতে চারজন ওয়াচম্যান বা পাহারাদার সরবরাহ করে যাচ্ছি আমরা।’

জাহাজের এক পাহারাদার মিসকাতুর রহমান বলেন, ‘সাগরে প্রচণ্ড ঢেউয়ের মুখে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নৌযান দুটি উপকূলে আটকা পড়ে।’ এদিকে গত বৃহস্পতিবার রাতে একইভাবে ঝোড়ো হাওয়ার কবলে পড়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা উপকূলে দুটি জাহাজ আটকা পড়েছে। জাহাজ দুটি হলো- এমভি আল-হেরেম ও বিএলপিজি সুফিয়া।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ