ঢাকা ০৫:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫

নিপীড়ন-সহিংসতার বিরুদ্ধে নিঃসঙ্গ এক নারীর লড়াই

  • আপডেট সময় : ০৭:০৫:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ মে ২০২৫
  • ১২ বার পড়া হয়েছে

নারী ও শিশু ডেস্ক: ফ্রান্সের একটি বিদ্যুৎ কোম্পানির একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মী ছিলেন ডমিনিক পেলিকট। তিনি ১৯৭৩ সালে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন গিসেল নামের এক নারীর সঙ্গে। ৫০ বছরের সংসার জীবনে তারা তিনটি সন্তানের জনক-জননী হন। সন্তান ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে যদিও ছবির মতো নিখুঁত একটি পারিবারিক জীবন ছিল তাদের, তবুও কেউ জানত না এর পেছনে লুকিয়ে ছিল ভয়ঙ্কর কিছু সত্য। ওই সত্য সহিংসতা ও ধর্ষণের অভিযোগের সঙ্গে জড়িত। বছরের পর বছর নিজের স্বামীর কুরুচি ও নির্যাতনের শিকার হয়ে বেঁচে ছিলেন গিসেল। দিন শেষে তার জীবনে নির্যাতনের সমাপ্তি ঘটার সূত্রপাত। এ জন্য তাকে লড়তে হয়েছে দেশের আইনি ব্যবস্থার সঙ্গেও।

২০১০ সালে ডমিনিক পেলিকটের বিরুদ্ধে প্রথম পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়। প্যারিসের একটি স্থানীয় বাজারে এক নারীর আপত্তিকর ছবি তুলতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েন তিনি। ওই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে রোমহর্ষ সব তথ্য। জানা গেছে, ডমিনিক নিজে তার স্ত্রীকে মাদক খাইয়ে দেওয়ার পর একাধিকবার ভিন্ন পুরুষের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। দক্ষিণ ফ্রান্সের মাজানে নামের একটি ছোট শহরে থাকাকালীন স্ত্রীকে মাদক খাইয়ে একাধিক অপরিচিত পুরুষের হাতে তুলে দিয়েছিলেন ডমিনিক। শুধু তা-ই নয়, মাদকের নেশায় আসক্ত গিসেলের কর্মকাণ্ড ভিডিও করে রাখতেন তিনি। অভিযোগ ওঠার পর স্বামীর সঙ্গে বিয়ে বিচ্ছেদ হয় গিসেলের। তবে লড়াই সেখানেই শেষ হয়নি; বরং শুরু হয় এক কঠিন পরীক্ষা।
জানুয়ারিতে প্রকাশিত ফরাসি সংসদীয় এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, সে দেশে ধর্ষণের শিকারদের মধ্যে মাত্র ২০ শতাংশ নারী অভিযোগ করে। আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, সেই সব মামলার মধ্যে প্রায় ৯৪ শতাংশ বিনা বিচারে খারিজ হয়ে যায়। এমন অবস্থায় সাহসিকতার সঙ্গে আদালতে লড়ে গেছেন গিসেল। গত অক্টোবরে সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘এটা সাহসিকতা নয়, সমাজ পরিবর্তনের জন্য দরকার হলে ইচ্ছাশক্তি ও দৃঢ় সংকল্প।’

গিসেল চোখে চোখ রেখে শুধু অন্যায়কারীর বিরুদ্ধেই লড়ে যাননি; প্রচ্ছন্নভাবে লড়ে গেছেন দেশটির আইনি ব্যবস্থার বিরুদ্ধেও। তিনি লড়ে গেছেন সেই সব মানুষের জন্য- যারা বছরের পর বছর নির্যাতন সহ্য করে গেছেন অজানা কোনো আশঙ্কায়। তিনি সাহস জুগিয়েছেন সেই নারীদের- যারা রুখে দাঁড়াতে সাহস পেতেন না। যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে গিসেলের সাহসী লড়াই একটি বন্ধ দরজা খুলে দিয়েছে; যার মধ্য দিয়ে অন্যান্য ভুক্তভোগী স্বাধীনভাবে হাঁটতে পারেন। গত বছরের ডিসেম্বরে ডমিনিক পেলিকটকে ২০ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। তিনি ছাড়াও এই মামলায় মোট ৫১ জনের বিচার হয়। তাদের প্রত্যেককেই দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪৬ জন পুরুষকে ধর্ষণের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। দু’জনকে ধর্ষণচেষ্টা এবং দু’জনকে যৌন নিপীড়নের জন্য দোষী সাব্যস্ত করেছেন আদালত।

পুলিশ ডমিনিকের কাছে থাকা ছবি ও ভিডিওর মধ্যে তার মেয়ের ছবিও দেখতে পান। প্রমাণ পেয়ে এ বছরের জানুয়ারিতে মেয়ে ক্যারোলিন ড্যারিয়ানও বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চলা প্রথম বিচারটি বিশ্বব্যাপী মনোযোগ আকর্ষণ করে। কারণ এই বিচার জনসাধারণ ও গণমাধ্যমের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল। সূত্র: টাইম, বিবিসি।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নিপীড়ন-সহিংসতার বিরুদ্ধে নিঃসঙ্গ এক নারীর লড়াই

আপডেট সময় : ০৭:০৫:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ মে ২০২৫

নারী ও শিশু ডেস্ক: ফ্রান্সের একটি বিদ্যুৎ কোম্পানির একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মী ছিলেন ডমিনিক পেলিকট। তিনি ১৯৭৩ সালে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন গিসেল নামের এক নারীর সঙ্গে। ৫০ বছরের সংসার জীবনে তারা তিনটি সন্তানের জনক-জননী হন। সন্তান ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে যদিও ছবির মতো নিখুঁত একটি পারিবারিক জীবন ছিল তাদের, তবুও কেউ জানত না এর পেছনে লুকিয়ে ছিল ভয়ঙ্কর কিছু সত্য। ওই সত্য সহিংসতা ও ধর্ষণের অভিযোগের সঙ্গে জড়িত। বছরের পর বছর নিজের স্বামীর কুরুচি ও নির্যাতনের শিকার হয়ে বেঁচে ছিলেন গিসেল। দিন শেষে তার জীবনে নির্যাতনের সমাপ্তি ঘটার সূত্রপাত। এ জন্য তাকে লড়তে হয়েছে দেশের আইনি ব্যবস্থার সঙ্গেও।

২০১০ সালে ডমিনিক পেলিকটের বিরুদ্ধে প্রথম পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়। প্যারিসের একটি স্থানীয় বাজারে এক নারীর আপত্তিকর ছবি তুলতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েন তিনি। ওই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে রোমহর্ষ সব তথ্য। জানা গেছে, ডমিনিক নিজে তার স্ত্রীকে মাদক খাইয়ে দেওয়ার পর একাধিকবার ভিন্ন পুরুষের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। দক্ষিণ ফ্রান্সের মাজানে নামের একটি ছোট শহরে থাকাকালীন স্ত্রীকে মাদক খাইয়ে একাধিক অপরিচিত পুরুষের হাতে তুলে দিয়েছিলেন ডমিনিক। শুধু তা-ই নয়, মাদকের নেশায় আসক্ত গিসেলের কর্মকাণ্ড ভিডিও করে রাখতেন তিনি। অভিযোগ ওঠার পর স্বামীর সঙ্গে বিয়ে বিচ্ছেদ হয় গিসেলের। তবে লড়াই সেখানেই শেষ হয়নি; বরং শুরু হয় এক কঠিন পরীক্ষা।
জানুয়ারিতে প্রকাশিত ফরাসি সংসদীয় এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, সে দেশে ধর্ষণের শিকারদের মধ্যে মাত্র ২০ শতাংশ নারী অভিযোগ করে। আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, সেই সব মামলার মধ্যে প্রায় ৯৪ শতাংশ বিনা বিচারে খারিজ হয়ে যায়। এমন অবস্থায় সাহসিকতার সঙ্গে আদালতে লড়ে গেছেন গিসেল। গত অক্টোবরে সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘এটা সাহসিকতা নয়, সমাজ পরিবর্তনের জন্য দরকার হলে ইচ্ছাশক্তি ও দৃঢ় সংকল্প।’

গিসেল চোখে চোখ রেখে শুধু অন্যায়কারীর বিরুদ্ধেই লড়ে যাননি; প্রচ্ছন্নভাবে লড়ে গেছেন দেশটির আইনি ব্যবস্থার বিরুদ্ধেও। তিনি লড়ে গেছেন সেই সব মানুষের জন্য- যারা বছরের পর বছর নির্যাতন সহ্য করে গেছেন অজানা কোনো আশঙ্কায়। তিনি সাহস জুগিয়েছেন সেই নারীদের- যারা রুখে দাঁড়াতে সাহস পেতেন না। যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে গিসেলের সাহসী লড়াই একটি বন্ধ দরজা খুলে দিয়েছে; যার মধ্য দিয়ে অন্যান্য ভুক্তভোগী স্বাধীনভাবে হাঁটতে পারেন। গত বছরের ডিসেম্বরে ডমিনিক পেলিকটকে ২০ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। তিনি ছাড়াও এই মামলায় মোট ৫১ জনের বিচার হয়। তাদের প্রত্যেককেই দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪৬ জন পুরুষকে ধর্ষণের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। দু’জনকে ধর্ষণচেষ্টা এবং দু’জনকে যৌন নিপীড়নের জন্য দোষী সাব্যস্ত করেছেন আদালত।

পুলিশ ডমিনিকের কাছে থাকা ছবি ও ভিডিওর মধ্যে তার মেয়ের ছবিও দেখতে পান। প্রমাণ পেয়ে এ বছরের জানুয়ারিতে মেয়ে ক্যারোলিন ড্যারিয়ানও বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চলা প্রথম বিচারটি বিশ্বব্যাপী মনোযোগ আকর্ষণ করে। কারণ এই বিচার জনসাধারণ ও গণমাধ্যমের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল। সূত্র: টাইম, বিবিসি।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ