ঢাকা ০৪:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নিত্যদিনের কাজ বদলে দিচ্ছে ব্যতিক্রমী কিছু প্রযুক্তি

  • আপডেট সময় : ০৭:৪২:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫
  • ৪০ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক: আজকের বিশ্বে প্রযুক্তি কেবল বিলাসিতা নয়; বরং নিত্যদিনের প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্মার্টফোন, ইন্টারনেট কিংবা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ছাড়াও বিশ্বের নানা প্রান্তে এমন কিছু প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে; যা অদ্ভুত ও চমকপ্রদ। এই উদ্ভাবনগুলো মানুষের জীবনকে আরো সহজ ও নিরাপদ করে তুলছে। এমনই কিছু ব্যতিক্রমী প্রযুক্তির খোঁজ দেওয়া হলো-

স্মার্ট স্ট্রিট লাইট: স্মার্ট স্ট্রিট লাইট এখন শহরের নিরাপত্তাকর্মী হিসেবেও কাজ করছে। সেন্সর লাগানো এসব লাইট চলমান গাড়ি, পথচারী কিংবা বাইসাইকেল শনাক্ত করতে পারে এবং সে অনুযায়ী আলো জ্বলে বা নিভে যায়। কিছু লাইট আবার বাতাসের গুণমান, শব্দদূষণ ও তাপমাত্রাও মাপতে পারে। এই প্রযুক্তির সুবিধা বিদ্যুৎ সাশ্রয়, জননিরাপত্তা বৃদ্ধি, পরিবেশের তথ্য সংগ্রহ। দক্ষিণ কোরিয়া, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর ও ভারতের বেশ কিছু শহরে স্মার্ট স্ট্রিট লাইট প্রযুক্তি সফলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

থ্রিডি প্রিন্টেড বাড়ি: এক সময় ভাবা যেত, বাড়ি বানাতে মাসের পর মাস লাগবেই। কিন্তু সেই ধারণা বদলে দিয়েছে প্রযুক্তি। থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি দিয়ে এখন পুরো বাড়ি বানানো যাচ্ছে মাত্র কয়েক দিনেই। বিশেষ ধরনের কংক্রিট দিয়ে বাড়ির কাঠামো ধাপে ধাপে তোলা হয়। এই ধরনের বাড়ি এখন ব্যবহার করা হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের বিভিন্ন স্থানে।

স্মার্ট টয়লেট: চীনের কিছু শহরে এমন টয়লেট বসানো হয়েছে, যা ব্যবহারকারীর মূত্র থেকে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করা যায়। ডায়াবেটিস, প্রস্রাবে সংক্রমণ বা পানিশূন্যতার লক্ষণ শনাক্ত করতে পারে এই টয়লেট। এটি হ্যান্ড ফ্রি, স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিষ্কার হয় এবং পানিও সাশ্রয় করে। চীন ছাড়াও জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় এর ব্যবহার শুরু হয়েছে।

স্মার্ট হিটিং ও কুলিং সিস্টেম: শীতপ্রধান দেশের জন্য ঘর গরম রাখা যেমন জরুরি, তেমনি গ্রীষ্মকালে ঠান্ডা রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। এসব বাড়িতে এখন ব্যবহার করা হচ্ছে স্মার্ট হিটিং ও কুলিং সিস্টেম—বিশেষভাবে স্মার্ট থার্মোস্ট্যাট। এই প্রযুক্তি ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে মানুষের উপস্থিতি, বাইরের আবহাওয়া ও সময়ের ভিত্তিতে। গবেষণায় দেখা গেছে, এমন প্রযুক্তি ব্যবহারে গড়পড়তা বিদ্যুৎ খরচ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। ফিনল্যান্ড, সুইডেন ও কানাডার মতো শীতল আবহাওয়ার দেশগুলোতে এই স্মার্ট ব্যবস্থা এখন ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

সোলার রোড ওয়ে: রাস্তাই এখন বিদ্যুৎ তৈরি করতে পারে। এই রাস্তা বানানো হয় বিশেষ ধরনের সোলার প্যানেল দিয়ে; যা গাড়ির ওজন সহজে সহ্য করতে পারে। রোদের আলো থেকে সরাসরি বিদ্যুৎ তৈরি হয়, যা ব্যবহৃত হয় রাস্তায় আলো জ্বালাতে, ট্রাফিক সিগন্যালে, এমনকি গাড়ি চার্জ দিতেও। এখনো অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স ও চীনের কিছু এলাকায় এই সোলার রোড সফলভাবে চালু হয়েছে।

রেইনফরেস্ট মনিটরিং ড্রোন: বিশাল রেইনফরেস্টে কোথায় আগুন লেগেছে, কোথায় গাছ কাটা হচ্ছে—সব সময় সেগুলো চোখে দেখা বা স্যাটেলাইট দিয়ে জানা সম্ভব হয় না। তাই এখন কাজে লাগানো হচ্ছে মনিটরিং ড্রোন। এগুলো আকাশ থেকে পুরো বন দ্রুত স্ক্যান করার মাধ্যমে অবৈধ কাজ বন্ধ করে দিচ্ছে। এই ড্রোনগুলো শুধু ছবি তোলে না, বরং সঠিক সময়ের তথ্য পাঠাতে পারে স্যাটেলাইটের চেয়ে বেশি দ্রুতগতিতে। এই প্রযুক্তি এখন ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া ও কঙ্গোর মতো রেইনফরেস্টে সমৃদ্ধ দেশগুলোতে ব্যবহার করা হচ্ছে।

প্রযুক্তি আমাদের বিভিন্ন কাজ খুব সহজ করে দিচ্ছে। সেটি এখন নির্দিষ্ট কোনো গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়। তবে এসব অভিনব উদ্ভাবন বদলে দিচ্ছে পুরো সমাজ। সূত্র: টাইম, দ্য গার্ডিয়ান ও কুরিয়ার মেইল।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নিত্যদিনের কাজ বদলে দিচ্ছে ব্যতিক্রমী কিছু প্রযুক্তি

আপডেট সময় : ০৭:৪২:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক: আজকের বিশ্বে প্রযুক্তি কেবল বিলাসিতা নয়; বরং নিত্যদিনের প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্মার্টফোন, ইন্টারনেট কিংবা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ছাড়াও বিশ্বের নানা প্রান্তে এমন কিছু প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে; যা অদ্ভুত ও চমকপ্রদ। এই উদ্ভাবনগুলো মানুষের জীবনকে আরো সহজ ও নিরাপদ করে তুলছে। এমনই কিছু ব্যতিক্রমী প্রযুক্তির খোঁজ দেওয়া হলো-

স্মার্ট স্ট্রিট লাইট: স্মার্ট স্ট্রিট লাইট এখন শহরের নিরাপত্তাকর্মী হিসেবেও কাজ করছে। সেন্সর লাগানো এসব লাইট চলমান গাড়ি, পথচারী কিংবা বাইসাইকেল শনাক্ত করতে পারে এবং সে অনুযায়ী আলো জ্বলে বা নিভে যায়। কিছু লাইট আবার বাতাসের গুণমান, শব্দদূষণ ও তাপমাত্রাও মাপতে পারে। এই প্রযুক্তির সুবিধা বিদ্যুৎ সাশ্রয়, জননিরাপত্তা বৃদ্ধি, পরিবেশের তথ্য সংগ্রহ। দক্ষিণ কোরিয়া, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর ও ভারতের বেশ কিছু শহরে স্মার্ট স্ট্রিট লাইট প্রযুক্তি সফলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

থ্রিডি প্রিন্টেড বাড়ি: এক সময় ভাবা যেত, বাড়ি বানাতে মাসের পর মাস লাগবেই। কিন্তু সেই ধারণা বদলে দিয়েছে প্রযুক্তি। থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি দিয়ে এখন পুরো বাড়ি বানানো যাচ্ছে মাত্র কয়েক দিনেই। বিশেষ ধরনের কংক্রিট দিয়ে বাড়ির কাঠামো ধাপে ধাপে তোলা হয়। এই ধরনের বাড়ি এখন ব্যবহার করা হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের বিভিন্ন স্থানে।

স্মার্ট টয়লেট: চীনের কিছু শহরে এমন টয়লেট বসানো হয়েছে, যা ব্যবহারকারীর মূত্র থেকে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করা যায়। ডায়াবেটিস, প্রস্রাবে সংক্রমণ বা পানিশূন্যতার লক্ষণ শনাক্ত করতে পারে এই টয়লেট। এটি হ্যান্ড ফ্রি, স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিষ্কার হয় এবং পানিও সাশ্রয় করে। চীন ছাড়াও জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় এর ব্যবহার শুরু হয়েছে।

স্মার্ট হিটিং ও কুলিং সিস্টেম: শীতপ্রধান দেশের জন্য ঘর গরম রাখা যেমন জরুরি, তেমনি গ্রীষ্মকালে ঠান্ডা রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। এসব বাড়িতে এখন ব্যবহার করা হচ্ছে স্মার্ট হিটিং ও কুলিং সিস্টেম—বিশেষভাবে স্মার্ট থার্মোস্ট্যাট। এই প্রযুক্তি ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে মানুষের উপস্থিতি, বাইরের আবহাওয়া ও সময়ের ভিত্তিতে। গবেষণায় দেখা গেছে, এমন প্রযুক্তি ব্যবহারে গড়পড়তা বিদ্যুৎ খরচ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। ফিনল্যান্ড, সুইডেন ও কানাডার মতো শীতল আবহাওয়ার দেশগুলোতে এই স্মার্ট ব্যবস্থা এখন ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

সোলার রোড ওয়ে: রাস্তাই এখন বিদ্যুৎ তৈরি করতে পারে। এই রাস্তা বানানো হয় বিশেষ ধরনের সোলার প্যানেল দিয়ে; যা গাড়ির ওজন সহজে সহ্য করতে পারে। রোদের আলো থেকে সরাসরি বিদ্যুৎ তৈরি হয়, যা ব্যবহৃত হয় রাস্তায় আলো জ্বালাতে, ট্রাফিক সিগন্যালে, এমনকি গাড়ি চার্জ দিতেও। এখনো অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স ও চীনের কিছু এলাকায় এই সোলার রোড সফলভাবে চালু হয়েছে।

রেইনফরেস্ট মনিটরিং ড্রোন: বিশাল রেইনফরেস্টে কোথায় আগুন লেগেছে, কোথায় গাছ কাটা হচ্ছে—সব সময় সেগুলো চোখে দেখা বা স্যাটেলাইট দিয়ে জানা সম্ভব হয় না। তাই এখন কাজে লাগানো হচ্ছে মনিটরিং ড্রোন। এগুলো আকাশ থেকে পুরো বন দ্রুত স্ক্যান করার মাধ্যমে অবৈধ কাজ বন্ধ করে দিচ্ছে। এই ড্রোনগুলো শুধু ছবি তোলে না, বরং সঠিক সময়ের তথ্য পাঠাতে পারে স্যাটেলাইটের চেয়ে বেশি দ্রুতগতিতে। এই প্রযুক্তি এখন ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া ও কঙ্গোর মতো রেইনফরেস্টে সমৃদ্ধ দেশগুলোতে ব্যবহার করা হচ্ছে।

প্রযুক্তি আমাদের বিভিন্ন কাজ খুব সহজ করে দিচ্ছে। সেটি এখন নির্দিষ্ট কোনো গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়। তবে এসব অভিনব উদ্ভাবন বদলে দিচ্ছে পুরো সমাজ। সূত্র: টাইম, দ্য গার্ডিয়ান ও কুরিয়ার মেইল।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ