নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের ৩৯ বছর পর যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল আইনজীবী প্যানেল এবং তদন্ত সংস্থা গঠন করা হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে তাদের নির্বাচনের ইশতেহার মেনে ট্রাইব্যুনাল গঠন ও একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা হয়। ১৫ বছর পর একই ট্র্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম শেষে রায় ঘোষণা হতে চলেছে আজ সোমবার (১৭ নভেম্বর)।
বর্তমানে প্রসিকিউশনে থাকা আইনজীবীরা সেসময় আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। শেখ হাসিনার নিজের প্রতিষ্ঠিত ট্রাইব্যুনালে বিচারের মুখোমুখি হওয়াকে ‘প্রকৃতির বিচার’ হিসেবেই দেখছেন এই আইনজীবীরা।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং তাদের সহযোগী আলবদর, আলশামস, রাজাকার বাহিনীর গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করার উদ্দেশ্যে, স্বাধীনতার মাত্র দুই বছর পর ১৯৭৩ সালের ২০ জুলাই আইনটি পাস করা হয়। এটি ছিল বিশ্বের প্রথম দিকের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সম্পর্কিত জাতীয় আইন।
বাংলাদেশের জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলা পিডিয়ায় এই আইন সম্পর্কে বলা হয়েছে—এটি যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত একটি রাষ্ট্রীয় আইন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা এবং তাদের সহযোগী রাজাকার বাহিনী বাংলাদেশের জনগণের প্রতি যে নৃশংসতা চালিয়েছিল, তার বিচারের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ এই আইন প্রণয়ন করে। বাংলা পিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, এই আইনই বিশ্বের ইতিহাসে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রণীত সর্বপ্রথম যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত আইন, যা কিনা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত সংক্রান্ত রোম সনদেরও আগে প্রণীত হয়েছিল। ১৯৭৩ সালের এই আইন বাংলাদেশ কোলাবরেটর (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) অর্ডার ১৯৭২-কে প্রতিস্থাপিত করেছে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০১৩ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দুই ট্রাইব্যুনালের রায়ে মোট ৬ জনের ফাঁসির আদেশ কার্যকর হয়। তারা হলেন—মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, কাদের মোল্লা, মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, মীর কাসেম আলী ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী।
নিজের প্রতিষ্ঠিত ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচারের রায় প্রসঙ্গে প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এটাই প্রকৃতির বিচার যে শেখ হাসিনা নিজের হাতেই মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল ও আইন করেছিলেন। এসব করার পরও তিনি নিজেই মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন। সেখানেই তার বিচার হচ্ছে। এটা সবার জন্যই একটা শিক্ষা হয়ে রবে বলে আমি মনে করি।’ এ মামলায় প্রসিকিউশন আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। তাই তিনি এ মামলায় আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশা করেও মন্তব্য ব্যক্ত করেন।
নিজের গড়া বা প্রতিষ্ঠিত আদালতেই নিজের বিচার- এমন উদাহরণ অত্যন্ত বিরল। ইতিহাসে এমন কিছু ঘটনা খুব কমই আছে—যেখানে কোনও নেতা নিজে যে ট্রাইব্যুনাল/আদালত প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন, পরে সেই একই ট্রাইব্যুনালে তাকেই বিচারের মুখোমুখি হতে হয়। তবে এরকম ঘটনার উদাহরণ পাওয়া যায় ফরাসি বিপ্লবে। ১৭৯৩ সালে দঁতোঁ বিপ্লবী ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার পক্ষে জোরালো সমর্থন দেন এবং আইনটির খসড়া প্রস্তুত ও পাস করাতে মুখ্য ভূমিকা রাখেন। উদ্দেশ্য ছিল, বিপ্লববিরোধীদের দ্রুত বিচার করা। কিন্তু মাত্র এক বছর পর সেই একই ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র ও দুর্নীতির অভিযোগে দঁতোঁর বিচার অনুষ্ঠিত হয়।
সানা/আপ্র/১৭/১১/২০২৫





















