ঢাকা ০৯:৫৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

নিখোঁজের ২৩ বছর পর দেশে ফিরলেন আমেনা

  • আপডেট সময় : ১২:৫৬:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • ৯১ বার পড়া হয়েছে

বগুড়া প্রতিনিধি : প্রায় ২৩ বছর আগে বগুড়ার ধুনট উপজেলার মাজবাড়ি গ্রামের আমেনা খাতুন নিখোঁজ হন। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাঁর সন্ধান পাননি স্বজনেরা। তাঁরা ধরে নেন, আমেনা মারা গেছেন। বহু ঘটনার পর গতকাল সোমবার তিনি নেপাল থেকে দেশে ফিরলেন। বেলা একটার দিকে একটি ফ্লাইটে করে তিনি বাংলাদেশে পৌঁছান। আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাঁকে তাঁর স্বজনদের কাছে দেওয়া হবে।
নেপালে বাংলাদেশ দূতাবাসের কনস্যুলার মো. মাসুদ আলম সোমবার বেলা ১টার দিকে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বেলা একটার দিকে ভাড়া করা বিশেষ বিমানে তিনি আমেনা খাতুনকে নিয়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। এর আগে নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আমেনাকে বিদায় জানান সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত সালাহউদ্দিন নোমান চৌধুরী।
নেপালে বাংলাদেশ দূতাবাসের কনস্যুলার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ১ সেপ্টেম্বর একটি চিঠি পাঠান। ওই চিঠি থেকে জানা যায়, আমেনার বয়স এখন ৮০ বছর। নেপালের কাঠমা-ু থেকে প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার দূরে সুনসারি জেলায় প্রায় তিন মাস আগে তাঁর সন্ধান মেলে। পরে নেপালে বাংলাদেশের দূতাবাস তাঁকে উদ্ধার করে দেশে ফেরানোর উদ্যোগ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় আজ তিনি দেশের মাটি স্পর্শ করলেন।
আমেনার স্বামী মৃত আজগর আলী প্রামাণিক পেশায় কাঠমিস্ত্রি ছিলেন। তাঁর তিন ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে আমজাদ হোসেনের বয়স ৬০ বছর, মেজ ছেলে ফটিক হোসেনের বয়স ৫৮ বছর, ছোট ছেলে ফরাজুল হোসেনের বয়স ৫৪ বছর ও ছোট মেয়ে আম্বিয়া খাতুনের বয়স ৪৫ বছর।
আমেনা খাতুনের বড় ছেলে আমজাদ হোসেন বলেন, ‘তিন মাস আগে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের মাধ্যমে জানতে পারি, নেপালে আমাদের মাকে পাওয়া গেছে। এরপর আমরা তাঁকে সরকারি খরচে দেশে ফেরানোর জন্য আবেদন করি। নেপালে বাংলাদেশের দূতাবাস তাঁকে দেশে ফেরানোর উদ্যোগ নেয়। কিন্তু করোনা ও লকডাউনের কারণে মায়ের দেশে ফেরা দেরি হয়। ইতিমধ্যে নেপালে বাংলাদেশি দূতাবাসের সহযোগিতায় মুঠোফোনে ভিডিও কলে মায়ের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তিনি আমাদের চিনতে পেরেছেন। আমরাও তাঁকে চিনেছি।’
মাকে আনতে তাঁরা চার ভাইবোন ও স্বজনেরা মাইক্রোবাস ভাড়া করে ঢাকায় এসেছেন। যে মা সবার কাছে মৃত হয়ে গিয়েছিলেন, সেই মাকে এত বছর পর ফিরে পাওয়ার আনন্দ-অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়, বললেন তিনি।
কাঠমান্ডুতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কনস্যুলার মো. মাসুদ আলমের ইস্যু করা চিঠির সূত্রে জানা গেছে, এ বছরের ৩০ মে নেপালে বাংলাদেশি দূতাবাস আমেনা খাতুনের সন্ধান পায়। তিনি নেপালের সুনসারি জেলার ইনারোয়া শহরে বাসাবাড়ি ও হোটেলে কাজ করতেন। বার্ধক্যের কারণে তিনি কাজ করতে না পেরে রাস্তাঘাট ও ফুটপাতে অবস্থান করছিলেন। পরে ইনারোয়া পৌরসভার কর্মীরা তাঁকে উদ্ধার করে সুনসারি জেলা প্রশাসনের সেফ হাউসে রাখেন। নেপালের এক ব্যক্তি তাঁর ফেসবুকে বিষয়টি পোস্ট করেন। ওই পোস্টে তিনি আমেনাকে বাংলাদেশি বলে উল্লেখ করেন। পোস্টটির কমেন্টে নেপালে বাংলাদেশ ইয়ুথ কনক্লেভের চেয়ারম্যান অভিনাভ চৌধুরী বাংলাদেশ দূতাবাসের কনস্যুলারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এরপর বাংলাদেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় বগুড়ার ধুনটে তাঁর পরিবারের খোঁজ মেলে। আমেনা খাতুনকে দেশে আনতে বিমানভাড়াসহ যাবতীয় খরচ বহন করেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নিখোঁজের ২৩ বছর পর দেশে ফিরলেন আমেনা

আপডেট সময় : ১২:৫৬:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

বগুড়া প্রতিনিধি : প্রায় ২৩ বছর আগে বগুড়ার ধুনট উপজেলার মাজবাড়ি গ্রামের আমেনা খাতুন নিখোঁজ হন। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাঁর সন্ধান পাননি স্বজনেরা। তাঁরা ধরে নেন, আমেনা মারা গেছেন। বহু ঘটনার পর গতকাল সোমবার তিনি নেপাল থেকে দেশে ফিরলেন। বেলা একটার দিকে একটি ফ্লাইটে করে তিনি বাংলাদেশে পৌঁছান। আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাঁকে তাঁর স্বজনদের কাছে দেওয়া হবে।
নেপালে বাংলাদেশ দূতাবাসের কনস্যুলার মো. মাসুদ আলম সোমবার বেলা ১টার দিকে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বেলা একটার দিকে ভাড়া করা বিশেষ বিমানে তিনি আমেনা খাতুনকে নিয়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। এর আগে নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আমেনাকে বিদায় জানান সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত সালাহউদ্দিন নোমান চৌধুরী।
নেপালে বাংলাদেশ দূতাবাসের কনস্যুলার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ১ সেপ্টেম্বর একটি চিঠি পাঠান। ওই চিঠি থেকে জানা যায়, আমেনার বয়স এখন ৮০ বছর। নেপালের কাঠমা-ু থেকে প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার দূরে সুনসারি জেলায় প্রায় তিন মাস আগে তাঁর সন্ধান মেলে। পরে নেপালে বাংলাদেশের দূতাবাস তাঁকে উদ্ধার করে দেশে ফেরানোর উদ্যোগ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় আজ তিনি দেশের মাটি স্পর্শ করলেন।
আমেনার স্বামী মৃত আজগর আলী প্রামাণিক পেশায় কাঠমিস্ত্রি ছিলেন। তাঁর তিন ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে আমজাদ হোসেনের বয়স ৬০ বছর, মেজ ছেলে ফটিক হোসেনের বয়স ৫৮ বছর, ছোট ছেলে ফরাজুল হোসেনের বয়স ৫৪ বছর ও ছোট মেয়ে আম্বিয়া খাতুনের বয়স ৪৫ বছর।
আমেনা খাতুনের বড় ছেলে আমজাদ হোসেন বলেন, ‘তিন মাস আগে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের মাধ্যমে জানতে পারি, নেপালে আমাদের মাকে পাওয়া গেছে। এরপর আমরা তাঁকে সরকারি খরচে দেশে ফেরানোর জন্য আবেদন করি। নেপালে বাংলাদেশের দূতাবাস তাঁকে দেশে ফেরানোর উদ্যোগ নেয়। কিন্তু করোনা ও লকডাউনের কারণে মায়ের দেশে ফেরা দেরি হয়। ইতিমধ্যে নেপালে বাংলাদেশি দূতাবাসের সহযোগিতায় মুঠোফোনে ভিডিও কলে মায়ের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তিনি আমাদের চিনতে পেরেছেন। আমরাও তাঁকে চিনেছি।’
মাকে আনতে তাঁরা চার ভাইবোন ও স্বজনেরা মাইক্রোবাস ভাড়া করে ঢাকায় এসেছেন। যে মা সবার কাছে মৃত হয়ে গিয়েছিলেন, সেই মাকে এত বছর পর ফিরে পাওয়ার আনন্দ-অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়, বললেন তিনি।
কাঠমান্ডুতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কনস্যুলার মো. মাসুদ আলমের ইস্যু করা চিঠির সূত্রে জানা গেছে, এ বছরের ৩০ মে নেপালে বাংলাদেশি দূতাবাস আমেনা খাতুনের সন্ধান পায়। তিনি নেপালের সুনসারি জেলার ইনারোয়া শহরে বাসাবাড়ি ও হোটেলে কাজ করতেন। বার্ধক্যের কারণে তিনি কাজ করতে না পেরে রাস্তাঘাট ও ফুটপাতে অবস্থান করছিলেন। পরে ইনারোয়া পৌরসভার কর্মীরা তাঁকে উদ্ধার করে সুনসারি জেলা প্রশাসনের সেফ হাউসে রাখেন। নেপালের এক ব্যক্তি তাঁর ফেসবুকে বিষয়টি পোস্ট করেন। ওই পোস্টে তিনি আমেনাকে বাংলাদেশি বলে উল্লেখ করেন। পোস্টটির কমেন্টে নেপালে বাংলাদেশ ইয়ুথ কনক্লেভের চেয়ারম্যান অভিনাভ চৌধুরী বাংলাদেশ দূতাবাসের কনস্যুলারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এরপর বাংলাদেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় বগুড়ার ধুনটে তাঁর পরিবারের খোঁজ মেলে। আমেনা খাতুনকে দেশে আনতে বিমানভাড়াসহ যাবতীয় খরচ বহন করেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।