নিজস্ব প্রতিবেদক : নিউ মার্কেট এলাকায় দোকান কর্মীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষের মধ্যে নিহত ডেলিভারি সহকারী নাহিদ মিয়ার হত্যাকারীকে শনাক্ত করা গেলেও দোকান কর্মী মো. মোরসালিনের খুনিদের এখনও শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।
ওই দুই হত্যা মামলার তদন্ত সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বুধবার মিন্টো রোডে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “মোরসালিন হত্যা এখন পর্যন্ত ক্লুলেস..। প্রাথমিকভাবে তথ্য-প্রমাণে এটাই নিশ্চিত হয়েছি যে, মোরসালিন ইটের আঘাতে মারা গেছেন। সুনির্দিষ্টভাবে ওই ইটটি কোথা থেকে এসেছে তা নির্দিষ্ট করা যায়নি।
“তবে যারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে এবং এই ধরনের কাজে নেতৃত্ব দিয়েছে, তাদের দায়ভার বহন করতে হবে। যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন আমরা চেষ্টা করছি তাদেরকে শনাক্ত করতে… ।”
গত ১৯ এপ্রিল দিনভর সংঘর্ষের সময় আহত ১৮ বছর বয়সী নাহিদ মিয়াকে কুপিয়ে জখম করা হয়। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে তিনি মারা যান। ওই দিন দুপুরের দিকে নুরজাহান মার্কেটের সামনে ইটের আঘাতে আহত হন মোরসালিন। দুদিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে তার মৃত্যু হয়।
নাহিদ হত্যায় জড়িতদের শনাক্ত করার কাজ অনেক দূর এগিয়েছে জানিয়ে যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, “ভিডিও ফুটেজ দেখে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে কারা জড়িত শনাক্ত করছি। গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া আমরা চালিয়েছি। মূলত হোস্টেল এখন বন্ধ থাকায় অনেকে বাড়িতে চলে গেছে, আবার অনেকে আত্মগোপনে আছে।
“আত্মগোপনে থাকাদের গ্রেপ্তারের জন্য গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে এবং শিগগিরই আপনারা ভালো ফলাফল জানতে পারবেন।”
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) ফারুক হোসেন গত সোমবার সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন নাহিদ মিয়াকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যায় জড়িত ছয় ছাত্রকে শনাক্ত করা হয়েছে এবং তারা সবাই ঢাকা কলেজের। প্রত্যক্ষদর্শী এবং ভিডিও বিশ্লেষণ করে কয়েকজনের নাম ইতোমধ্যে সংবাদমাধ্যমের খবরে এসেছে। তারা সবাই ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। পুলিশ যাদের শনাক্ত করেছে, তাদের রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাইলে বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে মাহবুব আলম বলেন, “দলীয় পরিচয়টা এখনো আমরা নিশ্চিত করছি না। দলীয় পরিচয় দেখাও আমাদের… আর ওখানে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নাই। হেলমেট পড়ে যারা সেখানে কর্মযজ্ঞ চালিয়েছে, তারা অবশ্যই সন্ত্রাসী এবং তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।”
গত ১৮ এপ্রিল রাতে দুই দোকানের কর্মচারীর দ্বন্দ্বের জেরে পরদিন ১৯ এপ্রিল দিনভর ঢাকা কলেজ ও নিউ মার্কেটের দোকান মালিক কর্মচারীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলে। এই ঘটনায় দুটি হত্যা মামলাসহ পাঁচটি মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের মামলায় নিউ মার্কেট থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি মকবুল হোসেন ছাড়া আর কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। দুই হত্যা মামলায় কেউ গ্রেপ্তার হয়নি এখনও।
হেলমেটধারীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে: ডিবি : নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষকালে হেলমেট পরে সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়া সবাই সন্ত্রাসী। তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। এসব হেলমেটধারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একাধিক টিম অভিযান চালাচ্ছে। বুধবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (দক্ষিণ) পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মাহবুব আলম। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিউমার্কেটের সংঘর্ষের ঘটনায় দুজন তরুণ নিহত হয়। এ ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তাধীন। একটি নাহিদ হত্যায় এবং অপর মামলাটি হয়েছে মোরসালিন হত্যার ঘটনায়। গোয়েন্দা পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও জানান, নাহিদ হত্যাকা-ের যে ফুটেজ রয়েছে সেই ফুটেজের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে জড়িতদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। চিহ্নিতকরণের কাজটি অনেক দূর এগিয়েছে। তিনি বলেন, ঢাকা কলেজের হোস্টেল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই বাড়ি চলে গেছে অথবা আত্মগোপনে আছে। তবে ডিবির একাধিক টিম তাদের গ্রেফতারে চেষ্টা চালাচ্ছে। শিগগির এ বিষয়ে ভালো ফল জানানো হবে। চিহ্নিতদের মধ্যে ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মী ছিল কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে মাহবুব আলম বলেন, সেখানে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। তবে যারা হেলমেট পরে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল তারা সবাই সন্ত্রাসী। তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।
বিএনপি নেতা মকবুল কারাগারে : শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারীদের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় গ্রেফতার বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তার জামিন শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) দিন ধার্য করেছেন আদালত।
গতকাল বুধবার তিন দিনের রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিউমার্কেট থানার পুলিশ পরিদর্শক হালদার অর্পিত ঠাকুর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। অপরদিকে তার আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। পরে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইশরাত জাহান তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। একই সঙ্গে জামিন শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) দিন ধার্য করেন।
নিউ মার্কেটে সংঘর্ষে মোরসালিনের হত্যাকারী কে, ‘ক্লু পাচ্ছে না’ পুলিশ
জনপ্রিয় সংবাদ