ঢাকা ০৬:৩৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫

নিউ মার্কেটে সংঘর্ষে নাহিদ হত্যায় ঢাকা কলেজের ৬ ছাত্র শনাক্ত

  • আপডেট সময় : ০১:৪৮:১০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ এপ্রিল ২০২২
  • ১৪৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউ মার্কেটের দোকান কর্মচারীদের সংঘর্ষের সময় ডেলিভারিম্যান নাহিদ মিয়াকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যায় জড়িত ছয় ছাত্রকে শনাক্ত করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) ফারুক হোসেন গতকাল সোমবার বলেন, “তারা সবাই ঢাকা কলেজের। ঘটনার সময় কয়েকজন হেলমেট পরা ছিল। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”
সংঘর্ষের ওই মামলা তদন্তের দায়িত্বে থাকা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) রোববার ঢাকা কলেজ ছাত্রাবাসে অভিযান চালায়। তবে সেখান থেকে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
যে ছয়জন প্রাথমিকভাবে শনাক্ত হয়েছে তারা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। তবে এই ছয়জনের নাম বা বিস্তারিত পরিচয় জানাননি উপকমিশনার ফারুক।
অবশ্য প্রত্যক্ষদর্শী এবং ভিডিও বিশ্লেষণ করে কয়েকজনের নাম ইতোমধ্যে সংবাদমাধ্যমের খবরে এসেছে। তারা সবাই ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।
ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই এখন। ২০১৬ সালে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হলও তারা আর পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি। কলেজের ছাত্রলীগ এখন কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। ঢাকা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মইনুল হোসেন সোমবার দুপুরে জানান, শনাক্ত হয়েছে এমন কোনো ছাত্রের ব্যাপারে তথ্য জানতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কোন সদস্য তার কাছে আসেননি, জানতেও চাননি। এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ মইনুল হোসেন বলেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কেউ কোন শিক্ষার্থী বিষয়ে জানতে চাইলে সহায়তা করা হবে।”
কোনো শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার হয়েছে- এমন তথ্যও নেই জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, “রোববার ছাত্রাবাসে গোয়েন্দা পুলিশ আলামত উদ্ধারের জন্য অভিযান চালায়। তারা একজনকে নিয়েছিল, পরে ছেড়ে দিয়েছে তবে তার মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে।”
গত ১৮ এপ্রিল ইফতারের টেবিল বসানো নিয়ে নিউ মার্কেটের দুই দোকানের কর্মীদের বচসার পর এক পক্ষ ঢাকা কলেজ ছাত্রাবাস থেকে ছাত্রলীগের কয়েক কর্মীকে ডেকে আনে। তারা গিয়ে মারধরের শিকার হওয়ার পর ছাত্রাবাসে ফিরে আরও শিক্ষার্থীদের নিয়ে সোমবার মধ্যরাতে নিউ মার্কেটে হামলা চালাতে গেলে বাঁধে সংঘর্ষ।
পরদিন দিনভর চলা এই সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হন। তাদের মধ্যে এলিফ্যান্ট রোডের একটি কম্পিউটার এক্সেসরিজের দোকানের ডেলিভারিম্যান নাহিদকে কুপিয়ে জখম করা হয়। আর ইটের আঘাতে আহত হন মোরসালিন নামে এক দোকানকর্মী। পরে হাসপাতালে মারা যান তারা দুজন। দুজনের মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে দুটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। এছাড়া সংঘর্ষ ও বোমাবাজির ঘটনায় আদালা দুটি মামলা করেছে পুলিশ। এর মধ্যে হত্যা মামলা দুটির তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ, বাকি দুই মামলায় থানা পুলিশ তদন্ত করছে।
ভিডিও ফুটেজ দেখে চিহ্নিতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা : রাজধানীর নিউমার্কেটে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের সংঘর্ষের ঘটনায় ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে যারা চিহ্নিত হবে, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা নিজস্ব গতিতে চলবে। গতকাল সোমবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে তেজগাঁও সরকারি বিজ্ঞান কলেজে ঈদবস্ত্র বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন। মামলার অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন এখানে দুটি হত্যা কিংবা এক্সিডেন্ট যেটাই বলেন, দুটো ঘটনা ঘটেছে। যা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ঘটেছে। মৃত্যু কারও জন্য কাম্য নয়, সে যেই হোক। আমরা দেখেছি একটা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত। এই সূত্রপাত থেকে বৃহদাকার একটা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। এখানে ছাত্র, ব্যবসায়ী, ছোট ছোট খুদে দোকানদার- তারা এই যুদ্ধে লিপ্ত হন। অন্যদের পাশাপাশি সাংবাদিকরাও আহত হয়েছেন। পরে আপনারা দেখেছেন, আমাদের পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় হতাহত হয়েছে যথেষ্ট। আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, নিউমার্কেটের ঘটনায় দুটি হত্যা মামলা হয়েছে, মারপিটের মামলা ও ভাঙচুরের মামলা হয়েছে। একটা অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করা হয়েছে, সেটারও মামলা হয়েছে। মামলা মামলার গতিতে চলবে। যারা শনাক্ত হবে, যারা চিহ্নিত হবে, ভিডিও ফুটেজ দ্বারা চিহ্নিত হবে, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

নিউ মার্কেটে সংঘর্ষে নাহিদ হত্যায় ঢাকা কলেজের ৬ ছাত্র শনাক্ত

আপডেট সময় : ০১:৪৮:১০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ এপ্রিল ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউ মার্কেটের দোকান কর্মচারীদের সংঘর্ষের সময় ডেলিভারিম্যান নাহিদ মিয়াকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যায় জড়িত ছয় ছাত্রকে শনাক্ত করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) ফারুক হোসেন গতকাল সোমবার বলেন, “তারা সবাই ঢাকা কলেজের। ঘটনার সময় কয়েকজন হেলমেট পরা ছিল। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”
সংঘর্ষের ওই মামলা তদন্তের দায়িত্বে থাকা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) রোববার ঢাকা কলেজ ছাত্রাবাসে অভিযান চালায়। তবে সেখান থেকে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
যে ছয়জন প্রাথমিকভাবে শনাক্ত হয়েছে তারা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। তবে এই ছয়জনের নাম বা বিস্তারিত পরিচয় জানাননি উপকমিশনার ফারুক।
অবশ্য প্রত্যক্ষদর্শী এবং ভিডিও বিশ্লেষণ করে কয়েকজনের নাম ইতোমধ্যে সংবাদমাধ্যমের খবরে এসেছে। তারা সবাই ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।
ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই এখন। ২০১৬ সালে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হলও তারা আর পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি। কলেজের ছাত্রলীগ এখন কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। ঢাকা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মইনুল হোসেন সোমবার দুপুরে জানান, শনাক্ত হয়েছে এমন কোনো ছাত্রের ব্যাপারে তথ্য জানতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কোন সদস্য তার কাছে আসেননি, জানতেও চাননি। এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ মইনুল হোসেন বলেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কেউ কোন শিক্ষার্থী বিষয়ে জানতে চাইলে সহায়তা করা হবে।”
কোনো শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার হয়েছে- এমন তথ্যও নেই জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, “রোববার ছাত্রাবাসে গোয়েন্দা পুলিশ আলামত উদ্ধারের জন্য অভিযান চালায়। তারা একজনকে নিয়েছিল, পরে ছেড়ে দিয়েছে তবে তার মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে।”
গত ১৮ এপ্রিল ইফতারের টেবিল বসানো নিয়ে নিউ মার্কেটের দুই দোকানের কর্মীদের বচসার পর এক পক্ষ ঢাকা কলেজ ছাত্রাবাস থেকে ছাত্রলীগের কয়েক কর্মীকে ডেকে আনে। তারা গিয়ে মারধরের শিকার হওয়ার পর ছাত্রাবাসে ফিরে আরও শিক্ষার্থীদের নিয়ে সোমবার মধ্যরাতে নিউ মার্কেটে হামলা চালাতে গেলে বাঁধে সংঘর্ষ।
পরদিন দিনভর চলা এই সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হন। তাদের মধ্যে এলিফ্যান্ট রোডের একটি কম্পিউটার এক্সেসরিজের দোকানের ডেলিভারিম্যান নাহিদকে কুপিয়ে জখম করা হয়। আর ইটের আঘাতে আহত হন মোরসালিন নামে এক দোকানকর্মী। পরে হাসপাতালে মারা যান তারা দুজন। দুজনের মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে দুটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। এছাড়া সংঘর্ষ ও বোমাবাজির ঘটনায় আদালা দুটি মামলা করেছে পুলিশ। এর মধ্যে হত্যা মামলা দুটির তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ, বাকি দুই মামলায় থানা পুলিশ তদন্ত করছে।
ভিডিও ফুটেজ দেখে চিহ্নিতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা : রাজধানীর নিউমার্কেটে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের সংঘর্ষের ঘটনায় ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে যারা চিহ্নিত হবে, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা নিজস্ব গতিতে চলবে। গতকাল সোমবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে তেজগাঁও সরকারি বিজ্ঞান কলেজে ঈদবস্ত্র বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন। মামলার অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন এখানে দুটি হত্যা কিংবা এক্সিডেন্ট যেটাই বলেন, দুটো ঘটনা ঘটেছে। যা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ঘটেছে। মৃত্যু কারও জন্য কাম্য নয়, সে যেই হোক। আমরা দেখেছি একটা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত। এই সূত্রপাত থেকে বৃহদাকার একটা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। এখানে ছাত্র, ব্যবসায়ী, ছোট ছোট খুদে দোকানদার- তারা এই যুদ্ধে লিপ্ত হন। অন্যদের পাশাপাশি সাংবাদিকরাও আহত হয়েছেন। পরে আপনারা দেখেছেন, আমাদের পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় হতাহত হয়েছে যথেষ্ট। আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, নিউমার্কেটের ঘটনায় দুটি হত্যা মামলা হয়েছে, মারপিটের মামলা ও ভাঙচুরের মামলা হয়েছে। একটা অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করা হয়েছে, সেটারও মামলা হয়েছে। মামলা মামলার গতিতে চলবে। যারা শনাক্ত হবে, যারা চিহ্নিত হবে, ভিডিও ফুটেজ দ্বারা চিহ্নিত হবে, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।