নড়াইল সংবাদদাতা : মধুমতি নদীর অব্যাহত ভাঙনে নিঃস্ব হচ্ছেন নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার তিনটি গ্রামের মানুষ। এক সময় উপজেলার ঐতিহ্যবাহী জনপদ ছিল আমডাঙ্গা, আস্তাইল ও চরআড়িয়ারা গ্রাম। গত তিন দশকে এসব গ্রামের প্রায় ৯৫ ভাগ পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। জানা গেছে, প্রায় ৯৫ ভাগ পরিবারের মধ্যে অনেক পরিবার তিন থেকে সাতবার ভাঙনের কবলে পড়েছেন। অনেকে অন্য এলাকায় বসতি গড়েছেন। অসচ্ছলতার কারণে যারা শহরে বা অন্য কোথাও যেতে পারেননি, তারা একবার এ পাড়ে, আরেকবার অন্যপাড়ে বসতি গড়ছেন। কিন্তু এ ভাঙন প্রতিরোধে নেওয়া হয়নি স্থায়ী কোনো পদক্ষেপ। ফলে এ তিনটি গ্রামে শুধু বসতবাড়ি নয়, নদী ভাঙনের কবলে পড়ছে ফসলি জমি, গাছপালা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পাকা সড়ক, মসজিদসহ নানা স্থাপনা। এতে নিঃস্ব হচ্ছেন গ্রামের মানুষ। বিলীন হচ্ছে তাদের জনপদ। স্থানীয়রা জানান, চলতি বর্ষায় মধুমতী নদীতে বিলীন হয়েছে তিন গ্রামের অন্তত ৮৫টি বসতবাড়ি। ভাঙনের মুখে রয়েছে আরও ২০০ বসতবাড়ি। অপরদিকে, অব্যাহত ভাঙন থেকে রক্ষা পাচ্ছে না গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। ইতোমধ্যে চরআড়িয়ারা ও আমডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তিনবার, আমডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয় দু’বার, আস্তাইল ও আস্তাইল-আমডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় একবার ভাঙনের কবলে পড়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, ভাঙনের কবলে পড়ে আমডাঙ্গা গ্রামে সৃষ্টি হয়েছে তিনটি জনপদ। নদীর লোহাগড়া পাড়ে বসতি গড়েছেন অনেকে। আবার অনেকে থাকছেন নদীর ওপাড়ে। সে অংশের নাম এখন পারআমডাঙ্গা। আরেকটি অংশ বসতি গড়েছেন আস্তাইল-আমডাঙ্গায়। এছাড়া আস্তাইল গ্রামের অধিকাংশ পরিবার নদীর ওপাড়ে বসতি গড়েছেন। এ অংশের নাম হয়েছে পারআস্তাইল। চরআড়িয়ারা গ্রামের অধিকাংশ পরিবার আমডাঙ্গা এলাকায় বসতবাড়ি করেছেন। স্থানীয়রা জানান, গত দুই মাস ধরে এসব এলাকায় ভাঙন অব্যাহত আছে। গত ১৫-২০ দিনে তা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। পারআমডাঙ্গায় চলতি বর্ষায় বাবলু শেখ, মোকাম শেখ, রবিউল শেখ, হেমায়েত শেখ, সুনু মোল¬া, হিরু শেখ, কামরুল খাঁ, রাজ্জাক খাঁ, রহমত খাঁ, সিদ্দিক মোল¬াসহ অন্তত ৫৫ জনের পরিবার বসতবাড়ি হারিয়েছেন। আস্তাইল গ্রামে ইখলাছ মোল¬া, মাসুদ মোল¬া, নাজির মোল¬া, সনেট মোল¬া, বক্কর মোল¬া, আকব্বর মোল¬া, ইব্রাহিম মোল¬াসহ অন্তত ২০ জনের পরিবার এবং চরআড়িয়ারা গ্রামে ফেলু শেখ, আলী শেখ, তাজ শেখ, নিরু শেখ, এখলাছ শেখ, ইব্রাহিম শেখ, কামরুল শেখ, মিজান শেখ, ফরিদ শেখ ও আলীনূর শেখসহ অন্তত ১৫ জনের পরিবার বসতবাড়ি হারিয়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নড়াইলের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী স্বপন কুমার ঘোষ বলেন, ওই অংশে বড় এলাকা ভাঙনের শিকার। ভাঙনরোধে এখানে স্থায়ী ব্যবস্থা দরকার। এ জন্য ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) তৈরি করে পাঠানো হয়েছে।