ঢাকা ০৫:৩৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নার্সদের চার ঘণ্টা কর্মবিরতিতে রোগীদের ভোগান্তি

  • আপডেট সময় : ০৮:০২:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০২৪
  • ৮৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : এক দফা দাবিতে সারা দেশে সব সরকারি হাসপাতালে নার্সদের চার ঘণ্টা কর্মবিরতিতে দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা। নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল থেকে ক্যাডার কর্মকর্তাদের প্রত্যাহারের দাবিতে মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এই কর্মবিরতি চলে। তবে জরুরি বিভাগ, ডায়ালাইসিস, জরুরি অস্ত্রোপচার, আইসিইউ, পিআইসিইউ, এনআইসিইউ এ কর্মসূচির বাইরে রাখার কথা বলা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসকদের পরামর্শ ও নির্দেশনা অনুযায়ী রোগীদের ইনজেকশন দেওয়া, ওষুধ খাওয়ানো, শরীরের তাপমাত্রা মাপা, ক্ষতস্থানে ড্রেসিং করাসহ রোগী ব্যবস্থাপনার কাজগুলো নার্সরাই করেন। তাদের কর্মবিরতির সময়টায় সেবা না পেয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয় হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের। মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সকালে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) গিয়ে দেখা যায়, কর্মবিরতি পালনের অংশ হিসেবে ব্যানার নিয়ে হাসপাতাল চত্বরে জড়ো হয়েছেন নার্সরা। দাবি আদায়ের জন্য তারা নানা ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন। হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসা রোগীদের সেবাদান ওই সময় বন্ধ ছিল। ওয়ার্ডে নতুন রোগী ভর্তির কাজও ছিল আটকে। নিটোরের বহির্বিভাগে প্রতিদিন এক হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা সেবা এবং ফলোআপে আসেন। রোগীদের একটি বড় অংশের প্লাস্টার কাটা, নতুন করে প্লাস্টার করানো, ড্রেসিংয়ের প্রয়োজন পড়ে। কর্মবিরতি চলায় মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সকাল থেকে হাসপাতালের বহির্বিভাগ-১ এর প্লাস্টার রুম বন্ধ রাখা হয়। ওই কক্ষের সামনে তখন অপেক্ষায় ছিলেন অনেকেই। ঢাকার তেজকুনিপাড়া থেকে আসা সুমন কর্মকার নামের একজন বলেন, কেটে যাওয়া হাত দেখাতে এসেছিলেন তিনি। তবে প্লাস্টার রুম বন্ধ থাকায় তা পারছেন না। এই হাসপাতালে ভেঙে যাওয়া পায়ের চিকিৎসা করিয়েছেন আশুলিয়ার শফিকুল ইসলাম। চিকিৎসক তাকে মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) ফলোআপে আসতে বলেছিলেন। সকালে আসার পর পায়ের প্লাস্টার খুলে চিকিৎসককে দেখানোর কথা। কিন্তু প্লাস্টার রুম বন্ধ থাকায় তা আর খুলতে পারছেন না, ডাক্তারও তাকে দেখছে না। তার ভাই তার পায়ের প্লাস্টার খোলার চেষ্টা করছিলেন। শফিকুল বলেন, “আমরা এত দূর থেকে আসছি, ডাক্তার কয় প্লাস্টার না খুললে দেখবে না। এইদিকে নার্সরা নাই, তাই প্লাস্টারও খুলতে পারছি না।”
গাজীপুরের চেরাগ আলী এলাকা থেকে আসা হাসিনা খাতুন নামের এক নারী জানালেন, সকাল সাড়ে ৮টায় তিনি হাসপাতালে এসেছেন। ডাক্তার তার হাতের প্লাস্টার নতুন করে দিতে বলেছেন। কিন্তু নার্সরা না থাকায় সেটা হচ্ছে না। “এখানে একজন আছে। সে বলল একটার পরে আসতে। এজন্য দাঁড়ায় আছি,” বলেন এই নারী। হাসপাতালের ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, সেখানে দুজন করে নার্স দায়িত্ব পালন করছেন। নিটোরের তিন তলায় ইএফ ওয়ার্ডে মো. বাদল মিয়া নামে একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স বলেন, “আমাদের এখানে অনেক জরুরি রোগী আছেন। হঠাৎ কারো জরুরি প্রয়োজন হতে পারে। এজন্য আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডে দুজন করে ডিউটি করছি। অন্য সময় এখানে ৮-১০ জন থাকেন। আমরা ওষুধ রেডি করে রেখেছি। কর্মবিরতি শেষ হলে দিয়ে দেব।”
ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও সকাল থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন নার্সরা। বেলা সাড়ে ১১টায় ওই হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান ভবনের সামনে মিছিল করছেন নার্সরা। ওই সময় হাসপাতালের কোনো ওয়ার্ডে নার্সরা ছিলেন না। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, ডায়ালাইসিস, ইমার্জেন্সি অস্ত্রোপচার, আইসিইউ, পিআইসিইউ, এনআইসিইউ এই কর্মসূচির বাইরে থাকার কথা। তবে ওই মিছিলে কয়েকজন নার্সকে দেখা গেছে অস্ত্রোপচার কক্ষের পোশাক পরেই কর্মসূচিতে চলে এসেছেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে সব সময় একসঙ্গে অন্তত ১০ জন নার্স থাকেন। তবে মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) বেলা পৌনে ১২টায় সেখানে ৩ জন নার্সকে দেখা যায়, বাকিরা ছিলেন মিছিলে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স বলেন, “আমরা কর্মবিরতি পালন করছি। এ সময় যদি সার্ভিস দিই তাহলে তো আর হল না। আমাদের দাবির গুরুত্ব বোঝানো যাবে না। এজন্য তিনজন ছাড়া বাকিরা নাই, আমরাও খুব গুরুত্বপূর্ণ না হলে সেবা দিচ্ছি না।” হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, নার্সরা না থাকায় স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সকালে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে তাশরিফ নামের তিন মাস বয়সী এক শিশুকে ৩১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি দেওয়া হয়। নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুটিকে নিয়ে তার অভিভাবকরা সকাল সাড়ে ৯টায় ওয়ার্ডে যান। কিন্তু নার্স না থাকায় শিশুটির ভর্তির কাজ শেষ করে বেডে দেওয়া যায়নি বেলা সাড়ে ১২টাতেও। ওই শিশুর মা তানিয়া বলেন, “একটার পরে বেডে দিবে। এরমধ্যে তার একটা পরীক্ষা করিয়ে রাখতে হবে।”
কর্মবিরতির কারণে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগ এবং ইনডোরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) নার্সরা কেউ ছিলেন না। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে নার্সদের কেউ নেই। টেবিলে লেখা আছে ‘কর্মবিরতি’। এ সময় হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের সামনে কর্মসূচি পালন করছিলেন নার্সরা। হাসপাতালের ১১২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি সেলিম হায়দার নামের একজন রোগী বলেন, “পিত্তথলির পাথর অপারেশন করতে এসেছি। সকাল ৭টার আগে নার্স এসে দেখে ওষুধ দিয়ে গেছে। শিফট চেঞ্জ হওয়ার পর এখন পর্যন্ত কোনো নার্স আর আসেনি।”
রোগীদের ভোগান্তির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি সংস্কার পরিষদের আহ্বায়ক ড. মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, “রোগীদের সাময়িক ভোগান্তি হচ্ছে আমরা বুঝতে পারছি। কিন্তু দাবি আদায়ে আমাদের আর কোনো পথ নেই। “জরুরি বিভাগসহ কিছু জায়গা কর্মবিরতির বাইরে থাকবে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারপরও কেউ সেখানে না থাকলে আমরা খোঁজ নিচ্ছি, এমন যেন না করে।” নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পরিচালক এবং কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ও রেজিস্ট্রার পদে যোগ্য ও অভিজ্ঞ নার্সদের পদায়নের দাবিতে গত ৯ সেপ্টেম্বর থেকে কর্মসূচি পালন করে আসছেন নার্সরা। ৩০ সেপ্টেম্বর এবং ১ অক্টোবর সারাদেশে ৩ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেন তারা। পরে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে ১ অক্টোবর সন্ধ্যায় কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। কিন্তু ৬ অক্টোবর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সাময়িকভাবে দুজন নার্সিং কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে পরিচালক পদে পূর্ণ দায়িত্ব না দিয়ে নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত দায়িত্বে পদায়ন করে। এ কারণে ফের কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে বলে জানান নার্সিং ও মিডওয়াইফারি সংস্কার পরিষদের আহ্বায়ক মো. শরিফুল ইসলাম।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নার্সদের চার ঘণ্টা কর্মবিরতিতে রোগীদের ভোগান্তি

আপডেট সময় : ০৮:০২:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : এক দফা দাবিতে সারা দেশে সব সরকারি হাসপাতালে নার্সদের চার ঘণ্টা কর্মবিরতিতে দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা। নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল থেকে ক্যাডার কর্মকর্তাদের প্রত্যাহারের দাবিতে মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এই কর্মবিরতি চলে। তবে জরুরি বিভাগ, ডায়ালাইসিস, জরুরি অস্ত্রোপচার, আইসিইউ, পিআইসিইউ, এনআইসিইউ এ কর্মসূচির বাইরে রাখার কথা বলা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসকদের পরামর্শ ও নির্দেশনা অনুযায়ী রোগীদের ইনজেকশন দেওয়া, ওষুধ খাওয়ানো, শরীরের তাপমাত্রা মাপা, ক্ষতস্থানে ড্রেসিং করাসহ রোগী ব্যবস্থাপনার কাজগুলো নার্সরাই করেন। তাদের কর্মবিরতির সময়টায় সেবা না পেয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয় হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের। মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সকালে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) গিয়ে দেখা যায়, কর্মবিরতি পালনের অংশ হিসেবে ব্যানার নিয়ে হাসপাতাল চত্বরে জড়ো হয়েছেন নার্সরা। দাবি আদায়ের জন্য তারা নানা ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন। হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসা রোগীদের সেবাদান ওই সময় বন্ধ ছিল। ওয়ার্ডে নতুন রোগী ভর্তির কাজও ছিল আটকে। নিটোরের বহির্বিভাগে প্রতিদিন এক হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা সেবা এবং ফলোআপে আসেন। রোগীদের একটি বড় অংশের প্লাস্টার কাটা, নতুন করে প্লাস্টার করানো, ড্রেসিংয়ের প্রয়োজন পড়ে। কর্মবিরতি চলায় মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সকাল থেকে হাসপাতালের বহির্বিভাগ-১ এর প্লাস্টার রুম বন্ধ রাখা হয়। ওই কক্ষের সামনে তখন অপেক্ষায় ছিলেন অনেকেই। ঢাকার তেজকুনিপাড়া থেকে আসা সুমন কর্মকার নামের একজন বলেন, কেটে যাওয়া হাত দেখাতে এসেছিলেন তিনি। তবে প্লাস্টার রুম বন্ধ থাকায় তা পারছেন না। এই হাসপাতালে ভেঙে যাওয়া পায়ের চিকিৎসা করিয়েছেন আশুলিয়ার শফিকুল ইসলাম। চিকিৎসক তাকে মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) ফলোআপে আসতে বলেছিলেন। সকালে আসার পর পায়ের প্লাস্টার খুলে চিকিৎসককে দেখানোর কথা। কিন্তু প্লাস্টার রুম বন্ধ থাকায় তা আর খুলতে পারছেন না, ডাক্তারও তাকে দেখছে না। তার ভাই তার পায়ের প্লাস্টার খোলার চেষ্টা করছিলেন। শফিকুল বলেন, “আমরা এত দূর থেকে আসছি, ডাক্তার কয় প্লাস্টার না খুললে দেখবে না। এইদিকে নার্সরা নাই, তাই প্লাস্টারও খুলতে পারছি না।”
গাজীপুরের চেরাগ আলী এলাকা থেকে আসা হাসিনা খাতুন নামের এক নারী জানালেন, সকাল সাড়ে ৮টায় তিনি হাসপাতালে এসেছেন। ডাক্তার তার হাতের প্লাস্টার নতুন করে দিতে বলেছেন। কিন্তু নার্সরা না থাকায় সেটা হচ্ছে না। “এখানে একজন আছে। সে বলল একটার পরে আসতে। এজন্য দাঁড়ায় আছি,” বলেন এই নারী। হাসপাতালের ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, সেখানে দুজন করে নার্স দায়িত্ব পালন করছেন। নিটোরের তিন তলায় ইএফ ওয়ার্ডে মো. বাদল মিয়া নামে একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স বলেন, “আমাদের এখানে অনেক জরুরি রোগী আছেন। হঠাৎ কারো জরুরি প্রয়োজন হতে পারে। এজন্য আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডে দুজন করে ডিউটি করছি। অন্য সময় এখানে ৮-১০ জন থাকেন। আমরা ওষুধ রেডি করে রেখেছি। কর্মবিরতি শেষ হলে দিয়ে দেব।”
ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও সকাল থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন নার্সরা। বেলা সাড়ে ১১টায় ওই হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান ভবনের সামনে মিছিল করছেন নার্সরা। ওই সময় হাসপাতালের কোনো ওয়ার্ডে নার্সরা ছিলেন না। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, ডায়ালাইসিস, ইমার্জেন্সি অস্ত্রোপচার, আইসিইউ, পিআইসিইউ, এনআইসিইউ এই কর্মসূচির বাইরে থাকার কথা। তবে ওই মিছিলে কয়েকজন নার্সকে দেখা গেছে অস্ত্রোপচার কক্ষের পোশাক পরেই কর্মসূচিতে চলে এসেছেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে সব সময় একসঙ্গে অন্তত ১০ জন নার্স থাকেন। তবে মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) বেলা পৌনে ১২টায় সেখানে ৩ জন নার্সকে দেখা যায়, বাকিরা ছিলেন মিছিলে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স বলেন, “আমরা কর্মবিরতি পালন করছি। এ সময় যদি সার্ভিস দিই তাহলে তো আর হল না। আমাদের দাবির গুরুত্ব বোঝানো যাবে না। এজন্য তিনজন ছাড়া বাকিরা নাই, আমরাও খুব গুরুত্বপূর্ণ না হলে সেবা দিচ্ছি না।” হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, নার্সরা না থাকায় স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সকালে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে তাশরিফ নামের তিন মাস বয়সী এক শিশুকে ৩১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি দেওয়া হয়। নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুটিকে নিয়ে তার অভিভাবকরা সকাল সাড়ে ৯টায় ওয়ার্ডে যান। কিন্তু নার্স না থাকায় শিশুটির ভর্তির কাজ শেষ করে বেডে দেওয়া যায়নি বেলা সাড়ে ১২টাতেও। ওই শিশুর মা তানিয়া বলেন, “একটার পরে বেডে দিবে। এরমধ্যে তার একটা পরীক্ষা করিয়ে রাখতে হবে।”
কর্মবিরতির কারণে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগ এবং ইনডোরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) নার্সরা কেউ ছিলেন না। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে নার্সদের কেউ নেই। টেবিলে লেখা আছে ‘কর্মবিরতি’। এ সময় হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের সামনে কর্মসূচি পালন করছিলেন নার্সরা। হাসপাতালের ১১২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি সেলিম হায়দার নামের একজন রোগী বলেন, “পিত্তথলির পাথর অপারেশন করতে এসেছি। সকাল ৭টার আগে নার্স এসে দেখে ওষুধ দিয়ে গেছে। শিফট চেঞ্জ হওয়ার পর এখন পর্যন্ত কোনো নার্স আর আসেনি।”
রোগীদের ভোগান্তির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি সংস্কার পরিষদের আহ্বায়ক ড. মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, “রোগীদের সাময়িক ভোগান্তি হচ্ছে আমরা বুঝতে পারছি। কিন্তু দাবি আদায়ে আমাদের আর কোনো পথ নেই। “জরুরি বিভাগসহ কিছু জায়গা কর্মবিরতির বাইরে থাকবে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারপরও কেউ সেখানে না থাকলে আমরা খোঁজ নিচ্ছি, এমন যেন না করে।” নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পরিচালক এবং কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ও রেজিস্ট্রার পদে যোগ্য ও অভিজ্ঞ নার্সদের পদায়নের দাবিতে গত ৯ সেপ্টেম্বর থেকে কর্মসূচি পালন করে আসছেন নার্সরা। ৩০ সেপ্টেম্বর এবং ১ অক্টোবর সারাদেশে ৩ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেন তারা। পরে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে ১ অক্টোবর সন্ধ্যায় কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। কিন্তু ৬ অক্টোবর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সাময়িকভাবে দুজন নার্সিং কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে পরিচালক পদে পূর্ণ দায়িত্ব না দিয়ে নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত দায়িত্বে পদায়ন করে। এ কারণে ফের কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে বলে জানান নার্সিং ও মিডওয়াইফারি সংস্কার পরিষদের আহ্বায়ক মো. শরিফুল ইসলাম।