ঢাকা ১২:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫

নারী কর্মীদের বিদেশে কর্মসংস্থানে ছন্দপতন

  • আপডেট সময় : ০৬:২০:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫
  • ২২ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ সংবাদদাতা : করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে নারী কর্মীদের বিদেশে যাওয়া কমে যায়। তারপর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসলেও ২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোটা সংস্কার আন্দোলন ও শেখ হাসিনার পতন আন্দোলনকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতাকে কেন্দ্র করে দ্বিতীয় বারের মতো নারী কর্মীদের প্রবাসে যাওয়ার হার কমলো। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে ৬১ হাজার ১৫৮ জন নারী কর্মী বিদেশে চাকরি নিয়ে দেশ ছেড়েছেন। যা ২০২৩ সালের চেয়ে ১৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ কম। আগের বছর বিদেশে গিয়েছেন ৭৬ হাজার ১০৮ জন নারী কর্মী।

২০২২ সালে বিদেশে গিয়েছিলেন এক লাখ পাঁচ হাজার ৪৬৬ নারী কর্মী। বাংলাদেশের নারী শ্রমিকদের শ্রম বাজার কার্যত মধ্যপ্রাচ্য নির্ভর। আর এর অধিকাংশই গৃহকর্মী ও গার্মেন্টস শ্রমিক। ২০২৪ সালের জুলাই থেকে দেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ইন্টারনেট বন্ধ ও ছুটি ঘোষণার মতো কিছু পদক্ষেপ নেয়। আন্দোলন চরম আকার ধারণ করলে বৈদেশিক যোগাযোগে বড় ধরনের ছেদ পড়ে। এ সময় চাকরি নিয়ে বিদেশে যাওয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেও অনেক নারী বিদেশে যেতে পারেননি। এর প্রভাব পড়ে বিদেশে চাকরি করতে যাওয়া নারীদের সংখ্যায়।

ফলে বছর শেষে কমে গেছে বিদেশে চাকরি করতে যাওয়া নারীর সংখ্যা। তবে শুধু দেশের পরিস্থিতির কারণে চাকরি নিয়ে বিদেশে যাওয়া কমেছে বলে মনে করেন না ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) শরিফুল হাসান। তিনি বলেন, যে সব নারী দেশের বাইরে গিয়েছেন তারা গৃহকর্মী হিসেবে গিয়েছেন এবং সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে গিয়েছেন। সেখানে নারীর নিরাপত্তা ও সামাজিক মর্যাদা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা আছে। এ সব কারণে গত কয়েক বছরে ধরে ধারাবাহিকভাবে নারী শ্রমিকের সংখ্যা কমছিল। এটাকে আমি অস্বাভাবিক মনে করি না। যে সব নারী শ্রমিকরা প্রবাসে যায় তারা তাদের আর্থিক বা সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা থেকে যাচ্ছে।

এখন বাংলাদেশের সব নারীরা তো আর যায় না। কয়েকটি জেলার নারীরা বিদেশে যায়। সামাজিক সংকটকে পুঁজি করে তাদের বিদেশে পাঠানো হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আর্থিক বা সামাজিক সংকটের কারণে নারী দেশের বাইরে গিয়েছে। এখন সারা দেশে এত সংকটে থাকা নারী পাওয়া কঠিন- যে বা যারা বিদেশে কাজের জন্য যাবে। তিনি বলেন, কত সংখ্যক নারী শ্রমিককে সৌদি আরবে বা মধ্যপ্রাচ্যের অন্যদেশে পাঠালাম, তার চেয়ে বড় বিষয় হলো যদি গার্মেন্টস শ্রমিক বা দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে পারি তাহলে সংখ্যায় কম গেলেও বেশি রেমিট্যান্স আনতে পারি। সুরক্ষাটাও ভালো থাকে এবং সেদিকেই দৃষ্টি দেওয়া উচিত।

তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের সব চেয়ে বড় শ্রম বাজার সৌদি আরবে ২০২৪ সালে নারী কর্মী যান ৪০ হাজার ৩১৫ জন; আগের বছরে ২০২৩ সালে গিয়েছিলেন ৫০ হাজার ২৫৪ জন। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান, বাহরাইন, লিবিয়া, যুক্তরাজ্য ও মরিশাসে চাকরি করতে যাওয়া নারীর সংখ্যাও কমেছে। দেশের দ্বিতীয় বড় শ্রমবাজার জর্ডান। দেশটিতে নারীরা যান গার্মেন্টস কারখানাতে চাকরি নিয়ে। ২০২৪ সালে জর্ডানে চাকরি করতে যাওয়া নারীর সংখ্যা বেড়েছে। এ বছর জর্ডানে যান ১৩ হাজার ৭৭২ জন নারী। আগের বছর ২০২৩ সালে গিয়েছিলেন সাত হাজার ৮৩৮ জন। এর আগে ২০২০ সালের মার্চ থেকে বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করলে বিদেশে চাকরি করতে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। বরং বিদেশে থেকে মানুষ দেশে ফিরে আসতে থাকে।

সেবছর মার্চের আগে মাত্র ২১ হাজার ৯৩৪ জন নারী বিদেশে যায়। তার আগে ২০১৯ সালে বিদেশে চাকরি করতে যায় এক লাখ চার হাজার ৭৮৬ জন নারী। করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালের দুই-তৃতীয়াংশজুড়ে নারী কর্মীদের বিদেশে যাওয়া বন্ধ থাকে। যার কারণে সেবছর নারী কর্মীদের বিদেশে যাওয়া ৮০ শতাংশ কমে যায়। চলতি শতকের শুরু থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারীরা চাকরি করতে বিদেশে যাওয়া শুরু হয়। ২০০৮ সাল থেকে এই সংখ্যা প্রতি বছরই ২০ হাজার অতিক্রম করে যায়। এরপর প্রতিবছর ধারাবাহিক ভাবে বাড়তে থাকে বিদেশে চাকরি করতে যাওয়া নারীর সংখ্যা। ২০১৪ সালে বিদেশে যান ৭৬ হাজার নারী। ২০১৭ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যক নারী বিদেশে যান, সংখ্যাটা এক লাখ ২১ হাজার ৯২৫ জন। এরপর নারীদের বিদেশে যাওয়া প্রতি বছরেই ওঠা-নামা করলেও ২০২০ ও ২০২৪ সালে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নারী কর্মীদের বিদেশে কর্মসংস্থানে ছন্দপতন

আপডেট সময় : ০৬:২০:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫

বিশেষ সংবাদদাতা : করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে নারী কর্মীদের বিদেশে যাওয়া কমে যায়। তারপর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসলেও ২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোটা সংস্কার আন্দোলন ও শেখ হাসিনার পতন আন্দোলনকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতাকে কেন্দ্র করে দ্বিতীয় বারের মতো নারী কর্মীদের প্রবাসে যাওয়ার হার কমলো। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে ৬১ হাজার ১৫৮ জন নারী কর্মী বিদেশে চাকরি নিয়ে দেশ ছেড়েছেন। যা ২০২৩ সালের চেয়ে ১৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ কম। আগের বছর বিদেশে গিয়েছেন ৭৬ হাজার ১০৮ জন নারী কর্মী।

২০২২ সালে বিদেশে গিয়েছিলেন এক লাখ পাঁচ হাজার ৪৬৬ নারী কর্মী। বাংলাদেশের নারী শ্রমিকদের শ্রম বাজার কার্যত মধ্যপ্রাচ্য নির্ভর। আর এর অধিকাংশই গৃহকর্মী ও গার্মেন্টস শ্রমিক। ২০২৪ সালের জুলাই থেকে দেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ইন্টারনেট বন্ধ ও ছুটি ঘোষণার মতো কিছু পদক্ষেপ নেয়। আন্দোলন চরম আকার ধারণ করলে বৈদেশিক যোগাযোগে বড় ধরনের ছেদ পড়ে। এ সময় চাকরি নিয়ে বিদেশে যাওয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেও অনেক নারী বিদেশে যেতে পারেননি। এর প্রভাব পড়ে বিদেশে চাকরি করতে যাওয়া নারীদের সংখ্যায়।

ফলে বছর শেষে কমে গেছে বিদেশে চাকরি করতে যাওয়া নারীর সংখ্যা। তবে শুধু দেশের পরিস্থিতির কারণে চাকরি নিয়ে বিদেশে যাওয়া কমেছে বলে মনে করেন না ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) শরিফুল হাসান। তিনি বলেন, যে সব নারী দেশের বাইরে গিয়েছেন তারা গৃহকর্মী হিসেবে গিয়েছেন এবং সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে গিয়েছেন। সেখানে নারীর নিরাপত্তা ও সামাজিক মর্যাদা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা আছে। এ সব কারণে গত কয়েক বছরে ধরে ধারাবাহিকভাবে নারী শ্রমিকের সংখ্যা কমছিল। এটাকে আমি অস্বাভাবিক মনে করি না। যে সব নারী শ্রমিকরা প্রবাসে যায় তারা তাদের আর্থিক বা সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা থেকে যাচ্ছে।

এখন বাংলাদেশের সব নারীরা তো আর যায় না। কয়েকটি জেলার নারীরা বিদেশে যায়। সামাজিক সংকটকে পুঁজি করে তাদের বিদেশে পাঠানো হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আর্থিক বা সামাজিক সংকটের কারণে নারী দেশের বাইরে গিয়েছে। এখন সারা দেশে এত সংকটে থাকা নারী পাওয়া কঠিন- যে বা যারা বিদেশে কাজের জন্য যাবে। তিনি বলেন, কত সংখ্যক নারী শ্রমিককে সৌদি আরবে বা মধ্যপ্রাচ্যের অন্যদেশে পাঠালাম, তার চেয়ে বড় বিষয় হলো যদি গার্মেন্টস শ্রমিক বা দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে পারি তাহলে সংখ্যায় কম গেলেও বেশি রেমিট্যান্স আনতে পারি। সুরক্ষাটাও ভালো থাকে এবং সেদিকেই দৃষ্টি দেওয়া উচিত।

তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের সব চেয়ে বড় শ্রম বাজার সৌদি আরবে ২০২৪ সালে নারী কর্মী যান ৪০ হাজার ৩১৫ জন; আগের বছরে ২০২৩ সালে গিয়েছিলেন ৫০ হাজার ২৫৪ জন। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান, বাহরাইন, লিবিয়া, যুক্তরাজ্য ও মরিশাসে চাকরি করতে যাওয়া নারীর সংখ্যাও কমেছে। দেশের দ্বিতীয় বড় শ্রমবাজার জর্ডান। দেশটিতে নারীরা যান গার্মেন্টস কারখানাতে চাকরি নিয়ে। ২০২৪ সালে জর্ডানে চাকরি করতে যাওয়া নারীর সংখ্যা বেড়েছে। এ বছর জর্ডানে যান ১৩ হাজার ৭৭২ জন নারী। আগের বছর ২০২৩ সালে গিয়েছিলেন সাত হাজার ৮৩৮ জন। এর আগে ২০২০ সালের মার্চ থেকে বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করলে বিদেশে চাকরি করতে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। বরং বিদেশে থেকে মানুষ দেশে ফিরে আসতে থাকে।

সেবছর মার্চের আগে মাত্র ২১ হাজার ৯৩৪ জন নারী বিদেশে যায়। তার আগে ২০১৯ সালে বিদেশে চাকরি করতে যায় এক লাখ চার হাজার ৭৮৬ জন নারী। করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালের দুই-তৃতীয়াংশজুড়ে নারী কর্মীদের বিদেশে যাওয়া বন্ধ থাকে। যার কারণে সেবছর নারী কর্মীদের বিদেশে যাওয়া ৮০ শতাংশ কমে যায়। চলতি শতকের শুরু থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারীরা চাকরি করতে বিদেশে যাওয়া শুরু হয়। ২০০৮ সাল থেকে এই সংখ্যা প্রতি বছরই ২০ হাজার অতিক্রম করে যায়। এরপর প্রতিবছর ধারাবাহিক ভাবে বাড়তে থাকে বিদেশে চাকরি করতে যাওয়া নারীর সংখ্যা। ২০১৪ সালে বিদেশে যান ৭৬ হাজার নারী। ২০১৭ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যক নারী বিদেশে যান, সংখ্যাটা এক লাখ ২১ হাজার ৯২৫ জন। এরপর নারীদের বিদেশে যাওয়া প্রতি বছরেই ওঠা-নামা করলেও ২০২০ ও ২০২৪ সালে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।