ঢাকা ০৯:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫

নারী কমিশনের কিছু সুপারিশ দ্রুত কার্যকরের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

  • আপডেট সময় : ০৭:১৪:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
  • ৬ বার পড়া হয়েছে

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় শনিবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্যদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন -ছবি: পিআইডি

নিজস্ব প্রতিবেদক: নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের যেসব সুপারিশ ‘তাৎক্ষণিকভাবে’ বাস্তবায়ন সম্ভব, সেগুলো দ্রুত কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কমিশনের সদস্যরা প্রতিবেদন হস্তান্তরের পর তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে এ নির্দেশ দেন। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান বলেন, যেই সুপারিশগুলো দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য সেটা যেন আমাদের মাধ্যমে হয়ে যায়। আমরা যেন এই কাজের মাধ্যমে বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারি। পৃথিবীর মেয়েরা এটার দিকে তাকিয়ে আছে। তারা এটা নিয়ে পর্যালোচনা করবে। অনুপ্রাণিত হবে। অন্য দেশের নারীরাও এটা নিয়ে সিরিয়াস।

তিনি বলেন, এটা শুধু নারীদের বিষয় নয় সার্বিক বিষয়। এই প্রতিবেদন ছাপিয়ে বিলি করা হবে। এটা পাঠ্যবইয়ের মত বই আকারে ছাপা হবে। দলিল হিসেবে অফিসে রেখে দিলে হবে না, মানুষের কাছে উন্মুক্ত করে দিতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কমিশনের সুপারিশগুলো জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছেও উপস্থাপন করা হবে।

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভিন হক বলেন, জুলাইয়ে যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের স্মরণার্থে এমন কিছু করতে চেয়েছি, যা মানুষের জন্য কল্যাণকর হবে, সমাজের জন্য কল্যাণকর হবে।

তিনি বলেন, কমিশনের সুপারিশগুলো তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে: কিছু সুপারিশ বর্তমান সরকারই বাস্তবায়ন করতে পারবে, কিছু থাকবে পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের জন্য, আর কিছু অংশে তুলে ধরা হয়েছে নারী আন্দোলনের স্বপ্ন ও প্রত্যাশা।

বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে কমিশনের সদস্যরা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে প্রতিবেদনটি তুলে দেন। কমিশন মোটা দাগে সংবিধান, আইন ও নারীর অধিকার- এ তিন বিষয়ে সুপারিশ করেছে, যেখানে সমতা ও সুরক্ষার ভিত্তি জোরালো করার কথা বলা হয়েছে। নারীর অগ্রগতির জন্য আছে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও জাতীয় সংস্থাগুলোর দক্ষতা বাড়ানোর সুপারিশও।

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন মোট ১৫টি বিষয়ে সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে।

প্রতিবেদন হস্তান্তর অনুষ্ঠানে শিরীন হকের নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক ইন্সটিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের সিনিয়র ফেলো মাহীন সুলতান, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ফৌজিয়া করিম ফিরোজ, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি কল্পনা আক্তার, নারী স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ হালিদা হানুম আক্তার, বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরুপা দেওয়ান, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের সাবেক সিনিয়র সামাজিক উন্নয়ন উপদেষ্টা ফেরদৌসী সুলতানা ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নিশিতা জামান নিহা।

গত বছর ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশের উত্তরণের লক্ষ্যের কথা জানায়। সে লক্ষ্য অর্জনে রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাত সংস্কারের উদ্যোগ নেয় সরকার, যার ধারাবাহিকতায় গত অক্টোবরে প্রথম ধাপে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। এরপর নভেম্বরে দ্বিতীয় ধাপে আরও পাঁচ সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়।

নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার গত ১৮ নভেম্বর ‘নারীপক্ষ’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরীন পারভীন হককে প্রধান করে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন করে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ কমিশন নিয়মিত বৈঠক করে ৪৩টি। পাশাপাশি নারী অধিকারকর্মী, উন্নয়ন সংস্থা, শ্রমিক সংগঠন, পাহাড় ও সমতলের আদিবাসী এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে ৩৯টি পরামর্শ সভা হয়। অন্যান্য সংস্কার কমিশনের সঙ্গে ৯টি যৌথ সভাও হয়েছে তাদের। ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খুলনা, শ্রীমঙ্গল, রংপুর ও ময়মনসিংহে এসব সভা হয়। কমিশন বিভিন্ন বিষয়ে ‘অভিজ্ঞ ব্যক্তি’ ও সংগঠনের পরামর্শও নিয়েছে। সংস্কার উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় প্রথম ধাপের ছয় কমিশনের পাঁচটির গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ নিয়ে ঐকমত্য গঠনে ২০ মার্চ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। দ্বিতীয় ধাপে গঠিত কমিশনগুলোর মধ্যে ‘স্থানীয় সরকার সংস্কার’ কমিশনের প্রাথমিক সুপারিশের প্রতিবেদন জমা পড়ে গত ২২ ফেব্রুয়ারি। এরপর ২২ মার্চ জমা দেওয়া হয় গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন। নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা পড়ায় বাকি থাকল স্বাস্থ্য ও শ্রম।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

নারী কমিশনের কিছু সুপারিশ দ্রুত কার্যকরের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

আপডেট সময় : ০৭:১৪:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের যেসব সুপারিশ ‘তাৎক্ষণিকভাবে’ বাস্তবায়ন সম্ভব, সেগুলো দ্রুত কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কমিশনের সদস্যরা প্রতিবেদন হস্তান্তরের পর তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে এ নির্দেশ দেন। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান বলেন, যেই সুপারিশগুলো দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য সেটা যেন আমাদের মাধ্যমে হয়ে যায়। আমরা যেন এই কাজের মাধ্যমে বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারি। পৃথিবীর মেয়েরা এটার দিকে তাকিয়ে আছে। তারা এটা নিয়ে পর্যালোচনা করবে। অনুপ্রাণিত হবে। অন্য দেশের নারীরাও এটা নিয়ে সিরিয়াস।

তিনি বলেন, এটা শুধু নারীদের বিষয় নয় সার্বিক বিষয়। এই প্রতিবেদন ছাপিয়ে বিলি করা হবে। এটা পাঠ্যবইয়ের মত বই আকারে ছাপা হবে। দলিল হিসেবে অফিসে রেখে দিলে হবে না, মানুষের কাছে উন্মুক্ত করে দিতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কমিশনের সুপারিশগুলো জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছেও উপস্থাপন করা হবে।

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভিন হক বলেন, জুলাইয়ে যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের স্মরণার্থে এমন কিছু করতে চেয়েছি, যা মানুষের জন্য কল্যাণকর হবে, সমাজের জন্য কল্যাণকর হবে।

তিনি বলেন, কমিশনের সুপারিশগুলো তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে: কিছু সুপারিশ বর্তমান সরকারই বাস্তবায়ন করতে পারবে, কিছু থাকবে পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের জন্য, আর কিছু অংশে তুলে ধরা হয়েছে নারী আন্দোলনের স্বপ্ন ও প্রত্যাশা।

বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে কমিশনের সদস্যরা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে প্রতিবেদনটি তুলে দেন। কমিশন মোটা দাগে সংবিধান, আইন ও নারীর অধিকার- এ তিন বিষয়ে সুপারিশ করেছে, যেখানে সমতা ও সুরক্ষার ভিত্তি জোরালো করার কথা বলা হয়েছে। নারীর অগ্রগতির জন্য আছে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও জাতীয় সংস্থাগুলোর দক্ষতা বাড়ানোর সুপারিশও।

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন মোট ১৫টি বিষয়ে সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে।

প্রতিবেদন হস্তান্তর অনুষ্ঠানে শিরীন হকের নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক ইন্সটিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের সিনিয়র ফেলো মাহীন সুলতান, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ফৌজিয়া করিম ফিরোজ, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি কল্পনা আক্তার, নারী স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ হালিদা হানুম আক্তার, বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরুপা দেওয়ান, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের সাবেক সিনিয়র সামাজিক উন্নয়ন উপদেষ্টা ফেরদৌসী সুলতানা ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নিশিতা জামান নিহা।

গত বছর ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশের উত্তরণের লক্ষ্যের কথা জানায়। সে লক্ষ্য অর্জনে রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাত সংস্কারের উদ্যোগ নেয় সরকার, যার ধারাবাহিকতায় গত অক্টোবরে প্রথম ধাপে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। এরপর নভেম্বরে দ্বিতীয় ধাপে আরও পাঁচ সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়।

নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার গত ১৮ নভেম্বর ‘নারীপক্ষ’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরীন পারভীন হককে প্রধান করে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন করে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ কমিশন নিয়মিত বৈঠক করে ৪৩টি। পাশাপাশি নারী অধিকারকর্মী, উন্নয়ন সংস্থা, শ্রমিক সংগঠন, পাহাড় ও সমতলের আদিবাসী এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে ৩৯টি পরামর্শ সভা হয়। অন্যান্য সংস্কার কমিশনের সঙ্গে ৯টি যৌথ সভাও হয়েছে তাদের। ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খুলনা, শ্রীমঙ্গল, রংপুর ও ময়মনসিংহে এসব সভা হয়। কমিশন বিভিন্ন বিষয়ে ‘অভিজ্ঞ ব্যক্তি’ ও সংগঠনের পরামর্শও নিয়েছে। সংস্কার উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় প্রথম ধাপের ছয় কমিশনের পাঁচটির গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ নিয়ে ঐকমত্য গঠনে ২০ মার্চ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। দ্বিতীয় ধাপে গঠিত কমিশনগুলোর মধ্যে ‘স্থানীয় সরকার সংস্কার’ কমিশনের প্রাথমিক সুপারিশের প্রতিবেদন জমা পড়ে গত ২২ ফেব্রুয়ারি। এরপর ২২ মার্চ জমা দেওয়া হয় গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন। নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা পড়ায় বাকি থাকল স্বাস্থ্য ও শ্রম।