ঢাকা ০৫:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের বিবৃতি

নারীর স্বাধীন চলাফেরায় নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান

  • আপডেট সময় : ০৭:৫৭:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫
  • ১৬ বার পড়া হয়েছে

আইন ও সালিশ কেন্দ্র -ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটে যাত্রা বিরতি করা একটি যাত্রীবাহী লঞ্চে দুজন নারীকে প্রকাশ্যে নিষ্ঠুর মারধরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে ও নারীর স্বাধীন চলাফেরায় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

রোববার (১১ মে) আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, গত ৯ মে ঢাকা-লালমোহন রুটে চলাচলকারী একটি লঞ্চ প্রায় ৩০০ যাত্রী নিয়ে ঢাকায় ফিরছিল। লঞ্চটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় বেশ কয়েকটি কেবিনে ২০-২৫ জন কিশোর, যুবক ও নারী ছিলেন। তারা ঢাকা থেকে ওই লঞ্চের কেবিন ভাড়া করে সারাদিন পিকনিক করে ঢাকায় ফিরছিলেন। রাত ৮টার দিকে লঞ্চটি মুন্সীগঞ্জ ঘাটে নোঙর করে। এ সময় স্থানীয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কমিটির নেতৃস্থানীয় কর্মীসহ কিছু লোক লঞ্চে উঠে পিকনিকে আসা যাত্রীদের ওপর হামলা করে। এ সময় অন্তত ২ জন তরুণীকে নিষ্ঠুরভাবে পেটাতে থাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে লক্ষ্য করা যায়, মুন্সীগঞ্জ জেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরিচিত মুখ নেহাল আহমেদ জিহাদ লঞ্চের একজন নারী যাত্রীকে বেল্ট দিয়ে বেপরোয়া ভাবে পেটাচ্ছে। এ সময় ৫০-৬০ জন বিভিন্ন বয়সী পুরুষ সেই দৃশ্য তাদের মোবাইল ফোনে ধারণ করে উল্লাস করছে, পাশাপাশি বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র আরো বলেছে, বর্তমানে দেশে যে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিম-ল লক্ষ্য করা যাচ্ছে— সেখানে নারীর চলাফেরার অধিকার সংকুচিত হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। প্রকাশ্য শত শত মানুষের সম্মুখে মারধরের ঘটনা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। বাংলাদেশ দ-বিধির ৩২৩ ও ৩২৫ ধারায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, কোনো ব্যক্তিকে স্বেচ্ছায় আঘাত করা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সমাজে নারীর প্রতি সংবেদনশীলতা কোন পর্যায়ে এবং কারও কারও দৃষ্টিভঙ্গি কতটা নিষ্ঠুর, এই ঘটনা তার একটি নিকৃষ্ট উদাহরণ। প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো জায়গায় এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার হতে দেখা যাচ্ছে নারীকে। দেশের নারী সমাজ একটি অস্থিতিশীল ও ভয়ার্ত পরিবেশের মধ্যে দিয়ে দিন পার করছে। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা নেওয়ার সদিচ্ছার বিষয়টিতে গুরুত্বারোপ করতে হবে। কেননা, নারীর প্রতি সহিংসতা এবং ঘৃণা ছড়ানোর যে প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। নারীর স্বাধীনতা, নারীর পছন্দ করার বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার, চলাফেরার অধিকার সবই সাংবিধানিক অধিকার। এ অধিকারগুলো আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সনদে স্বীকৃত। যেখানে নারীর মর্যাদা, অধিকার ও নিরাপত্তা সর্বোত্তম উপায়ে নিশ্চিত হওয়ার কথা, সেখানে নারীকে প্রকাশ্য মারধরের ঘটনা ঘটছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) মনে করে, নারীর জীবন, স্বাধীনতা ও সম্মান রক্ষা আমাদের সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা। মুন্সীগঞ্জে নিষ্ঠুর নির্যাতনকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি সহিংসতার শিকার নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা জনমনে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করেছে, যেটি বৈষম্যহীন সরকারের রীতিনীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। নারীর মানবাধিকার সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন করা আবশ্যক। নারীর অধিকার সমুন্নত রাখতে সরকারসহ সব পক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের বিবৃতি

নারীর স্বাধীন চলাফেরায় নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান

আপডেট সময় : ০৭:৫৭:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটে যাত্রা বিরতি করা একটি যাত্রীবাহী লঞ্চে দুজন নারীকে প্রকাশ্যে নিষ্ঠুর মারধরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে ও নারীর স্বাধীন চলাফেরায় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

রোববার (১১ মে) আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, গত ৯ মে ঢাকা-লালমোহন রুটে চলাচলকারী একটি লঞ্চ প্রায় ৩০০ যাত্রী নিয়ে ঢাকায় ফিরছিল। লঞ্চটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় বেশ কয়েকটি কেবিনে ২০-২৫ জন কিশোর, যুবক ও নারী ছিলেন। তারা ঢাকা থেকে ওই লঞ্চের কেবিন ভাড়া করে সারাদিন পিকনিক করে ঢাকায় ফিরছিলেন। রাত ৮টার দিকে লঞ্চটি মুন্সীগঞ্জ ঘাটে নোঙর করে। এ সময় স্থানীয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কমিটির নেতৃস্থানীয় কর্মীসহ কিছু লোক লঞ্চে উঠে পিকনিকে আসা যাত্রীদের ওপর হামলা করে। এ সময় অন্তত ২ জন তরুণীকে নিষ্ঠুরভাবে পেটাতে থাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে লক্ষ্য করা যায়, মুন্সীগঞ্জ জেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরিচিত মুখ নেহাল আহমেদ জিহাদ লঞ্চের একজন নারী যাত্রীকে বেল্ট দিয়ে বেপরোয়া ভাবে পেটাচ্ছে। এ সময় ৫০-৬০ জন বিভিন্ন বয়সী পুরুষ সেই দৃশ্য তাদের মোবাইল ফোনে ধারণ করে উল্লাস করছে, পাশাপাশি বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র আরো বলেছে, বর্তমানে দেশে যে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিম-ল লক্ষ্য করা যাচ্ছে— সেখানে নারীর চলাফেরার অধিকার সংকুচিত হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। প্রকাশ্য শত শত মানুষের সম্মুখে মারধরের ঘটনা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। বাংলাদেশ দ-বিধির ৩২৩ ও ৩২৫ ধারায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, কোনো ব্যক্তিকে স্বেচ্ছায় আঘাত করা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সমাজে নারীর প্রতি সংবেদনশীলতা কোন পর্যায়ে এবং কারও কারও দৃষ্টিভঙ্গি কতটা নিষ্ঠুর, এই ঘটনা তার একটি নিকৃষ্ট উদাহরণ। প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো জায়গায় এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার হতে দেখা যাচ্ছে নারীকে। দেশের নারী সমাজ একটি অস্থিতিশীল ও ভয়ার্ত পরিবেশের মধ্যে দিয়ে দিন পার করছে। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা নেওয়ার সদিচ্ছার বিষয়টিতে গুরুত্বারোপ করতে হবে। কেননা, নারীর প্রতি সহিংসতা এবং ঘৃণা ছড়ানোর যে প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। নারীর স্বাধীনতা, নারীর পছন্দ করার বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার, চলাফেরার অধিকার সবই সাংবিধানিক অধিকার। এ অধিকারগুলো আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সনদে স্বীকৃত। যেখানে নারীর মর্যাদা, অধিকার ও নিরাপত্তা সর্বোত্তম উপায়ে নিশ্চিত হওয়ার কথা, সেখানে নারীকে প্রকাশ্য মারধরের ঘটনা ঘটছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) মনে করে, নারীর জীবন, স্বাধীনতা ও সম্মান রক্ষা আমাদের সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা। মুন্সীগঞ্জে নিষ্ঠুর নির্যাতনকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি সহিংসতার শিকার নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা জনমনে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করেছে, যেটি বৈষম্যহীন সরকারের রীতিনীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। নারীর মানবাধিকার সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন করা আবশ্যক। নারীর অধিকার সমুন্নত রাখতে সরকারসহ সব পক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।