নারী ও শিশু প্রতিবেদন : গত রোববার বিকেল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘আসুন নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলি’ স্লোগানে এক সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
এর আগে গত বুধবার (৮ জুন) দিবাগত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীলক্ষেত এলাকায় এক নারী নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে। ওই ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি মামলাও হয়। সেই ঘটনার প্রতিবাদে এ সমাবেশের আয়োজন করে সংগঠনটি।
এসময় বক্তারা নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সবাইকে নির্বিকার মনোভাব পরিহার করে সোচ্চার হতে বলেন। সহিংসতার ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীকে চিহ্নিত করে তাকে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাসহ সব জায়গায় নিরাপদে ও স্বাধীনভাবে নারীর চলাচল নিশ্চিত করার দাবি জানান তারা। পাশাপাশি যৌন হয়রানি, নিপীড়নসহ নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে পৃথক আইন প্রণয়নের দাবি জানান বক্তারা।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, করোনাকালীন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও নারীর প্রতি সহিংসতা থেকে আমরা কোনোভাবেই মুক্ত হতে পারছি না। নারীদের প্রতি যারা ক্রমাগত অশোভন আচরণ করছে, তাদের সমাজের কাছে লজ্জিত হওয়া উচিত। তিনি বলেন, সব পুরুষ নারীকে অসম্মানের চোখে দেখে বিষয়টি এমন নয়। গুটিকয়েক পুরুষ যারা নারীকে অধঃস্তন ভেবে সহিংসতা, যৌন হয়রানি ও হেনস্তা করছে তাদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের আন্দোলনে সবাইকে শামিল হওয়ার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর নারীর জন্য নিরাপদ হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বানও জানান তিনি।
ডা. ফওজিয়া মোসলেমের সভাপতিত্বে ও সংগঠনের অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড লবি পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) অ্যাডভোকেট দীপ্তি সিকদারসহ সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা বেগম, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহা, আন্দোলন সম্পাদক রাবেয়া খাতুন শান্তি, ঢাকা মহানগর কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক মঞ্জু ধর, কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপ-পরিষদের সদস্য ডা. নাহিদ নবী লেনা, সিনিয়র আইনজীবি অ্যাডভোকেট রাম লাল রাহা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী রিদিয়া রাকা, ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী নির্জনা ভূঁইয়া। এসময় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ, জাতীয় পরিষদ সদস্য, ঢাকা মহানগর কমিটির নেতৃবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং সংগঠনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে ১১টি দাবি তুলে ধরেন অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড লবি পরিচালক জনা গোস্বামী। দাবিগুলো হলো-
১. এই সমাবেশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং অবিলম্বে নির্যাতকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়।
২. নারী ও কন্যার প্রতি যৌন নিপীড়নসহ সব ধরনের সহিংসতা ও নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।
৩. নারীদের উত্ত্যক্তকররণ, যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, হত্যা, অ্যাসিড নিক্ষেপের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
৪. নারীর স্বাধীন চলাচলে নিরাপত্তা দিতে হবে।
৫. নারী-পুরুষ নির্বিশেষে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অপরাধ ও সন্ত্রাসমুক্ত নিরাপদ সমাজ গঠনে এগিয়ে আসতে হবে।
৬. নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে পারিবারিক মূল্যবোধ গড়ে তোলা এবং ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের শিকার নারীকে দায়ী করার মানসিকতা পরিহার করতে হবে।
৭. উত্ত্যক্তকরণ, যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন রোধে মহামান্য হাইকোর্টের রায়ের আলোকে পৃথক আইন প্রণয়ন করতে হবে।
৮. ধর্ষণসহ নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা বন্ধে সরকারের ঘোষিত নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের বাস্তবায়ন দৃশ্যমান করতে হবে।
৯. কর্মক্ষেত্র ও রাস্তাঘাট, গণপরিবহনসহ ঘরে-বাইরে সবখানে নারী ও কন্যার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
১০. নারীর প্রতি প্রচলিত নৈতিবাচক প্রথা ও রীতিনীতি অভ্যাস পরিবর্তনের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিরবিচ্ছিন্ন প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে।
১১. সমাবেশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব বিশ্ববিদ্যালয় সিসি ক্যামেরার আওতায় এনে নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে।-
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধের আন্দোলনে শামিল হওয়ার আহ্বান
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ