ঢাকা ০৮:৩৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ সূচকে শীর্ষে সুইডেন

  • আপডেট সময় : ০৪:৩৩:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫
  • ২৯ বার পড়া হয়েছে

নারী ও শিশু ডেস্ক: এবার দ্য ইকোনমিস্টের গ্লাস সিলিং সূচকে শীর্ষে উঠে এসেছে সুইডেন। অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টে (ওইসিডি) অন্তর্ভুক্ত ৩৮টি দেশের মধ্যে ২৯ দেশের নারীদের কর্মপরিবেশের ধারণা পাওয়া যায় এই সূচক থেকে। প্রতি বছর নারী দিবস উপলক্ষে এ সূচক প্রকাশ করা হয়।

শ্রমশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ, বেতন, মাতৃত্বকালীন–পিতৃত্বকালীন ছুটি, রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বসহ ১০টি সূচকের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয় এই তালিকা। এর আগে টানা দু’বছর এই সূচকের শীর্ষে ছিল আইসল্যান্ড। তবে এবার সে স্থান দখলে নিয়েছে সুইডেন। এতদিন এই তালিকার সবচেয়ে পেছনে ছিল দক্ষিণ কোরিয়া। এবার এক ধাপ এগিয়ে ২৮তম স্থানে উঠে এসেছে দেশটি। এ বছরের তালিকায় সর্বশেষ স্থানে আছে তুরস্ক। এবার সবচেয়ে বেশি উন্নতি করেছে নিউজিল্যান্ড। আট ধাপ এগিয়ে পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে দেশটি।

সূচকের ১০টি বিষয় বিশ্লেষণ করে যেসব বিষয় ওই পরিবর্তনগুলোয় প্রভাব ফেলেছে, তা হলো-
শিক্ষা: সমীক্ষার আওতাধীন ২৯টি দেশে গত বছর অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেছে নারীর শিক্ষায়। জরিপ অনুযায়ী, দেশগুলোতে পুরুষের তুলনায় স্নাতক ডিগ্রিধারী নারীর সংখ্যা বেশি। গত বছর ৪৫ শতাংশ নারী স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছে, যেখানে পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার ছিল ৩৬ দশমিক ৯ শতাংশ। গত এক দশক ধরে এমবিএ প্রোগ্রামের জন্য জিএমএটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের এক-তৃতীয়াংশই নারী শিক্ষার্থী। ২০২৪ সালে এই হার বেড়ে ৩৬ শতাংশ হয়েছে। এই হার বৃদ্ধিতে সবচেয়ে এগিয়ে ফিনল্যান্ড, এস্তোনিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের নারীরা।

কর্মসংস্থান: শিক্ষা ক্ষেত্রে অগ্রগতি সত্ত্বেও শ্রমশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ এখনো পুরুষদের তুলনায় কম। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী কর্মক্ষম নারীদের মধ্যে কেবল ৬৬ দশমিক ৬ শতাংশ নারী কর্মসংস্থানের সঙ্গে যুক্ত; যেখানে পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার ৮১ শতাংশ। তবে ওইসিডিভুক্ত সব দেশেই যে এ হার একই রকম-ব্যাপারটা তা নয়। যেমন- আইসল্যান্ড ও সুইডেনে ৮২ শতাংশের বেশি নারী কর্মজীবী। অথচ ইতালিতে এই হার মাত্র ৫৮ শতাংশ।

বেতন: ইকোনমিস্টের পর্যবেক্ষণ বলছে, লিঙ্গভিত্তিক বেতনবৈষম্য এখনো বিদ্যমান। ওইসিডিভুক্ত দেশগুলোতে নারীরা পুরুষদের তুলনায় গড়ে ১১ শতাংশ কম বেতন পান। অস্ট্রেলিয়া ও জাপানে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও বাড়ছে এই পার্থক্য।

বাণিজ্য ও রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ: সূচক বলছে, বাণিজ্য ও রাজনীতিতে বাড়ছে নারীর অংশগ্রহণ। ২০১৬ সালে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে নারী কর্মকর্তার হার ছিল ২১ শতাংশ, বর্তমানে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ শতাংশে। নিউজিল্যান্ড, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যে নারীরা এখন প্রায় পুরুষের সমান সংখ্যক বোর্ড সদস্যপদ অর্জন করেছেন। সুইডেন, লাটভিয়া এবং আমেরিকার নারীরাও মোট ব্যবস্থাপনা পদের প্রায় অর্ধেক দখল করেছেন।

ওইসিডি অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর পার্লামেন্টেও বেড়েছে নারীদের উপস্থিতি। পার্লামেন্টগুলোয় নারীদের অংশগ্রহণের হার ৩৪ শতাংশেরও বেশি। ব্রিটেনে গত বছরের নির্বাচনে ৪৩ জন নতুন নারী এমপি নির্বাচিত হওয়ায় পার্লামেন্টে তাদের অংশীদারত্ব ৩৫ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৪১ শতাংশ। অবশ্য, জাপানে এই হার মাত্র ১৬ শতাংশ; যদিও দেশটির জন্য এটি রেকর্ড।

পরিবার পরিকল্পনা ও কর্মসংস্থান: এই সূচকে ওইসিডির দেশগুলো একেকটি থেকে একেক রকম ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। অনেক দেশ মাতৃত্ব ও পিতৃত্বকালীন ছুটির বিষয়টি বেশ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করেছে। যেমন: হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়ায় মায়েরা যথাক্রমে ৭৯ সপ্তাহ ও ৬৯ সপ্তাহ সবেতন মাতৃত্বকালীন ছুটি পান। বিভিন্ন দেশে পিতৃত্বকালীন ছুটিও মাতৃত্বকালীন ছুটির মতো গুরুত্ব পাচ্ছে। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া ওইসিডির সবচেয়ে উদার পিতৃত্বকালীন নীতি মানে; তবে বেশির ভাগ বাবাই এই ছুটি নেন না। এই মানদণ্ডে সবচেয়ে পিছিয়ে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ তারা জাতীয়ভাবে বাধ্যতামূলক প্রসূতি ছুটি দেয় না এবং সেখানে শিশুসেবা ব্যয় গড় আয়ের ৩০ শতাংশের বেশি।
২০২৫ সালের গ্লাস সিলিং সূচক বলছে- যদিও নারীরা এখনে কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, তবুও বেশির ভাগ দেশেই পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাচ্ছে।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ সূচকে শীর্ষে সুইডেন

আপডেট সময় : ০৪:৩৩:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫

নারী ও শিশু ডেস্ক: এবার দ্য ইকোনমিস্টের গ্লাস সিলিং সূচকে শীর্ষে উঠে এসেছে সুইডেন। অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টে (ওইসিডি) অন্তর্ভুক্ত ৩৮টি দেশের মধ্যে ২৯ দেশের নারীদের কর্মপরিবেশের ধারণা পাওয়া যায় এই সূচক থেকে। প্রতি বছর নারী দিবস উপলক্ষে এ সূচক প্রকাশ করা হয়।

শ্রমশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ, বেতন, মাতৃত্বকালীন–পিতৃত্বকালীন ছুটি, রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বসহ ১০টি সূচকের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয় এই তালিকা। এর আগে টানা দু’বছর এই সূচকের শীর্ষে ছিল আইসল্যান্ড। তবে এবার সে স্থান দখলে নিয়েছে সুইডেন। এতদিন এই তালিকার সবচেয়ে পেছনে ছিল দক্ষিণ কোরিয়া। এবার এক ধাপ এগিয়ে ২৮তম স্থানে উঠে এসেছে দেশটি। এ বছরের তালিকায় সর্বশেষ স্থানে আছে তুরস্ক। এবার সবচেয়ে বেশি উন্নতি করেছে নিউজিল্যান্ড। আট ধাপ এগিয়ে পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে দেশটি।

সূচকের ১০টি বিষয় বিশ্লেষণ করে যেসব বিষয় ওই পরিবর্তনগুলোয় প্রভাব ফেলেছে, তা হলো-
শিক্ষা: সমীক্ষার আওতাধীন ২৯টি দেশে গত বছর অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেছে নারীর শিক্ষায়। জরিপ অনুযায়ী, দেশগুলোতে পুরুষের তুলনায় স্নাতক ডিগ্রিধারী নারীর সংখ্যা বেশি। গত বছর ৪৫ শতাংশ নারী স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছে, যেখানে পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার ছিল ৩৬ দশমিক ৯ শতাংশ। গত এক দশক ধরে এমবিএ প্রোগ্রামের জন্য জিএমএটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের এক-তৃতীয়াংশই নারী শিক্ষার্থী। ২০২৪ সালে এই হার বেড়ে ৩৬ শতাংশ হয়েছে। এই হার বৃদ্ধিতে সবচেয়ে এগিয়ে ফিনল্যান্ড, এস্তোনিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের নারীরা।

কর্মসংস্থান: শিক্ষা ক্ষেত্রে অগ্রগতি সত্ত্বেও শ্রমশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ এখনো পুরুষদের তুলনায় কম। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী কর্মক্ষম নারীদের মধ্যে কেবল ৬৬ দশমিক ৬ শতাংশ নারী কর্মসংস্থানের সঙ্গে যুক্ত; যেখানে পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার ৮১ শতাংশ। তবে ওইসিডিভুক্ত সব দেশেই যে এ হার একই রকম-ব্যাপারটা তা নয়। যেমন- আইসল্যান্ড ও সুইডেনে ৮২ শতাংশের বেশি নারী কর্মজীবী। অথচ ইতালিতে এই হার মাত্র ৫৮ শতাংশ।

বেতন: ইকোনমিস্টের পর্যবেক্ষণ বলছে, লিঙ্গভিত্তিক বেতনবৈষম্য এখনো বিদ্যমান। ওইসিডিভুক্ত দেশগুলোতে নারীরা পুরুষদের তুলনায় গড়ে ১১ শতাংশ কম বেতন পান। অস্ট্রেলিয়া ও জাপানে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও বাড়ছে এই পার্থক্য।

বাণিজ্য ও রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ: সূচক বলছে, বাণিজ্য ও রাজনীতিতে বাড়ছে নারীর অংশগ্রহণ। ২০১৬ সালে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে নারী কর্মকর্তার হার ছিল ২১ শতাংশ, বর্তমানে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ শতাংশে। নিউজিল্যান্ড, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যে নারীরা এখন প্রায় পুরুষের সমান সংখ্যক বোর্ড সদস্যপদ অর্জন করেছেন। সুইডেন, লাটভিয়া এবং আমেরিকার নারীরাও মোট ব্যবস্থাপনা পদের প্রায় অর্ধেক দখল করেছেন।

ওইসিডি অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর পার্লামেন্টেও বেড়েছে নারীদের উপস্থিতি। পার্লামেন্টগুলোয় নারীদের অংশগ্রহণের হার ৩৪ শতাংশেরও বেশি। ব্রিটেনে গত বছরের নির্বাচনে ৪৩ জন নতুন নারী এমপি নির্বাচিত হওয়ায় পার্লামেন্টে তাদের অংশীদারত্ব ৩৫ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৪১ শতাংশ। অবশ্য, জাপানে এই হার মাত্র ১৬ শতাংশ; যদিও দেশটির জন্য এটি রেকর্ড।

পরিবার পরিকল্পনা ও কর্মসংস্থান: এই সূচকে ওইসিডির দেশগুলো একেকটি থেকে একেক রকম ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। অনেক দেশ মাতৃত্ব ও পিতৃত্বকালীন ছুটির বিষয়টি বেশ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করেছে। যেমন: হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়ায় মায়েরা যথাক্রমে ৭৯ সপ্তাহ ও ৬৯ সপ্তাহ সবেতন মাতৃত্বকালীন ছুটি পান। বিভিন্ন দেশে পিতৃত্বকালীন ছুটিও মাতৃত্বকালীন ছুটির মতো গুরুত্ব পাচ্ছে। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া ওইসিডির সবচেয়ে উদার পিতৃত্বকালীন নীতি মানে; তবে বেশির ভাগ বাবাই এই ছুটি নেন না। এই মানদণ্ডে সবচেয়ে পিছিয়ে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ তারা জাতীয়ভাবে বাধ্যতামূলক প্রসূতি ছুটি দেয় না এবং সেখানে শিশুসেবা ব্যয় গড় আয়ের ৩০ শতাংশের বেশি।
২০২৫ সালের গ্লাস সিলিং সূচক বলছে- যদিও নারীরা এখনে কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, তবুও বেশির ভাগ দেশেই পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাচ্ছে।