নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সম্প্রতি নারীদের ওপর যে জঘন্য হামলার খবর আসছে, তা গভীরভাবে উদ্বেগজনক। এটি ‘নতুন বাংলাদেশ’ এর যে স্বপ্ন আমরা দেখছি তার সম্পূর্ণ বিপরীত। আমরা এই ‘নতুন বাংলাদেশে’ নারী-পুরুষ সবার সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা আমাদের সব শক্তি প্রয়োগ করে এই অধিকার প্রতিষ্ঠা করবো।
শনিবার (৪ মার্চ) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, নারী-বিরোধী যে শক্তি মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে, তাকে আমরা দেশের সকল মানুষকে সঙ্গে নিয়ে অবশ্যই মোকাবিলা করবো। তাছাড়া, আমাদের সমাজে এখনও এমন বহু মানুষ আছে যারা নিপীড়িত নারীদের পাশে দাঁড়ানোর বদলে তাদের খাটো করে দেখে, অবজ্ঞার চোখে দেখে। অথচ নারীর প্রতি সহিংসতা, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করতে হলে, বৈষম্যহীন, সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে হলে নারীর পাশে দাঁড়ানোর, তাদেরকে সমর্থন জানানোর, কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, আমাদের সমাজে নারীকে খাটো করে দেখার এই দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। তা না হলে আমরা জাতি হিসেবে এগোতে পারবো না।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পতিত স্বৈরাচার দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করছে। আমাদের এখন ততটাই সতর্ক থাকতে হবে যেমনটা আমরা যুদ্ধের মতো পরিস্থিতির মধ্যে ছিলাম। নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা রক্ষায় সর্বোচ্চ সজাগ থাকুন। নিপীড়নের বিরুদ্ধে সামাজিক ঐক্য গড়ে তুলুন। একে অন্যের পাশে দাঁড়ান। একটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়তে সরকারকে সহযোগিতা করুন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া নারীরা বিভিন্ন সময়ে আমাকে তাদের সংগ্রাম ও আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা জানিয়েছে। আমরা যে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছি, নারীদের অংশগ্রহণ ও তাদের অধিকার নিশ্চিত করা ছাড়া তা সম্ভব হবে না। এই অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নারীদের সাথে পুরুষদেরও সহযোদ্ধা হয়ে কাজ করতে হবে।
সমাজে নারীদের নায্য স্থান প্রতিষ্ঠার জন্য পুরুষদেরকে উৎসাহী সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। ‘নতুন বাংলাদেশ’-এ আমরা আমাদের প্রত্যাশী পরিবারকে নতুনভাবে গড়তে চাই। যেটা সব বাবা-মা’র, ভাই-বোনের নিশ্চিত ও স্বীকৃত অধিকারের পরিবার।
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অনেক সময় নারীরা নির্যাতনের শিকার হলেও তারা বুঝতে পারেন না কোথায় অভিযোগ জানাবেন। নারীরা যেন তাদের অভিযোগ জানাতে পারেন সেজন্য হটলাইন চালু করা হয়েছে। আইনি সহায়তা প্রদানের জন্য আমরা পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ হালনাগাদ করার উদ্যোগ নিয়েছি। যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন, ২০২৫ প্রণয়নের কাজও আমরা হাতে নিয়েছি। আমরা একটি নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন করেছি, তারাও তাদের সুপারিশগুলো দেবে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সম্মুখসারিতে ছিল নারীরা: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশের ছাত্র-শ্রমিক-জনতা মিলে যে অসাধ্য সাধন করেছে তার সম্মুখসারিতে ছিল এ দেশের নারীরা। ফ্যাসিবাদী শক্তির প্রাণঘাতি অস্ত্রের সামনে হিমালয়ের মতো দাঁড়িয়েছিল আমাদের মেয়েরা।
তিনি বলেন, পতিত স্বৈরাচার দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করছে। আমাদেরকে এখন ততটাই সতর্ক থাকতে হবে যেমনটা আমরা যুদ্ধের মতো পরিস্থিতির মধ্যে ছিলাম। নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা রক্ষায় সর্বোচ্চ সজাগ থাকুন। নিপীড়নের বিরুদ্ধে সামাজিক ঐক্য গড়ে তুলুন। একে অন্যের পাশে দাঁড়ান। একটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়তে সরকারকে সহযোগিতা করুন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গণঅভ্যুত্থানে সম্মুখসারিতে থাকলেও আমাদের সমাজে এখনো অনেক ক্ষেত্রেই নারীরা পিছিয়ে আছে। নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে সরকার সবসময় সচেষ্ট। এজন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ চলমান। দুস্থ মায়েদের আর্থিক সহায়তা প্রদান, নারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি, কর্মজীবী নারীদের থাকার হোস্টেল, ডে-কেয়ার সেন্টার সুবিধাসহ বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকার নিচ্ছে। আরো কী কী করা যেতে পারে সেটা নিয়েও আলোচনা চলছে।