ক্রীড়া ডেস্ক: দিল্লি ক্যাপিটালসের বিপক্ষে ২০৫ রানের লড়াইয়ে ব্যাটে-বলে দারুণ অলরাউন্ড পারফরম্যান্স দিয়ে কেকেআরকে জয় এনে দিলেন সুনীল নারিন। টানটান উত্তেজনার ম্যাচে নেতৃত্বও দিলেন, রানআউট করলেন, আবার বল হাতে ঘূর্ণিতে এলোমেলো করে দিলেন দিল্লির ব্যাটিং লাইনআপ। ম্যাচের শুরুতে যখন নারিনের বোলিং পরিসংখ্যান ছিল ২.১ ওভারে ২৫ রান দিয়ে উইকেটশূন্য এবং তার স্পিন সঙ্গী বরুণ চক্রবর্তীর ছিল ৩ ওভারে ৩১ রান, তখন দিল্লি ক্যাপিটালস ছিল ম্যাচের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু এই দুই স্পিনারই শেষ ১৭ বলে ৫ উইকেট নিয়ে ১২ রানের মধ্যে দিল্লির মেরুদণ্ড ভেঙে দেন। কেকেআরের শিরোপা ধরে রাখার পথে এটি এক বড় জয়।
চোটগ্রস্ত হাত নিয়েই দিল্লির অধিনায়ক অক্ষর প্যাটেল নারিনকে এক ওভারে তিনটি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন। কিন্তু সেটাই ছিল তার শেষ ঝলক। পরের ওভারে নারিন তাকে ফেরান কভার ফিল্ডারের হাতে ক্যাচ করিয়ে। একই ওভারে ফিরে যান ট্রিস্টান স্টাবস। এরপর বরুণ চক্রবর্তীর ঝলক—এক ওভারে দুটি উইকেট নিয়ে দিল্লিকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেন। এই ম্যাচে সুনীল নারিন ছিলেন অধিনায়ক, কারণ নিয়মিত অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে আঙুলে চোট পেয়ে সরে দাঁড়ান, আর সহ-অধিনায়ক ভেঙ্কটেশ আইয়ার ছিলেন বদলি। অধিনায়ক হওয়ার পাশাপাশি ব্যাটিং ও ফিল্ডিংয়েও রেখেছেন বড় প্রভাব। এল ফাইন লেগ থেকে সরাসরি থ্রোয়ে রানআউট করেন লোকেশ রাহুলকে। এর আগে ব্যাটিংয়েও চমক দেখায় কেকেআর। রহমতুল্লাহ গুরবাজ, নারিন ও রাহানে ঝড়ো শুরু এনে দেন। মাত্র সাত ওভারে ৯১ রান করে তারা। এটি এবারের আসরে কেকেআরের সর্বোচ্চ পাওয়ারপ্লে স্কোরের মধ্যে একটি। তবে সমস্যা ছিল—তিন ওপেনারই আউট হন ২০-এর ঘরে, ম্যাচের মাঝপথে চাপ তৈরি হয়।
তখন পরিস্থিতি সামাল দেন রিংকু সিং ও অংকৃষ রঘুবংশী। এই জুটি ৬১ রান যোগ করে দলের স্কোর এগিয়ে নেন। তবে শেষ পাঁচ ওভারে মাত্র ৪৫ রান তুলতে পারে কেকেআর। আন্দ্রে রাসেলকে এই সময় বল খেলার সুযোগই মেলেনি—তিন ওভারে তিনি খেলেন মাত্র নয় বল। তবুও দিল্লির দুর্বল বোলিংয়ের বিরুদ্ধে পাওয়া শুরুটা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। পেসাররা বারবার ওভারপিচ করে রান বিলিয়েছেন, যা কাজে লাগিয়ে কেকেআর পুঁজি গড়েছে। জবাবে দিল্লি শুরু করে ধাক্কা খেয়ে। প্রথম বলেই চার মারেন অভিষেক পোরেল, কিন্তু পরের বলেই আর্ম বল হজম করে বোল্ড হন। দ্বিতীয় ওভারে ইয়র্কারে এলবিডব্লিউ হন করুণ নায়ার। রাহুল ব্যর্থভাবে এক রান নিতে গিয়ে রানআউট হন—সেই রানআউটটা যে নারিন করেছেন, সেটা অনেকটাই প্রতীকী।
এরপর ফাফ ডু প্লেসি ও অক্ষর প্যাটেল মিলে খেলায় ফিরিয়ে আনেন দিল্লিকে। ডু প্লেসি পেসারদের কচুকাটা করছিলেন, আর অক্ষর ঘূর্ণিকে তছনছ করছিলেন। নারিনকে এক ওভারে তিনটি ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচে দিলেন ঢেউ। তখন ৪১ বলে প্রয়োজন ছিল মাত্র ৬৯ রান, হাতে ছিল বহু উইকেট। কিন্তু এরপরেই ম্যাচ ঘুরে যায়। নারিনের এক স্লোয়ার বলে অক্ষর ক্যাচ দেন, পরের বলেই ছোট্ট এক অফব্রেকে স্টাবসও বিদায় নেন। আর তখন থেকেই ম্যাচের রাশ কেকেআরের হাতে।
শেষ দিকে দিল্লির হাতে ছিল আশুতোষ শর্মা ও নীগম। ১৭তম ওভারে তারা ১১ রান তুললে আবারও উত্তেজনা তৈরি হয়। তবে অধিনায়ক নারিন আবারও ভরসা রাখেন বরুণের ওপর। আর বরুণ এই আস্থার প্রতিদান দেন তিন বলেই—একটি ডট, তারপর টানা দুই উইকেট, ম্যাচ শেষ। এই জয়ে কেকেআর এখন ১০ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষ ছয়ে টিকে রইল। অন্যদিকে, দিল্লি ক্যাপিটালস ১২ পয়েন্টে থাকলেও শীর্ষ দুইয়ে থেকে লিগ শেষ করার সম্ভাবনায় ধাক্কা খেল।