নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার এক বাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে নারী ও শিশুসহ অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন। ঘরে জমে থাকা গ্যাস থেকে এ বিস্ফোরণ হতে পারে বলে ফায়ার সার্ভিসের ধারণা। নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক ফখরউদ্দিন আহম্মাদ জানান, গত শনিবার রাত ১২টার দিকে কাশীপুর ইউনিয়নের হোসাইনী নগর এলাকায় লক্ষ্মী নিবাস নামের একটি ছয় তলা ভবনের পঞ্চম তলার ফ্ল্যাটে বিস্ফোরণ হয়। আহতরা হলেন- হোসাইনী নগর এলাকার একটি হোসিয়ারি কারখানার মালিক সবুজ খন্দকার (২৫), ওই কারখানার কর্মী মো. রানা (৩০), তার স্ত্রী বিথী (১৮), তাদের শিশু সন্তান, ওই ভবনের ষষ্ঠ তলার বাসিন্দা ফল ব্যবসায়ী আবুল কালাম (৬০) এবং রুবেল (২৮)। আহতদের মধ্যে দগ্ধ চারজনকে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হলে তিনজনকে ভর্তি করে অন্যজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. তরিকুল ইসলাম বলেন, ভর্তি রোগীদের মধ্যে সবুজের শরীরের ৫৫ শতাংশ, রানার ১২ শতাংশ, বিথীর ৩৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাদের সবার অবস্থা আশঙ্কাজনক। রুবেলও অল্প দগ্ধ হয়েছেন। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক ফখরউদ্দিন বলেন , ভবনটির পঞ্চম তলার উত্তর-পশ্চিম পাশের ফ্ল্যাটে বিস্ফোরণের পর দুই পাশের দেয়াল ভেঙে পড়ে। “পশ্চিম পাশের দেয়ালটি ভেঙে পাশের একটি টিনশেড ঘরের ওপর পড়ে। ওই ঘরে কেউ না থাকায় হতাহত হননি। বিস্ফোরণের তীব্রতায় আশেপাশের ফ্ল্যাটের দরজা, দেয়ালও ভেঙে গেছে, আসবাবপত্র ছিটকে পড়েছে।”
ফখরউদ্দিন বলেন, “ফ্ল্যাটের ভেতরে জমা গ্যাস থেকে এ বিস্ফোরণ হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি। ফ্ল্যাটের ভেতর গ্যাস সিলিন্ডার ও তিতাস গ্যাসের লাইন দুটোই রয়েছে। কোন লাইনের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ হয়েছে তদন্তের পর তা নিশ্চিত করে বলা যাবে।” দগ্ধ সবুজের মামা খলিল শিকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার ভাগনে সবুজ ও সবুজের হোসিয়ারি কারখানার শ্রমিক রানা, বিথী ও তাদের শিশু সন্তান ওই ফ্ল্যাটটিতে থাকতেন। দগ্ধ অবস্থায় তাদের তিনজনকে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখান থেকে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্ল্যাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়।
ভবনটির ছয়তলার ভাড়াটিয়া মো. হাবিব উল্লাহ বলেন, “বিকট বিস্ফোরণে পুরো ভবনটি কেঁপে ওঠে। যে ফ্ল্যাটে বিস্ফোরণ হয়েছে, সেখানে আগুন ধরে গেলে কয়েকজন দগ্ধ হন। আমার পাশের ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া ফল ব্যবসায়ী আবুল কালাম বাজার করে সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় আহত হন। তার উপর দেয়াল ভেঙে পড়ে।” হোসাইনী নগর এলাকার ভবনটির মালিক মাসুদুর রহমান আসলাম। তার ছেলে মো. সীমান্ত বলেন, “বিকট শব্দে বিস্ফোরণটি হয়ে আগুন ধরে যায়৷ পরে ভাড়াটিয়ারা মিলে আগুন নেভান। পাঁচতলার দু’টি ফ্ল্যাটের দেয়াল ভেঙে গেছে। “ফায়ার সার্ভিসের লোকজন বলেছে, বিস্ফোরণে ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তারা ফ্ল্যাটগুলো খালি করে দিতে বলেছেন। ভাড়াটিয়াদের সকলে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে চলে যাচ্ছেন।” স্থানীয়রা জানান, বিকট শব্দে বিস্ফোরণের পরপরই বিদ্যুৎ চলে যায়৷ বিস্ফোরণের শব্দ অন্তত আধা কিলোমিটার দূর থেকেও পাওয়া যায়। রাতে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ভবনটির পঞ্চম তলায় চারটি ফ্ল্যাট। বিস্ফোরণে উত্তর-পশ্চিম পাশের ফ্ল্যাটটির পশ্চিম পাশের দেয়াল ভেঙে পাশের একটি টিনশেড ঘরের উপরে পড়েছে। দক্ষিণ পাশের দেয়ালটিও ভেঙে সিঁড়ির উপর পড়ে আছে। পূর্বপাশের ফ্ল্যাটের দেয়াল ভেঙে গেছে। প্রতিটি ফ্ল্যাটেরই কাঠের দরজা ভেঙে গেছে। ভেতরে খাট, আলমারি, ফ্রিজসহ আসবাবপত্র উল্টেপাল্টে আছে। এর আগে, গত ২৯ জুলাই ফতুল্লার কাশীপুর ইউনিয়নের ভোলাইল এলাকার একটি ব্যাটারিচালিত রিকশার শো-রুমে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়। ওই বিস্ফোরণে মারা যান শো-রুমের ম্যানেজারসহ আরও দুই কর্মী। আহত হন বেশ কয়েকজন। বিস্ফোরণের ওই ঘটনায় শো-রুমটির চারপাশের দেয়ালসহ পাশের দু’টি ভবনও ধসে পড়ে।























