ঢাকা ০৪:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫

নাম পাল্টে ১৪ বছর ইমামের চাকরি করেছেন মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি শফিকুর

  • আপডেট সময় : ১০:০৭:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২২
  • ১১০ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : রমনার বটমূলে বোমা হামলার ঘটনায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি মুফতি শফিকুর রহমান পরিচয় গোপন করে নরসিংদীর একটি মসজিদে ইমামের চাকরি নিয়ে ১৪ বছর আত্মগোপনে ছিলেন। বেতন পেতেন পাঁচ হাজার টাকা। গতকাল বৃহস্পতিবার কিশোরগঞ্জের ভৈরবে অভিযান চালিয়ে শফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে র‌্যাব।
র‌্যাব বলছে, শফিকুর রহমান নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি-বি) প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। তিনি সংগঠনটির আমিরের দায়িত্বও পালন করেছেন।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরেন সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, ২১ বছর আগে রমনার বটমূলে হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ছিলেন শফিকুর রহমান। এ ছাড়া ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, ২০০৫ সালে গ্রেনেড হামলায় সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যার সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা রয়েছে। ২০০১ সালে রমনার বটমূলে হামলার পর ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি আত্মগোপনে থেকে সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেন। ২০০৮ সাল থেকে নরসিংদীর একটি মাদ্রাসায় অবস্থান করে আত্মগোপনে চলে যান। চাকরি নেন একটি মসজিদে।
শফিকুরকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, তাঁর গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরবে। তিনি ঢাকার চকবাজারের একটি মাদ্রাসা থেকে ১৯৮৩ সালে হেদায়া পাস করেন। তারপর ১৯৮৬ সালে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস পাস করে দেশে ফিরে আসেন। ১৯৮৭ সালে পাকিস্তানের করাচিতে ইউসুফ বিন নুরী মাদ্রাসায় ফতোয়া বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৮৯ সালে তিনি আফগানিস্তানে গিয়ে তালেবানদের পক্ষে যুদ্ধ করেন। ওই বছরের শেষের দিকে তিনি ফিরে আসেন।
শফিকুর হরকাতুল জিহাদ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন জানিয়ে র‌্যাবের কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, ১৯৮৭ সালে পাকিস্তানের করাচিতে পড়াশোনা করার সময় মুফতি হান্নানের সঙ্গে পরিচয় হয়। মুফতি হান্নানও ওই প্রতিষ্ঠানে পড়ছিলেন। আফগানিস্তান থেকে দেশে এসে হরকাতুল জিহাদ (হুজি-বি) নামের একটি জঙ্গি সংগঠন গড়ে তোলার চিন্তা করেন। ১৯৯০ সালে দেশে হরকাতুল জিহাদ (হুজি-বি) সংগঠন প্রতিষ্ঠার সময় তিনি প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ছিলেন। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত তিনি হরকাতুল জিহাদের (হুজি-বি) প্রচার সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত তিনি সংগঠনের আমির ছিলেন। ১৯৯৭ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনি সংগঠনের সুরা সদস্য ছিলেন।
২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা চালানো হয়। হামলায় ঘটনাস্থলেই নয়জনের মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে মারা যান আরও একজন। এ ঘটনায় জঙ্গিগোষ্ঠী হরকাতুল জিহাদের (হুজি-বি) শীর্ষ নেতা মুফতি হান্নানসহ ১৪ জঙ্গিকে আসামি করা হয়। মামলার ১৩ বছরের মাথায় ২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত মুফতি হান্নানসহ ৮ জনের মৃত্যুদ- ও ৬ জনের যাবজ্জীবন কারাদ- দেন। রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, ১৪ আসামির মধ্যে মৃত্যুদ- পাওয়া ৪ আসামি এখনো পলাতক।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

নাম পাল্টে ১৪ বছর ইমামের চাকরি করেছেন মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি শফিকুর

আপডেট সময় : ১০:০৭:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : রমনার বটমূলে বোমা হামলার ঘটনায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি মুফতি শফিকুর রহমান পরিচয় গোপন করে নরসিংদীর একটি মসজিদে ইমামের চাকরি নিয়ে ১৪ বছর আত্মগোপনে ছিলেন। বেতন পেতেন পাঁচ হাজার টাকা। গতকাল বৃহস্পতিবার কিশোরগঞ্জের ভৈরবে অভিযান চালিয়ে শফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে র‌্যাব।
র‌্যাব বলছে, শফিকুর রহমান নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি-বি) প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। তিনি সংগঠনটির আমিরের দায়িত্বও পালন করেছেন।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরেন সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, ২১ বছর আগে রমনার বটমূলে হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ছিলেন শফিকুর রহমান। এ ছাড়া ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, ২০০৫ সালে গ্রেনেড হামলায় সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যার সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা রয়েছে। ২০০১ সালে রমনার বটমূলে হামলার পর ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি আত্মগোপনে থেকে সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেন। ২০০৮ সাল থেকে নরসিংদীর একটি মাদ্রাসায় অবস্থান করে আত্মগোপনে চলে যান। চাকরি নেন একটি মসজিদে।
শফিকুরকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, তাঁর গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরবে। তিনি ঢাকার চকবাজারের একটি মাদ্রাসা থেকে ১৯৮৩ সালে হেদায়া পাস করেন। তারপর ১৯৮৬ সালে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস পাস করে দেশে ফিরে আসেন। ১৯৮৭ সালে পাকিস্তানের করাচিতে ইউসুফ বিন নুরী মাদ্রাসায় ফতোয়া বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৮৯ সালে তিনি আফগানিস্তানে গিয়ে তালেবানদের পক্ষে যুদ্ধ করেন। ওই বছরের শেষের দিকে তিনি ফিরে আসেন।
শফিকুর হরকাতুল জিহাদ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন জানিয়ে র‌্যাবের কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, ১৯৮৭ সালে পাকিস্তানের করাচিতে পড়াশোনা করার সময় মুফতি হান্নানের সঙ্গে পরিচয় হয়। মুফতি হান্নানও ওই প্রতিষ্ঠানে পড়ছিলেন। আফগানিস্তান থেকে দেশে এসে হরকাতুল জিহাদ (হুজি-বি) নামের একটি জঙ্গি সংগঠন গড়ে তোলার চিন্তা করেন। ১৯৯০ সালে দেশে হরকাতুল জিহাদ (হুজি-বি) সংগঠন প্রতিষ্ঠার সময় তিনি প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ছিলেন। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত তিনি হরকাতুল জিহাদের (হুজি-বি) প্রচার সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত তিনি সংগঠনের আমির ছিলেন। ১৯৯৭ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনি সংগঠনের সুরা সদস্য ছিলেন।
২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা চালানো হয়। হামলায় ঘটনাস্থলেই নয়জনের মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে মারা যান আরও একজন। এ ঘটনায় জঙ্গিগোষ্ঠী হরকাতুল জিহাদের (হুজি-বি) শীর্ষ নেতা মুফতি হান্নানসহ ১৪ জঙ্গিকে আসামি করা হয়। মামলার ১৩ বছরের মাথায় ২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত মুফতি হান্নানসহ ৮ জনের মৃত্যুদ- ও ৬ জনের যাবজ্জীবন কারাদ- দেন। রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, ১৪ আসামির মধ্যে মৃত্যুদ- পাওয়া ৪ আসামি এখনো পলাতক।