ঢাকা ০২:১০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫

নাবী জাতের আম চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা

  • আপডেট সময় : ০১:১৭:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ অগাস্ট ২০২৩
  • ১৭৬ বার পড়া হয়েছে

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংবাদদাতা: চাঁপাইনবাবগঞ্জে নাবী জাতের (লেট ভ্যারাইটিজ) আম বাগানে আগ্রহ বাড়েছে চাষিদের। এই জাতের আম মৌসুমের শেষ দিকে বাজারে আসায় আশানুরূপ দাম পেয়ে লাভবান হচ্ছেন বাগানিরা। ফলে নাবি জাতের আমবাগান গড়তে ঝুঁকছেন চাষিরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জেলায় আমের বাগানগুলোর মধ্যে সিংহ ভাগই নাবী জাতের বাগান। নাবী জাতের আম চাষিরা বলছেন, সাধারণত এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত আমের ভরা মৌসুম। এই সময়ে ফজলি, খিরশাপাতি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, হাঁড়িভাঙা, নাগফজলিসহ গুটি জাতের আম বাজারে পাওয়া যায়। যখন বাজারে বেশির ভাগ আমের সরবরাহ কমে যায়, তখনই পাকতে শুরু করে গৌড়মতি,বারি-৪, বারি-১১, বারি-১৩ ও আশ্বিনা জাতের আম। এসব জাতের আম কম চাষাবাদ আর মৌসুমের শেষে বাজারে পাওয়া যায় বলে আশানুরূপ দামে বিক্রি করেন চাষিরা। জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৯ হাজার ৩২৭ হেক্টর জমিতে আশ্বিনা আমের চাষাবাদ হয় ৬ লাখ ৮৬ হাজার ২৮৫ গাছে। ২ হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে আম্রপালি আম চাষ হয় ২ লাখ ৩০ হাজার ৫৫৫টি গাছে। ২৫২ হেক্টর জমিতে বারি-১১ আম চাষাবাদ হয় ২০ হাজার ৭০৫ হেক্টর গাছে। ৭৮৬ হেক্টর জমিতে বারি-৪ আম চাষ হয় ৬৬ হাজার ১৪০ গাছে। ১২৮ হেক্টর জমিতে গৌড় আমের চাষাবাদ হচ্ছে ২১ হাজার ৯৫০টি গাছে। ৪০০ হেক্টর জমিতে কার্ডিমন আমের চাষাবাদ হচ্ছে ৪৪ হাজার ১২৫ গাছে। এছাড়াও আরও হাজার খানেক হেক্টর জমিতে অনেক রকমের নাবী জাতের আম চাষাবাদ হয় জেলায়। জেলার বাজারগুলোতে গৌড়মতি আম বিক্রি হচ্ছে ৪০০০ টাকা থেকে ৬০০০ টাকা মণ পর্যন্ত। বারি-৪ আম বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকা মণ, আশ্বিনা আম বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা মণ। আম্রপালি আম বিক্রি হচ্ছে ৩৫০০ হাজার ৪৫০০ টাকা মণ, বারি-৭ আম বিক্রি হচ্ছে ৩০০০ টাকা থেকে ৪০০০ টাকা পর্যন্ত মণ। এছাড়াও ইতোমধ্যে বাজার থেকে ব্যানানা আম বিক্রি সম্পন্ন হয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বাজারে নামতে শুরু করবে নাবী জাতের কার্ডিমন আম। গাছ রোপণের কয়েক বছরের মধ্যেই নাবী জাতের চারাগুলোতে আম আসতে শুরু করে। মৌসুমের শেষে আম পাকে তাই বাজারে দামও বেশি পাওয়া যায়। ফলে এসব জাতের আম চাষাবাদে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের বলে জানান কামরুল ইসলাম নামের এক চাষি। অপর আমচাষি কামরুল বলেন, গাছে মুকুল আসা থেকে শুরু করে আম নামানো পর্যন্ত নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হয় গাছগুলোকে। প্রচলিত জাতের আমগুলো বাজারে বিক্রি শেষে নাবী জাতের আমগুলো পাকে। এই সময়ের মধ্যে বাড়তি পরিচর্যা খরচ গুণতে হয় বাগান মালিকদের। বাজারে যখন আম থাকে না তখন নাবী জাতেরই আম দিয়ে বছরের বাকিটা সময় চাহিদা পূরণ হয়। কল্যাণপুর হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক বিমল কুমার প্রমানিক বলেন, নাবী জাতগুলোর মধ্যে গৌড়মতি, বারি ১১, কার্ডিমন, বারি-৪ এসব আম জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এসব আমের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে গৌড়মতি আমটি। গত পাঁচ বছরে হর্টিকালচার থেকে ৪৮ হাজার ও অনান্য নার্সারি থেকে আরও এক লাখ চারা বিক্রি হয়েছে গৌড়মতির। তিনি আরও বলেন, নাবী জাতের আম বাগান যারা গড়ে তুলেছেন তারা এখন পর্যন্ত কোন সমস্যার সম্মুখীন হননি। নাবী জাতের আমের বাজার মূল্য আর চাহিদা বেশি থাকায় জনপ্রিয় হচ্ছে। প্রতিবছরই নাবী জাতের আমের চারার দাম কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যাতে করে চাষিরা কম দামে চারা কিনে আমের বাগান গড়ে তুলতে পারেন। প্রচলিত আমের মৌসুমে শেষে বাজারে আম থাকে না তখন চাহিদা মেটাতে বাজারে নামে নাবী জাতের আম। অতুলনীয় স্বাদ আর বাজারে চাহিদা থাকায় আশানুরূপ দাম পাচ্ছে আম চাষি ও বাগান মালিকরা। ফলে জেলার বিভিন্ন জায়গায় গড় উঠছে নাবী জাতের আমের বাগান। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক বুলবুল আহমেদ বলেন, সম্প্রতি প্রচলিত আমের জাতগুলোর বাগান বাড়ছে না। তবে নাবী জাতের আমের বাগান সদর উপজেলার একাংশ, নাচোল, গোমস্তাপুরে বাড়ছে। দেশের মানুষের চাহিদার পাশাপাশি বিদেশের মার্কেটেও চাহিদা রয়েছে এই আমের।

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

নাবী জাতের আম চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা

আপডেট সময় : ০১:১৭:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ অগাস্ট ২০২৩

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংবাদদাতা: চাঁপাইনবাবগঞ্জে নাবী জাতের (লেট ভ্যারাইটিজ) আম বাগানে আগ্রহ বাড়েছে চাষিদের। এই জাতের আম মৌসুমের শেষ দিকে বাজারে আসায় আশানুরূপ দাম পেয়ে লাভবান হচ্ছেন বাগানিরা। ফলে নাবি জাতের আমবাগান গড়তে ঝুঁকছেন চাষিরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জেলায় আমের বাগানগুলোর মধ্যে সিংহ ভাগই নাবী জাতের বাগান। নাবী জাতের আম চাষিরা বলছেন, সাধারণত এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত আমের ভরা মৌসুম। এই সময়ে ফজলি, খিরশাপাতি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, হাঁড়িভাঙা, নাগফজলিসহ গুটি জাতের আম বাজারে পাওয়া যায়। যখন বাজারে বেশির ভাগ আমের সরবরাহ কমে যায়, তখনই পাকতে শুরু করে গৌড়মতি,বারি-৪, বারি-১১, বারি-১৩ ও আশ্বিনা জাতের আম। এসব জাতের আম কম চাষাবাদ আর মৌসুমের শেষে বাজারে পাওয়া যায় বলে আশানুরূপ দামে বিক্রি করেন চাষিরা। জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৯ হাজার ৩২৭ হেক্টর জমিতে আশ্বিনা আমের চাষাবাদ হয় ৬ লাখ ৮৬ হাজার ২৮৫ গাছে। ২ হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে আম্রপালি আম চাষ হয় ২ লাখ ৩০ হাজার ৫৫৫টি গাছে। ২৫২ হেক্টর জমিতে বারি-১১ আম চাষাবাদ হয় ২০ হাজার ৭০৫ হেক্টর গাছে। ৭৮৬ হেক্টর জমিতে বারি-৪ আম চাষ হয় ৬৬ হাজার ১৪০ গাছে। ১২৮ হেক্টর জমিতে গৌড় আমের চাষাবাদ হচ্ছে ২১ হাজার ৯৫০টি গাছে। ৪০০ হেক্টর জমিতে কার্ডিমন আমের চাষাবাদ হচ্ছে ৪৪ হাজার ১২৫ গাছে। এছাড়াও আরও হাজার খানেক হেক্টর জমিতে অনেক রকমের নাবী জাতের আম চাষাবাদ হয় জেলায়। জেলার বাজারগুলোতে গৌড়মতি আম বিক্রি হচ্ছে ৪০০০ টাকা থেকে ৬০০০ টাকা মণ পর্যন্ত। বারি-৪ আম বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকা মণ, আশ্বিনা আম বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা মণ। আম্রপালি আম বিক্রি হচ্ছে ৩৫০০ হাজার ৪৫০০ টাকা মণ, বারি-৭ আম বিক্রি হচ্ছে ৩০০০ টাকা থেকে ৪০০০ টাকা পর্যন্ত মণ। এছাড়াও ইতোমধ্যে বাজার থেকে ব্যানানা আম বিক্রি সম্পন্ন হয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বাজারে নামতে শুরু করবে নাবী জাতের কার্ডিমন আম। গাছ রোপণের কয়েক বছরের মধ্যেই নাবী জাতের চারাগুলোতে আম আসতে শুরু করে। মৌসুমের শেষে আম পাকে তাই বাজারে দামও বেশি পাওয়া যায়। ফলে এসব জাতের আম চাষাবাদে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের বলে জানান কামরুল ইসলাম নামের এক চাষি। অপর আমচাষি কামরুল বলেন, গাছে মুকুল আসা থেকে শুরু করে আম নামানো পর্যন্ত নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হয় গাছগুলোকে। প্রচলিত জাতের আমগুলো বাজারে বিক্রি শেষে নাবী জাতের আমগুলো পাকে। এই সময়ের মধ্যে বাড়তি পরিচর্যা খরচ গুণতে হয় বাগান মালিকদের। বাজারে যখন আম থাকে না তখন নাবী জাতেরই আম দিয়ে বছরের বাকিটা সময় চাহিদা পূরণ হয়। কল্যাণপুর হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক বিমল কুমার প্রমানিক বলেন, নাবী জাতগুলোর মধ্যে গৌড়মতি, বারি ১১, কার্ডিমন, বারি-৪ এসব আম জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এসব আমের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে গৌড়মতি আমটি। গত পাঁচ বছরে হর্টিকালচার থেকে ৪৮ হাজার ও অনান্য নার্সারি থেকে আরও এক লাখ চারা বিক্রি হয়েছে গৌড়মতির। তিনি আরও বলেন, নাবী জাতের আম বাগান যারা গড়ে তুলেছেন তারা এখন পর্যন্ত কোন সমস্যার সম্মুখীন হননি। নাবী জাতের আমের বাজার মূল্য আর চাহিদা বেশি থাকায় জনপ্রিয় হচ্ছে। প্রতিবছরই নাবী জাতের আমের চারার দাম কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যাতে করে চাষিরা কম দামে চারা কিনে আমের বাগান গড়ে তুলতে পারেন। প্রচলিত আমের মৌসুমে শেষে বাজারে আম থাকে না তখন চাহিদা মেটাতে বাজারে নামে নাবী জাতের আম। অতুলনীয় স্বাদ আর বাজারে চাহিদা থাকায় আশানুরূপ দাম পাচ্ছে আম চাষি ও বাগান মালিকরা। ফলে জেলার বিভিন্ন জায়গায় গড় উঠছে নাবী জাতের আমের বাগান। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক বুলবুল আহমেদ বলেন, সম্প্রতি প্রচলিত আমের জাতগুলোর বাগান বাড়ছে না। তবে নাবী জাতের আমের বাগান সদর উপজেলার একাংশ, নাচোল, গোমস্তাপুরে বাড়ছে। দেশের মানুষের চাহিদার পাশাপাশি বিদেশের মার্কেটেও চাহিদা রয়েছে এই আমের।